আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অজানা রহস্য ৪

আমি স্বাধীন হতে চাই, এই আমার দেশে void(1); রহস্যময় নিউপোর্ট টাওয়ার সম্পর্কে জানুন আমাদের এই মহাবিশ্বে রহস্যময় স্থানের কোনও শেষ নেই। বিশ্বে রহস্যময় যেসকল স্থান রয়েছে তার অধিকাংশই রহস্যময় হয়েছে তাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের কারণে। বিশেষ করে প্রাচীন আমলে তৈরি করা এমন অনেক প্রাসাদ বা স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যেগুলোর প্রকৃত ইতিহাস আজও অজানা, ফলে এই সকল বাড়ি, গৃহ বা স্থাপনাগুলো আজও সবার কাছে এক রহস্য। আর তেমনই রহস্যময় একটি স্থাপনার নাম নিউপোর্ট টাওয়ার। নিউপোর্ট টাওয়ারটি আরও কয়েকটি নামে পরিচিত, যার মধ্যে রয়েছে রাউন্ড টাওয়ার, নিউপোর্ট স্টোন টাওয়ার বা ওল্ড স্টোন মিল।

গোলাকার আকৃতির প্রাচীন এই টাওয়ারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোদ দ্বীপের নিউপোর্ট এলাকার টাউরো পার্কে অবস্থিত। এই টাওয়ারটি সম্পূর্ণ পাথরের তৈরি। বিখ্যাত এই টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয় ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে। টাওয়ারটি উত্তর-দক্ষিণ দিক থেকে এর ব্যাস ২২ ফুট ২ ইঞ্চি এবং পূর্ব-পশ্চিম দিক থেকে এর ব্যাস ২৩ ফুট ৩ ইঞ্চি। টাওয়ারটির উচ্চতা মোট ২৮ ফুট।

এক সময় এই টাওয়ারের দেয়ালগুলো সাদা প্লাস্টার করা ছিল। বর্তমান সময়েও বাহিরের দেয়ালে তার কিছু নমুনা দেখা যায়। সমস্ত টাওয়ারটি আটটি কলামের উপর দাড়িয়ে আছে। যার মধ্যে দুটি কলাম অন্য ছয়টি কলামের চেয়ে আকারে বড়। কলামগুলোর গায়ে ডোরাকাটা দাগে অঙ্কন করা হয়েছে নানা প্রজাতির প্রাণীর ছবি, নাম ও আরও অনেক কিছু দ্বারা।

টাওয়ারের দেয়ালগুলো শক্ত ও পুরু করে তৈরি করা। এর প্রতিটি দেয়াল ৩ ফুট পুরু। টাওয়ারটির অভ্যন্তরের ব্যস প্রায় ১৮ ফুট। এই টাওয়ারে মোট ৭টি জানালা রয়েছে। যার মধ্যে টাওয়ারের অভ্যন্তরে রয়েছে চারটি জানালা এবং এর উপরের স্তরে রয়েছে ছোট আরও তিনটি জানালা ।

এই টাওয়ারের পাশে ছোট-বড় আরও কিছু টাওয়ার রয়েছে। যে টাওয়ারগুলো বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা হয়েছে। ১৭৪১ সালের তথ্য মতে এই টাওয়ারটি ব্যবহৃত হতো পাথরের মিল হিসেবে, ১৭৬৭ সালে এটি পাউডারের মিল হিসেবে ব্যবহার করা হতো এবং আমেরিকান বিপ্লবের সময় এই টাওয়ারকে বানানো হয়েছিল ক্যাম্প ও দূরদৃষ্টি উচ্চ স্থান হিসেবে। আমেরিকান বিপ্লবের পর থেকে এই টাওয়ারকে রহস্যময় টাওয়ার বলা হয়। জিম ব্রানডন নামক একজন আমেরিকান গবেষক ও প্রকৌশলী নিউপোর্ট টাওয়ারকে কেন রহস্যজনক টাওয়ার বলা হয় এর কারণ অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেছেন।

