আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যাকাত প্রসঙ্গ

সবাইকে সাথে নিয়ে এগুতে চাই। যাকাত ইসলামের পাঁচটি ফরযের একটি। কালিমায়ে শাহাদাত ও সালাতের পর যাকাতের স্থান। কুরআন-হাদিস ও ইজমা দ্বারা এর ফরযিয়্যাত প্রমাণিত। যাকাতের ফরযিয়্যাত অস্বীকারকারী কাফের ও ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত মুরতাদ।

আর যাকাতের ব্যাপারে যে কৃপণতা করল অথবা কম আদায় করল সে আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ﴿وَلا يَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ يَبۡخَلُونَ بِمَآ ءَاتَىٰ هُمُ ٱللَّهُ مِن فَضۡلِهِۦ هُوَ خَيۡرا لَّهُمۖ بَلۡ هُوَ شَرّ لَّهُمۡۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُواْ بِهِۦ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ وَلِلَّهِ مِيرَٰثُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِير [سورة آل عمران:১৮০] “আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর। বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য।

আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত”। সূরা আলে-ইমরান: (১৮০) সহিহ বুখারিতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন, অতঃপর সে তার যাকাত প্রদান করল না, কিয়ামতের দিন তার জন্য বিষধর সাপ সৃষ্টি করা হবে, যার দুটি চোঁয়াল থাকবে, যা দ্বারা সে তাকে কিয়ামতের দিন পেঁছিয়ে ধরবে, অতঃপর তার দু’চোয়াল পাকড়ে বলবে: আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সঞ্চিত ধন”। তিন ধরনের সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ : প্রথম প্রকার : স্বর্ণ- রৌপ্যের ওপর (নিসাব পরিমাণ হলে) সর্বাব¯’ায় জাকাত ফরজ। শর্ত হচ্ছে এর নিসাব পূর্ণ হতে হবে। স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ, আর রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা তার সমপরিমাণ অর্থের মালিক হলে যাকাত ফরজ হবে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন : وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ. يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لانْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ (التوبة:৩৪-৩৫ ‘যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে অথচ তা আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করে না।

আপনি তাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ প্রদান কর“ন। কিয়ামত দিবসে ঐ সোনা-রূপাকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠে ছেকা দেয়া হবে এবং বলা হবে এ হল তোমাদের সে সকল ধন-সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে। সুতরাং আজ জমা করে রাখা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর। সঞ্চয় করে রাখার অর্থ হল, আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিমাণ মত ব্যয় না করা। আর সর্বোত্তম ব্যয় হল- জাকাত প্রদান করা।

এ বিষয়ে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : ما من صاحب ذهب ولا فضة لا يؤدي منها حقها إلا إذا كان يوم القيامة صفحت له صفائح من نار فأحمى عليها في نار جهنم فيكوى بها جنبه وجبينه وظهره كلما بردت أعيدت له في يوم كان مقداره خمسين ألف سنة حتى يقضي بين العباد. رواه مسلم যে সকল সোনা-রূপার মালিকগণ তাদের সম্পদ থেকে নির্ধারিত হক আদায় করে না, কিয়ামত দিবসে তার জন্য কতগুলো আগুনের পাত প্র¯‘ত করে তা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তা দ্বারা ঐ লোকদের ললাট ও পিঠে চেপে ধরা হবে, তাপ কমে গেলে উত্তপ্ত করে পুনরায় চেপে ধরা হবে। পঞ্চাশ হাজার বছর দীর্ঘ সময় বান্দাদের হিসাব-নিকাশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে শাস্তি চলতেই থাকবে। হক আদায় না করার অর্থ হল জাকাত আদায় না করা। যা অন্য রেওয়ায়েতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। দ্বিতীয় প্রকার : প্রাণীর ওপর।

যে সকল প্রাণীর ওপর জাকাত ওয়াজিব হয় তা হল, উট, গর“, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ। যদি এ সকল প্রাণী সায়িমা হয় ও মাঠ চড়ে ঘাষ খায় এবং এগুলো বংশ বৃদ্ধির জন্য পালন করা হয় ও তা নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে এদের জাকাত দিতে হবে। উটের নিসাব ন্যুনতম ৫টি, গর“র ৩০টি, আর ছাগলের ৪০টি। সায়িমা ঐ সকল প্রাণীকে বলে, যেগুলো সারা বছর বা বছরের অধিকাংশ সময় চারণভূমিতে ঘাস খেয়ে বেড়ায়। যদি এ সকল প্রাণী সায়িমা না হয়, তবে এর ওপর জাকাত ওয়াজিব নয়।

