প্রয়োজনে যে মরতে জানে না , বেঁচে থাকার অধিকার তার নেই। প্রয়োজনে যে লড়তে জানেনা শুদ্ধ শান্তি প্রাপ্তির অধিকার তার নেই। বেচেঁ থাকার অর্থই হল লড়াই। লড়াই আর লড়াই। চারদিকে শুধু যুদ্ধ আর যুদ্ধ।
কেউ লড়ছে পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকান নিয়ে সাত সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের নিত্য প্রয়োজনের বিরুদ্ধে। কেউ বা একটি মাত্র পেটের চাহিদার বিরুদ্ধে লড়ছে হাফ ভাড়ার বাসে চড়ে টিউশানীর হাতিয়ার নিয়ে, অথচ পকেটে ডিগ্রীর বোঝা। কারো কারো আছে সুখ ও প্রাচুর্যের অসুখ, এরা লড়ছেন কালো টাকার অস্ত্র গোপনে লুকিয়ে। আবার, মাসের শেষে দারুন এক খানা উপন্যাস নেশার খেয়ালে কিনে ফেলে ভাবেন, যাক সামনের মাসটা চা-সিগারেট আর মাছ মাংসের পরিমান কমালেই সাম্য আসবে ; এমনও দেখেছি কাউকে কাউকে।
একবার এক মহাপুরুষের কথা জানলাম, ইনি লড়ছেন বাঙ্গালীর সাহিত্য-পাঠে অনীহার বিরুদ্ধে।
ইনার সংসার হলো বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র; নাম? নাইবা বললাম, সকলেই তো জানেন।
এমনিভাবেই আজ সমাজের প্রতিটি স্তরে চলছে লড়াই। এ লড়াই হল প্রতিষ্ঠার অথবা আত্নার তৃপ্তি আস্বাদনের অথবা উভয়ের-ই। আমরা সবাই যোদ্ধা আজ। অথচ মজার ব্যপার হল আমরা অধিকাংশই যুদ্ধ করছি না জেনে।
আর যারা যুদ্ধ করছি-না জেনে তাদের বিজয়ের স্বপ্ন যে কত বড় দু:সাহস তা ক্রীড়া উন্নয়ন তহবিলের লটারী না জেতা ব্যক্তি মাত্রই জেনে থাকবেন। আর এ কারনেই, যুদ্ধ করছি ঠিকই কিন্তু না জেনে করছি বলেই লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ ঘর্মাক্ত দিন শেষে “স্বপ্নে প্রাপ্ত গাছ-গাছড়ায়’’ অলৌকিক মুক্তি খোজেঁ। খোজেঁ না তার আজকের দিনের অগ্রগতির হিসাব। দৈনন্দিন লড়াইয়ের অগ্রগতির হিসাব টা আমরা রাখিনা জন্যই আজ ও আগামীকাল আমাদের এক। বরং কিছু কিছু হ্মেত্রে দুঃখজনক।
অবশ্য সমাজের এ টু জেড ছাব্বিশ জনই যে এরকম তা নয়। আগেই বলেছি আমাদের চারপাশে সংখ্যালঘু একটি শ্রেণী আছে যাঁরা যুদ্ধ করছেন জেনে শুনেই। ফলে কখনো প্রাপ্তি ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে চলছে তাদেঁর জয়তরী জয়দ্বীপ লক্ষ্যে। এরাঁই জয়ী, এরাঁই নমস্য। আজ আমি এই নমস্যদের জানাই সাধুবাদ আর সেই সাথে অজ্ঞান-যোদ্ধাদের ডাক দিযে যাই বলিষ্ঠ হাতে যুদ্ধের মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে এগিয়ে যাবার; শুধুমাত্র, মজুতদারের ছেলে মজুতদার এবং রিকশাঅলার ছেলে রিকশাঅলা হয়ে, সমাজের নির্দিষ্ট একটি শ্রেণীতে স্থবির হয়ে থাকবার জন্যে নয়।
