আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাহাঙ্গীরনগরে কী হইতেছে?

সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com

কাল রাত নয়টা থেকে আজকে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও সিন্ডিকেট সদস্যদের ঘেরাও করে রেখেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুই মাস ধরে এক বেদনাদায়ক আন্দোলন চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক আহমেদ সানি নিজের বিভাগের একাধিক ছাত্রীকে নিপীড়ন ও উত্যক্ত করেছেন। ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছে।

অভিযোগের পর ঘটনা তদন্তের জন্য সত্যাসত্য যাচাই কমিটি গঠন করা হইছে। সেই কমিটি আহমেদ সানির বিরুদ্ধে ছাত্রীদের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু একটি কমিটির প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হয়ে আবার একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হইছে। সে কমিটির রায়ও আহমেদ সানির বিরুদ্ধে গেছে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে নাই।

নানা টালবাহানা করে তারা দুই মাস সময় পার করে দিছে। আজকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কইছেন, তাদের আরও সময় দরকার। শিক্ষার্থীদের দাবি স্পষ্ট ও পরিষ্কার। ১. অভিযুক্ত ও তদন্তে প্রমাণিত শিক্ষক আহমেদ সানির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার। ২. বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি যৌননিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা বাস্তবায়ন।

ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বহিষ্কার এর আগেও ঘটেছে। বিবিএ ও বাংলা বিভাগের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর আন্দোলনের মুখে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হইছে। ১৯৯৮ সালের ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৯৯, ২০০১ সালের বিভিন্ন আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসাবে আমরা দেখছি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনগুলো সবসময় ধর্ষক-নিপীড়ক-নির্যাতক-খুনী-সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নেয়। এদের রক্ষার শেষ চেষ্টাটুকুও তারা বাদ দেয় না। কিন্তু স্বাভাবিক কারণে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিপীড়কের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটাই প্রত্যাশিত ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা কাঠামোয় সরকারি দলের ক্যাডার, শিক্ষকরা উচ্চতর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। ফলে, তারা নিপীড়নের ঘটনা ঘটনা ঘটালে কর্তৃপক্ষ তাদের পক্ষেই অবস্থান নেয়। আহমেদ সানি নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান হিসাবে বাড়তি কিছু সুবিধা পাচ্ছেন। এবং পরপর দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি আরও একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কিছুতা আতঙ্কিত হয়েছে। তাদের কাছে মনে হয়েছে, এভাবে চলতে থাকলে আরও অনেক নিপীড়ক শিক্ষককে বলি দিতে হবে।

তাই তারা এবার নিপীড়নের বিরুদ্ধে ইতিবাচক কোনো ভূমিকা নিতে পারেনি। ফলে, জাহাঙ্গীরগনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে এবারের শিক্ষক সমিতি। নাটক ও নাট্যততত্ত্ব বিভাগে এর আগেও শিক্ষক ও ছাত্রদের দ্বারা ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিভাগটির নিজস্ব ধরন ও শিক্ষকদের কড়া নিয়ন্ত্রণের কারণে সে অভিযোগগুলো বাইরে আসতে পারেনি। এবার শিক্ষার্থীরা এতটাই আক্রান্ত বোধ করেছেন যে আন্দোলনের প্রথম স্ফূলিঙ্গ তাদের মধ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে।

নাটক ও নাট্যতত্ত্বের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যরা যোগ দিয়েছে। নারী শিক্ষার্থীরা এবার অন্য অনেক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় ও সোচ্চার হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরের ধর্ষণ ও নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনে আহমেদ সানির শাস্তি পাওয়াটা বিশেষভাবে জরুরি। তিনি কোনো ভাবে ছাড় পেয়ে গেলে সেটা একদশকের ধর্ষণ-নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলনের স্পিরিটকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আজকে কইছেন, যৌননিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা প্রণয়নের জন্য তাদের আরও সময় দরকার।

তার কথা পুরোপুরি হাস্যকর। জাহাঙ্গীরনগরের ধর্ষন বিরোধী আন্দোলনের এক দশক পূর্ণ হইতে চললো। এই একদশকে আমরা বহুবার নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালার দাবি করছি। বহুবার নীতিমালার খসড়া দেওয়া হইছে। একাধিকবার কমিটি গঠিত হইছে।

কিন্তু ধর্ষক-নিপীড়কদের সমর্থন দেয়ার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবারই টালবাহানা করে ব্যাপারটা ধামাচাপা দিছে। আজকের প্রথম আলোয় দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন ও শিক্ষামন্ত্রণালয় বলছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌননিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা করতে চায়। তাইলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আরও সময় চান কেন বুঝা বড়ো ভার। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলাতে অহরহ যৌননিপীড়নের ঘটনা ঘটতেছে। জাহাঙ্গীরনগর এইখানে ব্যতিক্রম যে, সেইখানে নিপীড়নের ঘটনা ঘটলে প্রতিবাদ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও হয়। কিন্তু অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিপীড়িতের ভাষা কখনো আওয়াজ পায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের স্বার্থে নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা দরকার। যে নীতিমালার অধীনে একটি টাস্কফোর্স নিয়মিত শিক্ষার্থীসহ অন্য সবার অভিযোগ পর্যালোচনা তদন্ত করবে। নিয়মিত ব্যবস্থা নিবে।

নিপীড়কের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য শিক্ষার্থীদের আর ক্লাশরুম ছেড়ে বের হয়া আসতে হবে না। সহপাঠীদের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার দায় মেটাতে শিক্ষার্থীদের মাসের পর মাস আন্দোলন করতে হবে না। ফলে, শুধু জাহাঙ্গীরনগর নয়, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য যৌননিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা দরকার। এখনই দরকার।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.