আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইলেকট্রনিক্সের খুঁটিনাটি – পর্ব ১০ (সার্কিট সলভ - মেশ এনালাইসিস)

আউলা মাথার বাউলা পোলা। গত পোস্টে বলেছিলাম, কোন ইলেকট্রিক সার্কিট সলভ বা সমাধান করা বলতে বুঝায় তার বিভিন্ন পয়েন্ট বা নোডে ভোল্টেজ এর মান এবং বিভিন্ন ব্রাঞ্চ বা শাখা বা যন্ত্রাংশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কারেন্ট এর মান ও দিক বের করা। আজকের আলোচনা হবে সার্কিটের মেশ এনালাইসিস নিয়ে। “মেশ” মানে হল কোন সার্কিটের এমন একটা লুপ যার ভেতরে অন্য আর কোন লুপ নাই। মেশ এনালাইসিসেও মূলত ৩ টি সূত্র লাগবে।

ওহমের সুত্র, কার্শফের ভোল্টেজ ল আর কার্শফের কারেন্ট ল । মেশ এনালাইসিস এর মূল উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন মেশ বা লুপ এর ভেতর প্রবাহিত কারেন্ট এর মান ও দিক বের করা। তাহলেই ওহমের সূত্রের সাহায্যে বিভিন্ন ব্রাঞ্চ এর দুই প্রান্তের ভোল্টেজ গুলাও বের করা যাবে। গত দিনের এই ফরমুলাটা আজকেও কাজে লাগবে। ওহমের সূত্র থেকে, কারেন্ট = (উচ্চতর ভোল্টেজ – নিম্নতর ভোল্টেজ) / রেসিস্ট্যান্স এর মান এতক্ষন তো পুরান প্যাঁচাল পাড়লাম।

এইবার নয়া কথা। মেশ এনালাইসিসঃ বিভিন্ন মেশ এর ভেতরের কারেন্ট বের করার পদ্ধতি(৩ টি পর্যায়ক্রমিক ধাপ) ১। ধরা যাক, সার্কিটে n সংখ্যক মেশ আছে। প্রথমে এদের প্রত্যেকটির ভেতর দিয়ে যথাক্রমে I1, I2, I3 ... In কারেন্ট প্রবাহিত হচ্ছে ধরে নিতে হবে। ২।

এখন এই n সংখ্যক মেশ এ কার্শফের ভোল্টেজ ল প্রয়োগ করতে হবে। এরপর ওহমের সূত্রের সাহায্যে প্রতিটা ব্রাঞ্চ এর দুই প্রান্তের ভোল্টেজকে মেশ কারেন্ট এর মাধ্যমে ইকুয়েশন আকারে প্রকাশ করতে হবে। ৩। এখন এই ইকুয়েশন গুলা সমাধান করলেই উত্তর পাওয়া যাবে। নিচের সার্কিটটি বিবেচনা করি।

এখানে ২ টি মেশ আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় মেশ কারেন্ট কে যথাক্রমে ছোট হাতের আই দিয়ে বুঝানো হয়েছে। (i1, i2) বড় হাতের আই দিয়ে বুঝানো কারেন্ট গুলা হল বিভিন্ন ব্রাঞ্চ কারেন্ট। (I1, I2, I3) চিত্র থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, I1 = i1 , I2 = i2 এবং, I3 = i1 - i2 এই শেষের সমীকরণ বুঝতে অনেকের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা একদম সোজা।

দেখুন আমরা I3 এর পজিটিভ দিক ধরেছি উপর থেকে নিচে। আবার I3 হল i1, i2 এর মিলিত ফলাফল। যদি i2 না থাকত তবে I3 শুধু i1 ই হত কিন্তু i2 তা থেকে খানিকটা অংশ কেটে নিচ্ছে যেহেতু এর দিক i1 এর বিপরীতে। তাই i2 কে i1 থেকে মাইনাস করা হয়েছে এবং পুরা লব্ধি ফলাফলটা ধরা হয়েছে পজিটিভ I3 এর ধরে নেয়া দিকে। বামের মেশ এ কার্শফের ভোল্টেজ ল প্রয়োগ করে পাই, -V1 + R1i1 + R3(i1 - i2) = 0 or, (R1 + R3)i1 - R3i2 = V1 ----------(১) ডানের মেশ এ কার্শফের ভোল্টেজ ল প্রয়োগ করে পাই, -V2 - R2i2 + R3(i1 - i2) = 0 or, -V2 = R2i2 - R3(i1 - i2) or, -R3i1 + (R2 + R3)i2 = -V2 ----------(২) এখন (১) আর (২) সমাধান করলেই i1, i2 এবং তা থেকে I1, I2, I3 এর মান বের করা যাবে।

