আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুসলিম স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন মসজিদে নববী

মুসলিম স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন মসজিদে নববী মসজিদে নববী মানে নবীর মসজিদ। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মদিনা শরিফে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। পবিত্র কাবা শরিফ মসজিদে হারামের পরেই মদিনা মসজিদের অবস্থান। মহানবীর হিজরতের আগ পর্যন্ত মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) ইয়াসরিবের নাম পাল্টে রাখেন মদিনা।

হিজরতের পর মুসলমানদের নামাজের জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক নির্মিত হয় মদিনা মসজিদ। এ মদিনা মসজিদটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ৬২২ খ্রিঃ নির্মাণ করেন। অনেক আরব ঐতিহাসিক মদিনা মসজিদের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাদের মধ্যে বালাজুরী অন্যতম। তার মতে, মহানবী কর্তৃক মদিনা মসজিদ ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত হয়।

মসজিদটি নির্মাণ করতে ৭ মাস সময় লেগেছিল। ঐতিহাসিক ইবনে হিসামের মতে, ৭ মাসের অধিক সময় এবং ৬২৩ খ্রিঃ মসজিদটি নির্মিত হয়। প্রকৃতপক্ষে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরের পর থেকে শুরু হয়ে ৬২৩ খ্রিঃ মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মদিনা মসজিদের নির্মাণকাল নির্ধারণ করা হয়। মদিনা মসজিদের মাধ্যমে ইসলামী শিল্পকলার প্রকাশ ঘটে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মদিনা মসজিদের নির্মাণের জন্য নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দু’জন বালকের নিকট হতে জমি ক্রয় করেন।

অতঃপর মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন প্রতিটি কোণ হতে তীর নিক্ষেপ করে যে পরিমাণ জায়গা পাওয়া গেল তা হলো একটি ক্ষেত্র। বর্গের প্রতিটি বাহুর পরিমাণ হয় ১০০ হাত বা ৫৬ গজ। অর্থাত্ মদিনা মসজিদের প্রাথমিক আয়তন ছিল ১০০–১০০ হাত বা ৫৬–৫৬ গজ। ইবনে সাদ ও দিয়ার বকরী বলেন, মসজিদের ভিটি ও দেয়ালের নিম্নভাগ ৩ হাত পর্যন্ত প্রস্তর নির্মিত ছিল। প্রথম পর্যায়ে মদিনা মসজিদ রৌদ্র শুষ্ক ইট দ্বারা নির্মিত হয়।

এই রৌদ্র শুষ্ক ইট বাকী আল-খাবখাবা উপত্যকা হতে আনিত কাদা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। তখন মদিনা মসজিদের দেয়াল ছিল ৭ হাত উঁচু। ছাদকে শক্তিশালী ও মজবুত রাখার জন্য মদিনা মসজিদের ৩৬টি খেজুর গাছকে স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। মসজিদের ছাদ নির্মিত হয়েছিল খেজুর পাতা দিয়ে। ছাদকে সুন্দর করার জন্য, রৌদ্র ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খেজুর পাতার ওপর কাঁদামাটির আস্তরণ দেয়া হয়েছিল।

সে সময় মদিনা মসজিদের প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ছিল। প্রধান প্রবেশ পথটি ছিল দক্ষিণ দিকে। এটি দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করত এবং বের হত। পশ্চিম দেয়ালে ছিল মসজিদের দ্বিতীয় প্রবেশ পথ। এটি বাবে রহমত নামে পরিচিত তৃতীয় প্রবেশ পথটি পূর্ব দেয়ালে ছিল।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এটি দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতেন। এজন্য এটির নাম হয় বাব উন নবী। ঐতিহাসিক উইনসিংকের মতে, মদিনা মসজিদের দরজা প্রস্তর নির্মিত ছিল। বর্তমানে মদিনা মসজিদ আগের চেয়ে অনেক সম্প্রসারিত ও নতুন ডিজাইনের। প্রাচীন মদিনা মসজিদের পার্শ্বেই ছিল মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর বাসগৃহ।

মক্কা হতে মদিনায় হিজরতের সময় ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে হিজরতকারীদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ ও মুসলমানদের নামাজের সুব্যবস্থার নিমিত্তে জমি ক্রয় করা হয়। যার বৃহদাংশে মসজিদ ও অল্পাংশে হুজুরা নির্মিত হয়। ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মসজিদের নির্মাণ কাজে হাত দেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় আরবের বিখ্যাত কুরাইশ বংশের হাশেমী গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। মক্কা হতে মদিনায় হিজরত মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও পৃথিবীর মানচিত্রে ‘মদিনা’ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

এ স্বাধীন মদিনা রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান ছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)। তিনি মসজিদে নববী হতেই ইসলাম প্রচার, রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মদিনায় হিজরত থেকে হিজরী সাল বা বছর গণনা শুরু হয়। জেনে রাখা প্রয়োজন, মদিনা সনদ হল বিশ্বের ইতিহাসে লিখিত সর্বপ্রথম সংবিধান। মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (স.) এখানেই সমাহিত করা হয়।

মদিনায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর রওজা হওয়ায় সকল মুসলমানের নিকট মদিনা মসজিদ পবিত্র ও সম্মানিত। একমাত্র মদিনা মসজিদেই সর্বপ্রথম মেহরাব, মিম্বার, আজান দেয়ার স্থান। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.