আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুন্দরবন এবং এর আশেপাশের এলাকায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব*

আমি খুব সাধারণ একজন। সাধারণের ভিড়েই আমার বেড়ে ওঠা ,সাধারণের ভিড়েই বিচরণ আর সাধারণের ভিড়েই পথ চলা ...... সম্প্রতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুণ চৌধুরী সুন্দরবনের পাশে প্রস্তাবিত রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপর একটি পরিবেশ সমীক্ষা সম্পন্ন করেন। এই গবেষণা অনুসারে নির্বাচিত রামপাল এলাকাটি অর্থনৈতিক, সামাজিক, কাঠামোগত এবং পরিবেশগত দিক বিবেচনায় কোন ধরণের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য উপযোগী নয়। নিচে বাংলায় অনুবাদকৃত গবেষণা পত্রটি তুলে দিলাম......... প্রেক্ষাপট এবং উপযোগীতা কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বয়লারে কয়লা পুড়িয়ে পানি থেকে বাষ্প তৈরী করা হয়। এই বাষ্প টারবাইনের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে যা টারবাইনকে ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।

বাষ্পকে পড়ে ঠান্ডা করা হয় যা পানিতে পরিণত হয় এবং তা পরে আবার বয়লারে নিয়ে এসে এ প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করা হয়। গড়পড়তা ৫০০ মেগাওয়াটের একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতি বছর ১২৫০০০ টনের বেশী ছাই এবং ১৯৩০০০ টন বর্জ্য ধোয়া তৈরী করে। সাধারণত এই বর্জ্যের ৭৫ শতাংশের বেশী মাটি ভরাট করে ফেলে রাখা হয়। আর্সেনিক, মার্কারী, ক্রোমিয়াম এবং ক্যাডমিয়াম সহ বিষাক্ত উপাদানে ভতি এই বর্জ্য খাবার পানির উৎসকে দূষিত করতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো করতে পারে এবং স্নায়ুবিক ক্ষতি সাধন করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্যে আর্সেনিক দূষিত পানি পান করা ১০০ শিশুর মধ্যে প্রতি একজন ক্যান্সার ঝুকির মধ্যে থাকে।

কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবর্জনার কারণে কখনো কখনো বাস্তুতন্ত্রও আংশিক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়লা পুড়িয়ে উৎপন্ন হওয়া তাপের অধিকাংশই অপচয় হয়। সাধারণত একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত তাপের মাত্র ৩৩-৩৫% বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত করা যায়। বেশিরভাগ তাপ পরিবেশে চলে যায় বা ঠান্ডা পানি দিয়ে শোষিত হয়। ২.২ বিলিয়ন গ্যালন পানি যদি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রবাহিত হয় যা পরবর্তীতে হৃদ, নদী বা সাগরে গিয়ে পড়ে- তা দিয়ে ২.৫ লক্ষ মানুষ বসবাসকারী একটি শহরের পানির প্রয়োজন মেটানো যায়।

এই “তাপীয় দূষণ” জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয় এবং মাছের হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়। সাধারণভাবে এই ধরণের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কেন্দ্র শীতল পানির প্রবাহে ক্লোরিন এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান যুক্ত করে যা শৈবালের জন্য ক্ষতিকর। এই উপাদানগুলো এইভাবে পরিবেশেও ছড়িয়ে পড়ে। কুয়াশা, এসিড বৃষ্টি, বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে কয়লা পোড়ানো একটি প্রধাণ কারণ। বছরে গড়ে একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়ঃ ১) ৩৭০০০০০ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধাণ কারণ; এটি ১৬১ মিলিয়ন গাছ কাটার সমপরিমাণ কার্বন দূষণের সমান।

