আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সর্বত্রই মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়!

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............ সর্বত্রই মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়! অতি সমপ্রতি দু'টি লোমহর্ষক মৃত্যু ঘটনা দেশের সচেতন মানুষের মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এক ট্রাভেল এজেন্ট ব্যাবসায়ী তার তরুণী প্রেমিকাকে প্রেমের(?) ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ শেষে শুধু খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি-খুনেরপর তরুনীর মৃত দেহটি শৈল্পীক কারুকর্মের মাধ্যমে ২৬ টুকরা করে মৃতদেহ ছরিয়ে ছিটিয়ে ফেলেছে-যা অত্যন্ত সুস্থ্য সাবলীল ভাবে মিডিয়াতে বয়ান করেছে! প্রেমিকের সাথে সামান্য কথা কাটাকাটি বা সাময়িক বিচ্ছেদের জের ধরে একের পর এক আত্মহননের ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। সামান্য কারনে কখনো একে অপরের প্রতি হয়ে উঠেছে প্রতিহিংসাপরায়ণ। অহরহ ঘটছে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা। ইতোপূর্বে সাংবাদিক সাগর-রুমীর লোমহর্ষক হত্যাকান্ড দেশের সচেতন মানুষের মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

মাত্র দুইদিন আগে তোপখানা রোডে বৃদ্ধা মাকে বেঁধে রেখে তার সামনেই মেয়েকে জবাই করে হত্যা করে রেখে যায় দুর্বৃত্বরা। হত্যাকান্ডের দুইদিন পর বৃদ্ধা মা নিজ থেকেই বাঁধন খুলে বেরহতে নাপারলে তাঁর মৃত্যুও অনিবার্য ছিল বৈকি! দু'টি ক্ষেত্রেই ঘাতকদের পৈচাশিক ভন্ডামি ও নীতিহীনতাই এর পেছননের ভূমিকা লক্ষনীয়। একজন মানুষ শিশুকাল থেকে তার বাবা-মা বা অভিভাবকের স্নেহ-ভালবাসার মধ্যদিয়ে বেড়ে ওঠে। সে বিবেচনায় ছেলে-মেয়েদের ওপর মা-বাবারই নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিৎ সবচেয়ে বেশি। আজকাল আমাদের দেশে মা-বাবারা তাদের জীবন ও জীবিকার স্থূল চাহিদার কর্মব্যস্ততার কারণে সন্তানের চরিত্র গঠনের দিকে যথেষ্ঠ সময় দিতে পারেন না।

অনেক ক্ষেত্রে গৃহকর্মীর ওপর সন্তানের দায়-দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চান। এ সুযোগ গ্রহণ করে কোমলমতি শিশুরা। শিশুমন হচ্ছে কাদামাটির মতো। তাকে যেভাবে ইচ্ছে গড়ে তোলা সম্ভব। প্রয়োজন শুধু সুষ্ঠু পরিচর্যা।

সন্তানের প্রতি যত্নশীল না হয়ে আজকাল জীবনের যাঁতাকলে পিষ্ট মা-বাবারা তাদের সন্তানের মানসিক বিকাশের পথ অবারিত না করে শুধু পুঁথিগত শিক্ষা লাভের জন্য তাদের সামনে কতগুলো ভারী ভারী পাঠ্যপুস্তক তুলে দেন। সারাদিন শিশু-কিশোরদের ব্যস্ত রাখেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে। আজকাল শিক্ষা জীবনের শুরুতেই কিছু জাগতিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য লাভের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শেষ করে দেওয়া হয় শৈশব-কৈশোরের সব আনন্দ আয়োজন। সেখানে সুকুমার বৃত্তিচর্চা ও মূল্যবোধ বিকাশের খুব একটা সুযোগ থাকে না। জীবনে বিপুল অর্থ-সম্পদ গড়ার পেছনে ছুটে চলার নেশা চেপে ধরে জীবনের শুরুতে।

প্রাচুর্যে জীবনকে রাঙিয়ে তোলার প্রবল বাসনা যেন শিশু-কিশোর মনের জীবনবোধকে ক্রমশ কুরেকুরে খেতে থাকে। এক সময় নিজের অজান্তেই হারিয়ে যায় তার জীবন-পথ চলার মূল চালিকা শক্তি,সততা ও নিষ্ঠার মতো গুণাবলী অর্জনের সকল প্রয়াস। নিম্নবিত্তের পরিবারগুলোর অবস্থা আরো বেহাল। জীবরে নূন্যতম চাহিদা দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের জন্য মা-বাবা ছুটে বেড়ান। তাদের সন্তানেরা বেড়ে ওঠে চরম অযত্ন অবহেলার মাঝে।

অসুস্থ পরিবেশে থেকে থেকে এক সময় ওদের অনেকে হারিয়ে যায় জীবন থেকে। এক সময় হয়ে যায় অপরাধ জগতের বাসিন্দা। ঘরে,বাইরে কোথাও ভাল কিছু শেখা বা জানার সুযোগ নেই ওদের। স্কুল,কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে কিশোর কিশোরীদের সুশিক্ষা লাভ এবং চরিত্র গঠনের আরেক প্রধান ক্ষেত্র। আজকাল অনেক শিক্ষকই শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত থেকে শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনের সবটুকু দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন বলে মনে হয় না।

