আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেমের মরা জলে ডুবে না।

আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত মোবাইল ফোনে পরিচয়। এরপর প্রেম। শেষ পরিণতি ধর্ষণের পর খুন।

শুধু তা-ই নয়, নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ২৬ টুকরো করা হলো ১৫ বছরের হতভাগ্য কিশোরী রুমিকে। লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার রাতে রাজধানীর পরীবাগে নাহার প্লাজায় সোনালী ট্রাভেলসের একটি কক্ষে। হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য কিশোরীর পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের করে বাথরুমের কমোডে রাখা হয়। এরপর তার শরীরের ২৬টি টুকরো একটি বাড়ির ছাদের ওপর এবং রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়। গতকাল সকালে লাশের টুকরোগুলো পুলিশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সোনালী ট্রাভেলসের মালিক সাইদুর রহমান বাচ্চু পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে জানায় পুলিশ। রমনা জোনের পুলিশের ডিসি নুরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত সোনালী ট্রাভেলসের মালিক সাইদুর রহমান বাচ্চু স্বীকার করেছে, প্রায় তিন বছর আগে ফরিদপুরের রুমির সঙ্গে মোবাইলে পরিচয় হয়। এর মধ্যে তার সঙ্গে গড়ে ওঠে গভীর সম্পর্ক। একপর্যায় তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ ঘটে। মেয়েটি ঢাকায় এলে মিরপুরে তার বোনের বাসায় উঠত।

এক বছর আগে সে একটি মোবাইল ফোন উপহার দেয় রুমিকে। বাচ্চু জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে সে রুমিকে নাহার প্লাজার ১৩ তলায় ১৩০৮ কক্ষে (সোনালী ট্রাভেলস) নিয়ে আসে। এরপর ওই কক্ষে সে জোরকরে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। একপর্যায় মেয়েটি দরজায় ধাক্কা দিয়ে কক্ষ থেকে বের হতে চায়। পরে মেয়েটি বাইরে গিয়ে এসব প্রকাশ করার ভয় দেখালে বাচ্চু তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পরে মেয়েটি কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে সে বাধা দেয়। লোকজনকে বলে দিতে পারে—এ ভয়ে সে মেয়েটিকে কক্ষের ভেতরে গলা টিপে হত্যা করে। পরে ধারালো ছুরি দিয়ে দেহের বিভিন্ন অংশ টুকরো টুকরো করে ফেলে। রমনা জোনের এডিসি আনোয়ার হোসেন জানান, মেয়েটির পরিচয় উদ্ঘাটন নিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। বাচ্চু প্রথমে মেয়েটির নাম বলেছিল সুস্মিতা।

পরে মেয়েটির মা ও বোন একটি ছবি নিয়ে এলে পরিচয় জানা যায়। বিকালে তরুণীর খণ্ডিত লাশ উদ্ধারের পর বিভিন্ন ব্যক্তি মর্গে গিয়ে খোঁজ নেয়। বিকালে গাজীপুর থেকে এক মহিলা ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গিয়ে খোঁজ নেন। তিনি বলেন, তার মেয়ে রত্না ৭-৮ দিন আগে গাজীপুর থেকে নিখোঁজ হয়েছে। কিন্তু মর্গে গিয়ে লাশের বীভত্স টুকরোগুলো দেখে চিহ্নিত করতে পারেননি তিনি।

পরে ওই তারা খোঁজ নিতে শাহবাগ থানায় যান। মহিলার সঙ্গে থাকা ছবি ও নিহত কিশোরীর ব্যবহৃত পোশাক এবং জুতা দেখে মেয়েকে শনাক্ত করেন। রুমির বাবার নাম সাদ্দাম হোসেন। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় তাদের গ্রামের বাড়ি। এডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়।

সে জানায়, শ্বাসরোধে হত্যার পর মৃতদেহ বাথরুমে নিয়ে ছুরি দিয়ে প্রথমে দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে। পরে দু’হাতের কব্জি, হাঁটু থেকে দুই পা কেটে ফেলে। এরপর পেটের ভুঁড়ি, চর্বি ও দেহের বিভিন্ন অংশের চামড়া খসিয়ে কমোডে ফ্লাশ করে বের করার চেষ্টা করে। এরপর দেহের খণ্ড-বিখণ্ড টুকরো পাশের চারতলা ভবনের ছাদে নাহার প্লাজার ১৩ তলা থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়। গ্রেফতারকৃত বাচ্চু জানায়, সে তাকে হত্যা করতে চায়নি।

মানসম্মানের কথা চিন্তা করে মেয়েটিকে হত্যা করতে বাধ্য হয়। সে জানায়, মেয়েটিকে তার কক্ষে আনার সময় হোটেলের কর্মচারী ও লিফটম্যান দেখেছে। তারা তখনই সন্দেহ করেছিল। ডিসি নুরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে বাচ্চু বলেছিল সে মেয়েটির পুরো পরিচয় জানত না। সে এতটুকুই জানত তার বাড়ি ফরিদপুর বা গোপালগঞ্জে।