২) ১০০০০ টন সালফার-ডাই-অক্সাইড যা এসিড বৃষ্টি তৈরী করে বনজঙ্গল, হৃদ এবং বাড়িঘরের ক্ষতি করে এবং ছোট ছোট বায়ুবাহিত কণা তৈরী করে যা ফুসফুসে ঢুকে যায়। ৩) ৫০০ টন ক্ষুদ্র বায়ুবাহিত কণা তৈরী করে যা ক্রণিক ব্রংকাইটিস, তীব্র শ্বাসকষ্ট এবং অকাল মৃত্যুর কারণ। এটি দৃষ্টিসীমায় প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করে। ৪) ১০২০০ টন নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOX) তৈরী হয় যা ৫ লক্ষ পুরনো মডেলের গাড়ির দূষণের সমান। নাইট্রোজেন অক্সাইড দূষিত কুয়াশা (smog) তৈরী করে যা ফুসফুসের ক্ষতি করে এবং ফুসফুস দুর্বল করে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত জটিলতায় সংবেদনশীলতা তৈরী করে।

৫) ৭২০ টন কার্বন মনোক্সাইড তৈরী করে যা কিনা মাথা ব্যাথা এবং হৃদরোগের কারণ। ৬) ২২০ টন হাইড্রোকাবন, ভঙ্গুর জৈবিক উপাদান (VOC) তৈরী করে। ৭) ১৭০ পাউন্ড মার্কারী উৎপন্ন করে। চা চামচের ৭০ ভাগের ১ ভাগ মার্কারী যদি ২৫ একরের এক পুকুরে ফেলা হয় তবে সেখানকার মাছ বিষাক্ত হয়ে যায়। ৮) ২২৫ পাউন্ড আর্সেনিক তৈরী হয়।

প্রতি বিলিয়নে ৫০টি কণা থাকা পানি পানকারী প্রতি ১০০ লোকের মধ্যে একজনের যা ক্যান্সার তৈরী করে। ৯) ১১৪ পাউন্ড লেড, ৪ পাউন্ড ক্যাডমিয়াম, অন্যান্য বিষাক্ত ভারী দ্রব্য এবং অল্প পরিমাণ ইউরেনিয়ামও তৈরী হয়। বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবনের একেবারে নিকটে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় পশুর নদীর পাশে ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র একটি অত্যাবশ্যকীয় অনুষংগ। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১২ সালের ২৯ শে জানুয়ারী বাংলাদেশ সরকার ভারতের সরকার পরিচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার সাথে একটি যৌথ চুক্তি সাক্ষর করে।

যেহেতু প্রকল্প স্থান হতে সুন্দরবন মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে তাই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবন প্রভাবিত হবে। সর্ববৃহৎ ম্যাংগ্রোভ বনাঞ্চল এই সুন্দরবন রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃত এবং বিশ্ব প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল যা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে (২১°৩১¢ - ২২°৩৮¢ উঃ এবং ৮৯°০০¢- ৮৯°৫৫¢ পূঃ) অবস্থিত। নদী আর খাল এখানে জালের মত বিস্তৃত। পুরো বনাঞ্চলটি ৬০০০ বর্গ কি.মি. জুড়ে বিস্তৃত যার ৩৯৫৬ বর্গ কি.মি. ম্যাংগ্রোভ বন আর বাদবাকি ১৮০০ বর্গ কি.মি. জুড়ে রয়েছে নদী এবং খাল। জোয়ার-ভাটা অধূষ্যিত এই বনাঞ্চল নানা জাতের গাছ-গাছালি আর জীবজন্তুর সমাহারে পরিপূর্ণ।

এখানে ৬৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২০০ এর অধিক প্রজাতির মাছ, ৪২ রকমের স্তন্যপায়ী, ২৩৪ ধরণের পাখি, ৫১ ধরণের সরীসৃপ, ৮ রকমের উভচর, অসংখ্য অমেরুদন্ডী প্রাণী রয়েছে। ৫ লক্ষ এর অধিক মানুষ জীবন-জীবিকা আর আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। প্রায় ২ লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত সুন্দরবনে যায় তাদের জীবিকার রসদ জোগাড় করতে। অনধিক ২ লক্ষ মানুষ মৌসুমীভাবে এটা করে এবং প্রায় ১ লক্ষ মানুষ সুন্দরবনে না গিয়েও সেখান থেকে আহরিত উপাদানের ব্যবসা করে জীবিকা আহরণ করে। মোটামুটিভাবে শতকরা ২২ জন কাঠ আহরণ করে, শতকরা ৫ জন অন্যান্য উপকরণ আহরণ করে।

