আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পদ্মাসেতুর জন্য টাকা সংগ্রহঃ গণ-চাঁদাবাজির ক্ষেত্র যাতে তৈরী না হয়

সবকিছুই চুকিয়ে গেছে গালিব! বাকি আছে শুধু মৃত্যু!! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে সংগঠনের কর্মী আবদুল্লাহ আল হাসান (সোহেল রানা) মারা গেছেন। রোববার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গতকাল সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। একটি বিশেষ সূত্রের উল্লেখ করে দৈনিক প্রথম আলো জানায় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ১২ জুলাই থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। ‘আমরাই নির্মাণ করব পদ্মা সেতু’ এই স্লোগান নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ তোলার উদ্যোগ নেন তাঁরা।

ওই দিন দুপুরে ৫০০ টাকা দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য এম আবদুস সোবহান। এরপর তিন দিন ধরে বাক্সে টাকা জমা পড়ে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, নেতা-কর্মীদের সবাই বাক্সে টাকা রাখছিলেন না। এই টাকা সংরক্ষণের জের ধরে রোববার বিকেলে ছাত্রলীগের নেতা আখেরুজ্জামান তাকিম ও তৌহিদ আল তুহিনের মধ্যে বাগিবতণ্ডা হয়। এ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।

অবশ্য একই রিপোর্টে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন-কে উদ্ধৃত করে ঘটনাটিকে অসত্য উল্লেখ করে বলা হয় তারা স্বেচ্ছায় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য চাঁদা তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছাত্রলীগের সভাপতিও এটিকে পূর্বপরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রের অংশ বলে উল্লেখ করেন। অবশ্য ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান এর মতে পদ্মা সেতুর জন্য টাকা তোলা নিয়েই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। তথ্য সূত্র (Click This Link) উপরের সংবাদ পর্যালোচনার ভিত্তিতে হত্যাকান্ডটি শুধুমাত্র ‘পদ্মা সেতুর জন্য টাকা তোলার দ্বন্দ্বের কারণে হয়েছে’ এমনটি সুনির্দিষ্টভাবে বলা উচিত হবেনা। হত্যাকান্ডটি পূর্বের কোন দ্বন্দ্বের কারণেও সংঘঠিত হয়ে থাকতে পারে।

অবশ্য এ কথাটি সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় পূর্বের দ্বন্দ্বে সাথে ‘পদ্মা সেতুর জন্য টাকা তোলার দ্বন্দ্ব’ উপযাজকের ভূমিকা পালন করে এ হত্যাকান্ডটি সংঘঠিত হয়েছে। তবে যে কারণেই এ হত্যার ঘটনা ঘটে থাকুক না কেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘আমরাই নির্মাণ করব পদ্মা সেতু’ এ স্বপ্নের প্রতি এটি একটি অশনী সংকেত। তবে এটা প্রধানমন্ত্রীর জন্য যতটা না চিন্তার তার চেয়ে বেশি চিন্তার এদেশের সাধারণ জনগণের জন্য। আল্টিমেটলি জনগণকেইতো দুর্দশাটা পোহাতে হয়। আমি এখানে আশংকা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সমাজের অন্যান্যক্ষেত্রেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দল ও দলের অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা পদ্মাসেতুর জন্য টাকা তোলার অভিযানে নেমে পড়বেন।

টাকাটা তারা যতোটা না তাদের সংগঠন বা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পকেট থেকে তুলবেন তারচেয়েও ঢের বেশি তোলার চেষ্টা নিবেন সাধারণ জনগণের পকেট থেকে তোলার জন্য। শাসক দলের নেতাকর্মীরা চাইলে জনগণের এমন বুকের পাটা নেই যে তারা তা দিতে অস্বীকার করবেন। তবে এভাবে জোর উত্তোলিত টাকার কত অংশ মূল একাউন্টে যাবে সেটা নিয়ে বরাবরই একটা সন্দেহ থাকবে। উপরন্তু টাকার ভাগাভাগি নিয়ে তার নিজ দলের লোকজনের মধ্যে দাঙ্গা, হত্যা সংঘঠিত হবে। এতে করে পুরো প্রক্রিয়াটিতেই একটি বিশৃংখল অবস্থার সৃষ্টি হবে।

বলা যায় না, সবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজের পায়ে দাড়ানোর স্বপ্নটিরও অপমৃত্যু হতে পারে। দেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাই অনুরোধ থাকবে পদ্মা সেতুর টাকার তোলার বিষয়টিতে দয়া করে একটু সাবধানতা অবলম্বন করুন। দয়া করে এ বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরী করুন। অনুগ্রহ করে টাকা তোলার প্রক্রিয়া থেকে আপনার দল ও সংগঠন-কে দুরে রাখুন। দল ও সংগঠন নিজস্ব তহবিল থেকে কোন টাকা দিতে চাইলে অবশ্য সেটা ভিন্ন কথা।

তেমনি প্রাতিষ্ঠানীক চাঁদাবাজিও যাতে শুরু না হয় সেটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কোন প্রতিষ্ঠান যদি নিজের তহবিল থেকে টাকা দিতে চায় দিতে পারে। কিন্তু এ টাকা সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের একদিনের বেতন বাবদ কর্মচারীদের নিকট থেকে নিয়ম করে আদায় করতে পারেন না। কর্মচারীরা নিজ ইচ্ছামতো যদি দেয় সেটা ভিন্ন কথা। সর্বেপারি, জনগণের ইচ্ছানুযায়ী টাকা দেওয়ার জন্যতো একটি ব্যাংক হিসাব খোলাই হয়েছে।

স্ব স্ব ইচ্ছানুযায়ী যে যা পারে সে সেখানে দিবে। গণ-চাঁদাবাজিরতো এক্ষেত্রে কোন প্রয়োজন দেখিনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.