কিš‘ ব্যবসার উদ্দেশ্যে পালন করা হলে, সর্বাব¯’ায় এগুলোর জাকাত দিতে হবে, যদি তা নিসাব পরিমাণ হয়। আর নিসাবের কম হলে এগুলোর মূল্য অন্য সম্পদের সাথে যুক্ত করে নিসাব পরিমাণ হলে জাকাত দিতে হবে। তৃতীয় প্রকার : ব্যবসায়ী সম্পদ। অর্থাত ব্যবসার জন্য রক্ষিত সম্পদ যেমন জমিন, গাড়ি, চতুষ্পদ জন্তু ও অন্যান্য সম্পদ । ¯’াবর-অ¯’াবর সকল প্রকার ব্যবসায়ী পণ্যের ওপর জাকাত ওয়াজিব।

عن سمرة بن جندب رضي الله عنه:" أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نخرج الصدقة مما نعده للبيع". ছুমরা বিন জুন্দাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে ব্যবসার জন্য রক্ষিত সম্পদ থেকে যাকাত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন । বছরান্তে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করত, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ জাকাত দিতে হবে। মেশিনারিজ বা খুচরা যন্ত্রাংশ ও এ জাতীয় ক্ষুদ্র পণ্যের ব্যবসায়ীদের কর্তব্য হল, ছোট-বড় সকল অংশের মূল্য নিধারণ করে নিবে, যাতে কোন কিছু বাদ না পড়ে। পরিমাণ নির্ণয়ে যদি জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে সতর্কতামূলক বেশী দাম ধরে জাকাত আদায় করবে, যাতে সে সম্পূর্ণ দায়িত্ত্ব থেকে মুক্ত হতে পারে। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু যথা খাবার, পানীয়, আসবাবপত্র, বাহন, পোষাক, ব্যবহার্য পণ্যের ওপর জাকাত আবশ্যক নয়।

কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,ليس على المسلم في فرسه و غلامه صدقة ‘মুসলিমদের গোলাম, বাদী, ঘোড়া এগুলোর ওপর জাকাত নেই। ’ ভাড়া দেয়ার জন্য প্রস্তুতকৃত পণ্যের ওপর জাকাত আসবে না। তবে সেগুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর নিসাব পূর্ণ হবার পর জাকাত আসবে । এখান থেকে বুঝা গেল ব্যবসার জন্য রক্ষিত জমিনের উপর ও যাকাত ওয়াজিব তফসীল যাচাই করলে দেখা যায় মুসলিমগন যত জমিনের মালিক হন তা পাঁচ ভাগে বিভক্ত ১) ভবিষ্যতে থাকার ঘর নির্মানের উদ্দেশ্যে অথবা সন্তানদের জন্য সম্পদ হিসাবে ক্রয় কৃত জমিন, এই প্রকার জমিনের কোন যাকাত আসবে না । ২) ভবিষ্যতে ঘর বা মার্কেট দোকান ইত্যাদি নির্মান করে ভাড়া দেয়ার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমিন ।

এই প্রকার জমিনের উপরও যাকাত আসবে না । তবে সেগুলো থেকে প্রাপ্ত অর্থের উপর নিসাব পূর্ণ হয়ে এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত আসবে। ৩) ফসল উতপাদনের জমিন , সে জমির উপরও যাকাত আসবেনা । হাঁ উতপাদিত ফসলের শরয়ী নিয়ম অনুযায়ী যাকাত দিতে হবে । ৪) ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমিন অর্থাত দাম বাড়ার পর বিক্রি করে দেয়ার নিয়তে ক্রয়কৃত জমিন ।

এই প্রকারের জমিনের যাকাত দেয়া ওয়াজিব । যদি সে জমিনের দাম নেসাব পরিমান হয় কেননা এই প্রকার জমিন ব্যবসার সম্পদের অন্তর্ভূক্ত । ৫) এই উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমিন যে এই জমিনের উপর বিলডিং নির্মান করে নির্মানবস্তায় বা নির্মান পূর্ণ হওয়ার পর ফ্লাট হিসাবে সে বিলডিং বিক্রি করে দিবে । বর্তমান যুগে বিভিন্ন কোম্পানি এ প্রকার ব্যবসা করে আসতেছে এই প্রকারের জমিন ও বিলডিং এর দামের উপর প্রতি বছর যাকাত আসবে। এতে অধিকাংশ ফকিহগনের এক মত রয়েছে ,কেননা ব্যবসার সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার যা যা শর্ত রয়েছে সবগুলো এখানে পাওয়া যায়।

হাফেজ মুহাম্মদ আইয়ুব ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.