আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভোটের বাজেটে ইনামের বার্তা

ভালবাসি অর্থনীতির নানামুখী চাপ ও দেড় বছরের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের কঠিন বাস্তবতা মাথায় রেখে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। বাজেটে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রাধান্য দেয়ার কথা বলেছেন। একই সাথে আয়-ব্যয় বাড়ানোর কথা যেমন বলা হয়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের অঙ্গীকারও রয়েছে। Click This Link ঘোষিত এ বাজেটটি হচ্ছে, মহাজোট সরকারের চতুর্থ বাজেট এবং বাস্তবায়নযোগ্য পূর্ণাঙ্গ শেষ বাজেট। কারণ আগামী ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬ মাস পাবে এই সরকার।

অর্থমন্ত্রী তার প্রস্তাবিত বাজেটে ভোটারদের ইনামের বার্তা দিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি কৃষি খাত, পল্লী উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতা এবং বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে সুনির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ না দিয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের কথা বলেছেন। যাতে জনপ্রতিনিধিরা এ খাতে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ নিতে পারেন। এসব বরাদ্দ কাজে লাগিয়ে জনপ্রতিনিধিরা যাতে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারেন, সেই জন্য অর্থ ব্যয়ের খাতগুলোকেও চিহ্নিত করে দিয়েছেন।

চিহ্নিত খাতগুলোর শুরুতেই অর্থমন্ত্রী বলেছেন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের কথা। এরপরই বলা হয়েছে, আবাসন ও স্যানিটেশনের কথা। এছাড়াও ভূমি বাজেটেও পানি, মৎস্য ও প্রাণী, পল্লী বিদ্যুতায়নও এর আওতায় রাখা হয়েছে। মূলত সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে কৃষির সাথে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে। এদিকে অতি দরিদ্র মানুষকে ভিজিডি, ভিজিএফ, জিআর ও কাজের বিনিময় খাদ্য কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।

এসব উপকারভোগীর সংখ্যা হবে ৩ কোটি। এছাড়াও ২৫ লাখ লোকের মাঝে ফেয়ার কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১০ সালের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৭৭ লাখ। সরকারের দৃশ্যমান সাফল্যকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার জন্য ৪২ হাজার পানির উৎস তৈরি করা হবে। আর বণ্টন হবে ৯৫ জনের জন্য একটি।

একইভাবে শতভাগ মানুষের জন্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য দেশের সব উপজেলায় সমবায় বাজার করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। একইভাবে ভোটার আকৃষ্ট করতে পল্লী বিদ্যুতায়নের সম্প্রসারণ করা হবে। মানব সম্পদোন্নয়নের মাধ্যমেও এ কাজটি দক্ষ হাতে করতে চান অর্থমন্ত্রী। দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তার মাধ্যমেও ভোটার আকৃষ্ট করার উদ্যোগ রয়েছে।

এজন্য মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা কার্যক্রমের আওতায় ১ লাখ ৫০ হাজার সুবিধাভোগীর জন্য ৩৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীর সংখা ৬০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২০০ জন করা হয়েছে। আর বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪২ হাজার ৫০ লাখ টাকা। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকার মহিলা শ্রমিক এবং ৬১ জেলা সদরের কর্মজীবী মোট ৭৭ হাজার ৬০০ জন দরিদ্র ল্যাকটেটিং মাকে মাসিক ৩৫০ টাকা করে ভাতা দেয়া হবে। এবার তা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার করা হবে।

বয়স্ক ভাতা ভোগীর সংখ্যা করা হবে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার। এজন্য বরাদ্দ হচ্ছে ৮৯১ কোটি টাকা। ২৪ লাখ ৭৫ হাজার বয়স্ককে ভাতার আওতায় আনা হবে। এজন্য বরাদ্দ ৩৩১ কোটি ২০ লাখ। ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় ৭ লাখ ৫০ হাজার নারীকে মাসিক ৩০ কেজি করে মোট ২ লাখ ৭১ হাজার টন চাল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, যা অব্যাহত থাকবে।

ভিজিএফ কার্ডের আওতায় ৩ কোটি ১১ লাখ থেকে ৩ কোটি ৪২ লাখ করা হবে। সমাজের অনগ্রসর দলিত, হরিজন, বেদে ও হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এ জন্যই অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, জনগণের আয় বাড়ানোকে প্রাধান্য না দিয়ে অযথা একটি বড় ব্যয়ের বাজেট দেয়া হয়েছে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই বড় ব্যয়ের এ বাজেটে জনগণের কোনো উপকার হবে না।

বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় এত বেশি ধরা হয়েছে, যা বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। ঘাটতি বাজেট বাড়িয়ে সরকার শুধু দায়ই বাড়ায়নি, জনগণের ওপর বাড়তি ঋণের বোঝাও চাপিয়ে দিয়েছে। আর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অতিরিক্ত যে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষ আরো দরিদ্র হয়ে ক্রয় ক্ষমতা হারাবে। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নতুন বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এর মধ্যে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। এনবিআরবহির্ভূত সূত্র থেকে আসবে ৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ২২ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ।

বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা ব্যয় করবে সরকার, যা জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। এই টাকা থেকেও এডিপি বহির্ভূত উন্নয়ন ব্যয় হবে ২ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। এতে প্রকৃত অনুন্নয়ন ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব ব্যয় হবে ৯৯ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।

এই ব্যয়ের ২৩ হাজার ৩০২ কোটি টাকা দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই খরচ হবে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা আর বিদেশি ঋণের সুদ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা (জিডিপির ৫ দশমিক ৩ শতাংশ)।

এবারকার বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ১৮ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৩৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নির্বাহ করা হবে ১০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ শতাংশ। তবে এবারো ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয়া হবে, যার পরিমাণ ২৩ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে যেতে পারে বলে এরই মধ্যে আশঙ্কা করেছেন ব্যবসায়ী এবং অর্থনীতিবিদরা।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতার গত তিন বছরে কি কি করেছেন এবং কি কি করতে পারেননি, তা বলেছেন, একই সঙ্গে উল্লেখ করেছেন, কোন কোন কার্যক্রম চলমান আছে এবং কোন কোন কার্যক্রম শুরুই করতে পারেননি। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের পূর্ণাঙ্গ শেষ ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এই বাজেটের মাধ্যমেই সমাপ্ত কার্যক্রমগুলোর ভিত্তি সুসংহত ও সুদৃঢ় করতে চান তিনি। এগিয়ে নিতে চান চলমান কার্যক্রমগুলোকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে। আর যেসব কার্যক্রম এখনো শুরু করতে পারেননি, সেগুলো শুরু করতে চান, যাতে এই সরকারের কর্মমেয়াদেই সফল সূচনা সম্ভব হয়।

বিশেষ করে পদ্মা সেতুই এর প্রধান লক্ষ্য। অর্থমন্ত্রী এবারো অর্থনৈতিক মুক্তির সনদ রূপকল্প-২০২১ এবং স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেছেন। বলেছেন তার ঘোষিত প্রথম দুটি বাজেট এই রূপকল্প বাস্তবায়নের ভিত্তিভূমি তৈরি করেছে, তৃতীয় বাজেটে অগ্রগতি হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তা আরো দৃঢ়তা লাভ করবে এবং জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে দেশের সব সমস্যা নিরসনে বিপুল সম্পদের চাহিদার বিপরীতে সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

কোনো আবেগ বা উচ্চাভিলাষ নয়, বাজেট প্রণয়নে বিদ্যমান বাস্তবতা ও সময়ের দাবি বিশ্লেষণ করে সর্বোত্তম অর্থনৈতিক সূত্র অনুসরণ করা হয়েছে। তাই আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা ৮ শতাংশে উন্নীত হবে। তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ ছিল বিশ্ব মন্দার বছর। সে সময় বিশ্ব প্রবৃদ্ধি নেমে যায় (-) শূন্য দশমিক ৬ শতাংশে, রপ্তানি কমে যায় (-) ১১ শতাংশ ও রেমিট্যান্স হ্রাস পায় (-) ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, রপ্তানি বাড়ে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায় ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

এ সময় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। ২০১১-১২ অর্থ বছরে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। এই সময়ে বিশ্বের আমদানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ঋণান্তক থাকলেও গত তিন বছরের আমদানি গড় ২২ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি বছর মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি হ্রাস পেলেও গত তিন বছরের গড় আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় গ্যাস সঙ্কটকে বিবেচনায় রেখে নতুন পরিকল্পনায় গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রের পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক, ফার্নেস অয়েল, ডিজেল এবং ডুয়েল ফুয়েলভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিক্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জ্বালানি খাতেও ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। গ্যাস উত্তোলনের জন্য নতুন নতুন কূপ খনন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন গ্যাস ও তেল ক্ষেত্র আবিষ্কার করা হয়েছে।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।