আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটে সমাচার

বসে আছি পথ চেয়ে.... আমাদের জীবনে চাহিদা বা চাওয়ার কোনো শেষ নেই। তবে বর্তমানে অধিকাংশ শহুরে নাগরিকের সবচাইতে বড় চাওয়া সম্ভবত ছোট্ট একটা বাসা, মাথা গোঁজার এতটু ঠাঁই। তা না হোক ভালো বাসা, এমনকি সেখানে ভালোবাসা না থাকলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু বাসা একটা চাই-ই চাই। যদিও তা সহজে মেলে না।

কোনোমতে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার সমস্যার চাইতেও মধ্যবিত্ত নাগরিকের কাছে বাসা সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই বড় হয়ে দেখা দেয়। রবি ঠাকুরের সেই- ‘বহু দিন মনে ছিলো আশা,/ধরণীর এক কোণে বসিয়া আপন মনে/ধন নয় মান নয় শুধু এতটুকু বাসা/করেছিনু আশা’-বাঙালি মধ্যবিত্তের জীবনে সর্বনাশা হতাশায় পরিণত হয়েছে। ঢাকা শহরের শতকরা প্রায় ৯৫ জন মানুষ ‘পরের জায়গা পরের জমিন ঘর বানাইয়া আমি রই আমি তো সেই ঘরের মালিক নই’ অর্থাৎ ভাড়া বাসায় বাস করেন। ভাড়া বাসা বর্তমানে শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনের এক অনিবার্য অনুষঙ্গ। একই সঙ্গে চরম হতাশা ও আতঙ্কের নাম।

মধ্যবিত্তের আয়ের অর্ধেক, অনেক ক্ষেত্রে অর্ধেকেরও বেশি চলে যায় বাসার ভাড়া পরিশোধে। তারপর হাতে যা থাকে, তাতে সংসার কিছুতেই চলতে চায় না। প্রত্যক মাসে ভাড়ার টাকা পরিশোধের পর প্রত্যক মধ্যবিত্তের ব্যাকুল আর্তনাদ বোবা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরোয়- আহা ভাড়ার টাকাটা যদি না দিতে হতো, আমার যদি মাথা গোঁজার মতো একটা ঠাঁই থাকতো! কিন্তু তা হয় না। বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানি যতোই চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করুক না কেনো, শহরে নিজস্ব একটা মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের বন্দোবস্ত করা মোটেও সহজসাধ্য নয়। ঢাকা শহর পুরোটাই এখন কোটিপতিদের দখলে চলে গেছে।

আশপাশের খাল-বিল-ঝিলও ক্রমেই তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। টাকাওয়ালা ও ক্ষমতাবানরা এমনভাবে সব কুক্ষিগত করে নিয়েছে যে, মধ্যবিত্তের নিজের ঠাঁই গড়ার সম্ভাবনা প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ফ্ল্যাট বাড়িতে ঝুলে থাকার একটা সম্ভাবনা এখনও আছে বটে; কিন্তু সেই ‘তেরো মণ ঘি’র বন্দোবস্ত করাও মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে। সুতরাং ‘রাধার নাচ’ দেখাও সম্ভব হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িই মধ্যেবিত্তের অনিবার্য আবাস।

এত অবশ্য খুব বেশি হতাশ হবার কিছু নেই; কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরই বর্তমানে এই পরিণতি। শতকরা প্রায় ৯৫ জন মানুষেরই যখন একটাই পরিণতি, তখন সেটাই বড় সান্ত¦না। এ বিষয়ে হা-হুতাশ করার কোনো মানে নেই। যা অনিবার্য, তা সহজভাবে মেনে নেয়াই ভালো। আমরা বরং আমাদের ভাড়াটে জীবনের কিছু হাহাকার ও বেদনার কথা আলোচনা করতে পারি।