ব্রানডন প্রাচীন এই টাওয়ারের নানা উপকরণ, লেখা, কারুকার্য নিয়ে প্রায় ১ বছর গবেষণা করে দেখেছেন যে, নিউপোর্ট টাওয়ারটি যে পাথর দ্বারা তৈরি করা হয়েছে তা প্রাচীন চুম্বক জাতীয় পাথর। এই চুম্বক জাতীয় পাথরের গায়ে রয়েছে চৌম্বক ক্ষমতা যা সহজেই লৌহ জাতীয় পদার্থকে আকৃষ্ট করতে পারে। ম্যাগনেট ছাড়াও টাওয়ারের ৩য় ও ৪র্থ তলায় পাওয়া গিয়েছিল মানুষের পায়ের চিহ্ন, প্রাচীন নকশা, মানুষের মাথার খুলি। এই সকল বিষয় থেকে অনুমান করা হয় যে, প্রাচীনকালে বা আমেরিকান বিপ্লবের সময় এই টাওয়ারটিতে মানুষ হত্যা করা হতো। কোনও পাপাচার বা অপরাধের জন্য অপরাধী ব্যক্তিকে এখানেই ফাঁসিতে ঝুলানো হতো।

১৯৪৬ সালে অধ্যাপক পি লভফোল্ড নামক একজন গবেষক সুইডেন, ও নরওয়েতে ১৪ ফুট উচ্চতার একই ধরনের টাওয়ারের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। আবার স্কটল্যান্ড ও নেদারল্যান্ড দ্বীপেও সন্ধান পাওয়া গেছে একই ধরনের টাওয়ার। যার মধ্যে স্কটল্যান্ডের টাওয়ারটি তৈরি করা হয়েছিল ১১১৫ সালে এবং নেদারল্যান্ডেরটি তৈরি করা হয়েছিল ১১৬০ সালে। নিউপোর্ট টাওয়ারের সঙ্গে এই টাওয়ারগুলোর মিল থাকায় পৃথিবী ব্যাপি একই ধরনের টাওয়ার কি কারণে প্রাচীনকালে তৈরি করা হয়েছিল সে ব্যাপারে গবেষকদের মাঝে রহস্যের সৃষ্টি করেছে। অতি উৎসাহী অনেকে বলে থাকেন গভীর রাতে নিউপোর্টে কান পেতে থাকলে শোনা যায় দূর থেকে কান্নার শব্দ ভেসে আসছে।

মার্কিন নিউপোর্ট টাওয়ারটি তৈরি করেন রোদ দ্বীপের প্রথম গভর্নর বেনেডিক্ট আর্নল্ড। ব্রিটিশ পেনি ম্যাগাজিন ১৮৩৬ সালে বর্ণনা করে নিউপোর্ট টাওয়ারের মতো একই ধরনের একটি টাওয়ার ইংল্যান্ডের চেস্টারটনে আছে। বেনিডিক্ট জন্ম গ্রহণ করেন লিমিংটন শহরে। যে শহরটি ছিল চেষ্টারটনের নিকটে। ফলে তিনি ওই টাওয়ারের অনুকরণে এই টাওয়ারটি সহজে নির্মাণ করতে পেরেছিলেন।

তিনি এটি তৈরি করেছিলেন মূলত পাথরের মিল হিসেবে ব্যবহারের জন্য। নিউপোর্ট টাওয়ারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাচীন একটি স্থাপনা। ফলে এই স্থাপনাকে ঘিরে মার্কিনদের রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। আর একই ধরনের স্থাপনা বিশ্বের কয়েকটি স্থানে থাকার কারণে অনেকে এটিকে সন্দেহের চোখে দেখে থাকেন। তবে এই স্থাপনাকে কেন্দ্র করে কোনও রহস্য আছে কিনা সেটা শুধুই অনুমান নির্ভর।

হয়তো এমন হতে পারে তৎকালীন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একই অনুকরণে পাথরের মিল তৈরি করা হয়েছিল। যেটা শুধুমাত্রই কাকতালীয় তবে রহস্য নয়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।