আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাহাঙ্গীরনগরে আবার অচলাবস্থা!!!

আপডেট আসেছ... জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন নিয়ে আবারো অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্যের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা ও আন্দোলনকারিদের প্রতিহত করার কর্মসূচীতে যেকোন সময় আবারো অপ্রীতিকর ঘটনা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিশ্ববিদ্যারয় অধ্যাদেশ ভঙ্গ করে পর্যায়্ক্রমে ডীন, সিনেট, রেজিস্ট্রার্ড গ্রাজুয়েট ও ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন না দিয়ে সরাসরি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন স্থগিতের দাবিতে সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদের আন্দোলন ৫ম দিনের মত অব্যাহত রয়েছে। ক্লাস পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে চলছে স্থবিরতা। সব মিলিয়ে আবাসিক এ ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ফের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

যেভাবে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের সূত্রপাত: মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে জাবি উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর। বিগত তিন বছরে অনির্বাচিত থেকে অবৈধ নিয়োগ, ছাত্রলীগকে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি, জীব বৈচিত্র ধ্বংস ও জুবায়ের হত্যার ইন্ধনসহ অনেক অনিয়ম করে প্রশাসনিক রদবদলের মাধ্যমে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেন। শিক্ষক নিয়োগ সহ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত যেসকল শিক্ষকদের তিনি ব্যবহার করেছেন তারাই এখন শরীফ এনামুল কবীরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলছেন। অনিয়মের কারণে তার বিরুদ্ধে ছাত্র শিক্ষকদের সম্মিলিত আন্দোলনের ফলে গত ২০ মে নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। দায়িত্ব নেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ সমুন্নত রাখতে নানামূখী উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ ও মনোনিত সিনেটররা তা কোন ভাবেই হতে দিচ্ছেন না।

সর্বশেষ উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নের তারিখ ঘোষণা তারই একটি। প্রাক্তন ভিসির অনুসারী ৬০ ভাগ অবৈধ সিনেটর নিয়ে তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে গণতান্ত্রিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী শিক্ষকদের মাঝে। ধারাবাহিক ভাবে ডীন, সিনেট, রেজিস্ট্রার্ড গ্রাজুয়েট ও ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন দিলে আধিপত্য হারাবেন এই ভয়ে নির্বাচন সংক্রান্ত ওই সিন্ডিকেট বৈঠকে সরাসরি উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের মত দেন শরীফ এনামুল কবীর সমর্থিত ওই সকল অবৈধ সিনেটরগণ। এসব অনিয়মের সমর্থন দিচ্ছেন বর্তমানে উপাচার্য পদপ্রার্থী অপর শিক্ষক নাটক নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আফসার আহমেদ। কেন এই নির্বাচন অবৈধ: একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক।

ধরুন একজন প্রধান 'ক' কে নির্বাচিত করতে চাই। এক্ষেত্রে তার অধীনস্ত মোট ভোটার ৮৬জন। এখন যদি ওই ভোটারদের একজন অবৈধ হয়। তবে কি 'ক' নির্বাচন কখনো গণতান্ত্রিক বা বৈধ হবে?? কখনোই না। ঠিক একই ঘটনা জাবি উপাচার্য নির্বাচনের ক্ষেত্রেও।

দেশের চার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বপ্রথম জাবিতে এই নির্বাচন সকল মহলে কাছে ইতিমধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু যে সকল সিনেটরগণ এতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন তাদের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ। মেয়াদোত্তীর্ণ সিনেট মেম্বারদের উপস্থিতিতে ৭৩’র ১১ (১) ধারা মোতাবেক আগামী ২০জুলাই ‘তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেল’ মনোনয়নের তারিখ নির্ধারন করা হয়েছে। ঘোষিত তারিখে যে ৮৬জন সিনেটর তাদের ভোটাধিকার প্রদান করবেন যাদের মধ্যে ৫২জন অবৈধ!!! ঘোষিত উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের মোতাবেক ১৯(১)ক ও ১৯(১)আই ধারা অনুযায়ী ৩৪জন সিনেট সদস্য বৈধ। কিন্তু ১৯৭৩ এর ১৯ (১)ই উপধারা মোতাবেক চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত ৫জন, ১৯৭৩ এর ১৯ (১)জি উপধারা মোতাবেক শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক মনোনিত ৫জন ও ১৯৭৩ এর ১৯(১)এফ উপধারা মোতাবেক সিন্ডিকেট কর্তৃক মনোনিত ৫জন্য সিনেট সদস্য বর্তমানে মেয়াদোতীর্ণ।

এছাড়া জাকসু থেকে মনোনিত ৫ সিনেট সদস্যের পদ শূন্য হয়ে আছে বিগত ২০ বছর এবং রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে ২৫জন সিনেট সদস্য ১৪ বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছেন। এখন বলুন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এ নির্বাচন কতটা বৈধতা পাবে??? শিক্ষকদের আন্দোলন: উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন চান আন্দোলকারী শিক্ষকরাও। তবে তা হতে হবে ধারাবাহিকতা মেনে। যেভাবে উল্লেখ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে। এই দাবিতে ৬ষ্ঠ দিনের মত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।

শিক্ষকরা এখন কর্মবিরতি সহ প্রশাসনিক ভবন অবরোধ, সর্বাত্মক ধর্মঘটসহ অনশন করছেন। ‘শপথ নিয়ে’ অনশনে জাবি শিক্ষকরা জাবিতে শিক্ষক পরিষদের ধর্মঘট চলছে সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচির কারণে বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া জাকসু ও ৭ সাংষ্কৃতিক কর্মীর ওপর পদত্যাগী উপাচার্য সমর্থিত ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার বিচার চেয়ে গতকাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাংস্কৃতিক জোট নেতাকর্মীরা। এতে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন দল ও মতের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত থেকেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।

পরে রাত ১২টায় উপাচার্য তাদের সাথে সেখানে এসে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। প্রশাসনের নির্দেশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক সমাজের পদত্যাগী উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীর সমর্থিত অংশের শিক্ষকরা নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যে কোন সময়ে তাদের মাঝে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরবর্তী আন্দোল: আগামী কাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দিন ক্যাম্পাসে ২ হাজারেরও অধিক পুলিশের সমাগম ঘটানো হবে বলে জানা গেছে।

পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সিনেট হলে সিনেটরদের নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হবে। এ দিকে যেকোন মূল্যে এ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। এর জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতেও রাজি তারা। যদি ক্যাম্পাসের বাইরে কোথাও কিংবা অন্য কোন উপায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হয়, তাহলে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হবে।

নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরও সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে এমন আশঙ্কা ক্যাম্পাসবাসীর। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.