বর্তমানে ঢাকা শহরে দুই শ্রেণীর লোক বাস করে। একদল ভাড়াটে আর অন্যদল বাড়িওয়ালা। ভাড়াটেরা সংখ্যায় অনেক বেশি হলেও তাদের কোনো দাম নেই। ভাড়াটেরা হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এদিকে বাড়িওয়ালারা ক্ষমতাসীনদের মতো।

তারাই দণ্ড-মুণ্ডের কর্তা, তাদের ইচ্ছাই আইন। তাদের ইচ্ছা ও অভিরুচির বাইরে কোনো কিছু ঘটবে না। ভাড়াটেদের স্বার্থ, তাদের সমস্যা, আশা-আকাঙ্ক্ষা-দাবির কোনো মূল্য নেই। বাড়িওয়ালা স্বেচ্ছায় যতোটুকু যা করবেন তা-ই সই। এর বাইরে কোনো কিছু তাদের টলাতে বা নড়াতে পারবে না।

এরা হচ্ছেন ‘শোষক শ্রেণী’র প্রতিভূ। তারা টাকাওয়ালা বলে ক্ষমতাশালী; আর ক্ষমতাশালী বলে গম্ভীর; টেনে টেনে কথা বলেন, বাঁকা চোখে তাকান। ভাড়া পরিশোধের সময় ছাড়া অন্য কোনো সময়ে ভাড়াটের সাক্ষাৎকে উৎপাত এবং ঝামেলা মনে করেন। ভাড়া পরিশোধ ছাড়া অন্য কোনো ব্যাপারে তাদের সঙ্গে ভাড়াটেদের কোনোরকম সংযোগ-দেখা-সাক্ষাৎ বা সম্পর্ক হোক, তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা চান না। তারা অনেকে ভাড়াটেদের অতি তুচ্ছ, নিকৃষ্ট এমনকি নরকের কীট মনে করেন এবং আচরণে পরিস্কার তা বুঝিয়েও দেন।

পক্ষান্তরে ভাড়াটিয়ারা হচ্ছেন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের মতো। নাছোড়বান্দা কিন্তু সারাক্ষণই বাড়িওয়ালাদের ভয়ে তটস্থ থাকেন। বলা তো যায় না কখন কোন ফরমান জারি হয়! ভাড়াটেরা আসলে ‘শোষিত শ্রেণী’র। স্ত্রী-পুত্র-পরিবারের চিন্তায় তাদের চোখে ঘুম আসে না। সারাক্ষণ সমস্যা ও সংকটের মধ্যে জীবন যাপন ।

মাখন আনতে তাদের পাউরুটি ফুরায়। টাকার ধান্দায় সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয়। পোড় খাওয়া ভাড়াটের কাছে বাড়িওয়াল তাই ভীতিকর প্রাণীর নাম। সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে আমাদের চেনা জগৎ; ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী। একই সঙ্গে ছোট হয়ে আসছে আমাদের মন-মানসিকতা, স্বপ্ন-সাধ, বড়িঘর আমাদের দাঁড়ানোর জায়গা।

একটা সময় ছিলো যখন মানুষ ভাড়া বাড়িতে থাকার কথা চিন্তা করতে পারতো না। আর এখন অধিকাংশ মানুষই নিজের বাড়ির কথা ভাবতে পারে না। কীভাবে অল্প টাকায় একটি ভাড়া বাসায় কোনোমতে জীবনটা পার করে দেয়া যায়, তারই সাধ্য-সাধনা চলে অবিরাম। দিন যতো যাচ্ছে , মানুষ ততো বাড়ছে। অথচ জমি বাড়ছে না।

জমিগুলো বরং অল্পকিছু ধনাঢ্য ব্যক্তির দখলে চলে যাচ্ছে। তাই তো ঘরের দৈর্ঘ কমছে। মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতাও কমছে। গগণচুম্বী অট্টালিকার রাজধানী ঢাকার আকাশ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। অথচ মধ্যবিত্তের আবাস ভাড়া-বাসাগুলোর কী চেহারা! দশ ফুট বাই দশ ফুট রুম।

