আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরিশচন্দ্র এবং লাশকাটা ঘরের জোছনাগুলো

আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই। হরিশচন্দ্র বসে আছে মর্গের বারান্দায়। কয়েকদিন হল কোন লাশ আসছেনা, তাই তার অখণ্ড অবসর। কিন্তু লাশ না আসলে তার জীবিকাও বন্ধ হয়ে যায়।

লাশ কাটার পর সে লাশের আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেয়। লাশের কি আত্মীয়স্বজন থাকে? মৃত্যুর পর একজন মানুষ আর কারও আত্মীয় থাকেনা। সে হয়ে যায় লাশ। হরিশচন্দ্র ভাবে, সারাদিন সে ভাবে। তার কেউ নেই, এইসব লাশের সাথে তার জীবন যাপন।

সে যখন লাশগুলো কাটে তখন সে লাশগুলোর সাথে কথা বলে। কোন জবাব ফিরে আসেনা, কিংবা হয়তো ফিরে আসে। হরিশের তা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। সে লাশদের জবাব গুলো কল্পনা করে নেয়। একটা এ্যাম্বুলেন্স এসে থামল ।

মনে হচ্ছে কোন লাশ নিয়ে এসেছে। হরিশ অলস চোখে তাকায়। সাথে একটা গাড়ি করে কয়েকজন লোক এসেছে। দেখে মনে হচ্ছে কোন অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের করও লাশ। ডাক্তার এবং পুলিশও সাথে এসেছে।

ডাক্তার এবং পুলিশ অফিসার কথা বলছেন। কথা বলার ভঙ্গীতে উত্তেজনার ছাপ। গাড়ি থেকে নামা লোকজন চিন্তিত ভঙ্গীতে হাঁটাহাঁটি করছে। তাদের চেহারায় শোকের ছাপ নেই, বরং দুশ্চিন্তার ছাপ। হয়তো কোন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু তাদের চিন্তিত করেছে।

হরিশ উঠে দাড়ায়। দুজন পুলিশ লাশটি নামায়। হরিশ দরজা খুলে দেয়। লাশ ঢুকে যায় লাশকাটা ঘরে। লাশকাটা ঘরের টেবিলে শুয়ে অপেক্ষা করে হরিশের জন্য।

হরিশের ছুরি দুভাগ করে দিবে দেহটা। বের হয়ে আসবে মৃত্যুর রহস্য। ডাক্তার এবং পুলিশ অফিসার এখনও কথা বলেই চলেছেন। তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন, গাড়ি করে আসা লোকজনের একজন। "ডাক্তার আপনার রিপোর্টের উপর সবকিছু নির্ভর করছে।

" "না, এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। " "দেখুন আমি পুলিশ অফিসার, আমি ব্যাপারটা মেনে নিয়েছি, আপনি একটু মেনে নিন। এতে আপনার লাভ ছাড়া ক্ষতি হবেনা। ' "হ্যাঁ, আমরা আপনার ব্যাপারটা দেখবো ডাক্তার। " "আচ্ছা দেখা যাক কি করা যায়।

" "স্বাভাবিক মৃত্যু বলে চালিয়ে দিন, তাহলেই সমস্যা মিটে যায়। " ডাক্তার এগিয়ে যান মর্গের দিকে। হরিশ এগিয়ে যায় টেবিলের দিকে। হরিশ লাশের কাপড়টা সরায়। বিশ বছরের একটি মেয়ের লাশ।

তার জিবটা বেরিয়ে আছে মুখ থেকে। যেন পৃথিবীকে ভেংছি কাটছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। হরিশ তাকিয়ে থাকে লাশের দিকে। গলায় গভীর দাগ, রশির দাগটি গলায় চেপে বসে আছে।

হরিশ দাগটিতে হাত বোলায়। মৃত্যুর জন্য কারও মমতা নেই, হরিশের সব মমতা মৃত্যুর জন্য, মৃতের জন্য। ডাক্তার হরিশকে নির্দেশ দেন লাশটা কেটে ভিসেরা গুলো বের করার জন্য। চারদিকে গুমোট গরম। হরিশ লাশটি কাটার আগে কি যেন ভাবে।

সে ভাবতে থাকে। ডাক্তার তাড়া দেন হরিশকে। হরিশ লাশটা কাটে, সব কাজ সম্পন্ন করে। ডাক্তারের কাছে ভিসেরাগুলো তুলে দেয়। ডাক্তার পাশের রুমে চলে যান।

হরিশ লাশটা সেলাই করে। পরম মমতায় সে সুই চালায়। তার সব মমতা সে সুই এর আগায় ঢেলে দেয়। ডাক্তার রিপোর্ট করে দেন, স্বাভাবিক মৃত্যুর রিপোর্ট। সবাই নিশ্চিন্ত হয়।

ডাক্তার আর পুলিশের পকেটে অর্থপূর্ণ কিছু অর্থ চলে যায়। তারা ছিন্ন লাশের বোঝা বহন করে চলে যায়। হরিশ বসে থাকে। তার স্মৃতির সাথে সে কথা বলতে থাকে। আরেকটি লাশ আসার আগ পর্যন্ত এই লাশ থাকে সঙ্গ দিয়ে যাবে, তার একাকী রাত কিংবা জোছনায়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।