আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুকরণের লেবাস এবং বোধের ভদ্রতা

আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল ঢাকা চট্টগ্রাম যাতায়াতে সুবর্ণ বা মহানগরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগী-গুলোয় ঘটতে থাকা প্রতিদিনের ঝগড়ার একটি কারণ নিয়ে আমার পোস্ট’এ একজন মন্তব্য করেছিলেন যে আমরা আসলে অপরিচিতদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করি। তিনি বলেছিলেন, “কাশ্মীরে একজন অপরিচিত মানুষের সাথে খুব ভাল ব্যাবহার করে সবাই। কারণ অখান থেকেই পরিচয়ের শুরু। আর আমরা অপরিচিত লোক দেখলে অযথাই খারাপ ব্যবহার করি। “ আমি মনে করি একেবারে ঠিক মন্তব্য করেছিলেন তিনি! আমরা অপরিচিত মানুষের সাথে সত্যিই খারাপ আচরণ করি।

পরিচিত/ স্বজনের কথা ভিন্ন, কিন্তু অপরিচিত মানুষের সাথে নিজের স্বার্থের এক বিন্দু নিয়েও আপোষ করতে রাজি নই! কেন? এর প্রথম কারণ হতে পারে আমরা মনে করি যে আমার সুবিধেগুলো অন্য সকলে অন্যায়ভাবে ভোগ করার চেষ্টা করছে (উড়িয়ে দেই না যে এমনটা কেউ করে না)। দ্বিতীয়ত, এবং কদর্য ঝগড়াগুলো শুরু হওয়ার প্রধানতম কারণ, আমরা মনে করি যে ভাল (ভদ্র ভাষায়) করে বললে লোকে শুনে না (ভালো কথায় কাজ হয় না)। সঠিক? হয়তো! কিন্তু তাই বলে কি যাচ্ছেতাই ব্যাবহার করবো একজন অপরিচিত মানুষের সঙ্গে! কেন এমনটা হয়? কি আমাদের এভাবে আচরণ করতে পরিচালিত করে? আমাদের শিক্ষায় গোলমাল নেইতো! এইযে “ভালো কথায় কাজ হয় না” এটা আমাদের কে শেখালো? আমিতো মনে করতে পারি না আমার বাবা-মা বা স্কুলে কোন শিক্ষক আমাকে/আমাদের কখনো বলেছিলেন “বাছা ভাল কথায় কাজ হয় না। খারাপ কথায় হয়”। আমি মনে করতে পারি না এই কথাটা আমি প্রথম কখন এবং কার মুখে শুনেছিলাম।

আমি নিজেও যে এই বাক্যের ব্যবহার কখনো করিনি তা হলপ করে বলতে পারি না। এবং অসংখ্যবার মানুষকে বলতে শুনেছি! তাহলে কি সমাজ শেখাল? নাকি সময়? আমরা, বাংলাদেশিরা, কি সবসময়ই এমন ছিলাম? নাকি কালক্রমে আমরা এতে পরিণত হয়েছি? হয়তো সত্যিই ভাল কথায় কাজ হয় না; অন্তত আমাদের সাথে! কেন হয় না? আর ভাল কথায় কাজ না হলে সবসময় খারাপ কথা বলতে হবে এই সিদ্ধান্তে কিভাবে পৌঁছে গেলাম? আমরা যে সবসময়ই অন্তত ভাষা-গত দিক থেকে সুশীল ছিলাম তা আমার মনে হয় না! যেমন দুঃখিত শব্দটি যে সরি (Sorry) শব্দের ভাষান্তর, তা আমার মনে হয়। আমার সন্দেহ হয় যে “দয়া-করে” শব্দটি কি আমরা আদৌ কোনদিন ব্যাবহার করতাম কিনা, যদি না "প্লিজ" শব্দটি জানতে পেতাম? সুপ্রভাত, শুভরাত্রি এইসব বলতাম কোন দিন? নৈমিত্তিক বলি কখনো? আমাদের ভাষায়ও “দয়া-করে” শব্দ’টি/(দুটি?) এমনকি এখনো অনেকটা ব্যঙ্গাত্মক’ ভাবে বা শ্লেষের সাথে ব্যাবহার করে থাকি। যেমন “দয়া করিয়া কি আমার কাজটা করে দিবেন?”... বা এই জাতীয়। তারমানে কি এই নয় যে আমাদের জাতি হিসেবে এখনো হাতেখড়ির কোর্সই শেষ হয় নাই! এখনো নিজেদের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয় তাই শিখিনী ; অনুকরণ করি মাত্র! টিয়া, ময়না; কথা শেখা পাখিগুলো কিন্তু আসলে কথা শেখে না, অনুকরণ করে মাত্র।

কথা বললেও তারা যেমন জানে না আসলে তারা কি বলছে; আমরাও তেমনি! অনুকরণ করি মাত্র; বোধ করি না। কেন বলছি এই কথা? বলছি কারণ এখন সময় হয়েছে সত্যিকারের ভদ্র হওয়ার। সবাই শেখে, আমরাও শিখছি। কিন্তু এখনো শেখা শেষ হয়ে যায়নি! “দয়া করে” বা “দুঃখিত” এইসব বললেই ভদ্র হওয়া হয়ে গেল না! ভদ্র হতে বোধের জন্ম হওয়া প্রয়োজন; চেতনার বিকাশ প্রয়োজন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।