আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও দেশিয় কয়লার ভবিষ্যত

খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও দেশিয় কয়লার ভবিষ্যত হাসান কামরুল একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহিত সরকার প্রায় ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে সম্প্রতি তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। চুক্তি স্বাক্ষরের দিন থেকে পরবর্তী সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে কেন্দ্র তিনটি উৎপাদনে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও সরকার এতোদিন বলে আসছিল রেন্টাল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ¯হাপন যথার্থ ছিল। কিন্তু এ নিয়ে অব্যাহত সমালোচনা সরকারকে পিছু ছাড়েনি। ফলশ্রুতিতে ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সমালোচনায় এক সময় সরকার বেশ প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠে।

জ¦ালানী উপদেষ্টা সমালোচনাকারীদেরকে ঙ্ঘান পাপী, অঙ্ঘ বা দেশ বিরোধি বলতেও কুন্ঠাবোধ করেনি। তবে সরকার মনে করে ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ¯হাপনে ঠিক কাজটিই করেছে। কারন সরকারের নিকট নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পুরন করা হলো মুল কথা বা যথার্থ প্রয়াস। ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্হাপন ছাড়া অতিদ্রুত বিদ্যুতের উন্নতি করা সম্ভব নয়। নির্বাচনী কমিটমেন্ট পুরণেই সরকার বেশি চিন্তিত ।

তাই দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সহজ পহ্না সরকারকে বেছে নিতে হয়েছে । নতুন করে কয়লা ভিত্তিক বা গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলতে তিন বছর বা তারও অধিক সময়ের প্রয়োজন । যদি সরকার এতো সময় ব্যয় করতো তাতে সরকারের উপর জনগ’েনর আস্হা হ্রাস পেতো । ত¦রিৎ সুফল জনগনকে পৌছে দেয়ার লক্ষ্যেই ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নিয়ে সরকার শুরু থেকেই মনোযোগী হয়ে উঠে। আর এও অনুমান করা হয় এসব রেন্টাল কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর কারনেই কয়লীনীতি প্রণয়ন বা চুড়ান্তকরন প্রবলম্বিত হয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাবকেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা বলে ভাবা হয়। যদিও সরকার সাড়ে তিন বছরের মাথায় এসে বাস্তবতা উপলদ্ধি করতে পেরেছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দেয়া যায়। আমরা যারা বিদ্যুৎ ও জ¦ালানী নিয়ে লেখালেখি করি তারা কিন্তু শুরু থেকেই সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহনের কথা বলে আসছিলাম। ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিপরীত ¯্রােতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের উদ্যোগ নেয়া জরুরিই ছিল বটে।

ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি যদি কয়লা বা গ্যাসভিত্তিক বড়ো দু‘চারটা বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়াস নেয়া যেতো । তাহলে এতোদিনে বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে চলে আসতো। বড় তিন চারটা কেন্দ্র থেকে যদি গোটা ৩ বা ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করা যেতো তাহলে ভাড়া ভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে আনা সহজ ছিল। পাশাপাশি বিদ্যুতেরও একটা ¯হায়ী সমাধানে পৌছানো সম্ভব হতো। সত্যিকার অর্থে ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান যুক্তিসমেত কোন ব্যাপার নয়।

কারন ৫০ বা ১০০ মেগাওয়াটের ২০ বা ১০ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সর্বমোট যোগ হবে ১ হাজার মেগাওয়াট। তারপর ছোট ছোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে প্রায়ই বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে ১শত মেগাওয়াটের ১০ টি কেন্দ্রের মধ্যে যদি দুটি কেন্দ্র অনুৎপাদিত অব¯হায় থাকে তাহলে প্রডাকশন কমে আসবে। কিন্তু ১হাজার বা দেড় হাজার মেগাওয়াটের বড় একটি কেন্দ্র নির্মানে নির্মানকৌশল স্বাভাবিক ভাবেই আধুনিক ব্যব¯হায় গড়ে তোলা হয়। কারন প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করে যদি কেন্দ্রটি উৎপাদনে যেতে না পারে তাহলে বিনিয়োগকারীর ক্ষতি সবচেয়ে বেশি।

তাই বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবলের সমাবেশ ঘটানো হয় ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোন থেকে। যা ছোট কেন্দ্রগুলোর বেলায় একেবারেই অনুপ¯িহত। তাই পৃথিবীর সবদেশেই বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অস্তিত্ব সর্বাধিক। উদাহরনস্বরুপ জাপানের দিকে তাকালে দেখা যাবে জাপানে ১ হাজার মেগাওয়াটের নীচে কোন বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র কেন? এমন প্রশ্নে যদি আসি তাহলে বলবো এ ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক কম।