রাজধানীর মিরপুরে বোনের বাসার ঠিকানাও সে জানে না। সে কখনও ওই বাসায় যায়নি। এডিসি আনোয়ার আরও বলেন, লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডটি বাচ্চু একাই ঠাণ্ডা মাথায় ঘটিয়েছে। বাচ্চু হোটেলের একটি কক্ষে ওয়ানলাইন ট্রাভেল ব্যবসা করত বলে জানিয়েছে। তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।

ট্রাভেলস ব্যবসার আড়ালে আসলে সে কী করত—এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। যেভাবে লাশ উদ্ধার : পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ৩৭ বীর-উত্তম সিআর দত্ত রোডে নাহার প্লাজার দক্ষিণ পাশে পিজা গলিতে একটি চারতলা বাড়ির সামনের রাস্তায় মানুষের দুটো পায়ের টুকরো পড়ে থাকতে দেখেন এক পথচারী। এরপর ওই বাড়ির কেয়ারটেকার আবুল হোসেন বাড়ির মালিককে জানালে তিনি থানায় খবর দেন। কিছুক্ষণের মধ্যে স্থানীয় লোকজন সেখানে ভিড় করে।

এরপর পুলিশ ও ডিবি সদস্যরা এসে তল্লাশি চালান। গোয়েন্দা পুলিশ চারতলা বাড়ির বিভিন্ন ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই বাড়ির ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে বীভত্স খণ্ড খণ্ড লাশের টুকরো দেখতে পায়। সেখানে এক তরুণীর মাথা, দুই হাতের বিচ্ছিন্ন কবজি, বিচ্ছিন্ন স্তন, হাড় থেকে খসানো মাংস, পায়ের বিচ্ছিন্ন অংশসহ দেহের ১২ টুকরো উদ্ধার করে। শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, ভবনের চারতলা ও সামনের সড়ক থেকে প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে লাশের টুকরো উদ্ধার করা হয়।

তখনও ঘটনাস্থল জানা যায়নি। পরবর্তী সময়ে সন্দেহ হলে চারতলা ভবন লাগোয়া নাহার প্লাজায় গিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। নাহার প্লাজায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও একটি আবাসিক হোটেল, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও একটি ট্রাভেলস অফিস রয়েছে। ১১ ও ১২ তলায় আবাসিক হোটেল স্কাই ভিউ গার্ডেন, ১৩ তলার একটি রুমে সোনালী ট্রাভেলস ও ১৪ তলায় একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট। নিচ তলা থেকে ১০ তলা পর্যন্ত মার্কেট ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

পুলিশ সদস্যরা প্রথমে নাহার প্লাজার ১২ তলায় হোটেলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কারা হোটেলে এসেছিল, তাদের খোঁজ খবর নেয়। হোটেলের রেজিস্টার খাতায় বোর্ডারদের তালিকা সংগ্রহ করে। বিভিন্ন কক্ষে থাকা বোর্ডার, হোটেলের মালিক, ম্যানেজার ও বয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে প্রতিটি কক্ষ তন্ন তন্ন করে খোঁজে।

কিন্তু হোটেলে হত্যাকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতা পায়নি পুলিশ। হোটেলের সুপারভাইজার পুলিশকে জানায়, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ১২০৯ নম্বর কক্ষের বোর্ডার জহিরুল জানায়, সে বাথরুমে গিয়ে কমোডের ভেতরে পানির সঙ্গে পচা নাড়িভুঁড়ির মতো দেখতে পেয়েছে। পচাগলা নাড়িভুঁড়ির মতো দেখে সন্দেহ হওয়ায় জহিরুল প্রথমে বয় মামুনকে জানায়। মামুন তার কক্ষে গিয়ে সেও নাড়িভুঁড়ি দেখে অন্যদের জানালে সন্দেহ হয়। তারা ধারণা করেছিল, ১৪ তলায় চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আনা ছাগলের নাড়িভুঁড়ি কোনোভাবে টয়লেটের পাইপ দিয়ে আসতে পারে।

পরে হোটেলের লোকজন চাইনিজ রেস্টুরেন্টে গিয়ে খোঁজ নিয়ে এর সংশ্লিষ্টতা পায়নি। গোয়েন্দা পুলিশ ১৩ তলার সোনালী ট্রাভেলসের ১৩০৮ নম্বর কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে সোনালী ট্রাভেলসের মালিক সাইদুর রহমান বাচ্চুসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করে। শাহবাগ থানার এসআই আবদুস সামাদ বলেন, ছাদ থেকে ১২ টুকরো, বাড়ির সামনে থেকে পায়ের ২ টুকরো এবং সোনালী ট্রাভেলসের ১৩০৮ নম্বর কক্ষের কমোড থেকে ১২ টুকরোসহ লাশের ২৬টি টুকরো উদ্ধার করা হয়। পরে লাশের টুকরোগুলো ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায় পুলিশ। এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ২৬ টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

র্যাব, সিআইডি ও গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নানা আলামত পরীক্ষা করে। গোয়েন্দা পুলিশের ক্রাইম সিন ইউনিটের এসি আল বেলি আফিফা বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত পরীক্ষার জন্য তারা সংগ্রহ করেছে। তিনি বলেন, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়া কক্ষ থেকে নানা আলামত তারা নিয়েছে। ডিবি আগে আলামত সংগ্রহ করায় সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে গেলেও তারা কোনো আলামত সংগ্রহ করেনি বলে জানা যায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.