আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারকেলের ডাল ছিল লারার প্রথম ব্যাট!

সাও পাওলোর ধুলোমাখা পথে ছেঁড়াফাড়া বল দিয়ে খেলেই বড় হয়ে উঠেছিলেন পেলে। ব্রায়ান লারার গল্পটাতেও খুব বেশি পার্থক্য নেই। উইলো তো দূরের কথা, সাধারণ মানের কোনো কাঠের ব্যাটও তাঁর কপালে জোটেনি। তাঁর জীবনের প্রথম ব্যাটটি ছিল নারকেলের ডাল কেটে বানানো। বানিয়ে দিয়েছিলেন বড় ভাই।

সেই ব্যাট দিয়ে ক্রিকেটে হাতেখড়ি হওয়া ব্রায়ান চার্লস লারা একসময় ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। তাঁর নামের পাশে টেস্টে ১১ হাজার ৯৫৩ রান, আছে ৩৪টি সেঞ্চুরি। সবচেয়ে বড় কথা, ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র ৪০০ রানের টেস্ট ইনিংসটির মালিক এই লারাই।
‘নারকেলের ডাল কেটে আমার ভাইয়ের বানানো ব্যাটটাই ছিল আমার জীবনের প্রথম ব্যাট। আর সেই দিন থেকেই আমি একটা জিনিসই হতে চেয়েছি—ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার।

নিজেদের বাড়ির আঙিনায় আমি নিজে নিজে দল বানিয়ে খেলতাম, আর সেই দলে থাকত গ্রিনিজ, গেইন্স, রিচার্ডস, লারা। শুরু থেকেই আমি নিজেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের একজন ক্রিকেটার হিসেবেই দেখতে চেয়েছি, অন্যকিছু নয়’—বলেছেন লারা।
একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব-বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতে এসেছেন লারা। স্বাভাবিকভাবেই নেতৃত্ব নিয়েও কথা বলতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের ভীষণ দুঃসময়ে নেতৃত্ব দেওয়া এই বাঁ-হাতির। ভারতীয় অধিনায়কদের মধ্যে লারা তাঁর সবচেয়ে প্রিয় হিসেবে বলেছেন সৌরভ গাঙ্গুলীর নাম।

দুজনের মধ্যে বেশ মিল আছে। সবচেয়ে বড় মিল তো অবশ্যই দুজনই ‘বাঁ হাতে’ই বিশ্ব শাসন করেছেন। তবে লারা বিশেষভাবে মুগ্ধ অস্ট্রেলিয়া সফরে সৌরভের দৃঢ়চেতা অধিনায়কত্বে, ‘সৌরভই আমার প্রিয়। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার নেতৃত্ব সত্যিই বিস্ময়কর। ওর প্রতি আমার বিশেষ সম্মান আছে।


লারা ফিরে গেছেন তাঁর অতীতে। নিজের প্রথম ব্যাটটির কথাই শুধু নয়, ‘ত্রিনিদাদের সম্রাট’ বলেছেন তাঁর ক্রিকেট জীবনের প্রথম মানুষটিরও কথা, ‘আমার বাবার কথা আমাকে বলতেই হবে। তিনি ছিলেন দারুণ। স্কুল, অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ থেকে শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে প্রথম যখন খেলতে শুরু করলাম, তিনি আমার প্রতিটা ম্যাচেই মাঠে থাকতেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলতে শুরু করার সময়টাতেই তিনি মারা যান।

ফলে আমাকে সেভাবে (আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে) খেলতেই দেখতে পারেননি। তার পরও আমার ক্যারিয়ারে তাঁর অনেক প্রভাব তো ছিলই। ’
লারা দলের চেয়ে নিজের জন্য বেশি খেলতেন—এই অপবাদও শুনতে হয়েছে। তবে লারা আবারও উড়িয়ে দিলেন এই সমালোচনা, ‘অনেক মিডিয়া, অনেক মানুষ বলেছে, আমার অনেক সাফল্যই নাকি ছিল ব্যক্তিগত। এর চেয়ে ভুল ধারণা আর হয় না।

আমার জীবনে সবচেয়ে বড় প্রেরণাই ছিল আমার সতীর্থরা। দলের হয়ে খেলাটাই আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রেরণা দিত। আমার পারফরম্যান্সের কারণে হয়তো ব্যক্তিগত প্রশংসা বেশি পেতাম। তবে দলের হয়ে খেলাটাই আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল। ’
আসলে ক্যারিয়ারে লারার ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিল এক ধরনের নিন্দুক।

৪০০ রানের সেই বিশ্বরেকর্ড গড়া ইনিংস খেলেও যে সমালোচনা শুনতে হয়েছিল, সেটিও জানালেন লারা। ব্যক্তিগত রেকর্ডটা তাঁর ঝলমলে, কিন্তু লারার একার পক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের পতন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। ক্রিকেট যে ১১ জনের খেলা। লারা জানালেন, তাঁর সবগুলো রেকর্ডের বিনিময়ে হলেও তিনি সত্তর আর আশির দশকের সেই সোনালি দলের হয়ে খেলতেও রাজি ছিলেন। পিটিআই।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।