আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেইজিং------গ্রেটওয়াল আর ফরবিডেন সিটি

আমার এমন কিছু দুঃক্ষ আছে যার নাম... তিলক কামোদ এমন কিছু স্মৃতি যা... সিন্ধু ভৈরবী জয় জয়ন্তীর মত বহু ক্ষত রয়ে গেছে ভিতর দেয়ালে কিছু কিছু অভিমান , ইমন কল্যাণ শরদ বাজাতে জানলে বড় ভালো হত.....!!!!!! বেইজিং এ মাত্র ৩ দিন ছিলাম। প্লেন থেকে নেমেই অফিস চলে গেলাম , বাকি বেলাটুকু কাজের মধ্যেই ডুবে ছিলাম। পরদিন সাপ্তাহিক ছুটির দিন স্বভাবতই কাজ আর কাজ । সন্ধ্যার পর গেলাম সিল্ক মার্কেট । আমাদের হোটেলটা ছিল এয়ারপোর্ট যাওয়ার পথে তাই সিল্ক মার্কেট থেকে বেশ খানিকটা দুরে।

৫ তলা মার্কেট একেকতলায় একেক জিনিশ, বিদেশীদের ভিড়, মেয়ে সেলস্ পারসন গুলো টানাটানি করছে কেনার জন্য, না কিনলে ওদের ভাষায় গালিগালাজ। আমাকে ওদের পছন্দ হয়নি,না হবার যথেষ্ট কারনও ছিল কেননা আমি যা দাম চাইছিল তার ১/১০ ভাগ বলছিলাম শুধু তাই না পুরুষদের কাছে গছানো যত সহজ মেয়েদের কাছে তত নয়। এদিকে রাত ৯:৩০ বাজে মার্কেট বন্ধ বেরিয়ে ট্যাক্সি নিলাম তাও সে ৫ মিনিটের মধ্যেই নামিয়ে দিল কারন সে নাকি না চিনে আমাকে উঠিয়েছে। এদিকে মার্কেট থেকে খানিকটা দুরে চলে এসেছি হাতে ব্যাগ আর পোটলা নিয়ে আবার গেলাম মার্কেটের সামনে ট্যাক্সি পেতে , ট্যাক্সিওয়ালা বললো যাবো কিন্ত্ত ভাড়া ৩ গুন আমি তাতেই রাজি। হঠাৎ এক নির্জন রাস্তার সামনে থামিয়ে বলল টাকা দাও এখনি, আমি বাধ্য হয়ে তাকে ১০০ টাকার নোট দিলাম সে বলল না এটা ছিড়া,ওটা ভাজ খাওয়া এভাবে ৩ বার ১০০ টাকার নোট বদলালো আমি বিরক্ত হয়ে বললাম যা বেটা, তোর ট্যাক্সিতে যাবোই না।

রাত তখন ১০:৩০ নির্জন রাস্তা, ভাষা বুঝি না পুরাই ভয় ভয় করছিল। ২ হাতে প্যাকেট নি্যে রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম যদি ট্যাক্সি পাই । অবশেষে হোটেলে পৌছালাম রাত ১১:৩০ এর দিকে। এত ভয় পেয়েছিলাম সেদিন, এত বছর পর ২বার ভয় পেলাম একা ট্রাভেল করতে গিয়ে । পরদিন সারাদিনের ট্যুর ঠিক করে রেখেছিলাম বেইজিং এ নেমেই , এই একটা দিনই ছিল আমার off day ।

প্যাকেজ ট্যুর প্রথমে Forbidden City অতঃপর Greatwal। ছোট্ট একটা গ্রুপ আমাদের গাইডসহ মোট ৮ জন। India, Dubai, South African, Bangladeshi, Malaysia একেকজন একেক দেশের কিন্ত মানবিকতা আর একই উদ্দেশ্যের কারনে হয়ে গিয়েছিলাম এক পরিবার। প্রথমেই মাইক্রোবাসে উঠেই বেশ আরামদায়ক সোফা টাইপ চেয়ারে বসে ঝিমাতে লাগলাম। আমি যে কোনো জিনিস দুলতে থাকলে ছোট বেলার দোলনার কথা ভেবে ঘুমিয়ে পরি গতকালের তিক্ত অভিঙ্গতায় রাতে ভাল ঘুম হয়নি তাই আরাম করে ঝিমাছিছলাম ।