শিক্ষকদের মধ্যেও তো রয়েছে বিভাজন। আর শিক্ষার্থীরা এ সবের সুযোগ নেবে এটা অস্বাভাবিক নয়। যে-কোনো শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে মতাদর্শের অমিল থাকতে পারে। কিন্তু সে মতপার্থক্যের শিকার অন্যরা হওয়া কাম্য হতে পারে না। আজ বাংলাদেশে মাছ,মাংস, ফলমূলসহ ওষুধপত্র, আটা, ময়দা, রুটি, বিস্কুট, প্রশাধন সামগ্রীতে হরদম ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করে এ দেশেরই কতিপয় মুনাফালোভী মানুষ! অসাধু ব্যাবসায়ীরা ফরমালিন দিয়ে পঁচনরোধ করে মাছ,ফল,শাক স্বব্জি,দূধ, মিষ্টি বাজারে দেদারছে বিক্রি হয় ।

ন্যায় নীতিবোধ বিকিয়ে ওজনে কম দিয়ে ক্রেতা ঠকান অনেক বিক্রেতা। ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধপত্র, স্যালাইন সলিউশন বাজারে বিক্রি হয়। সরকারি, বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নকল ওষুধ, ইনজেকশন, মাদকসেবীদের বিষাক্ত রক্ত ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বছর কয়েক আগে একটি ঔষধ কোম্পানীর তৈরী বিষাক্ত ডাই-ইথাইলিন গ্লাইকল নামক বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো প্যারাসিটামল খেয়ে একেএকে ২৭টি শিশুর প্রাণ অকালে ঝরে গেল! দেশের লক্ষ লক্ষ মেহনতি শ্রমিক, কৃষক জনতার ঘাম ঝরানো পয়সার গড়া হাসপাতালে রোগী সেবার নামে চলছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্ণীতি। দরিদ্র রোগীকে জোর করে বেসরকারী হাসপাতাল ও প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানো হয়! স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ফাঁকি দিয়ে শিক্ষকরা ব্যাস্ত প্রাইভেট বাণিজ্যে।

দেশজুড়ে মাশরুমের মতো গড়ে তোলেন কোচিং সেন্টার, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়! আজ এ দেশের অসংখ্য মানুষ বিদ্যুৎ বিল ফাঁকি দিয়ে হিটার জ্বালায়, গ্যাসের চুলা জীবনেও বন্ধ করে না। সময়মত পানি, টেলিফোন বিল দিতে অনীহা অনেকের! অসংখ্য বিত্তশীলের বিরুদ্ধে রয়েছে কর ফাঁকির অভিযোগ। ৮ হাজার টাকা বেতনের একজন সরকারী কর্মচারির অবৈধ টাকায় গড়ে ওঠে প্রাসাদোপম একাধিক বাড়ি! শিক্ষা পরিবর্তন করে মানুষের চরিত্র। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বিশাল কর্মযজ্ঞের ইতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশ ও সমাজের বিকাশের ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সততা, আন্তরিকতা ও সমাজ সচেতনতা বড় জরুরি।

এ ক্ষেত্রে সন্তানের মা-বাবা,অভিভাবক,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের যত্নশীলতা দরকার। আলোকিত মানুষ ও সমাজ পেতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দিতে হবে ভাল বই। তাদের করতে হবে পাঠাগারমুখী। শিল্প-সংস্কৃতির দিকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। নিজ ঘরেই গড়ে তুলতে হবে এক আলোকিত পরিবেশ।

তাদের সামনে খুলে দিতে হবে মুক্ত বুদ্ধিচর্চার সকল দুয়ার। আদর্শহীনতাই মানুষকে সহজে বিপথে পরিচালিত করে। ঘরে বাবা-মা , শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক এমনকি সামাজিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে শিশু-কিশোর মনে মানবিক মূল্যবোধের সূক্ষ বিষয়গুলো এমোনভাবে সঞ্চারিত করে দিতে হবে যা তাদের অস্তিত্বে স্থায়ী প্রভাব ফেলবে এবং এর মধ্য দিয়ে তারা খুঁজে পাবে জীবন পথে চলার সঠিক পথ। বিকশিত মানবিক মূল্যবোধই মানুষকে ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে শেখায়। ভন্ডামী, নীতিহীনতা ও পাপাচার থেকে দূরে রেখে আলোকিত মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।

মানুষ হিসাবে জন্ম নিয়ে মানুষ হিসাবেই বেঁচে থাকা তার নৈতিক দায়িত্ব। উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সঠিক দায়িত্ব পালন এবং কর্তব্যবোধের সৃষ্টি হয়। সুশিক্ষা বিকাশ ঘটায় মানবিক মূল্যবোধের। সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠা ছাড়া মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি হয় না। আর মানবিক মূল্যবোধ ব্যতীত মানুষ কখনো মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে পারে না।

সৎকর্ম করা ছাড়া ধর্মবিশ্বাসেরও সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কাজেই সমাজ কাঠামোর প্রতিটি স্তরে মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানোর পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে। মানুষ হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। সমাজবদ্ধ মানুষের মূল্যবোধের শক্তি দ্বারা পরিচালিত কর্মের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে বসবাসযোগ্য রাষ্ট্র ও সমাজ। এ জন্য প্রথমে বদলাতে হবে নিজেকে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.