আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পতিতার সাথে আমার প্রেম....!!

প্রতিদিনই অদ্ভুত এক ইচ্ছা জাগে আমার, ইস!আমি যদি কচ্ছপ হতে পারতাম। কি চমৎকারভাবে মাথাটা দেহের ভিতরে গুটিয়ে নিয়ে পথ চলতে পারতাম,শরীরে শক্ত একটা খোলস থাকতো, অপমান বোধটা গায়ে লাগতো না। কিন্তু নিয়তির ছকে আমি বাধা, আমি কখনো কচ্ছপ হয়ে উঠিনা। গেল বছরের শেষদিকে কোন একদিন মেয়েটি সংসদ ভবনের ক্রিসেন্ট লেকের আশপাশেই ঘুরছিল। দেখতে রূপসী, রুচিশীল।

পেশা পতিতাবৃত্তি কি না বোঝাই যেন মুশকিল? বিধ্বস্ত জীবন থেকে একটু হাফ ছেড়ে বাচতে, প্রকৃতির সৌর্ন্দযে ক্ষণিকের প্রেমে পড়তেই সেই রাস্তা দিয়ে আমার যাতায়াত। দেখলাম, মেয়েটি একজনের সঙ্গে কথা বলে গাড়িতে উঠে চলে গেল। পরদিন সেই মেয়েটিকেই দেখলাম, একজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে চন্দ্রিমা উদ্যানের দিকে চলে যাচ্ছে। আমিও পিছু নিলাম। দেখলাম, উদ্যানের ঘাসগুলো এবার তার শয্যা।

দৃশ্যটি আমার কাছে মেয়েটি সর্ম্পকে একটু গভীরে জানার রহস্য সৃষ্টি করল। যে মেয়ে গতকাল এক ধনীর বেডরুমে কিংবা হোটেলকক্ষে রাত কাটিয়েছে। সে কিনা আজ ঘাসে শয্যা পেতেছে। জানার খুব সাধ হল আমার। কাজ সেরে লোকটি চলে গেলে, আমি ডাকলাম মেয়েটিকে।

ও ভেবেছিলো শরীরের জন্যই হয়তো ডেকেছি। জিজ্ঞেস করলাম, নাম কি,থাকো কোথায়,কে কে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। মেয়েটির জবাব,সময় নষ্ট করতেছেন ক্যান। যা করার,তাড়াতাড়ি করেন। বললাম, আমি তো কিছু করব না ।

তাইলে ডাকছেন ক্যান? তোমার সাথে গল্প করার জন্য। বেশ্যার লগে আবার গপ্প কিয়ের! রেগে যাচ্ছ কেন তুমি? রাগুম না তো তোমারে সোহাগ করুম....? ইচ্ছে করলে করতে পারো। কোন আপত্তি নেই। তুমি রূপসী মেয়ে,সোহাগ করলে ভালো লাগবে। আজব মানুষ তো আপ্নি! গপ্প করার জন্য এখানে আই নাই।

পেটের দায়ে। যদি এজন্য তোমাকে টাকা দেই,সমস্যা আছে? মেয়েটি রাগ হয়ে চলে গেলো... পরদিন আবার গেলাম। মেয়েটির সঙ্গে দেখাও হয়ে গেলো। কিন্তু আমাকে কোন পাত্তাই দিলো না। বলল,আইজকাও গপ্প করতে আইছেন? ক্যান,সাথে ওইটা নাই? দেইখা তো সুপুরুষ মনে অয়।

ইচ্ছা করলে আসেন,নইলে ভাগেন। আমি হাল ছাড়ার মানুষ নই। পরদিন আবারও হাজির হলাম যথাস্থানে। মেয়েটির সঙ্গে দেখা । আজ সে খানিকটা বিস্মিত।

ডাকতেই কাছে এলো, আপনি কি শুধু আমার সাথে গল্প করতে প্রতিদিন এখানে আসেন? হ্যা.। । তাহলে চলুন..। হাঁটতে হাঁটতে উদ্যানের ভেতরে যাই। খুঁজে একটা বেঞ্চিতে পাশাপাশি বসে পরি।

কি বলবেন,দ্রুত বলেন, আমার টাইম নাই! বললাম, তোমার জীবনের গল্প শুনবো, কি গল্প শুনবেন? সবার তো একই গল্প। এই পেশার মেয়েগুলো সবাই কোনো না কোনোভাবে প্রতারিত হয়েছে, প্রেমিকের কাছে,ভাগ্যের কাছে, সংসারের কাছে কিংবা জীবনের কাছে। তাহলে তুমি কার কাছে হয়েছো? আস্তে আস্তে মেয়েটি সহজ হয়ে উঠছিল আমার কাছে। এরপর তার জীবনের গল্প বলে গেল অবিরত....,গল্পের মাঝে তার চোখের কোনায় একটু অশ্রুও চলে এসেছিল.... জন্মের পরপরই ভাগ্য মেয়েটির সঙ্গে প্রতারণা করেছে, বয়স ১২ না পেরুতেই মা-বাবার মৃত্যু। বাবা-মায়ের স্মৃতি তার কাছে বহুকাল আগে দেখা কোন ধূসর স্বপ্নের মতো।