একটু পর সুতনু সুন্দরী মেয়ে সফরসঙ্গী হয়ে পাশে বসল। মেয়েটির perfect 10 টাইপ ফিগার আর আমার বিরাট ভুড়ি পাশাপাশি দেখে রাগে দুঃখে হিংসায় জ্বলে পুরছিলাম । মনে মনে পন করলাম এবার দেশে ফিরেই crush diet এ যাবো। এভাবে চলে এলাম শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্হিত Forbidden City । লোকে লোকারন্য কোনোরকমে লোকজোনের ফাঁক ফোকোর দিয়ে ছবি তুললাম ।

রাজার জন্মদিনের কুঁচকাওয়াজ হত এখানে। একের পর এক গেট পেরিয়ে অবশেষে রাজার মুল বাড়ী, মোট ২৪ জন রাজার মিঙ্গ (১৪) কিঙ্গ (১০) ডাইনাস্টির প্রাসাদ ছিল এটি। পাথরেরে খাঁজে খাঁজে কাঠের কারুকার্যে যে ইতিহাস আর ঐতিহ্য লুকি্যে ছিল তা হাত দিয়ে স্পর্ষ করে গায়ে কাঁটা দিল, মনে হল এই সেই প্রাসাদ যা ১৪০৬ সালে শুরু হয়েছিল আর আমি ২০১২ তে দাড়িয়ে দেখছি। লাল উচু প্রাচীর ঘেরা বিশাল জায়গা, গার্ডেন, গার্ড রুম, সিড়ি, চাতাল, রেলিং, বাড়ীর ছাদে মুর্তি সব কিছুতেই চাইনীজ কালচার ফুটে উঠেছে। রাজার মুল ঘরের মাঝখানে সিংহাসন দেয়ালে বিরাট বিরাট আয়না আর চারদিকে ৭ টা দরজার আড়ালে ৭টি ঘর।

রাজা কখন কোন রুমে থাকতেন কেউ জানত না । ইতিহাস বলে ক্ষমতা ও অর্থ শাসকদের জনতার কাছ থেকে দুরে সোরিয়ে নেয়। দেবতার আসনে বসে উনারা এত অত্যাচার করেন যে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত থেকেছেন এই সব অপদেবতারা । দুপুরে খাবার ব্রেক, এবার চললাম গ্রেটওয়ল অভিমূখে । খাবারের বিল পরিশোধ করতে গি্যেই বুঝলাম গতকাল আমাকে সেই ট্যাক্সি ড্রাইভার ৩টি ১০০ RMB নকল টাকা ধরি্যে দিয়েছিলেন।

Restaurent Manager অনেক বার এসে আমার কাছে ক্ষমা চাইলেন তার দেশের ট্যাক্সি ড্রাইভার দারা আমি প্রতারিত হয়েছি বলে। আমি মনে মনে ভাবছিলাম আমাকে তাহলে কতজন বিদেশী ট্যুরিস্টের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে আমাদের দেশে এসে প্রতারিত হবার জন্যে ! Great Wall যেতে Rope way র বিশাল লাইনে দাড়িয়ে পাহাড়ে উঠলাম, ওরে বাপ মানুষ পিল পিল করছে। বেশ চওড়া ৪ টি ঘোড়া চলবার পথ । ঢালু সিড়ি পাহাড়ের পর পাহাড় বেয়ে এগিয়ে গেছে , বেশ উঁচু বলে ঠান্ডা বাতাস । Great Wall এ অনেক গুলো জায়গা দিয়ে যাওয়া যায় আমরা ঢুকেছি বাদালিং দিয়ে।

বাচ্চা বুড়ো কেউ বাদ নেই সব বেড়াতে এসেছে। ফিরতে ফিরতে রাত ৯ টা বেজে গেল , ঘুমে চোখ ভেঙ্গে এল। কাল যে দেশে ফিরতে হবে। আবার সেই লম্বা পথ পারি দিতে হবে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।