আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অহংকারের পরিণাম

[ভূমিকাঃ এটা সবাই জানে যে, মুক্তা তৈরি হয় ঝিনুকের খোসার ভিতর যারা বাস করে মাহাসাগরের তলদেশে। এই ঝিনুকটি নিজেকে বিশ্বের মূল্যবান প্রাণী মনে করে অতি অহংকার বোধ করতো। গল্পটা এমনই একটা অহংকারী ঝিনুকের গল্প। তার এই অহংকার বোধই তাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। ] একদিন, মহাসাগরে ভয়ংকর ঝড় উঠলো।

সাগরের তরঙ্গ অতি উঁচু আর বিপদজক হলো। এই প্রতিকূল অবস্থা এতোটাই ভয়ানক হল যে, ঝিনুকের দুর্বল ঢাকনা আটকে গেলো, এবং শক্ত ভাবে সমুদ্রতল দেশে চেপে বসে থাকলো। সে ভাবলো তীরে উঠে গিয়ে তার মূল্যবান মুক্তা রক্ষা করা জরুরী। সে সাহস করে উঠে এলো উপরে। ঢেউ এতোই শক্তিশালী ছিলো যে, তাকে তীরে নিয়ে প্রচন্ড বেগে ছুড়ে ফেলে দিলো।

নিজেকে খোলামেলা তীরে পেয়ে খুব সতর্কতার সাথে তার খোসা একটু ফাক করে ভেতর থেকে পৃথিবীর দিকে দৃষ্টি দিলো। একই ভাবে সে দেখছিল যে, অন্য কোন বড় ঢেউ এসে তাকে আবার বালুর স্তূপে ছুড়ে ফেলে দেয় কী না। এখন এটা সত্যি সত্যিই বিপদসংকেত। ছোট্ট ছোট্ট ঢেউ এসে তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে আর বলের মতো গড়িয়ে নিচ্ছে এদিক থেকে ওদিকে। তবে এসব ঢেউএর প্রচন্ডতা এতো বেশি না যে, তাকে আবার সাগরে ভাসিয়ে নিতে পারে।

এখন সাগরে আর ঝড় নেই। তার নিজেকে এখন আর এই বালুর তীরে নিরাপদ মনে হচ্ছে না। অবশেষে এই অসহায় ঝিনুকটি সেখানেই পড়ে থাকলো। আর কোন রাস্তা ছিলো না যে, সে আবার সাগরের মাঝে ফিরে যেতে পারে, তাই সে খুব ক্রুদ্ধ হলো এই প্রতিকূল অবস্থার উপর। তীরের নিকটে একটা বৃক্ষ ছিলো।

একটা কাক ওই বৃক্ষে দীর্ঘক্ষণ বসা ছিলো; এবং ঝিনুকটির দুরবস্থা দেখছিলো। অবশেষে সে উড়ে গিয়ে নিচে ঝিনুকের পাশে বসলো। কাক তার ঠোঁট দিয়ে ঝিনুকের ঢাকনায় আঘাত করলো। “ "কে ভীতরে? দরজাটি খোল,”" সে তাকে তীক্ষ্ণ ভাবে জিজ্ঞেস করলো। ঝিনুকটি অসন্তুষ্ট হলো।

একটি ইতর, বদমাশ আমাকে কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করছে,” সে নিজে নিজে বললো, তারপর চীৎকার করে বললো,” "এটা কে?”" “ "আমি কোন বদমাশ না। আমি একটি সুচতুর কাক। দরজাটি খোল এবং বাইরে বেরিয়ে এসো। ”" " “কেন আমাকে বেরিয়ে আসা উচিৎ?”" “"শুধু কিছু একটা আলাপচারিতা করার জন্য; আর কিছু না”," কাকটি ভদ্রভাবে বললো। “ "আমার কোন সময় নাই কথা বালার মতো- এবং আমি বেরিয়ে আসছি না।

"” ” "ভালো কথা,তার পর ঠিক আছে, কিন্তু তুমি ভিতরে কী করছো?”" “ "আমি মুক্তা তৈরি করতে ব্যস্ত। যাই হোক না কেন, তোমার মতো একটা নোংরা, কদর্য কাকের সাথে কথা বলে কেন আমাকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে?”" কাকটি হাসলোঃ- “"অহ-কেমন উতকৃষ্ট, আমার বন্ধু, আমি তোমাকে মহাসগরের আকার আকৃতি, জানতে চেয়ে কিছু প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম এবং পৃথিবীর প্রশস্ততা সম্পর্কে তোমাকে জানাতে চেয়েছিলাম। ”" “ "কেন বলো তো?”" “ "কারণ আমি বিজ্ঞান সম্পর্কে খুবই আগ্রহ বোধ করি। আমি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে বসবাস করি এবং আমি বিজ্ঞানের অধ্যক্ষের বিজ্ঞান সম্পর্কিত সকল আলোচনা শুনি, সুতরাং বিজ্ঞান আমার কাছে খুব প্রিয় হয়ে গেছে। এই জন্যই আমি তোমার কাছে মহাসগর সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম এবং সেখানে কী ঘটছে তাও জানতে চাই।