৬৯ শতাংশ মানুষ মাছ আহরণ করে আর ৪ শতাংশ মানুষ অন্যান্য কাজে জড়িত। সরকার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে সাপমারি-কাটাখালি এবং রামপাল উপজেলার কৈগরদাসকাঠি এলাকার ১৮৩৪ একর কৃষি জমি অধিগ্রহণ করেছে। এর মধ্য মাত্র ৮৬ একর খাস জমি আর বাদবাকি জায়গা সাধারণ মানুষের সম্পত্তি যাতে জমি মালিকেরা ধান চাষ করত এবং মাছের খামার ছিল। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা বোঝাই ভারতীয় জাহাজ চলাচলের সুবিধার্থে সরকার ইতোমধ্যেই পশুর নদীর ১০ কি.মি. জায়গা জুড়ে ড্রেজিং করার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশীয় কয়লার অপর্যাপ্ততার কারণে এ প্রকল্প সংশ্লিষ্ঠ ভারতীয় অংশের বিবেচনায় আমদানীকৃত কয়লার পরামর্শ এসেছে।

বাংলাদেশ সরকার মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে কয়লা আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতের জাতীয় তাপবিদ্যুৎ কোম্পানী এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এ প্রকল্পের দুই স্বাক্ষরকারী। যে তিনটি গ্রামের মানুষদের নিজ জমি থেকে উচ্ছেদ হতে হবে তাদের অধিকাংশই এ প্রকল্পের বিরোধীতা করছেন। এ প্রকল্পে সরকারের জমি অধিগ্রহণের কারণে আবাদী জমির উপর তাদের নির্ভরতা ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে তারা দাবি করছেন। এটা প্রভাব ফেলবে তাদের জীবনাচরণে এবং শিক্ষাব্যবস্থায়।

উপরন্তু আশেপাশের জায়গা-জমি, জীব বৈচিত্রতা, নদ-নদীর উপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। সুন্দরবনের মত স্পর্শকাতর জায়গায় প্রকল্পের স্থান নির্বাচন করে এবং বিশেষ করে বর্তমান সরকার জলবায়ু ইস্যুতে উচ্চকিত থাকার পরও এই প্রকল্প হাতে নেয়াটা যথেষ্ট বির্তকের জন্ম দিয়েছে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরে ৪.৭৫ মিলিয়ন টন কয়লা প্রয়োজন হবে যেখান থেকে কমবেশী ০.৩ মিলিয়ন টন ছাই এবং প্রায় ০.৫ মিলিয়ন টন কঠিন এবং তরল বর্জ্য তৈরী হবে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি বিজ্ঞান সংঘের মতে এখান থেকে যথেষ্ট পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে যা কিনা বৈশ্বিক উষ্ণতার এক অন্যতম কারণ। সেই সাথে আরও বিষাক্ত গ্যাস এবং বাতাসে ভেসে বেড়ানো কিছু কণাও নির্গত হবে।

প্রফেসর ড. এম. এ. সাত্তার (২০১১) কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকারভেদ এবং মাত্রা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। বিপুল পরিমাণ কয়লা পোড়ানোর ফলে যে বিশাল পরিমাণ বর্জ্য তৈরী হবে সেটির দ্বারা পশুর নদীর পানি দূষিত হবে যদিও পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কঠোর আইন রয়েছে এবং সরকার কেবলই পশুর এবং আন্ধারমানিক নদীর কিছু অংশ ডলফিনের অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কঠিন এবং তরল বর্জ্য বিষাক্ত আর্সেনিক, মার্কারী, ক্যাডমিয়াম এবং ক্রোমিয়াম বহন করে। এই বিষাক্ত উপাদানগুলো খাবার পানিকে দূষিত করে ফেলতে পারে এবং সুন্দরবনের আশেপাশের এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের গুরূত্বপূর্ণ মানব অঙ্গ এবং স্নায়ুতন্র ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যদি ভারতীয় কয়লা ব্যবহার করা হয় তবে সাম্ভাব্য বায়ু দূষণ হবে আরও ভয়াবহ- কারণ উচ্চ সালফারের কারণে ভারতীয় কয়লা নিন্ম মানের বলে বিবেচনা করা হয়।

