আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসামীকে রিমান্ডে নয়, কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ কেন? শ্রীমঙ্গলে ওসি’র উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ত্রিমুখী জনমত

আমি সততা ও স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল্লাহের উপরে সন্ত্রাসী হামলার মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী চিনুলাল রায়কে রিমান্ডের আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, গত ২৬ জুন মঙ্গলবার আসামীর ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন হয়। এতে মৌলভীবাজারের চিফ জুডিসিয়্যাল মেজিস্ট্রেট মো. মঞ্জুরুল কাদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে আসামীকে কারাগারে রেখে দু’দিনের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদেশ দেন। তবে মামলার শুনানীকালে আসামীপক্ষের কোন আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না বলে জানা যায়।

এদিকে আসামীকে রিমান্ডে না নিয়ে কারাগারে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ কেন? এ নিয়ে শ্রীমঙ্গলের শহরজোরে ভিন্নমুখী জনমতের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ওসি আব্দুলাহর উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় এলাকার তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে ত্রিমুখী প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। সাধারণ জনগণের ধারণা ঘটনার সাথে জড়িত কোন রাজনৈতিক সংগঠন কিংবা নেতাকর্মীদের ইন্দন থাকতে পারে। গাড়ি পার্কিংকে ইস্যু করে কোন অদৃশ্য পূর্ব শত্র“তার জের ধরে পরিকল্পিতভাবেই এই অপ্রীতিকর ঘটনার পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকে। আবার কোন তৃতীয় শক্তির অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য পুলিশের দিকে চিনুকে লেলিয়ে দিতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন সাধারণ জনগণ।

জনতার ত্রিমুখী প্রতিক্রিয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গলসহ গোটা মৌলভীবাজার জেলা। অথচ কিনা আদালতের কাছে বিষয়টি মামলিক বলে মনে হচ্ছে। তা না হলে ঘটনার রহস্য উৎঘাটনের ব্যাপারে আসামী চিনুলাল রায়কে রিমান্ডের আদেশ দেয়াই উচিৎ ছিল। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত চিনুকে রিমান্ডে না এনে কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা বলায় রহস্যের মোড় অনেকটা পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার আদালতের শুনানী শেষে আদালত পরিদর্শক মো. ফজজুল হক জানান, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসামী কেন ওসি আব্দুল্লাহর ওপর অস্ত্রাঘাত করে তার সুষ্ঠু কারণ তল্লাসের জন্য এবং প্রকৃত ঘটনার উৎঘাটন করতে মামলার বাদীপক্ষ আসামীকে ৫ দিনের রিমান্ডে আনার জন্য আবেদন করেন।

কিন্তু আদালত বরাবরই রিমান্ড না মঞ্জুর করেন। এদিকে ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিনে উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় শতাধিক ব্যক্তির উন্মুক্ত জনমতের ভিত্তিতে শ্রীমঙ্গলের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের অভিব্যক্তি জানা যায়। এতে অধিকাংশ ব্যক্তিই ওসি আব্দুল্লাহের উপরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি স্বাভাবিক বলে ঘোষণা করেন। অনেকে আবার ওসি আব্দুল্লাহর উপর তিব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সাধারণ জনগণের সাথে তিনি যেভাবে আচরণ করেন, তাতে যে কোন কারণেই হোক না কেন- পাবলিকের কাছ থেকে ওসি’র জন্য এরকম একটি জবাব প্রাপ্য ছিল। কারণ এই ওসি আব্দুল্লাহ শ্রীমঙ্গলে যোগদানের পর থেকেই এলাকায় চুরি-ডাকাতি, চিনতাই, খুনসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে।

একের পর এক ঘটনা ঘটে গেলেও কোন কিছুর সুষ্ঠু সুরাহা মেলেনি। বরং সাধারণ জনগণকে হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে বেশি। অথচ বিগত দেড় বছরে প্রায় ডজনেরও বেশি খুনের মামলার ফাইল ঝুলছে থানায়। আর সন্ত্রাসী চিনুলাল রায়ের ভাই শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়কে সন্ত্রাসীদের মদদদাতা বলে অভিহিত করেছেন অনেকেই। বিগত সময়কালে ইউপি সদস্য থাকা অবস্থায় শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বরত ওসিদের সাথে হাত মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে থানার দালালি করতে করতে এখন নিজেই শাসন করছেন থানা।

আর সেই সাহসে ভাই চিনুলাল ওসি’র গায়ে অস্ত্রাঘাত করার সাহস পেল বলে ধারণা করছেন সাধারণ জনগণ। অনেকে আবার ঘটনার সাথে সরকার দলীয় (আওয়ামীলীগের) উসকানী রয়েছে বলে মনে করছেন। এছাড়া স¤প্রতি ঘটে যাওয়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয় মৎসজীবি সমবায় সমিতির আন্দোলনের সাথে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের একাত্মতা ঘোষণা এবং তাদের ঘোষিত আল্টিমেটাম অনুযায়ি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বদলীর আদেশ ও ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত ৩ মৎস্যজীবিকে বিনা প্রমাণে নিশ্বঃর্ত মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে জনমনে অনেকটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল। এ পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হতে না হতেই ওসি আব্দুল্লাহ’র উপরে যে অস্ত্রাঘাত করা হয়েছে, সেটির কারণও ওই একই সূত্রে গাথা থাকতে পারে বলে কেউ কেউ সন্দেহ করছেন। তবে এ ব্যাপারে ওসি আব্দুল্লাহ, চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়সহ বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করা হলে কেউই সঠিকভাবে মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।

ফলে এলাকার তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের ত্রিমুখী মতামতের পাশে মূল ঘটনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারছে না। ওসি মো. আব্দুল্লাহ বলেন, আসামী গ্রেফতার হয়েছে। আইনানুগ তার বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চেয়ারম্যান ভানুলাল রায় বলেন, মাদকাসক্ত কেউ আমার ভাই নয়, শত্র“।

আমি আইনানুগভাবে চিনুলালের শাস্তির দাবি জানাই। উল্লেখ, সড়কের ওপরে অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং ও থানায় কাগজপত্রবিহীন গাড়ি আটকের জের ধরে গত ২৩ জুন শনিবার রাত পৌনে ৯ টার দিকে এশার নামাজ শেষে শহরের কলেজ রোডস্থ থানা জামে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী চিনুলাল রায় ছুরি নিয়ে ওসি মো. আব্দুল¬াহ’র উপরে হামলা চালায়। সন্ত্রাসীদের উপর্যোপরী আঘাতে তার হাতে ও পিটে গুরুতর জখম হয়। পরে স্থানীয় লোকজন সন্ত্রাসী চিনুকে আটক করে থানায় সোপর্দ করলেও চিনুর সঙ্গীয়রা পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওসি মো. আব্দুল¬াহকে সাথে সাথেই শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

সন্ত্রসী চিনুলাল রায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা ভানুলাল রায়ের ভাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.