আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধ্রুবতারা

আমরা প্রতিদিন আকাশের এমাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত সূর্যকে গড়িয়ে যেতে দেখি। তারারাও তেমনি পূর্ব দিকে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যায়। এর মাঝে একমাত্র ব্যতিক্রম ধ্রুবতারা (Polaris or North star)। ধ্রুবতারার উদয় নেই, অস্ত নেই, গতি নেই। প্রতি রাতেই আকাশের একই জায়গায় স্থির দন্ডায়মান।

আমাদের দেশের আকাশে, উত্তরে, দিগন্ত থেকে আকাশের প্রায় চারভাগের একভাগ উঁচুতে এরকম উজ্জ্বল তারা আর নেই। যতই উত্তরে যাওয়া যাবে, ধ্রুবতারা ততই উপরে দেখা যাবে। এই ধ্রুব তারাকে সপ্তর্ষিমন্ডলের তারার সাহায্যে আলাদা করা যায়। সপ্তর্ষিমন্ডলের সাতটি তারা মিলে একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন বা হুক কল্পনা করা যায়। এই হুকের মাথার চারটি তারার দুইটি তারা (Dubhe & Merak) ধ্রুবতারার দিকে নির্দেশ করে বলে এদের পয়েন্টার বলা হয়।

এই দুটো তারাকে যোগ করে বাড়িয়ে দিলে ধ্রুবতারা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই নির্দেশক রেখাটি সারা রাত জুড়ে ধ্রুবতারাকে নির্দেশ করে এর চারদিকে অর্ধবৃত্তাকারে ঘুরে পূর্ব থেকে পশ্চিমাকাশে চলে যায়। সূর্য আমাদের মাথার ঠিক উপর থেকে একবার ঘুরে গিয়ে আবার একই জায়গায় আসতে যে সময় নেয়, তাকে এক সৌরদিন বলা হয়। সাধারণ ভাষায় একে আমরা একদিন বলি। আর, তারার বেলায় এই ঘুরে আসার সময়কে বলা হয় এক নাক্ষত্রিক দিন (sidereal day)।

নাক্ষত্রিক দিন সৌরদিন থেকে ৪ মিনিট ছোট। তাই, ঘড়ির হিসাবে, তারাগুলো প্রতিদিন ৪ মিনিট আগেই তাদের আগের জায়গায় এসে যায়। তাহলে ১৫ দিন পরে ৪*১৫=৬০ মিনিট আগেই তারাগুলো আগের জায়গায় এসে যাবে। অর্থাৎ, কোন মাসের ১ তারিখে তারাগুলো রাত নয়টায় যেখানে দেখা যাবে, ১৫ তারিখে সেই তারাগুলো রাত আটটাতেই সেই জায়গাতে দেখা যাবে। এ কারণে, তারাগুলো একটু একটু করে পুব থেকে পশ্চিমে সরে সরে যায় আর আমরা সারা বছর একই নক্ষত্র-মন্ডল দেখিনা।

ব্যতিক্রম শুধু ধ্রুবতারা। সপ্তর্ষি মন্ডলের সাতটি তারা ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যায় সাতজন ঋষির নামে পরিচিত (সপ্ত ঋষি > সপ্তর্ষি)। হিন্দু উপাখ্যান মতে ধ্রুবের স্থান এই সাতজন শ্রেষ্ঠ ঋষিরও উচ্চে। পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুকে যোগ করে বাড়িয়ে দিলে উত্তর দিকের আকাশে যে বিন্দুতে ছেদ করে, সেটি আকাশের উত্তর মেরু। ধ্রুবতারা উত্তর মেরু থেকে প্রায় ১ ডিগ্রী দূরে অবস্থিত।

আকাশে উত্তর মেরু একটি স্থির বিন্দু নয়। প্রায় ২৬০০০ বছরে এটি বৃত্তাকার গতিপথে ভ্রমণ করে। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন তারা এই উত্তর মেরুর নিকটে থেকে ধ্রুবতারা রূপে বিরাজ করেছে। মিসরীয় সভ্যতার যুগে আলফা ড্রাকোনিস বা থুবান তারাটি ধ্রুবতারা ছিল। এখন থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পরে সিফিয়াস মন্ডলের তৃতীয় তারা ধ্রুবতারায় পরিণত হবে এবং প্রায় ৭ হাজার বছর পরে দেনেব ধ্রুবতারা রুপে দেখা যাবে।

দিগন্ত হতে ধ্রুবতারার উচ্চতা, সেই স্থানের অক্ষাংশের সমান। ঢাকার অক্ষাংশ ২৩ডিগ্রী৪৩মিনিট, ঢাকা থেকে ধ্রুব তারার উচ্চতাও ঠিক ২৩ডিগ্রী৪৩মিনিট। উত্তর মেরুতে গেলে ধ্রুব তারাকে ঠিক মাথার উপরে দেখা যাবে। আর বিষুবীয় অঞ্চলে একে একবারে দিগন্তের উপরে দেখা যাবে। কোরিয়ার আকাশে ধ্রুব তারাকে কেন্দ্র করে তারাদের ভ্রমণ বিষুবীয় অঞ্চল সিংগাপুরে দিগন্তের কাছাকাছি ধ্রুব তারাকে কেন্দ্র করে তারাদের ভ্রমণ আকাশের উত্তর মেরুর কাছে ধ্রুব তারা থাকায় পৃথিবী যেন একে কেন্দ্র করে ঘুরছে।

তাই, তারা সহ সমস্ত আকাশটা মনে হবে যেন ধ্রুবতারাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। পৃথিবীর দক্ষিণে আছে Sigma Octantis বা South star (দক্ষিণের ধ্রুবতারা, দক্ষিণ দিকে স্থির থাকে, খালি চোখে দেখা কষ্টসাধ্য)। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।