আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাকাত: একটি বিস্মৃত, কোনঠাসা, কাস্টমাইজ ২য় প্রধান ইসলামিক নীতি

নৌকা আর ধানের শীষে ভোট দিয়ে সোনার বাংলার খোয়াব দেখা আর মান্দার গাছ লাগিয়ে জলপাইর আশা করা একই! বিস্ময়ের ব্যাপার হল দিনের পর দিন আমরা তাই করছি!! লোকেরা আমল কম করুক কি বেশ করুক বা নাই করুক এমনকি অস্বীকার করুক- সালাত, সওম, হজ্জ্ব, কুরবাণী ইত্যাদি সম্পর্কে ধারনাগত দিক থেকে বাঙ্গালী মুসলিম সমাজে খুব একটা কমতি আছে এটা বলা যাবেনা। পাঁচ বেলা নামাজ, সেগুলোর সময়, পঠিত দোয়া কালাম প্রায় সবাই জানে। চান্দ্র রমজান মাসে সাহরীর শেষ, ইফতারির শুরু, ব্যানড কাজকর্ম এসবের ব্যাপারেও গণ-মানুষের মোটামুটি জ্ঞান রয়েছে বলেই দেখা যায়। অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হল হজ্জ্ব করেছেন/করেন এমনতর ধনী মানুষেরাও যাকাতের নলেজ ও প্র্যাকটিসের ব্যাপারে বাংলাদেশে যারপরনাই অন্ধকারে আছেন বা থাকতে ভালবাসেন। অধুনা ইসলামী চিন্তাবিদ নামে যে শ্রেনীটির আবির্ভাব হয়েছে তারাও বৈপ্লবিক ওয়াজ নসীহত করতে যতটা পারঙ্গম যাকাতের ব্যাপারে ২/১ টি বাক্য বলেই তারা খালাস।

পাড়া মহল্লার জামে মসজিদের হুজুররা প্রতি রমজানে যাকাত নিয়ে খুতবা দেন বৈকি! কিন্তু তারাও ৬২২ খ্রীস্টাব্দের অর্থনৈতিক সামাজিক বাস্তবতা: ডিঙ্গিয়ে ২০১২ সালের বাস্তবতায় তেমন কিছু বলেননা/ বলার ইনটেলেকচুয়াল লেভেল বা পড়াশোনা কোনটাই হয়ত নেই। (মুশকিলের বিষয়, থাকলে সে জায়গায় উনি থাকতেননা!!! ) যাকাত, বাংলাদেশ ও ২০১২ এদেশে রমজান মাস আসলেই যাকাত আলোচনায় আসে। যাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি নামক অদ্ভুত একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন গণমাধ্যমে দেখা যায়! ঈদের আগে আগে স্থানীয় ধনীরা ১ টি কাপড় বা ২০০ টাকা দিয়ে কয়েকশ দরিদ্র মানুষকে নেক্সট ১ বছরের জন্য কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করে (ছি!), এতিমখানা, হেফজখানার কালেকশন এজেন্টরা রশিদ বই হাতে বেরিয়ে পড়ে। ২০/৫০/৫০০ টাকা যে যা ইচ্ছা দিয়ে বিদেয় করে (ধিক!)। অনেকে অবশ্য দরিদ্র আত্নীয় স্বজনকে যথাযথ নিরীক্ষা না করেই কিছু থোক টাকা দেয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।

সোজাকথা আমরা যাকাতের একটি অভিনব বাংলাদেশী সংস্করন রচনা করেছি- যা মূল জাকাতের মর্মাথ থেকে যোজন যোজন দুরে! আর হুজুররাও কপচিয়ে যাচ্ছেন পরনো কাসুন্দি। কতটা গুরুত্বপূর্ণ এ যাকাত যতটা গুরুত্বপূর্ন নামাজ। বস্তুত: কেউ যদি 'মুসলিম' পরিচয় দেয় তাহলে তার নেক্সট ওয়াক্তের নামাজ হল পয়লা কাজ। আর সে বছর শেষে সুক্ষভাবে হিসেব নিকেশ করে যাকাত আদায় করে দেয়া ২য় কাজ। এভাবে অন্যান্য কাজ।

এটা মহা-জরুরী, এক কথায়। আর এটা দান নয়। গরীবরা এটা নিয়ে ধনীকে কৃতার্থ করছে বরং! ১৪০০ বছর আগের ও বর্তমানের বাস্তবতা (জটিলতা) শুধু কি স্বর্ণ, রৌপ্যই জাকাতের আওতায় আসবে? অলংকার হিসেবে পরিধেয় ধাতু ও সঞ্চিত ধাতুর তফাৎ? বিভিন্ন মুদ্রা? উট, গরু, ছাগল, মেষের হিসেব? শেয়ার, বন্ড, এফডিআর? জমি, ফ্ল্যাট? ব্যবহার্য গাড়ী বনাম রেন্ট এ কার? রয়ালটি বা অন্যান্য সম্পদ? বেতন, কর, ভ্যাট? ইত্যাদি নানান ডাইমেনশনে যাকাতের উৎস প্রাচীন আরবের গন্ডি থেকে ব্যাপক মাত্রায় বিস্তার লাভ করেছে। এগুলোর কোনটার যাকাত কত, সময়ের হিসেব কিভাবে করা হবে- সে বিষয়ে পরিস্কার ধারনা বেশীরভাগ মুসলিমেরই নেই। উৎসের মত একই ভাবে যাকাত গ্রহীতার রকমফেরও বেড়েছে।

কুরআনে উল্লেখিত ৮ খাতের বাংলাদেশী প্রায়োগিক রূপ কি সে ধারনাও আমাদের ঝাপসা। বোঝার উপর শাকের আটি হল- প্রাচীন কালে রাস্ট্র যাকাত আদায় করত ও কড়াকড়ি ভাবে তা বিতরন করত। আমাদের যে লুথা যাকাত বোর্ড রয়েছে তার নামই বা কয়জন জানে? জানলেও ওখানে টাকা দিলে.......? (সরকারী খাত ও দুর্নীতি যে সমার্থক হয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে)। সুতরাং, যাকাত নিয়ে ব্যাপক অধ্যয়নের কোন বিকল্প নেই। সম্প্রতি ১টি বই পেয়েছি: ইসলামের যাকাত বিধান (২ খন্ডে), -ইউসুফ আল কারযাভী (মিশর) অনুবাদ মাও: আবদুর রহীম, খায়রুন প্রকাশনী, ঢাকা।

এ বইয়ের রচনাকাল ১৯৮৭ তবে মোটামুটি প্রেক্ষাপট সেইম আছে। পরের পর্বে: বইটির সারাংশ। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.