আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়িওয়ালা ও বাড়িভাড়া এক আতংকের নাম !!!

অদ্ভূত বিষয়গুলোতে বিস্ময়াভূত হওয়া একটি চমকপ্রদ ব্যাপার!! একজন উঠতি চিত্রনায়ক বলছেন তাঁর বাড়িওয়ালাকে, ‘আমার মৃত্যুর পর আপনার বাড়ি তো বিখ্যাত হয়ে যাবে। লোকজন বাড়ির পাশ দিয়ে যাবে আর বলবে, ‘এই বাড়িতে একজন বিখ্যাত চিত্রনায়ক বসবাস করত…। ’ বাড়িওয়ালা: আগামীকালকের মধ্যে তুমি যদি আমার বাড়ির ভাড়া না দাও, লোকজন পরশুই এ কথা বলার সুযোগ পাবে! আজকাল একটা বাড়ি করে ভাড়া দিয়ে বাড়িওয়ালা বনে গিয়ে অনেকেই ভাড়াটিয়া কে তিলে তিলে শেষ করে দিতে বদ্ধপরিকর বলা যায়। ‘হাতে মারি না মুখে মারি’ একটা প্রবাদ আছে। বাড়িওয়ায়ালা ও ভাড়াটিয়া সম্পর্কেও আছে হাতে মারি না, মুখেও মারি না ভাড়ায় মারি।

মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে বাসস্থান অন্যতম অপরিহার্য উপাদান। নাগরিক জীবনে বাসস্থান বলতে ঐ বাড়িভাড়াই সম্বল। গরু খাটা খাটুনি খেটে মাস শেষে বেতন তুলে মাসের বাজার স্ত্রীর হাতে তুলে দিয়ে মোট বেতন থেকে সিংহভাগ খাবলে এনে নিরপায়ের মত বাড়িওয়ালার হাতে তুলে দেওয়াই নাগরিক জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া মাসে মাসে ভাড়া বাড়ানোর কায়দা তো আছেই। আর এমন অবিচার মানতে না চাও তো নিজের পথ দেখো।

বাড়ি ছেড়ে নতুন ভাড়া পাওয়াও আরেক আহসানহীন মুশকীলে পরা আজকালকার দূর্মুল্যের বাজারে। আর সে বাড়িতেই যে এমনটা হবে না তা কে বলতে পারে। তাই রাম সাম যদু মদু যাই হোক মাটি (বাড়ি) কামড়ে পড়ে থাকাতাই বুদ্ধিমানের কাল ভাবেন অনেকেই। বাড়িওয়ালাদের এমন আচরন কিসের জন্য আর কি প্রেক্ষিতে তারা করে তা আজও রহস্য। কেননা দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আইন কানুন সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

আর যেখানে সে একজন বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া সম্পর্কে আইন তাঁর জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। তেমনি জানা প্রয়োজন একজন সচেতন ভারাটিয়ারও। আমাদের দেশে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত অধ্যাদেশটি প্রথম জারী করা হয় পাকিস্তান আমলে ১৯৬৩ সালে। এর অধীনে ১৯৬৪ সালে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়, যা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর একযুগেরও বেশি সময় ধরে ১৯৮৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ ছিল। অতঃপর তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এইচ এম এরশাদ কর্তৃক ১৯৮৬ সালের ২২ নং অধ্যাদেশ দ্বারা বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারী করে ১৯৬৩ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশটি বাতিল করা হয়।

এর মেয়াদ ছিল তিন বছর এবং তা ১৯৮৯ সালে শেষ হয়ে যায়। তিন বছর পরে আবার বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন জারী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয়। নইলে জাতীয় সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করে আইনটি পাশ করা যেতো। তাই জাতীয সংসদের অবর্তমানে বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে বর্ণিত ক্ষমতাবলে তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ বর্তমানে প্রচলিত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ জারী করেন।

এ আইনে কোন মেয়াদের কথা উল্লেখ করা হয় নি। সব আইনই যে স্বয়ংসম্পূর্ণ তা কিন্তু নয়। তাই নতুন কোন প্রণীত আইনকে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ করার জন্যে নতুন নতুন বিধি প্রণয়নেরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কিন্তু বর্তমান আইন অর্থাৎ ১৯৯১ সনের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৪ ধারায় বিধি প্রণয়নের ক্ষমতার বিধান থাকলেও সরকার অদ্যাবধি এই আইনের অধীনে কোন নতুন বিধি প্রণয়ন করেন নাই। ফলে ১৯৬৪ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালাই কার্যকর রয়ে গেছে।

অতএব, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য বা বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য আমাদের দেশে কার্যকর আইন হচ্ছে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৯১ -৩নং আইন এবং তা স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে প্রয়োগের জন্য বিস্তারিত বিধি-বিধান হচ্ছে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ১৯৬৪। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা কতটুকু সচেতন ? নিজেদের প্রয়োজনেই আজ এই প্রচলিত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা সম্পর্কে আমাদের নিজ নিজ ধারণাগুলো স্পষ্ট হয়ে যাওয়া আবশ্যক। ১৯৯১ সনের ৩নং আইন হিসেবে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এক বিভিন্ন উপধারা সংবলিত ৩৬ টি আইনী ধারা রয়েছে। । এর মধ্যে ধারা ১৫ এ নিয়ন্ত্রকের ক্ষমতা ও দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে- বাড়ি মালিক বা ভাড়াটিয়ার দরখাস্তের ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রক কোন বাড়ির মানসম্মত ভাড়া নির্ধারন করতে পারবেন এবং এরূপভাবে তা নির্ধারণ করবেন যেন তার বাৎসরিক পরিমাণ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ধার্যকৃত উক্ত বাড়ির বাজার মূল্যের ১৫% শতাংশের বেশি না হয়।