যেনো রাজশাহীর ইতিহাস-খ্যাত জেলের সেই খাপড়া ওয়ার্ড। এমন দু-তিনটি সেল নিয়েই একটি বাসা। আলো নেই, বাতাস নেই, বারান্দা নেই, শুধু’ই বাসা আছে। বাথরুমগুলো যেনো প্রাচীন সুরঙ্গ; সুরঙ্গও ঠিক নয়, মুরগির খোপ। ছোট হয়ে ঢোকো, খাঁটো হয়ে বেরোও (আঁটোসাঁটো হয়ে বাঁচার অভিনব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বটে)! প্রাইভেসি রক্ষার কোনো সুযোগ নেই।

বাথরুম-বেড-ডাইনিং সব গায়ে গায়ে। ভাড়া বাসায় কী আছে? জবাবে বলা যায়: হাজারো অসুবিধা, অযুত বিধি-নিষেধ আর দু-চার মাস পরপর নানা অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঠিকমতো পানি সাপ্লাই নেই, নিরাত্তা নেই, লিফট নেই, কোনো কোনো, ক্ষেত্রে সিঁড়ির রেলিং পর্যন্ত নেই। বাথরুমের দরজা ঠিক নেই, বেডরুমের দরজার ছিটকিনি নেই, জানালার কাচ নেই, গ্যাসের লাইন নেই, বিদ্যুতের সুইচ বোর্ড নেই, পানির ট্যাপের কল ঠিক নেই, বাথরুমের ফ্লাস ঠিক নেই, বেসিন নেই, সিঁড়িতে আলো নেই, সিঁড়ি পরিস্কার নেই, ফ্যান লাগানোর রড নেই ইত্যাদি হাজারো নেই। সবচাইতে বড় নেই হচ্ছে পানি।

হোমিওপ্যাথির তিন দাগের মতো তিনবার পানি ছাড়া হয়। অথচ একটা বালতি ভরলেই পানি শেষ। এরপর তৃষ্ণায় মারা পড়লেও এক ফেঁটা পানি মিলবে না। এ যুগে পুলিস অফিসার হওয়া আর বাড়িওয়ালা হওয়া উভয়ই অত্যন্ত ভাগ্যের ব্যাপার। উভয়েরই রয়েছে দায়গ্রস্ত ব্যক্তিকে নাজেহাল করার অসীম ক্ষমতা।

অন্যদিকে কুৎসিত মেয়ের জন্য পাত্র খোঁজা আর ব্যাচেলর ভাড়াটের জন্য বাসা খোঁজা উভয়ই অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা। যে ব্যক্তি সরকারি চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ড, থানা ও ফৌজদারি আদালতের মুখোমুখি হয়েছেন, তিনি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ব্যক্তি; কিন্তু যে ব্যাচেলর দু-চারজন বাড়িওয়ালা ‘ফেস’ করেছেন, সে ততোধিক অভিজ্ঞ। ভাড়াটের পছন্দের ওপর এখন আর বাড়ি ভাড়া পাওয়া নির্ভর করে না; বরং এটা নির্ভর করে বাড়িওয়ালার সঙ্গে ভাড়াটের ‘সাক্ষাৎকার পর্বে’ যথাযথভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার ওপর। বাড়িওয়ালা বাড়ি-প্রার্থীকে হাজারো বিষয়ে প্রশ্ন ও জেড়া করে জেরবার করার অধিকার রাখেন। কী করেন, কোথায় থাকেন, কী খান, কয়টা বিয়ে করেছেন, ছেলেপুলের সংখ্যা কতো, আত্মীয়-বন্ধুবান্ধবের পরিমাণ কতো, কতো টাকা বেতন থেকে শুরু করে এর আগে কোথায় থাকতেন, আগের বাসা ছাড়লেন কেনো, ইলেক্ট্রনিক্স দ্রব্যের পরিমাণ, আসবাবপত্রের সংখ্যা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ‘হলফনামা’ দাখিল করতে হয়।

