আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! নীলুর এই প্যাঁচ-প্যাঁচ করে কান্নার স্বভাবটা আমার একদম ভাল লাগে না । কিরে ভাই ! এভাবে কান্নার কি হল ? কোন সমস্যা হয়েছে, আমার কোন আচরনে কষ্ট? পেয়েছিস আমাকে বল !
না বললে আমি কিভাবে বুঝবো ?
তা না সামনে এসে মুখ গোমরা করে থাকবে !
প্যান-প্যান করে কাঁদবে !
আজও দেখা হবার পর থেকে তাই শুরু করেছে ! প্রথমে মুখ গোমড়া ছিল কিছুক্ষন আগে থেকে কান্না শুরু হয়েছে !
আমি জিজ্ঞেস করলাম
-কাঁদছিস কেন?
-কাঁদছি না । কাঁদবো কেন ? কার জন্য কাঁদবো ? আর আমি কাঁদলে তোর কি ?
নীলু অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল । ওর কণ্ঠে অভিমানের একটা সুর বোঝাই যাচ্ছিল । আমি বললাম
-কি বললি ? আবার বল ।
আমার দিকে তাকিয়ে বল । আমি কাঁদলে তোর কি না যেন বললি ।
গলায় একটু কাঠিন্য এনেই বললাম । নীলু আমার দিকে তাকাল । কিন্তু কিছু বলল না ।
জানতাম ও বলতে পারবে না ।
ওর চোখের পানি চলমল করছে । আটকানোর চেষ্টা করছে । জানি না কতক্ষন আটকে রাখতে পারবে ! নীলু চোখ সরিয়ে নিল । আমি খানিকটা যত্ন নিয়ে ওর মাথায় হাত রাখলাম ।
কি রুক্ষ চুল !
একটুও যদি যত্ন নেয় নিজের প্রতি এই মেয়েটা !! আমি মাঝে মাঝে আশ্চার্য হই আবার মাঝে বিরক্তও হই । এই বয়েসের মেয়েরা নিজের প্রতি কতই না যত্নশীল হয় ।
বিশেষ করে নিজের চেহারার প্রতি । কি করলে নিজেকে আর একটু সুন্দর লাগবে এই চিন্তায় বিভোর থাকে । কিন্তু এই মেয়েটি একদমই তাদের বিপরীত ।
-আচ্ছা তোর চুল গুলো রুক্ষ থাকে কেন সবসময় ? কেমন পেত্নীর মত লাগে ! একটু যত্ন নিতে পারিস না ?
নীলু এবার আমার দিকে তাকাল । ওর চোখের দিকে তাকাতেই দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল । ওর চোখের ভাষায় আমি আমার জবাব পেয়ে গেলাম । ওর চোখ যেন বলল তুই কেন এই প্রশ্নটা করলি ? তুই খুব ভাল করেই জানিস এই প্রশ্নের জবাব ।
সত্যি তাই ।
আমি ভাল করেই জানি ।
আসলে খুব ছোট বেলা থেকেই নীলু বড় অনাদরে বড় হয়েছে । ওর মা মারা গিয়েছিল অনেক ছোট বেলায় । বাবার কাছেই মানুষ । নীলুর আরো বড় দুটো ভাইবোন আছে ।
কিন্তু কি এক বিচিত্র কারনে তারা কেউই নীলুকে ঠিক দেখতে পারতো না ।
এমন কি নীলুর বাবাও তাই । ওর প্রতি কেমন একটা ছাড়াছাড়া ভাব । খুব ছোট বেলা থেকেই নীলুকে নিজের কাজ নিজেকেই করতে হয়েছে । এমন অনাদরে বেড়ে ওঠা একটা মেয়ে কিভাবে নিজের প্রতি এতো যত্নশীল হয় ?
আমি ওর চোখের জল মুছে দিলাম ।
বললাম
-নিজের প্রতি একটু যত্নতো নিবি তাই না ? তা না হলে ছেলেরা তো তোকে পছন্দ করবে না ।
-আমার দরকার নাই পছন্দ করার !
-আহা ! নিজে নিজের যত্ন নেবে না আবার ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদবে এই ভেবে যে আমাকে কেউ পছন্দ করে না । আমাকে কেউ ভালবাসে না ।
নীলু কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো এক ভাবে । তারপর বলল
-চেহারাটাই কি মেইন জিনিস ? ভালবাসতে হলে কি চেহারা ভাল হওয়াই লাগবে ? মন বলে কিছু নেই ।
আমি হাসলাম । বললাম
-তোর মন সুন্দর কি সুন্দর না এটা তো বাইরে থেকে দেখা যায় না । চেহারাটা দেখা যায় । আর প্রথম ক্ষেত্রে মনের থেকে চেহারার ভূমিকাটা বেশি ।
-কিন্তু যারা আমার মন কে জানে ,চেনে, তাদের ক্ষেত্রেও কি একই কথা ?