ইকুয়েশন সলভ এর নিয়ম ক্লাশ এইট এর গনিত বইয়ের ৮ নং অধ্যায়ে পাবেন। সাধারনতঃ প্রতিস্থাপন, অপনয়ন পদ্ধতিতেই এগুলা সলভ করা যায়। পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে তাই আমি এখানে বিস্তারিত দিলাম না, কারন এর পরেই সুপারমেশ এর বিশাল আলোচনা আছে। গতদিনের সুপারনোডের মত আজকে সুপার মেশ নিয়ে আলোচনা হবে এবার। সুপারমেশঃ যখন ২টি মেশ এর ভেতরে কোন কারেন্ট সোর্স (সাথে সিরিজে কোন রেজিস্টর থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে) কমন ভাবে থাকে, তখন এই ধরনের সার্কিট সলভ করা একটু মুশকিল হয়ে যায় কেননা, কার্শফ এর ভোল্টেজ ল প্রয়োগ করতে হলে ব্রাঞ্চ এর ২ মাথায় ভোল্টেজ জানতে হয় আর কোন কারেন্ট সোর্স এর ২ প্রান্তের ভোল্টেজ যন্ত্র দিয়ে মাপা ছাড়া আগে থেকেই বলা সম্ভব নয়।

তাই তখন একটা বুদ্ধি খাটানো হয় আর তা হল, রেজিস্টর সহ বা ছাড়া ঐ কমন কারেন্ট সোর্স কে মেশ থেকে সরিয়ে ফেলে পাশাপাশি ২ টি মেশ কে একত্র করে একটা বড় মেশ তৈরি করা হয়। একে সুপারমেশ বলে। তারপর এতে কার্শফের ভোল্টেজ ল প্রয়োগ করা হয়। নিচের ছবিতে এমন একটা সার্কিট দেখানো হয়েছে। এখন মধ্যের কারেন্ট সোর্স আর রেজিস্টরকে সরিয়ে নিলে আমরা নিচের ছবির সুপারমেশ পাই।

এতে কার্শফ এর ভোল্টেজ ল প্রয়োগ করলে পাই, -20 + 6i1 + 10i2 + 4i2 = 0 ----(৩) কিন্তু সার্কিট পুরাপুরি সলভ করার জন্য ২টি আলাদা মেশ এর মেশ কারেন্ট কে মধ্যের কারেন্ট সোর্স এর কারেন্ট এর সাথে সম্পর্কিত করতে হবে। তাই আমরা ২ টি মেশ এর সংযোগ স্থলে কার্শফের কারেন্ট ল প্রয়োগ করে পাই, (উপরের ছবির আগের ছবির নোড “ই” তে) i2 = i1 + 6 ----(৪) উপরের ২ টা সমীকরন সমাধান করলে পাওয়া যায়, i1 = -3.2A , i2 = 2.8 সমাধান তো হল। তবে আমার মনে হয় অনেকের মনেই এই প্রশ্ন জেগেছে যে, (৩) নং সমীকরনে আর ৩ নং ছবিতে কিছু একটা গলদ আছে। i1 কারেন্ট ৬ ওহম রেজিস্টরের ভিতর দিয়ে আর i2 কারেন্ট ১০ ওহম আর ৪ ওহম রেজিস্টরের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে অথচ সবগুলা রেজিস্টর ই সিরিজে লাগানো। আমরা জানি সিরিজ সার্কিটের সব যায়গাতেই কারেন্ট সমান হয় তাইলে এইডা কি হইল!!! হে হে হে হে !! এইখানে কাহিনী একটু ঘোলা।