মোটামুটি পনের মিনিটের মধ্যেই ভাড়াটের আর্থ-সামাজিক, ভৌগলিক, নৃতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক সব বিষয়ে ‘এক্সরে রিপোর্ট’ বের করে ছাড়েন। এ বিষয়ে কুশলি ব্যক্তিরা স্ত্রীকে ব্যবহার করে থাকেন। কেননা এসব বিরক্তিকর প্রশ্নোত্তর পর্ব মোকাবিলায়, স্বামীর মিথ্যে প্রশংসায় এবং সবকিছু ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলায় স্ত্রীরাই অধিক দক্ষ। বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে কিছু গঁৎ বাধা নিয়ম আছে। যেমন তিন মাসের ভাড়া অগ্রিম জামানত হিসেবে দিতে হবে, মাসের ১০ তারিখের মধ্যে অবশ্যই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে, পানির অপব্যবহার চলবে না, অবস্থা অনুযায়ী ভাড়া বাড়ানো হতে পারে, নোটিশ করার এক মাসের মধ্যে বাড়ি ছাড়তে হতে পারে, বাড়িতে বেশি গেষ্ট আসা চলবে না, রাত দশটার পর বাইরে থাকা যাবে না, বাড়ির গ্যাঞ্জোম করা যাবে না, দেয়ালে পেরেক ঠোকা যাবে না, রাতে ছাদে যাওয়া যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের মধ্যেও সম্পর্ক বড় অদ্ভুত। বিশেষ করে ঢাকা শহরে। ঢাকা শহরে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের যে সম্পর্ক, তেমন অবাক সম্পর্ক দুনিয়ার কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। পারস্পরিক ক্ষোভ, অবিশ্বাস, ঘৃণা দিয়ে তৈরি এ সম্পর্ক। এ সম্পর্ক বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তেমন মজবুত হয় না।

অধিকাংশ ভাড়াটেই বাড়িওয়ালার ব্যাপারে বিরূপ। তার পরও ওই বাড়িওয়ালার বাড়িতেই বছরের পর বছর ধরে আছেন। বাড়ি বদলের হাঙ্গামা এড়াতে অনেকেই সহজে বাড়ি বদল করতে চান না। অনেক অবশ্য আরেকটু ভালো, আরেকটু সুযোগ-সুবিধা, আরেকটু কম টাকায় যদি বাড়ি মেলে- এই আশায় ‘টুলেট’ এর সন্ধান করেন। কারণ এক বাড়িওয়ালার সঙ্গে অন্য বাড়িওয়ালার চরিত্রের বড় বেশি পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না।

ভালো বাড়িও মেলে না। লাল কাপড়ের প্রতি ষাঁড়ের যে বৈরিতা, ব্যাচেলরদের প্রতি বাড়িওয়ালাদের তেমনি ক্ষোভ আছে। ব্যাচেলর শুনলেই অনেক বাড়িওয়ালা চটে যান। সরাসরি ‘না’ বলে দেন। ব্যাচেলারদের সম্পর্কে বাড়িওয়ালাদের অসংখ্য অভিযোগ।

ব্যাচেলররা নোংরা, বিশৃঙ্খল, ব্যভিচারী। কাজের বুয়া থেকে শুরু করে বাড়িওয়ালার মেয়ে, পাশের ফ্ল্যাটের মহিলা, সবার ক্ষেত্রেই এরা বড় বেশি সন্দেহজনক স্বভাবের। ফুসলানোতে এরা ওস্তাদ। ব্যাচেলররা বাসাকে প্রমোদখানা মনে করে। অনেকে ভাড়ার টাকা নিয়েও টালবাহানা করে।