আমি কথাটার উত্তর দিলাম না ।
কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । আমি জানি নীলুর শেষ কথাটা আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলা । কারন ওর বন্ধু বলতে কেবল আমি ।
আমার সাথে ছাড়া ও আর কারো সাথেই ঠিক ভালভাবে মিশে না । আর সত্যি বলতে কি আমার ভাল বন্ধু বলতে ও ছাড়া আর কেউ নেই ! আমি নীলুর হাত ধরে বললাম
-চল ।
-কোথায় যাবো ?
-তোকে পার্লারে নিয়ে যাই !
অন্য সময় হলে হয়তো নীলু আপত্তি করতো কিন্তু আজ করলো না । চুপচাপ আমার সাথে রিক্সায় উঠে বসল । রিক্সা চলছে নীলু আমার হাত ধরে বসে আছে চুপচাপ ।
হঠাৎ নীলু বলল
-তুই অনুরুমাকে প্রপোজ করেছিস ?
অনুরুমা আমাদের ডিপার্টমেন্টে নতুন ভর্তি হয়েছে । নিউ ফাস্ট ইয়ার ।
সত্যি বলতে কি মেয়েটা আসলেই দেখতে সুন্দর । মোটামুটি সব সিঙ্গেল ছেলেরাই অনুরুমার পেছনে লাইন লাগিয়ে দিল । আর আমাদের ক্লাসের কিছু ছেলে রুমার ছড়াল যে আমি সেই লাইনের টিম লিডার ।
এই কথা শুনেই নীলুর যত প্যানপ্যানী শুরু ।
নিজের মনের কথাটা একবারও মুখ ফুটে বলবে না আর আমি কিছু করতে গেলেই দোষ !
-কই বললি না তো ?
-কি বলবো ? তবে মেয়েটা কিন্তু আসলেই সুন্দর ।
-ও সুন্দর আর আমি পেত্নী ?
নীলু কেমন একটা রাগী কণ্ঠে বলল কথাটা ।
-যাই হোক ও নিজের চেহারার প্রতি যত্ন তো নেয় । ওর চুল দেখেছিস কত সুন্দর ! তোর মত না !
আমি জানতাম এই কথা শুনে ও রেগে যাবে । রেগে গেলেও । বলল
-থাক তুই তোর অনুরুমাকে নিয়ে ।
আমি তোর সাথে যাবো না ।
এই বলে ও রিক্সা থেকে নেমে পড়তে চাইল । আমি ওকে দুহাত দিয়ে থামাতে থামাতে বললাম
-আরে আরে করিস কি ? এখান থেকে লাফ মারলে হাত পা ভেঙ্গে যাবে । দেখ লুলা ল্যাংড়া মেয়ে কিন্তু কেউই পছন্দ করে না ।
আমার কথা শুনে নীলু বেশ আহত হল ।
কাঁদতে লাগল ।
আসলে ও এতোক্ষন বুঝতেই পারে নি যে আমি ওর সাথে ফান করছি । নীলুর হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম
-তুই এতো বোকা কেন রে ? এতো দিনেও আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারিস নি ? তুই যেদিন থেকে আমার প্রেমে পরেছিস আমি সেই দিনই টের পেয়েছি । আর তুই টের পেলি না আমার মনের কথাটা ?
নীলু একভাবেই তাকিয়ে রইল আমার দিকে । আমি বললাম
-আজ তোকে পার্লারে নিয়ে যাচ্ছি কেন জানিস ?
-কেন ?
-কারন আজ বিকালে তোকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবো ।
আর আমি চাই না আমার মা তোর এই পেত্নী মার্কা চেহারা দেখে ভয় পাক ! বুঝেছিস !
নীলু কেমন যেন একটু রাগ করতে গিয়ে হেসে ফেলল । কি মায়াময় সেই হাসি !
এই এতোক্ষন পর ওর মুখে হাসি দেখে সত্যি ভাল লাগল নিজের কাছে । আমার একা নীলুটা কি চমৎকার ভাবেই না হাসে ! মার পছন্দ না যাবে কোথায়....
বিঃদঃ লেখাটা কয়দিন আগে অল্প কিছুক্ষনে জন্য পোষ্ট করেছিলাম । ১০-১৫ মিনিট ছিল । তারপর ড্রাফট করে ফেলেছি ।
তাই কারো কারো পড়া মনে হতে পারে ।
ফেবু লিংক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।