অন্যদিকে বড়পুকুরিয়ার কয়লা খুবই উচ্চ মানের যাতে মাত্র ১ শতাংশ সালফার রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে কয়লার মান ইন্দোনেশিয়া এবং অষ্ট্রেলিয়ার থেকেও ভাল। স্পর্শকাতর পরিবেশগত অঞ্চল (ECA)’র বিধি অনুসারে সুন্দরবনকে ঘিরে ১২ কি.মি. বাফার জোনে কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানো উচিৎ হবে না। সুন্দরবন থেকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের দূরত্ব মাত্র ১৪ কি.মি.। এই পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের উদ্ভিদ এবং পশুপাখির উপর কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব নিরূপন জরুরী হয়ে পড়েছে।

বর্তমান সমীক্ষাটি সুন্দরবন এবং আশেপাশের এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশের উপর রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপনে করা হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত এবং পদ্ধতি ঃ পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি গবেষকদল ২০১১ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০১২ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রতিটি স্টাডি এরিয়ায় (রামপাল, মংলা এবং সুন্দরবনের ১০ টি স্থায়ী জায়গায়) এই গবেষণাটি করেছেন। অনুসন্ধান পর্যায়ে অঞ্চল পর্যবেক্ষণ, তাৎক্ষণিক এবং গবেষণাগার পরীক্ষণ, গূরুত্বপূর্ণ তথ্যদানকারীর সাক্ষাৎকার (KII), নির্দিষ্ট দলগত আলোচনা (FGD), মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের পাশাপাশি সেকেন্ডারী তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বতমান পরিবেশগত অবস্থা এবং সাম্ভাব্য পরিবতনের সাহায্যে পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া চিহ্নিত এবং ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে। মাসিকভিত্তিতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বাতাস, পানি, মাটি এবং বায়োলজিক্যাল নমুণা মাঠভিত্তিক পর্যায়ে ও গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়েছে।

পশুর নদীর পানির নমুনা স্তানীয় নৌকায় করে সংগ্রহ করা হয়েছে। ১০-২৫ সে.মি. গভীরতার পানি ফিজিওলজিক্যাল পরীক্ষণের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে (Trivedy 1993). পানির স্বচ্ছতা পরিমাপের জন্য আদর্শ উপকরণ (secchi disc) ব্যবহার করা হয়েছে এবং পানির তাপমাত্রা নিরূপণের জন্য স্বয়ংক্রিয় থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়েছে (মডেল নং ৯৫০)। মোট আলাদাকৃত কঠিনদ্রব্য (TSS), মোট দ্রবীভূত কঠিন পদার্থ, পরিবাহিতা, লবণাক্ততা, পিএইচ, দ্রবীভূত অক্সিজেন, Eh, rH2, ইত্যাদির পরিমাপ প্রয়োজনীয় বহনযোগ্য পরিমাপযন্ত্র দ্বারা করা হয়েছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-ট্রাইক্সাইড, কার্বনিক এসিড অ্যাল্কালাইটিস পরিমাপের জন্য টিট্রিমেট্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে (Welch 1948) BOD5, COD, NO3N এবং অন্যান্য রাসায়নিক নিরূপক APHA (1989) অনুসরণ করে পরিমাপ করা হয়েছে। Mishra et al. (1992) অনুসরণ করে ফসফেট এবং সিলিকেট পরিমাপ করা হয়েছে।

Trivedy 1993 অনুসারে মাটির নীচের নমুনা সংগ্রহে বেলচা এবং বড় মই ব্যবহার করা হয়েছে। নীচের মাটির গুণাগুণ Jackson 1973 এবং Page et al (1982) অনুসারে গবেষণাগারে নির্ধারণ করা হয়েছে। জলজ এবং মাটির উপরের উদ্ভিদের সংখ্যা Ambasht 1974 অনুসরণ করে নিরূপণ করা হয়েছে। প্রভাব যাচাইকারী উপাদান নিচের টেবিলে প্রভাব যাচাইকারী উপাদান দেয়া হল যা রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাম্ভাব্য প্রভাব নিরূপণে সাহায্য করেছে। যাচাইকারী উপাদানগুলো বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দলের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হয়েছে।

