আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল চোখের চিকিৎসায় আস্থার প্রতীক......

এক সময় চোখের চিকিৎসায় বেশির ভাগ রোগী যেতেন দেশের বাইরে। বিশেষ করে রেটিনা, কর্নিয়া-ছানি অপারেশন করতে ভারতে যেতেন সবাই। কিন্তু এখন চোখের সব ধরনের চিকিৎসা ও জটিল অপারেশন হচ্ছে দেশেই। এমনকি ভারতের রোগীও চিকিৎসার জন্য আসছেন বাংলাদেশে। চিকিৎসা সেবায় ইতিবাচক ও যুগান্তকারী এই পরিবর্তন এনেছে ইস্পাহানী ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতাল।

বর্তমানে চোখের রোগীর আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে আইকিউ লেন্স দিয়ে অত্যন্ত নিখুঁত ও নিরাপদে চোখের ছানি অপারেশন হচ্ছে। সব মিলিয়ে চোখের ১৩টি রোগের চিকিৎসা হয় ইসলামিয়ায়। ইতিমধ্যে চোখের কর্নিয়া, রেটিনা অপারেশনে হাসপাতালটি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভারতের হায়দারাবাদের এলভি প্রাসাদ আই ইনস্টিটিউট, মাদরাজের অরবিন্দ আই হাসপাতাল এবং শঙ্কর নেত্রালয়কে অনুসরণ করা হচ্ছে।

এলভি প্রাসাদের কাছ থেকে দক্ষতা বৃদ্ধি ও ফেলোশিপ করে এখন সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, এই হাসপাতালকে মানবতার সর্বোচ্চ সেবায় কাজে লাগাতে প্রতিনিয়তই চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে একে সেন্টার অব এক্সিল্যান্স হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে। ইতিমধ্যেই এ লক্ষ্যে নতুন সংযোজন করা হয়েছে ইস্পাহানী আই ব্যাংক।

আইনগত ভাবে মৃত মানুষের কাছ থেকে চোখ সংগ্রহ করা হয়। এ জন্য মানুষকে চক্ষুদানে উদ্বুদ্ধ করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত পাঁচ শ’র বেশি মানুষ চোখ প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন। অন্ধত্ব দূর করাসহ চোখের সব চিকিৎসা দিতে ১৯৬০ সালের ২৯শে জুলাই ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের যাত্রা শুরু। সম্পূর্ণ অ-লাভজনক ও আর্ত-মানবতার কল্যাণের উদ্দেশে সমাজসেবী ও ইস্পাহানী গ্রুপের কর্ণধার এমএ ইস্পাহানী এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত এ হাসপাতাল শুধুমাত্র চোখের জন্য বিশেষায়িত একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসার জন্য সরকারের আর্থিক কোন অনুদান থাকে না। রোগী থেকে আয় দিয়েই পরিচালিত হয়। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আউটডোরে এবং হাসপাতালের কার্যক্রম চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। এখানে চিকিৎসা নিতে চাইলে গেইটে থাকা ১৬ নং কাউন্টার থেকে ২০ টাকার টিকিট কেটে বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে হয়।

প্রাথমিক চিকিৎসায় ভর্তি বা অপারেশনের প্রয়োজন হলে চিকিৎসক রোগীকে ভর্তির পরামর্শ দেন। তখনই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির জন্য আলাদা ফি লাগে না। এর জন্য আগে হেল্প ডেস্ক থেকে সব তথ্য জেনে নিতে হয়। একটি টিকিটে এক মাস পর্যন্ত সেবা পাওয়া যায়।

ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে চোখের যে কয়টি শাখায় চিকিৎসা হয় সেগুলো হচ্ছে গ্লুকোমা, রেটিনা, কর্নিয়া, ক্যাটার‌্যাক্ট, লোভিশন, ইনজুরি, শিশু চক্ষু রোগ ইত্যাদি। চোখের প্রায় সব চিকিৎসাই হয় এখানে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ১,৫০০ রোগী সেবা নেন। বছরে গড়ে ৫ লাখের বেশি রোগী চোখের চিকিৎসা নিচ্ছেন এখান থেকে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় সেবা দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

এ জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রোগীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি কোন কোন বিভাগে এক সপ্তাহও সময় লেগে যায়। এ কারণে ঢাকার বাইরের রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয় বেশি। এখানে প্রতি মাসে গড়ে ২০টি কর্নিয়া সংযোজন হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিশন শেয়ার থেকে কিনে আনা হচ্ছে।

এগুলো অত্যন্ত উচ্চ মানসম্পন্ন। এর আগে সন্ধানীর কাছ থেকে কেনা হতো। এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০ লোকের কর্নিয়া সংযোজন করা হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে ৩০০০ থেকে ১৫০০ টাকা। অন্যান্য জটিল অপারেশনও করা হয় এখানে।

সে ক্ষেত্রে রোগের ধরনের উপর নির্ভর করে খরচের বিষয়। প্রতি রোববারে হয় রেটিনাল ডিটাচমেন্ট সার্জারি। সার্জারির মাধ্যমে ওইদিন ডায়াবেটিস রোগীদের চোখের ভেতর ইনজেকশন দেয়া হয়। প্রতিদিন এখানে ৩-৪টি ট্যারা-বাঁকা চোখ সার্জারির মাধ্যমে সোজা করা হয়। এটিতে খরচ লাগে ৮০০০ থেকে ১০০০০ টাকার মতো।

রেটিনা অপারেশনে সর্বোচ্চ খরচ ৩৫০০০ টাকা। এছাড়া, প্রতিদিন ৪টা অপারেশন থিয়েটারে ৮০’র কাছাকাছি অপারেশন হয়। চোখের নেত্রনালী অপারেশনের জন্যও প্রচণ্ড ভিড় থাকে। দিনে গড়ে অপারেশন হচ্ছে ২৫টি। চোখের মণিতে মাংস বাড়ার কারণে অপারেশন হয় ৬ থেকে ৮টি।

তবে হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে কোন ওষুধ দেয়া হয় না। সব ধরনের পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে হাসপাতালে। পরীক্ষার ধরন অনুযায়ী ব্যয় হয়। তবে তা বাইরের যে কোন হাসপাতালের চেয়ে অনেক কম। কোন কোনটিতে অর্ধেকে হয়ে যায়।

২২০ শয্যার এই হাসপাতালে মোট কেবিন ৯টি এবং ওয়ার্ডের সংখ্যা ১০টি। কেবিন ভাড়া ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা। আর ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ২৫০০ টাকা। ওয়ার্ডে প্রথম ৩ দিন ভাড়া দিতে হয় না। তিন দিন পর থেকে ওয়ার্ডভেদে ১৪৫ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হয়।

কেবিন অথবা ওয়ার্ডে সিট পাওয়ার জন্য অনুসন্ধান ডেস্কে যোগাযোগ করতে হয়। হাসপাতালে নিজস্ব ওষুধের দোকান রয়েছে। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। তবে চশমা বিভাগ খোলা থাকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া বাকি সব দিনই খোলা থাকে।

গরিব ও অসহায় রোগীদের সেবার জন্য ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগ সহায়তা করে। আবেদন ও সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজন অনুযায়ী চশমা, নগদ টাকা, খাদ্য, বস্ত্র, যাতায়াত খরচ, অপারেশন খরচ দেয়া হয়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ ভাগ রোগী এখান থেকে কম খরচে চিকিৎসা সুবিধা নেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।