চাচার কাছে বেড়ে ওঠা মেয়েটির। স্কুল জীবন পার করে একটি কলেজে ভর্তি হয় মেয়েটি। সর্বনাশ ঘটে তখনই। এক অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় সুদর্শন এক ভদ্রলোকের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম।

কিন্তু মেয়েটি ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছিল। না জেনেই বিবাহিত যুবকটির বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয় মেয়েটি। অতপর চট্টগ্রামে ছেলেটির এক ব্যাচেলর বন্ধুর বাসায়...। চট্টগ্রামে গিয়েই বিয়ের কথা ছিলো তাদের। কিন্তু তা আর হলো না।

অথচ রাত কাটতে লাগলো একসঙ্গে। চার-পাঁচদিন পর হঠাৎ বিনা নোটিশে উধাও মুখোশপরা ভদ্রলোকটি। এরপর তার জীবনে নতুন অধ্যায়ের শুরু; সে রাতে কয়েকজন অচেনা পুরুষ সারারাত তাকে পুতুলের মতো ব্যবহার করেছিলো ইচ্ছেমতো । এভাবে কয়েক রাত নতুন নতুন হিংস্র মানুষ তাকে ছিড়ে খুঁড়ে খেতে থাকলো। জীবন আসলে অনেকটা খেলার মত ।

যা কিছু ঘটে ,খুব সহজেই ঘটে যায় । এরপর এ হাত থেকে ও হাত ঘুরে এক সময় ঠাই মেলে রাজধানীর আবাসিক হোটেলে। সেটাও বন্ধ হয়ে গেলে রাস্তা আর পার্কই তার একমাত্র বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়। শুনলেন তো গল্প,এবার চলে যান। বললাম, মানুষের জীবনের গল্প তো কখনো শেষ হয় না,মেয়ে..! সেদিন অদ্ভূত অভিজ্ঞতা হলো আমার।

কথা শেষ হওয়ার পর মেয়েটি উঠে গিয়ে এক লোকের সঙ্গে ফিসফিস করে কী যেন আলাপ করলো! এরপর চোখের সামনেই এক বেঞ্চে তার সঙ্গে মিলিত হলো। শরীরী নেশার খোঁজে চারপাশে ঘুরতে থাকা লোকগুলো যেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটা উপভোগ করলো;দেখলাম আমিও। জানতে চাইলাম, এও কি সম্ভব, এত লোকের চাপ কি করে সামলে নেও.....!! দশজন কিংবা বিশজন সেটা আমি ফিল করি না। এটা কেবলই অভ্যাস। একই শারীরিক ঘটনা প্রতিদিন বারবার ঘটলে কি আর কোনো অনুভূতি থাকে? অভ্যাসবশত শুয়ে পড়ি, কিছু একটা ঘটে যায়,আমার কোনো অনুভূতি হয় না।

রাত ক্রমেই ঘনিয়ে আসে, হঠাৎ কিছু না বলে মেয়েটি দ্রুত চলে যায়....। এরপর সেইপথে তাকে বহুদিন খুঁজে বেড়িয়েছি আমি। কোথাও আর কখনো দেখা পাইনি তার....। ব্যস্ত এই শহরে চা্ইনিজ পণ্যের মতই পতিতারাও অনেক সস্তা,অনেক সহজলভ্য। সন্ধার পর পুরো রাজধানী জুড়ে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।

এসব মেয়েদেরর খদ্দেরদেরও রয়েছে নানা বৈচিত্রতা। কিশোর-তরুণ-যুবক থেকে সত্তরে পা রাখা বৃদ্ধরাও হুমড়ি খেয়ে পরে সস্তার এ পণ্য ক্রয় করতে। এমনকি এমনও অনেক তরুণদের দেখা মেলে । যাদের বয়স আঠারোর কোঠা পার হয়নি। যাদের কাছে মেয়েদের শরীর এখনো বিশাল রহস্য।

জীবন কতটা বিভীষিকাময়!!কত বীভৎস আমাদের চারপাশের বাস্তবতা!! হয়ত জীবন এতটা জটিল না হলেও পারতো! একটু সহজ-সরল-সুন্দর হলে কি এমন ক্ষতি হতো.... ??? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৩২৩ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।