যখন কোন প্রভাব পরিসংখ্যানের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় নি তখন অভিজ্ঞতার আলোকে তা গুণগত উপায়ে বিশ্লেষণ করা হয়ছে। -১ থেকে -১০ এবং +১ থেকে +১০ পর্যন্ত মোট ২১ টি স্কেলে প্রভাবগুলো মূল্যায়ন করা হয়েছে যেখানে কোন প্রভাব না পড়াকে “০” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রভাব যাচাইকারী উপাদান একটি গুরুত্বপূর্ণ মান নিরূপনকারী যা নীতিনির্ধারকদের একটি প্রকল্পের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। পরিবেশগত সমীক্ষা হতে দেখা যাচ্ছে যে কাঠামোগত, জৈবিক, সামাজিক এবং অথনৈতিক পরিবেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধিকাংশ প্রভাবই ঋণাত্নক এবং অপরিবর্তনীয় (-৮১) যা কোনভাবেই প্রশমন করা যাবে না। প্রস্তাবিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে জলবায়ু, ভূ-কাঠামো, জমি ব্যবহারের ধরণ, বাতাস এবং পানির গুণাগুণ, আর্দ্র জায়গা, উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈচিত্রতা, আহরিত মৎস্য সম্পদ এবং পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বোঝা যাচ্ছে।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফলে জলাবদ্ধতা, নদীভাঙ্গন, শব্দ দূষণ, স্বাস্থ্যঝুকি বাড়বে। পানির স্তর নীচে নেমে যাবে, মাছ চাষ এবং সামাজিক বনায়ন কমে যাবে এবং কৃষির মারাত্নক ক্ষতি হবে। কৃষি বাদে এই সমস্যাগুলো দীর্ঘ প্রশমন ব্যবস্থার মাধ্যমে কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে। কিন্তু সব পরিবর্তনযোগ্য সমস্যাই ঋণাত্নক (মোট নাম্বার -৬৭)। কৃষির ক্ষতি পুষিয়ে নেয়াটা খুবই কষ্টকর হবে এবং অনেক মানুষ ভূমিহীন হবে।

নগরায়ন, হাট-বাজার সৃষ্টি, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং শিল্পায়ন উন্নত হবে যা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে টেকসই হতে পারে। প্রশমনের মাধ্যমে টেকসইযোগ্য উপাদানগুলোর নাম্বার মাত্র +১৪ যা নির্দেশ করছে- এই এলাকা শিল্পায়ন এবং নগরায়নের জন্য উপযোগী নয়। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে কেবল আশেপাশের গ্রামে বিদ্যুৎ পৌছাবে এবং কিছু কর্মসংস্থান তৈরী হবে আর স্থানীয় ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা কিছুটা বাড়বে। প্রস্তাবিত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের লাভ খুবই সামান্য (টেকসইযোগ্য +১৯) যেখানে ঋণাত্নক প্রভাব -৮১। তাই নির্বাচিত এলাকাটি অর্থনৈতিক, সামাজিক, কাঠামোগত এবং পরিবেশগত দিক বিবেচনায় কোন ধরণের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য উপযোগী নয়।

প্রভাব নিরূপণকারী উপাদান এবং পরিবেশগত সমীক্ষা অনুসারে এই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রকল্প স্থানে এবং সুন্দরবন, রামপাল, মংলা এলাকায় “কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা”র মতই কাজ করবে। *মূল গবেষণা নিবন্ধ ঃ ড. আব্দুল্লাহ হারুণ চৌধুরী প্রফেসর, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষান্তরঃ প্রকৌশলী দেওয়ান মওদুদুর রহমান সমীক্ষাটি ডাউনলোড লিঙ্ক ঃ ওয়ার্ড পিডিএফ সুন্দরবন এবং রামপাল ইস্যু নিয়ে সামুর কিছু নির্বাচিত পোস্ট ঃ সুন্দরবন এতদিন আমাদের বাচিয়েছে কিন্তু এখন সুন্দরবনকে কে বাচাবে? সুন্দরবনের কাছে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব নিরুপন বা ইআইএ বিশ্লেষণ-১ সুন্দরবনের কাছে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব নিরুপন বা ইআইএ বিশ্লেষণ-২ “ রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প চুক্তি বাতিল কর, সুন্দরবন রক্ষা কর” ঃ অবিলম্বে “সুন্দরবন রক্ষামঞ্চ” করতে হবে সুন্দরবন রক্ষায় ফেসবুক অনলাইন এক্টিভিস্ট গ্রুপে যোগ দিন ঃ Stop Rampal Project Save Sundarbans-রামপাল প্রজেক্ট বন্ধ হোক সুন্দরবন বাচুক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিরুদ্ধে সামনের কর্মসূচী সবুজ বন্ধন- An Human chain for our pride SHUNDARBAN By বাঁচাও সুন্দরবন- বাঁচাও বাংলাদেশের হৃদয় [When] Thursday, 30 May 2013 [Time] 12:00 in UTC+07 আমাদের চিরায়ত আন্দোলন চলতে থাকবে। মানবতার স্বপক্ষে। কিন্তু মনোযোগের কেন্দ্র থেকে সরবে না দেশের সম্পদ চুরি। জানি বিদ্যুৎ আমাদের প্রয়োজন।