আমরা শুধুমাত্র কার্শফের ভোল্টেজ ল খাটানোর জন্য দেখিয়েছি যে কারেন্ট সোর্সকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আসলে ওটা যায়গামতই আছে শুধুমাত্র আমরা তার ইফেক্ট কে বিবেচনা করছিনা। আগেই বলেছি যে, কোন লুপে কার্শফ এর ভোল্টেজ ল প্রয়োগ করতে হলে শুধুমাত্র সেই লুপ এ অবস্থিত প্রতিটা ব্রাঞ্চ এর ২ মাথায় ভোল্টেজ জানতে হয়। লুপ এর কোন যায়গা থেকে অন্য কোথাও শাখা প্রশাখা বের হয়ে গেলেও সেটা বিবেচনায় আনার দরকার নাই। জাস্ট ইগনোর দেম।

এটা চার নং ছবিতে দেখানো হয়েছে। লাল রঙ চিহ্নিত পুরো লুপের হিসাব করার জন্য, ভেতরের শাখা লুপের কোন দরকার নাই। তাই আমি কারেন্ট সোর্স কে বাদ দিয়েছি। বাইরের লুপে কার্শফের ভোল্টেজ ল খাটালে পাই, Vab + Vbc + Vcd + Vde + Vef + Vfa = 0 এখানের হিসাবে ভিতরের শাখার ভোল্টেজ Vbe এর কোন দরকার ই নাই। তবে আলাদা ভাবে ২ টা লুপের হিসাব করতে গেলে এটা লাগত।

তবে যেহেতু কারেন্ট সোর্স এর ভোল্টেজ জানা নাই,তাই ওটা করা যায়নি। ওভারঅল মেশ নিয়ে কাজ করা হয়েছে। আর ভিতরের লুপের কাজটা যে করা যায়নি, তাতে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা পুষিয়ে দেয়ার জন্য নোড “ই” তে কার্শফের কারেন্ট ল প্রয়োগ করে ভিতরের শাখাকে মূল হিসাবে আনার কাজটা করে নেয়া হয়েছে। সুতরাং মূল সার্কিটের হিসাবমত i1 কারেন্ট ৬ ওহম রেজিস্টরের ভিতর দিয়ে আর i2 কারেন্ট ১০ ওহম আর ৪ ওহম রেজিস্টরের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এগুলাকে ব্যবহার করেছি শুধুমাত্র রেজিস্টর গুলার ২ মাথায় ভোল্টেজ বের করার জন্য।

কেমন বুদ্ধি হ্যাঁ? আশা করি সবার কাছেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়েছে। এগুলা কখনই টিচাররা এত পরিষ্কার ভাবে বুঝান না। আমাকেও কস্ট করে নিজে নিজে বুঝতে হয়েছে। তবে এই এনালাইসিস গুলা ক্লিয়ার না হলে সার্কিটে বেশিদুর আগানো সম্ভব না। তাই সিরিজ যখন লিখছি ই, সবাইকে বুঝাতেই হবে ইনশা আল্লাহ।

সবাই ভাল থাকবেন। সামনে আসিতেছে “থিভেনিন আর নর্টন এর থিওরেম”। অপেক্ষায় থাকুন। -------------------আগের যত আকাম কুকাম--------------- ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি - পর্ব ১(সূচনা সাথে ভোল্টেজ ও কারেন্ট এর ধারনা। ) Click This Link ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ২( ভোল্টেজ -কারেন্ট শেষ পর্ব + রেজিস্টর নিয়ে আলোচনা ) Click This Link ইলেকট্রনিক্স এর খুঁটিনাটি পর্ব ৩( রেজিস্টর কালার কোড + আপেক্ষিক রোধ) Click This Link ইলেক্ট্রনিকসের খুঁটিনাটি - পর্ব ৪ (সিরিজ - প্যারালাল আলোচনা) Click This Link ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি -পর্ব ৫(ভোল্টেজ ডিভাইডার + কারেন্ট ডিভাইডার) Click This Link ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি –পর্ব ৬ ( কার্শফ’স কারেন্ট ল ) Click This Link ইলেক্ট্রনিক্সের খুঁটিনাটি –পর্ব ৭ ( কার্শফ’স ভোল্টেজ ল ) Click This Link ইলেক্ট্রনিকসের খুঁটিনাটি - পর্ব ৮ (ওয়াই-ডেল্টা কানেকশন) Click This Link ইলেকট্রনিক্সের খুঁটিনাটি – পর্ব ৯ (সার্কিট সলভ - নোডাল এনালাইসিস) Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।