যদি উৎপাদন খরচ কম হয় তাহলে ব্যবহার খরচও কম হবে এটাই স্বাভাবিক। জনগন যখন কম টাকায় বিদ্যুৎ পাবে তখন জনগনের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরে আসবে। ছোট ছোট কল কারখানা অল্প পুজিতে দাড় করানো সম্ভব হবে। যা বেকারত্বের হার কমিয়ে স্বাবলম্বি জনসংখ্যার অনুপাত বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। সর্বপরি দেশের অর্থনীতির ভিত কঠিন হবে।

কারন জ¦ালানী ব্যবহার যদি সাশ্রয়ী না হয় তবে সে জ¦ালানী জনগনের জন্য বোঝা হয়ে দাড়ায়। জনবান্ধব জ্বালানী ব্যব¯হা গড়ে তুলতে না পারলে গোটা দেশের জ্বালানীর উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে। জ্বালানী হতে হবে সাশ্রয়ী, সাধারন জনগনের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে জ্বালানী ব্যবস্হা গড়ে তুলতে না পারলে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। যা দেশের জ্বালানীতে অ¯িহরতা সৃষ্টি করবে। তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলাই শেষ কথা নয়।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা কোথায় থেকে আসবে? এ কয়লা কি আমদানী নির্ভর হবে? এমন প্রশ্নে যদি আমদানী নির্ভর কয়লার উপর ভিত্তি করে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রয়াস নেয়া হয় তাহলে তা হিতে বিপরীত হবে। কারন অন্যদেশ থেকে কয়লা আমদানী করে বিদ্যুৎকেন্দ্র কতোদিন সচল রাখা যাবে তাও কিন্তু প্রশ্নের মুখোমুখি করে রাখবে। দেশের ভিতরে কয়েক বিলিয়ন টন প্রাকৃতিক কয়লার মজুদ রেখে বাহির থেকে আমদানী করা কি যুক্তি সঙ্গত কোন ব্যাপার? দেশের ভিতরের কয়লা না উঠানোর যুক্তি কি ? ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কয়লা মজুদ রেখে দেয়া তো! কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম যদি ভালোভাবে বেড়ে উঠতে না পারে তাহলে কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের চেহারা খুব একটা আশাপ্রদ হবেনা। কারন যে প্রজন্ম বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারে বাস করবে তার কাছে পরবর্তী প্রজন্মের বিদ্যুৎ হাস্যকর বলে মনে হবে। দেশের সবগুলো কয়লার খনি একত্রে ব্যবহার করার কথা কিন্তু কেউ বলছেনা ।

প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ টুকু উৎপাদনে যতোটুকু কয়লার ব্যবহার করা দরকার সর্ববৈ ততটুকু কয়লার ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলেই হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে আবিষ্কৃত কয়লার খনির সংখ্যা ৫টি। আরো অত্যন্ত সাতটি কয়লার খনি আবিষ্কার করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা ও মজুদ রয়েছে বলেই ভূতত্ত্ববিদদের ধারনা ও বিশ্বাস। তাই নতুন করে কয়লা প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা নির্নয়ে সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। আগামি দু‘চার বছরে যদি আরো দু‘চারটি কোল ফিল্ড বা কয়লার খনি আবিষ্কৃত হয় তাহলে তা দেশের জন্য আশাব্যঞ্জক ।

আবিষ্কৃত খনিগুলোর অত্যন্ত দুটি খনির উৎপাদন শুরু করা যেতে পারে। আর সেটা দেশিয় কোম্পানীই হোক বা বিদেশী কোম্পানীই হোক তা উন্নয়ন শুরু করা প্রয়োজন। কারন কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুতের দিকে সরকার উদ্যোগী হয়ে উঠছে। তাই এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে দেশীয় কয়লার ব্যবহার নিশ্চিত করাও সময়ের দাবি। সব দিক বিবেচনা করেই সরকারকে এগোতে হবে।

ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির এ বিশ্বে এখনই অর্থনীতির ভিত মজবুত করা না গেলে ভবিষ্যত অর্থনীতির ভিত যে মজবুত হবেনা তা তো সহজেই অনুমেয়। ভবিষ্যত বাংলাদেশের চেহারা হতে হবে আলোকিত ও স্পষ্ট। বাংলাদেশকে যদি সত্যিই মধ্যম আয়ের দেশে উঠে আসার প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে হয় তাহলে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়া গত্যান্তর নেই। তাই দেশীয় সম্পদ ব্যবহার ও সুষ্ঠ ব্যব¯হাপনাই এ দেশের অর্থনীতিকে ইস্পাত কঠিন অবস্হায় নিয়ে যেতে পারে । যা সামগ্রিকভাবেই এক ইতিবাচক বাংলাদেশের অস্তিত্ব পরিস্ফুটিত হবে।

হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ ও কলামিষ্ট। যশমবড়ষড়মরংঃ@মসধরষ.পড়স ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.