এই ১৫(১) ধারা অনুযায়ী বাড়ির বাজার মূল্য নির্ধারণের উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে দেখতে হবে বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ১৯৬৪। বিধিমালায় বলা হয়েছে, (০১) পাকা বাড়ির ক্ষেত্রে ভূমির মূল্য, ভূমি উন্নয়ন ব্যয় ও বাড়ি নির্মাণ ব্যয় থেকে অবচয় (যখন মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে তখনকার সময় পর্যন্ত) বাদ দিয়ে যা থাকবে সেটাই বাড়ির বাজার মূল্য। প্রথম তিন বছরে কোনো অবচয় নেই এবং পরবর্তী প্রত্যেক বছরে অবচয় শতকরা ১ ভাগ। (২)আধা পাকা বাড়ির ক্ষেত্রেও এই নিয়ম। তবে আধা পাকা বাড়ির কোন অবচয় প্রথম দুবছর ধরা হবে না এবং তৃতীয় বছর থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত অবচয় শতকরা ২ ভাগ এবং ১৯ তম বছর থেকে এ অবচয়ের হার শতকরা ৩ ভাগ।

কিন্তু আইন থাকলেই তো হবে না তাঁর যথাযথ প্রয়োগও থাকতে হবে। জনগন আইন ভংগ করে যদি না এর যথাযথ তত্বাবধান না থাকে। একটি দেশ পরিচালনার জন্য এই দিক টাও খুব জরুরী কেননা একজন নাগরিক যদি তাঁর মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করতে না পারে তবে সেটা দেশ পরিচালকদের ব্যার্থতাই বলা চলে, যেখানে ন্যায্যমূল্যের চেয়েও অধিক পরিমানে গচ্চা দিয়ে এই মৌলিক অধিকার পূরন করতে হয়। আর ইদানিং কালে বাড়িভাড়ার বিরম্বনার পাশাপাশি ভাড়াটিয়া বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও নতুন কায়দা দেখা যায়। বড় পরিবার ভাড়া দেওয়া যাবে না, ব্যাচলার ভারা দেওয়া যাবে না, বাসায় অধিক মেহমান আসা যাবে না, রাত ১০ টায় বাড়ির সদর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে, ছাদে উঠা যাবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আসছে যুগে দেখা যাবে বাড়িওয়ালাদের মর্জি মতাবেক ভাড়াটিয়াদের পরিবার পরিকল্পনাও করতে হবে। আর নিজস্ব স্বাধীনতার তো কোন বালাইই নেই। সবকিছুই সহ্য করতে হয় শুধুমাত্র ভালবাসা পাওয়ার জন্য। কথায় আছে, ভালোবাসা এবং যুদ্ধে অন্যায় বলে কিছু নেই। আর এ যুগে ভালবাসা আর ভাল-বাসার মধ্যে কোন তফাত করা যায় না।

বাড়ীভাড়া নেওয়ার বিড়ম্বনার কথা বলতে গিয়ে আরেকটা কৌতুক বলা যায়- তিন ছেলে, চার মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে বিশাল পরিবার রহিম সাহেবের। এত বড় পরিবার বিধায় কোনো বাড়িওয়ালাই তাঁকে বাসা ভাড়া দিতে চান না। একদিন তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘তোমরা একটু স্থানীয় কবরস্থানটা ঘুরে এসো, আমি ছেলেগুলোকে নিয়ে বের হচ্ছি। ’ ঘুরতে ঘুরতে ‘বাড়ি ভাড়া হবে’ এমন নোটিশ দেখে এক বাড়িওয়ালার কাছে গেলেন রহিম সাহেব। রহিম সাহেব: ভাই, আমি কি আপনার বাসাটা ভাড়া নিতে পারি।

বাড়িওয়ালা: আপনার পরিবারে কে কে আছেন? রহিম সাহেব: আমি, আমার স্ত্রী, আমার তিন ছেলে আর চার মেয়ে। তবে চার মেয়েকে নিয়ে আমার স্ত্রী এখন কবরস্থানে। বাড়িওয়ালা: আহা রে! ঠিক আছে ভাই, আপনি আমার বাসাটা ভাড়া নিতে পারেন। বাড়িভাড়া আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও তত্বাবধানের পর্যাপ্ত পদক্ষেপহীনতার কারনেই আজ সভ্য সমাজেও এমন অনাচার দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতার বাহিরে বাসা কংবা বাড়ি ভাড়া করে পরিবারের কর্তার বাকি দিনগুলো ধোয়াটে দেখার হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারের উচিত আইনের প্রয়োগ করা।

আইন কি কেবল কাগজ আর কলমের বষয়বস্তু! একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে জনগনের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার দ্বায়িত্ব সরকারের। কেননা মহানগরী ঢাকার পাশাপাশি অন্যন্য শহর উপশহরেও বাড়িভাড়া ও বাড়িওয়ালা আজ এক আতংকের নাম।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.