আমি এখন সেফ। । রাজধানীর উপকণ্ঠ আশুলিয়ায় গতকাল শুক্রবার দুপুরে ক্ষুব্ধ জনতা ১১টি আবাসিক হোটেলে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ সময় বিভিন্ন হোটেল থেকে যৌনকর্মী, খদ্দের ও কর্মচারীদের রাস্তায় এনে বেধড়ক পিটিয়েছে তারা। আহত হয়েছে অন্তত ২০০ জন।
বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর হামলা চললেও ঘটনাস্থলের আশপাশে কোনো পুলিশ ছিল না। তবে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বেলা দুইটার দিকে পাঁচ শতাধিক লোক আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের ইউনিক এলাকায় জড়ো হয়ে প্রথমে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে। ওই সমাবেশে এলাকার আবাসিক হোটেল থেকে ‘যৌনকর্মী হটাও’ শপথ নিয়ে প্রথমে তারা পাশের আবাসিক হোটেল ‘নির্জনে’ হামলা চালায়। তারা ওই হোটেলে অবস্থানরত অন্তত ২০ জন যৌনকর্মীকে রাস্তায় এনে মারধর করে।
এরপর হোটেলের প্রতিটি কক্ষের আসবাব ভাঙচুর করে লেপ-তোশক বাইরে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় হোটেলে লুটপাটেরও ঘটনা ঘটে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হয়। এরপর লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে বাইপাইল, ইউনিক, গাজীরচট ও জামগড়া এলাকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে হামলা চালানো হয়। হোটেলগুলো হলো: প্যালেসডি, ডি ফ্যান্টাসি, বাল্যবন্ধু, স্বর্ণালী, রোজ গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল, মিলন ইন্টারন্যাশনাল, রিফাজ, হলিডে, ব্রাদার্স ইন্টারন্যাশনাল ও নিরিবিলি।
বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা চলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হোটেল থেকে লাফিয়ে পড়ে এবং হামলার শিকার হয়ে অন্তত ২০০ জন যৌনকর্মী ও খদ্দের এবং বেশ কিছু হোটেল কর্মচারী আহত হয়। তাদের অনেকেই মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা যে যার মতো বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
যে কারণে হামলা: আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের আশুলিয়ার ব্যস্ততম এলাকা বাইপাইল, ইউনিক, গাজীরচট ও জামগড়ায় বেশ কিছু আবাসিক হোটেল গড়ে উঠেছে।
দোতলা থেকে আটতলা পর্যন্ত এসব আবাসিক হোটেলে যৌনবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব হোটেলে প্রতিদিন অন্তত ৪০০ যৌনকর্মী উপস্থিত থাকত বলে এলাকাবাসী ও হোটেল সূত্রে জানা গেছে।
হামলাকারীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, আবাসিক হোটেলগুলোর কারণে এলাকার যুবসমাজ ক্রমেই ধ্বংসের পথে যাচ্ছিল। বারবার থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তাই নিরুপায় হয়ে তাঁরা গতকাল আবাসিক হোটেল থেকে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের উদ্যোগ নেন।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ: এলাকাবাসীসহ একাধিক সূত্র থেকে অভিযোগ করা হয়, আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তফা কামাল প্রতিটি হোটেল থেকে অন্তত ৩০ হাজার টাকা মাসোহারা পেতেন। মাস শেষে পুলিশ প্রতিটি হোটেল থেকে ওই টাকা নিয়ে আসত। এ কারণে পুলিশ সব জেনেও হোটেলগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিত না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোটেলের কয়েকজন শ্রমিক আশুলিয়া থানাকে নিয়মিত মাসোহারা দেওয়ার কথা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন।
তবে পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল গতকাল সন্ধ্যায় অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ডিআইজি সাহেবের অনুষ্ঠানে আছি।
এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত কথা বলব। ’
হোটেলের মালিকদের বক্তব্য: হোটেল স্বর্ণালীর মালিক নিজাম উদ্দিন বলেন, আশুলিয়ার কয়েকটি হোটেলে যৌনবৃত্তিসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপ চলে আসছিল। তবে তাঁর হোটেলে কোনো অসামাজিক কাজ হতো না। তার পরও অন্য সব হোটেলের সঙ্গে তাঁর হোটেলেও হামলা চালানো হয়।
ঘটনার পর অন্যান্য হোটেলের মালিকেরা গা ঢাকা দেওয়ায় এবং তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পুলিশের বক্তব্য: আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদরুল আলম হোটেলগুলোতে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।