আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ব জুড়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে অস্ত্র ব্যবসা

এসো তরুন আমরা সবাই এক হই, আর একবার যুদ্ধ করি এ পুরানো রাজানীতির সংগে ড়বিশ্বব্যাপী অস্ত্র ব্যবসা রমরমা হচ্ছে। এ বাণিজ্য দিন দিন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। রাসায়নিক, জীবাণু ও পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েই চলছে। মরণঘাতী এসব অস্ত্র বেচাকেনা বন্ধে বিশ্বব্যাপী আজও কোনো চুক্তি গৃহীত হয়নি। অস্ত্র ব্যবসা প্রসারের ফলে বেসামরিক লোকজন সহিংসতার শিকার হচ্ছে।

কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা দাবি করেছে, অস্ত্র সহজলভ্য হওয়ায় এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে প্রতিবছর হাজার হাজার লোক হতাহত হচ্ছে। অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার দীর্ঘ ১৫ বছরের দরকষাকষির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিউইয়র্কে একত্রিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী অস্ত্র বাণিজ্য সীমিত করতে আন্তর্জাতিক কোনো চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে। বৈঠকে উপস্থিত অনেকেই মনে করছেন মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে অস্ত্রের বিস্তার রোধ করার কোনো বিকল্প নেই।

তবে কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, লাভজনক এ বাণিজ্য সীমিতকল্পে কোনো চুক্তিতে পৌঁছা সহজ হবে না। চুক্তি হলেও কার্যকর হবে কি হবে না তা নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। নিউইয়র্কে চলমান আলোচনা সম্পর্কে মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে দরকষাকষির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে এক দেশ থেকে অন্য দেশে অবাধে অস্ত্রের স্থানান্তরের কারণে ঝুঁকির পরিমাণ নিরূপণ করা এবং এ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক চুক্তিতে পৌঁছা। চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোকে খতিয়ে দেখতে হবে, কারা ভবিষ্যতে অস্ত্রের ব্যবহার করবে এবং তা কী উদ্দেশ্যে করবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনে যদি এসব অস্ত্রের ব্যবহার হয়ে থাকে তবে চুক্তি কোনো কাজে আসবে না।

জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ কার্যালয় এ বিষয়ে আলজাজিরাকে জানায়, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে সম্মতিতে পৌঁছা বা আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়া নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তবে বৈঠকে উপস্থিত বেশিরভাগ রাষ্ট্রের প্রতিনিধি মনে করেন, অস্ত্র বাণিজ্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা গ্রহণ করা উচিত। জাতিসংঘের জরিপ অনুযায়ী সশস্ত্র সহিংসতায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৪০ হাজার কোটি ডলার লোকসান হচ্ছে। অস্ত্রের রফতানি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত আইন না থাকায় একদিকে যেমন লোকজনের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ছে, তেমনি অস্ত্র আমদানিতে রাষ্ট্রগুলোর ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাত্র ৫২টি দেশে অস্ত্র বেচাকেনা সংক্রান্ত আইন বিদ্যমান।

বাকি দেশগুলোতে অবৈধ পন্থায় অস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের শাস্তির বিধান নেই। স্টকহোমে অবস্থিত আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানায়, বিশ্বব্যাপী প্রচলিত অস্ত্র বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচটি দেশ। এগুলো হচ্ছে-যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া। ২০০২-২০০৬ সালের তুলনায় ২০০৭- ২০১১ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী অস্ত্র বাণিজ্য ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো চাইছে এমন কোনো সমঝোতায় পৌঁছতে, যাতে লোকজন তা মানতে বাধ্য হয়।

চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোকে নিজ নিজ দেশে চুক্তির অনুমোদনে আইন করতে হবে। এমনটি সম্ভব হলেই বিশ্বব্যাপী অস্ত্র বাণিজ্যের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডেরিল কিমবল বলেন, অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে গ্রহণযোগ্য কোনো নীতিমালার ব্যাপারে বিশ্ব রাষ্ট্রগুলোর একমত হওয়া জরুরি। চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে অস্ত্রের স্থানান্তর রোধ করা সম্ভব না হলেও দায়িত্বজ্ঞানহীন অস্ত্র ব্যবসায়ী রাষ্ট্রগুলোর মনোভাবে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। মৌলিক কোনো আইন করা গেলে সেসব রাষ্ট্র তাদের কাজের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে বাধ্য হবে।

তিনি আরও বলেন, মার্কিন সরকার ইতোমধ্যে হালকা অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদসহ ছোট অস্ত্রের আমদানি ও রফতানি সীমিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে অন্য রাষ্ট্রগুলোও একই ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করবে। এদিকে চুক্তির বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন এটিকে অস্ত্র সংরক্ষণ অধিকার বিষয়ে দেশটির সংশোধিত নীতিমালার প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছে। তবে চুক্তির অগ্রগতি নিয়ে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেছেন। তারা বলছেন অস্ত্রের লাভজনক বাণিজ্য থেকে অনেক দেশই সরে আসতে চাইবে না।

অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র প্রচলিত অস্ত্রের রমরমা বাণিজ্যে সুবিধা পেয়ে আসছে। এ খাত থেকে ২০০০-২০০৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মুনাফা ১৬৬০০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাপী অস্ত্র সরবরাহে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। এই সময় তারা ৭৪০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে। ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার ফাউন্ডেশনের গবেষক টেড ব্রোমান্ড চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের অনেক সদস্য রাষ্ট্র জাতীয় স্বার্থে সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র হস্তান্তর করে থাকে। সুতরাং কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর তাদেরকে অস্ত্র বাণিজ্য থেকে সরিয়ে আনবে না। তবে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তির ফলে অস্ত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো এবং ব্যবসায়ীরা অস্ত্র বিক্রির আগে পরিণতির কথা বিবেচনা করতে বাধ্য হবে। এর ফলে বহু মানুষের জীবন রক্ষা পেতে পারে। সূত্র: বিবিসি ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.