আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিষ্ঠুর শহরে একি শুধু নিষ্ফল প্রতিবাদ?

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য গতকাল সন্ধ্যায় একটু ঝির ঝির বৃষ্টি এই প্রচণ্ড দাবদাহে নগরবাসীকে কিছুটা শান্তি দিয়েছে, আর এই শান্তির বারি মাথায় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শত শত দরিদ্র শিক্ষক কাক ভেজা হয়ে ঠক ঠক করে কেপেছেন। তাঁদের মুখে হাসি নেই, কান্নাও হয়তো গেছে শুকিয়ে। আমরা কেউই জানিনা তাঁদের প্রতীক্ষার প্রহর আদৌ শেষ হবে কিনা। এই প্রতীক্ষার শেষে কোন সুখবর নিয়ে তাঁরা ফিরতে পারবেন কিনা? অনেকে মনে করতে পারেন, শিক্ষকদের আন্দোলনের দাবী মেনে নেবার আহবান শুধুই মানবিকতার কারণে। তা নয়।

এই দাবীর গভীর সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে। অনেক গবেষণায় এটা আজ প্রমানিত, প্রাথমিক শিক্ষার হার অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। প্রাথমিক শিক্ষা বাড়লে মাথাপিছু জি ডি পি বাড়তে থাকে। ফিলিপ স্টিভেন্স এবং মারটিন ওয়েলস ২০০৩ সালে এডুকেশন অ্যান্ড ইকনমিক গ্রোথ প্রবন্ধে দেখিয়েছেন; প্রাথমিক শিক্ষার হার যদি ১ শতাংশ বাড়ে তবে মাথা পিছু জি ডি পি বাড়ে ০,৩৫%। এই শিক্ষায় শুধু ব্যক্তি উপকৃত হয়না, বরং ব্যাপকভাবে উপকৃত হয় সমাজ এবং রাষ্ট্র।

গুয়াতেমালাতে বিশ্ব ব্যাংকের ২০০৫ সালের পলিসি রিসার্চে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের যোগসূত্র খুঁজতে যেয়ে একই ফলাফল পাওয়া গেছে। গুয়াতেমালাতে ১% প্রাথমিক শিক্ষা বৃদ্ধির হারের সাথে মাথাপিছু জি ডি পি বৃদ্ধির হার পাওয়া গেছে ০,৩৩%। গবেষণার উপসঙ্ঘার; প্রাথমিক শিক্ষায় বিনিয়োগে যে ধরণের রিটার্ন পাওয়া যায় তা ফিক্সড ক্যাপিটালে বিনিয়গের সমান। সেকারণে প্রাথমিক শিক্ষাকে বিনিয়োগের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করা যায়। ২০০৫ সালের সার্ক কনফারেন্সে ব্যাইনবেস এবং নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা সম্পর্কে যে রিপোর্টটি উত্থাপন করে, সেখানেও ইউ এস এ আই ডির রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে বাংলাদেশের ৪০% শিশু কখনো পূর্ণাঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পায় না।

এই সাত বছরে অবস্থার নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে বলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। রিপোর্টে শিক্ষা খাতে অপ্রতুল বরাদ্দের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। শিক্ষা খাতে দক্ষিন এশিয়ার গড় বরাদ্দ জি এন পি র ৩,৫% আর সেসময় বাংলাদেশের বরাদ্দ ছিল ২,৩%। এই হারে বরাদ্দ থাকলে শিক্ষায় ব্যয় বরাদ্দের সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা অধরাই থেকে যাবে। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য সরকারের প্রত্যাশিত বরাদ্দ কোন “ব্যয়” নয় বরং একটি টেঁকসই বিনিয়োগ, যার ফল শুধু শিক্ষক আর তাঁদের ছাত্ররা নয় পাবে সমগ্র রাষ্ট্র।

এই আঙ্গিকে বিষয়টাকে দেখলে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হতে পারে। চাকরির সরকারীকরণ প্রাথমিক শিক্ষার মুল কাণ্ডারি শুধু শিক্ষকদেরই ন্যূনতম সচ্ছল জীবন নিশ্চিত করবেনা, বরং এই খাতে একটি বিপুল প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। এই প্রণোদনা টেঁকসই জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জরুরী খাত শিক্ষাতে একটা নতুন উৎসাহের ঢেউ তুলবে। যার শুভ ফল পাবে সমাজ এবং রাষ্ট্র। এই জরুরী জাতীয় কর্তব্য পালনে সংশ্লিষ্ট সবাই যত দ্রুত এগিয়ে আসবেন ততই মঙ্গল।

আজকেও মুখ ভার করে আছে আকাশ, হয়তো আকাশ ভেঙ্গে নামবে বৃষ্টি, ভেসে যাবে চরাচর, বৃষ্টি পড়বে শহীদ মিনারে, বৃষ্টি নামবে ওখানে অনেক আশায় বুক বেঁধে বসে থাকা মানুষগুলোর শরীরে, কপাল মুখ বেয়ে নামবে বৃষ্টির ধারা- প্রকৃতি পরম মমতায় মুছিয়ে দেবে কান্নার দাগ। এখনো আশায় আছি –এই শিক্ষকেরা সুখবর নিয়ে ফিরে যাবেন, যেখানে প্রতীক্ষায় আছে তাঁদের প্রিয় পরিবার আর ছাত্ররা। (এই লেখাটি ১৯ মে ২০১২ আমাদের সময়ে প্রকাশিত। ছবিটি ডেইলি স্টার এর সৌজন্যে)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।