বেশি চাপ দিলে মাস্তানের ভয় দেখায় গুলি করে শ্বশুর বাড়ি পাঠানোর হুমকি দেয়। সব মিলিয়ে ব্যাচেলররা হচ্ছে বাড়িওয়ালার প্রধান শত্রু। নিতান্ত তৃতীয় শ্রেণীর বাড়ি না হলে এবং দায়ে না পড়লে ব্যাচেলরদের কাছে কোনো বাড়িওয়ালাই বাড়ি ভাড়া দিন না বা দিতে চান না। তবে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে সম্পর্কের ভিন্ন কাহিনিও আছে। বাড়িওয়ালার সঙ্গে বেশ মাখামাখি সম্পর্ক- এমন উদাহারণও একে বারে কম নেই।

অনেকে বাড়িওয়ালার সঙ্গে সহজেই সখ্য জমিয়ে ফেলে। অনেককে বাড়ি ওয়ালার টেলিফোন ব্যবহার, সিডি আদান-প্রদান, ঈদ, শবেবরাত, মিলাদ মাহফিলে সপরিবারে দাওয়াত খেতে পর্যন্ত দেখা যায়। আবার অনেক ব্যাচেলর ভাড়াটে থেকে বাড়িওয়ালার জামাই হয়ে উঠেছেন এমন দৃষ্টান্তও বিরল নয়। আসলে সব চেয়ারম্যানই যেমন ‘গম চোর’ নয়, সব নেতাই ‘ভ-’ নয়; তেমনি সব বাড়িওয়ালাই ‘কসাই’ নয়। সব ভাড়াটে এবং বাড়িওয়ালার গল্প একরকম হয় না।

সহজ-সরল ভাড়াটে ধরা খেতে খেতে ঝানু ভাড়াটেতে পরিণত হয় আবার সৎ ভালোমানুষ বাড়িওয়ালাও ভাড়াটেদের কাছে দাগা খেতে খেতে কসাই বনে যায়। বিভিন্ন রকম বাড়িওয়াল ও ভাড়াটে যেমন দেখা যায়, বিভিন্ন রকম বাড়িও তেমন চোখে পড়ে। ভূতের গলির বাড়ি, কমলাপুর, ফকিরাপুল, শনির আখড়া, মিরপুর, কল্যাণপুরের বাড়ি আবার ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারার বাড়ির মধ্যে তফাৎ আছে। এক হাজার টাকার বাড়ি যেমন আছে, আবার লক্ষাধিক টাকার ভাড়া বাড়িও দেখা যায়। ভাড়া বাড়ির যতো সমস্যাই থাকনা কেনো, একে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়।

নাগরিক জীবনে আধুনিকতার ছোঁয়া যতো বৃদ্ধি পাবে, ভাড়া বাড়ির অনিবার্যতাও ততোই বাড়বে। বাড়বে ভাড়াটে-বাড়িওয়ালা সম্পর্কের টানাপড়েন। তবে ফুটপাক কিংবা বস্তির জীবনের তুলনায় ভাড়া বাড়িও অনেক উত্তম (বর্ষায় বস্তির তুলনায় তো বার্মিংহাম প্যালেস)। সীমাবদ্ধ এবং জটিল নাগরিক জীবনে ভাড়া বাড়ির গল্পটাকে মধুর ও আকর্ষণীয় করা হয়তো কখনোও সম্ভব হবে না। সম্ভব হবে না ভাড়া বৃদ্ধির উত্তপ্ত পারদকে বশে আনে।

সম্ভব হবে না বাড়িওয়াল ও ভাড়াটের মধ্যে শ্রদ্ধা ও প্রীতির সম্পর্ক স্থাপন। যেমন সম্ভব হবে নয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সদ্ভাব। এই বাস্তবতা নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকা। এটাকেই ভালো, নচিকেতার ভাষায়-‘এই বেশ ভালো আছি’ মনে করা ছাড়া উপায় কী? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.