আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি সিকান্দার আবু জাফর

সুখীমানুষ সময় গঙ্গার স্রোত সব সরিয়ে দেয় অতীতের গর্ভে। স্রোতের উজান বেয়ে খুব কম মানুষ বর্তমানেও বর্তমান থাকেন। এমনকি শক্ত ভিতের নোঙর ফেলে রাখেন সুদূর ভবিষ্যতে। জনতার সংগ্রাম চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই ... আমরা তো সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী, চলবার আবেগেই তৃপ্ত। যে মানুষটি তাঁর লক্ষ্য এত সুস্থির বলে জানতেন, তিনি তো সেই ভবিষ্যতে নোঙর ফেলে বর্তমানে বর্তমান থাকার মতোই মানুষ! তিনি কবি, লেখক, সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফর।

১৯১৮ সালে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় স্কুল থেকে ১৯৩৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে ভর্তি হন কলকাতার রিপন কলেজে। ১৯৩৯ সালে কলকাতায় মিলিটারি অ্যাকাউন্টসে কাজের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পরে কবি নজরুল ইসলামের পত্রিকা নবযুগে যোগ দেন ১৯৪১ সালে।

সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের নিউজ এজেন্সিতে কিছুদিন কাজ করেন। তখন অবশ্য তিনি নিজে পাশাপাশি একটি ব্যবসা দাঁড় করাবার চেষ্টাও করছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের প্রায় বছর তিনেক পর ১৯৫০ সালে তিনি আবার ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসেই একে একে নবযুগ, ইত্তেফাক, সংবাদ ও মিল্লাতের মতো বিখ্যাত পত্রিকায় কাজ করেন তিনি। সমকালের মতো বিখ্যাত প্রগতিশীল সাহিত্য মাসিকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন সিকান্দার আবু জাফর।

সমকাল মুদ্রায়ণ নামের একটি প্রিন্টিং প্রেসের প্রতিষ্ঠাতাও ছিলেন তিনি। কর্মময় জীবনে অনেক কিছুর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন। পঞ্চাশের দশকে রেডিও পাকিস্তানের শিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন। কবিতা দিয়ে বহুকাল থেকেই তলোয়ারের চেয়েও তীব্র আঘাত হানা সম্ভব হয়েছে। কবি তাঁর কবিতার ভাষায় সেই তলোয়ার ধরতেও পিছপা হননি।

সহজ করে বলে দিয়েছেন- তুমি আমার জলস্থলের মাদুর থেকে নামো/তুমি বাংলা ছাড়ো। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তিনি বহু গীত রচনা করে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল শক্ত করেছেন। তিনি যদিও কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত, তাঁর অন্যান্য সৃষ্টিও কিন্তু কম প্রাধান্য পায়নি। উপন্যাসের মধ্যে বলা যায়, পূরবী ও নতুন সকালের নাম। ছোটগল্পের সংকলনের মধ্যে আছে মাটি আর অশ্রু।

তাঁর বিখ্যাত কিছু রচনার নাম করতে গেলে বলতে হয়- প্রসন্ন প্রহর, বৈরী বৃষ্টিতে, তিমিরান্তিক, বৃশ্চিক লগ্ন ও বাংলা ছাড়ো। আর যে কথাটি না বললেই নয়- ওমর খৈয়ামের রুবাইয়্যাত তিনি বাংলায় ভাষান্তর করে পারস্য সাহিত্যের অমৃত আস্বাদনের সুযোগ করে দিয়েছেন আমাদের। কবি তাঁর জীবদ্দশায় ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান। ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট তিনি ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮৪ সালে তাঁকে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।

আমৃত্যু যে মানুষটি সরব থেকেছেন, বাংলার চেতনায় তিনি শ্রান্ত হয়ে এখন ঘুমাচ্ছেন বনানীর কবরস্থানে। তবু যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন এই কবি আমাদের মননে। সময়ের স্রোতে অতীতে ভেসে যাওয়ার মানুষ তো তিনি নন। তিনি তো সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।