বর্তমান বিশ্ব আজ অ্যাকাউনটিং এর বিশ্ব। হিসাব নিকাশ এবং ব্যালান্সের বিশ্ব। যদি অগ্রগতির হিসাব টা আজ ফাঁকা রেখে শুধুই কর্তব্য করে যাই তবে ফলটা তার কি দাঁড়াবে? নৌকা বাইছি শক্ত হাতে, কঠোর শ্রমে কিন্তু আমি জানিনা থামবো কোথায়, কতদুরে- সেই হিসেব নেই পকেটে আমার, তবে আপনিই বলুন অহেতুক চলমান স্রোতের ঘূর্নিপাক ছাড়া আমার ঠিকানা আর কিইবা হতে পারে? সুতরাং আগেই জানতে হবে, আমার লক্ষ্য কি এবং কোথায়? অতঃপর যোগাড় কর হাতিয়ার। লেগে যাও যুদ্ধে। যদি মৃত্যূ আসে আজ; জেনো তুমি জয়ী না হলেও পরাজিত নও।
যদি বা রণকৌশলে ভুলও থাকে; পিছিয়ে এস। মনে রাখতে হবে, পশ্চাদপসরণ করলেই একজন যোদ্ধা পরাজিত নয় বরং পরাজয় নিশ্চিত জেনেও মৃত্যূমুখে এগিয়ে যাওয়া শুধু মূর্খামিই নয় অন্যায়ও বটে। মূর্খতা এই অর্থে যে, পাগলও নিজের ভালো বোঝে। আর অন্যায এই অর্থে যে, জেনেশুনে একটি প্রাণ তুমি ধ্বংশ করতে পারোনা, কেননা, সৃষ্টির ক্ষমতা তোমার নেই। পরাজয় এবং তার ফলে মৃত্যূ নিশ্চিত জেনেও যে যোদ্ধা এগিয়ে যায়- তার যাত্রায় আমি শঙ্কিত হই এবং আশঙ্ক চিত্তে প্রার্থনা করি যেন আর কোন নবীন (যোদ্ধা অর্থে সকলেই নবীন) তার অনুগামী না হয়।
আর যে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ফিরে আসে তার জন্য আমার উৎসাহ ও সাহস। কারণ ফিরে আসা অর্থ ততক্ষণ পর্যন্ত পরাজয় নয় - যতক্ষন পর্যন্ত সে পুরনো রণকৌশল পরিবর্তন করে নতুন রূপে যুদ্ধ ক্ষেত্রে গমনের স্বপ্ন দেখে। ফিরে আসা অর্থ বরঞ্চ এক নব-সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করা। তাছাড়া একজন যোদ্ধা, আমি মনে করি, ততক্ষন পর্যন্ত পরাজিত নয়, যতক্ষন সে নিজে বিশ্বাস না করে যে সে পরাজিত। আর দুটো কথা এখানে না বললেই নয়, তাহলো- Everything in this world is just for you but you have to pay for that. আর- It’s never too late to start something new.
আগেই বলেছি যে, আজকের চারপাশের লড়াই হল প্রতিষ্ঠার; অথবা আত্মার তৃপ্তি আস্বাদনের অথবা উভয়েরই।
এই উভয় প্রকার লড়াই যারাঁ একত্রে চলিয়ে যাচ্ছেন সর্বাগ্রে তাঁদেরই প্রতি আমার মাথা নোয়ানো শ্রদ্ধা। অতঃপর যারা শুধুমাত্র আত্মার তৃপ্তি আস্বাদনের জন্যে লড়ে যাচ্ছেন দূর্বার - ইনারা একটু পাগলাটে আমরা সবাই জানি; তাই ইনারদের সবটুকু দিয়ে আমার শুধু ভালবাসতে ইচ্ছা করে। পরিশেষে, যাঁরা লড়ছেন শুধুই প্রতিষ্ঠার লড়াই-তাঁদের জন্য রইল আমার জীবনের লক্ষ্য পুনঃ নির্ধারনের আহবান আর কিছু সমবেদনাও বটে। হ্যাঁ সমবেদনাই বটে। কেননা ইনারা আত্মার ক্ষুৎ-পিপাসাকে জয় করতে চান অর্থ দিয়ে।
কী বিচিত্র ভয়ঙ্কর বর্বরতা! কী হীনমন্যতা! মনুষ্য জনমের কি অপব্যয়!
ইনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, যা করছেন করুন শুধু জ্ঞানের এবং প্রজ্ঞার সাথে করুন। যা ভাবছেন ভাবুন, শুধু স্পষ্টবাদী হোন। প্রতিষ্ঠার যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সাথে জ্ঞানপুষ্ট ভাবনাটাকেও মেলান। নইলে, ভাবনাগুলো যে শুধু ‘জাবনা’ই হয়ে থাকবে।
সেই সাথে সাথে আমার স্বপ্ন আমাকে আশাবাদী করে তোলে।
ভাবতে শেখায়, এই বাংলাতেও জেগে উঠুক সব্বাই। নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী সমরাঙ্গন বাছাই করে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি লড়াইয়ে। তারপর রোজ রোজ ঘরে ফিরে; আসুন হিসাবে বসি, লড়াইয়ে জেতার আর কত বাকী ! যার যার পৃথক পৃথক ক্ষেত্রে যে যেখানে যেভাবেই লড়াই করছেন, করুন, শুধু একটু ভেবে করুন। যা করবেন করুন জ্ঞানের সাথে। এই জ্ঞানের জন্যে রাশি-রাশি পুস্তক পাঠেও কোন ফায়দা হবে না যদি না ভেতর থাকে সৌন্দর্যবোধ।
আর ভেতরে যে সৌন্দর্যবোধ রয়েইছে তার প্রমান তো দেখাই যাচ্ছে দু’একটি ঘটনায় যেমন, ইয়াসমীন ও সীমা হত্যা প্রতিবাদ। তবে, কথা হলে এই যে, একরকম দু একটি ঘটনায় হয়ত মোমের আলো পাওয়া যায় কিন্তু সত্য-সূর্য রাতের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা তো চাই সূর্য।
আর তাই আসুন ভেতরের সত্যবোধটাকে শানিয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ি কোষমুক্ত তরবাররীর মতো, ঝক ঝকে নতুন। দু’ একটি জাগরণ নয়, আমরা চাই পুরো অবকাঠামোর খোল-নলচে পাল্টে একে নতুন করে সাজাতে।
পুরনোর ঢিবি’র উপর, নতুন প্রাসাদের পত্তন যে এক অলীক কল্পনা - তা আমি আর নতুন কি বলব? আমি শুধু চাই, নতুন করে এক পুরোনো মূল্যবোধ শেয়ার করতে। আর সৌন্দর্যবোধের জন্য যে লড়াই তা’ই এই মূল্যবোধের মূল কথা। সেজন্যে আসুন, আমরা সকলে মিলে আজ হতে শুরু করি এক নতুন উৎসব। সৌন্দর্য বোধকে জাগানোর উৎসব-বিবেক বাবাকে জাগানোর উৎসব। আপনি আমি হয়তো জন্মদাতার শাসনকে এক সময় ভয় পেতাম বা এখনো অনেকে পাই।
আবার অনেকে পূজার্ঘ দেন ‘অর্থবাবা’র পদতলে। অথচ ‘জন্মদাতা’ বলুন আর ‘‘অর্থ’’ কিংবা অন্য যে কোন ‘বাবা’র থেকে বিবেক-বাবা অনেক অনেক বড়। তার শাসন বড় কড়া। সারাজীবনের সার্বক্ষনিক শাসনকর্তা সে।
আসুন, আমরা সকলে মিলে এই ‘পিতৃ-দেব’ কে পূজা অর্ঘ্য নিবেদনের একটা প্রথা প্রবর্তন করি।
তাহলে হয়ত জাগ্রত হবে আজ বিবেক (সকল)। কেননা, এই জাতির আছে এক হুজুগে রোগ। এরা টিভির নাটক দেখে, উপভোগ করে এবং বাকের ভাই’র ফাঁসির বিরুদ্ধে মিছিল করে। এরা দেখে চরিত্রের ব্যক্তিটিকে অথচ, চরিত্রের অন্তরালে যে ঘটনা তার সামাজিক বাস্তব প্রয়োগের বেলায় দর্শকেরা বোবা-কালা। নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন কি লিখলেন তা কোন বড় কথা নয়, তার ব্যক্তিগত জীবন কেমন- এটাই হয়ে দাঁড়ায় আলোচ্য ইস্যু।
এখানেও চলে আসে চরিত্র, ঘটনা নয়। এই হল আমার জাতির হুজুগের মাত্রা।
তাই আমি ভাবি, বিবেক বোধ জাগ্রত করার জন্য কিছুটা নাটকীয়তা এবং কিছুটা হুজুগ মিশিয়ে যদি সমাজে আজ চালু করা যায় ‘বিবেক-পূজা’ তাহলে হয়ত অনেকেরই মনে পড়বে ‘বিবেক’ নামে একটি সম্পদ তার নিজেরো আছে। বছরের অন্যান্য ধর্মীয় বা সামাজিক প্রথাগত উৎসবের মতো করেই ‘বিবেক-পূজা’র প্রচলন হোক।
মানুষ জাগুক।
জেগে উঠে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে নামুক সবাই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।