তুমি কী চরুই পাখি ও ঘুঘুর ডিম সেখানে দখতে পাও?”" স্বল্পভাষী ঝিনুকটি বললোঃ- “"কী বাজেরে বাবা! যেন মহাসাগরে ঘুঘু আর চড়ুই পাখি বাস করে!" "” “কিন্তু এগুলোই তোমার কাছ থেকে আমি জানতে চেয়েছি। "” ঝিনুকটি বললোঃ-”এরকম অর্থহীন প্রশ্ন আমাকে আর জিজ্ঞেস করো না, মহাসাগরে আমার মতো অসংখ্য ঝিনুক আছে; কিন্তু সবার মধ্যে আমি হলাম সবচেয়ে মূল্যবান, সুতরাং আমি অন্য কোন ঝিনুকের সাথে কথা বলি না। সেখানে হাজারো রকমের রঙ্গিন মাছ আছে, এবং হাজারো রকমের উদ্ভিদ, কিন্তু সেখানে শুধু তোমার মতো বাজে, নির্বোধ ও কদর্য কোন প্রাণী নেই। ”" কাকটি হাসলো,” "আমি কোন খারাপ কিছু মনে করি নি, আমাকে যে তুমি নির্বোধ, বাজে কদর্য বলে বকা দিচ্ছ, কিন্তু আমি প্রকৃতপক্ষে বোকা নই, যেভাবে তুমি আমাকে ভাবছো। আমি একটি কাকা-এবং একটি অতি চতুর কাকও বটে।

কিন্তু বৃদ্ধ দোস্ত! তুমি আমাকে যা কিছু বলছো, এই ছোট্ট গুহা থেকে কেন বলছো। কেন তুমি ভিতর থেকে বেরিয়ে এসো না?”" "“তোমার কোন সামাজিক আচরণ জানা নেই? কত বড় সাহস তুমি বন্ধু হতে চাও! আমি কোন তোমার দোস্ত নই। ”" “ "ভালো, তুমি কী মহাসাগরের রাজা হয়ে কথা বলছো!”" “অবশ্যই- আমি হলাম যারা মুক্তা তৈরি করে তাদের একজন, যা সাগরকে বিখ্যাত করে। এসব কিছু আমার কারণেই হয়,” ঝিনুকটি বললো। " উৎকট চাপা হাসি দিয়ে কাকটি বললো- "খোসার মধ্যে, আমি অবশ্যই সাধারণ ভাবে তোমার দিকে তাকাচ্ছি।

কারণ আমি আর কখনও এরকম এক আশ্চর্য জিনিস দিখি নি। ”" “ "আমি কোন সাধারণ জিনিস নই, আমি একটি ঝিনুক, যে মুক্তার মতো অতি মূল্যবান জিনিস তৈরি করে। ”" "“ঠিক আছে, ঠিক আছে, তোমার মর্যাদা, কিন্তু দয়া করে তুমি কী বাইরে বেরিয়ে আসতে পারো না? এবং তোমাকে দেখার জন্য আমাকে একটা সুযোগ দেয়া যায় না?”" কাকটি তামাসা করে বললো। “ "না, না, না, আমি দরজা খুলতে পারবো না। আমি খুব ব্যস্ত।

”" "তুমি তো পরেও তোমার মুক্তা তৈরি করতে পারো, শুধমাত্র একবার দরজাটা খোলো- আমি একটা অতি সাধারণ গরীব কাক, যে তোমার মতো একজন গুরুত্ব পূর্ণ ব্যক্তিকে দেখতে চায়- যে কী না মুক্তা তৈরি করতে পারে। আমি মুক্তাও দেখতে চাই। শুনো ঝিনুক! আমার জীবনে আগে কখনো মুক্তা দেখি নি। "” “ "আমি সবেমাত্র তোমাকে বলে দিলাম যে দরজা আমি খুলতে পারবো না। এবং তুমি যদি নিজেকে এতোটাই চালাক মনে করো, তবে তুমি নিজে কেন দরজাটি খুলতে পারো না?”" ঝিনুকটি এভাবে তাকে উপহাস করতে পারে, কারণ এটা সে নিশ্চিত ছিলো যে, কাকটি কখনও ঝিনুকের খোসার দরজাটি খুলতে সক্ষম হবে না।

কিন্তু কাকটি এখন রাগান্বিত হলো। সে বললো, “"ঠিক আছে, তুমি যা বলছো, তা যদি ঠিক হয়, আমি তোমাকে দেখিয়ে দেব। এবং যা কিছু ঘটবে তা যদি তোমার অপছন্দ হয়, তাহলে আমাকে যেন দোষারোপ না করো। ”" কাকটি তার ঠোটে ঝিনুকটিকে আঁকড়ে ধরে অনেক উঁচুতে উড়ে গেলো। অবশেষে একটি শিলার অনেক উপরে গিয়ে বিশাল উচ্চতা থেকে সে ঝিনুকটিকে ঠিক শিলার বরাবর নিচের দিকে ছেড়ে দিলো।

ঝিনুকের খোসাটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো। কাকটি নিচে গিয়ে এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। সে ঝিনুকটিকে তার ঠোঁট দিয়ে আকড়ে ধরলো; আর একই ঢোকে তা গিলে ফেললো। কাকটি যখন দেখলো, মুক্তাটি গড়িয়ে তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তখন অতি মূল্যবান মুক্তাটি ঠোঁট দিয়ে আঁকড়ে ধড়ে খুশি মনে কা কা ধ্বনি করে উড়ে গেলো। অতি অহংকারী ঝিনুকের এভাবেই শেষ পরিণতি হলো।

—– অনূদিত গল্প ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।