আমার ভেঙে যাওয়া টুকরোগুলো কুড়িয়ে আবার তৈরী করছি কাউকে, চেনা এবং অচেনায়। আমি জানি যে আমি কার্যকর কিছুই করতে পারবো না। কিন্তু মনকে প্রবোধ দিয়ে রাখা কঠিন। অন্তত এই ক্ষেত্রে আমি চাইনা। আমি কথাটুকু অন্তত বলতে চাই, প্রতিবাদ করতে চাই; ফেসবুকে অন্তত আমার চারশ' ষাট জন বন্ধু দেখুক যে আমি প্রতিবাদ করেছি।
এটা আমার সীমা। কিন্তু আমি সর্বক্ষণ ঘুমিয়ে থাকতে রাজি নই।
আমি বার্মার সংখ্যালঘু মুসলিম বা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির কথা বলছি। তারা হয়ত অনেকের কাছে মানুষই না - তারা কেবলই মুসলিম বা কেবলই রোহিঙ্গা অথবা দেশহীন, মর্যাদাহীন, নিষ্পেশিত এবং ঘৃণ্য এক জনগোষ্ঠি। আমি ব্লগেও অনেকের লেখায় দেখছি তারা কাতর প্রার্থনা এবং জ্বালাময়ী প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাদের মুসলিম ভাইদের জালিম বৌদ্ধদের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য।
শতকরা সাতানব্বই ভাগ মুসলিমের দেশ কেন কিছু করছেনা।
আমি কার মনোভাবে যে বেশি কষ্ট পাবো বুঝে উঠতে পারিনা।
যে কোনও একটি ছোট মানব গোষ্ঠিকে যখন ঘৃন্য অস্পৃশ্য অপরাধপ্রবণ আখ্যা দিয়ে তাদের উপর নির্বিচারে দমন নিপীড়ন চালানো হতেই থাকে। কালে কালে একসময় ঐ জনগোষ্ঠির পিঠ দেয়ালে ঠেকে ছেঁচড়ে যেতে থাকে, তখন নিরুপায় হয়ে তারা হিংস্র এবং সত্যই অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। তাদের বেঁচে থাকার আর কোনও উপায় থাকে না তখন।
এই ফলাফলের সবটুকু দোষ যারা নিপীড়ন চালায় এবং যারা তা মুখচোখ বুজে সহ্য করে তাদেরই। ঐ বিশেষ মানবগোষ্ঠির নয়।
মুর্খ নীতি নির্ধারকদের বিবেকে মানুষের জীবন এবং মননের চেয়ে তাদের নিজ ক্ষমতার আসনটি চিরকালই বড় বেশি মূল্যবান। আর তার জন্য বড় গোষ্ঠিকে ছোট গোষ্ঠির উপর লেলিয়ে দিলে বড় গোষ্ঠি নির্যাতনে মত্ত হয়ে তাদের শাসকদের কুকীর্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। শাসকরা তখন অপাপবিদ্ধ দেবতার আসন গ্রহন করেন।
আর অন্যদিকে বড় গোষ্ঠি ছোট গোষ্ঠির উপর তাদের 'যথার্থ প্রাপ্য' বুঝিয়ে দিয়ে আত্মতৃপ্তির রক্তাক্ত ঢেকুর তুলতে থাকে। নির্যাতিতের বেদনা, শোক আর মর্মযাতনা শোনার সেদিন কেউই থাকেনা। এই কী সভ্যতা? অনেক জ্ঞানপাপী সমাজবিদ্ বলবেন এটাই মাৎসান্যায়, এ অতি স্বাভাবিক। আরে স্বাভাবিকতার সংজ্ঞা তোকে শিখিয়েছে কে রে? তুই যদি ইহুদি হতিস আর ১৯৪০ সালে দিকে জার্মানী বা অস্ট্রিয়ায় বাস করতিস তাহলে তোর স্বাভাবিকতার অন্য দিকটাও দেখা হয়ে যেতো।
আমাদের পাঠ্যবইয়ে এই সব মগজধোলাইয়ের উপায় রাখা হয় যেন আমাদের মনের একটা অংশ নির্যাতিত মানুষের কষ্টে কাতর হলেও অন্য অংশ বালখিল্য জ্ঞানে উদ্যিপ্ত হয়ে সমস্ত রাজনৈতিক অত্যাচারকে 'স্বাভাবিক' বলে মেনে নিই! এবং কেবল মাত্র আমাদের 'ভাইদের' কষ্টেই যেন কেবল আমাদের প্রতিবাদী স্বত্বা জাগ্রত হয়ে ওঠে।
অন্য ক্ষেত্রে তারা নির্বিবাদ শীতনিদ্রায়।
রেডইন্ডিয়ান নির্মূল, হলোকাস্ট, ইসরায়েলী আগ্রাসন, ভারতে বা ইংল্যান্ডে বা অস্ট্রেলিয়ায় ধর্মীয় দাঙ্গা এবং ঘৃণা ছড়ানো অথবা, বাংলাদেশে বা আজকের বার্মায় সংঘটিত দাঙ্গা এগুলোর সবই মানব সভ্যতার অমোচনীয় কলঙ্ক। আমরা এই সভ্যতা চাইনা। আমি এই সভ্যতা চাইনা।
প্রতিবাদ জানাচ্ছি সকল পূর্বাপর অপরাধের।
আসলেই, অধিকাংশ মানুষই মনুষ্যত্ব শব্দের বানান জানে কিন্তু অর্থ বোঝে না।
[পূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত] ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।