তাই বলে সুন্দরবনকে ধ্বংস করে কেন! জাতীয় সম্পদের এমন অপব্যবহার কোন কারণে? যে সুন্দরবন বাংলাদেশের হৃদয় সেই বাংলাদেশের হৃদয়কে উপড়ে নেয়ার সুযোগ আমরা দেবোনা। আসুন সবুজ বন্ধন তৈরি করে আমরা নেমে আসি রাস্তায়। যেখানে থাকি, সেখান থেকে। রাস্তার পারে- ফুটপাতে হাতে সবুজ কিছু নিয়ে- বা সবুজ পোশাক পড়ে। আসুন আজ সুন্দরবনের জন্য নিজেরা আবার এক হই একই দাবী নিয়ে.. ইভেন্ট লিঙ্ক বিদেশী মিডিয়াতে রামপাল ইস্যু ঃ সুন্দরবন এবং প্রস্তাবিত রামপাল কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইস্যু নিয়ে রেডিও অস্ট্রেলিয়া একটি প্রতিবেদন প্রচার করে।

প্রতিবেদনটি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ স্যার এবং পরিবেশ প্রকৌশলী কল্লোল মুস্তফা এর দেয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করা । লিঙ্ক ঃ Bangladesh heritage site threatened by planned power plant সুন্দরবন এবং রামপাল ইস্যু নিয়ে লেখা আহ্বান ঃ পরিবেশ ও প্রকৃতি বিষয়ক বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ম্যাগাজিন GreenMagz.info তাদের ৯ম সংকলন বের করতে যাচ্ছে। এই সংকলনের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে " প্রস্তাবিত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেদ্র ঃ প্রগতি না প্রকৃতি "। এই সংকলনের লেখাগুলি ইবুক আকারে বের করা হবে। আগ্রহীরা লেখা পাঠাতে মেইল করুন ঃ লেখা পাঠানোর শেষ সময় ঃ ২৫ মে , ২০১৩ GreenMagz.info সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন ঃ ওয়েবসাইট ফেসবুক পরিশেষে, সুন্দরবন শুধুমাত্র ৬০০০ বর্গ কিলোমিটারের একটি বনাঞ্চল নয়, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য শুধু ইউনেস্কো ঘোষিত একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটই নয়।

এই বন বিভিন্ন ঝড়-ঝঞ্ঝা থেকে উপকূলীয় মানুষকে বাচাঁনোর একমাত্র রক্ষাকবচ। এটি পাঁচ লক্ষ মানুষের জীবন ও জীবিকার একমাত্র আশ্রয়। এই সুন্দরবন পৃথিবীতে একটিই। এটি আমাদের অহংকার। অথচ এই অনন্য সুন্দরবনের অস্তিত্ব বিপন্নকারী ১৩২০ মেগাওয়াটের রামপাল মেগাপ্রজেক্ট হতে যাচ্ছে দায়সারা সব যুক্তি আর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলে।

সদ্য প্রকাশিত রামপাল প্রকল্পের ইআইএ রিপোর্টে সত্যকে আড়াল করে নানা গুরূত্বপূর্ণ দিক দূর্বলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই আমরা এই প্রকল্প অবিলম্বে বাতিল করে সুন্দরবন রক্ষার দাবি জানাই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.