আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কয়েকটা লাশ না ফেললে মনে শান্তি পাবো না, মানবজাতিকে পবিত্র করতে কয়েকটা লাশের বড় প্রয়োজন

৪টি ঘটনা বলব, তার ২টি আমি জেনেছি ফেসবুক শেয়ারের মাধ্যমে। আর বাকি ২টি জেনেছি গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে। এর মধ্যে প্রথম ৩টি পড়ে আমি যখন নির্বিকার ছিলাম, তখন ধরেই নিয়েছি আমি মোটামুটি নিষ্ঠুর প্রকৃতির পাষাণ মানুষ। কিন্তু আজকে যে খবরটা দেখলাম, সেটা আমাকেও স্তম্ভিত করে দিয়েছে। মন খুবই খারাপ।

এজন্য লেখা উলটাপালটা হয়ে যাচ্ছে। বেশি কথা না বলে ঘটনাগুলো লিখে গেলামঃ ১ম ঘটনা (ফেসবুক শেয়ারের মাধ্যমে জানা) ভারতে এখনো কন্যাশিশু জন্মের সাথে সাথে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। নিঃসন্দেহে মর্মান্তিক একটা খবর। কিন্তু পড়ে আমার মাথায় প্রথম যে চিন্তা এসেছিল তা হল ১৪০০-১৫০০বছর আগেও পৃথিবী এরকমই ছিল, এটা নতুন কোন ঘটনা না। মানুষের এই লেভেলের নিষ্ঠুরতা অনেক পুরনো।

আর তাছাড়া ভারতই সেই দেশ, যেখানে প্রায় ৫০টির বেশি শিশুকে খুন করে হৃৎপিণ্ড খেয়ে ফেলেছিল এক তান্ত্রিক গোছের অমানুষ, ঐ দেশে এই ঘটনা ডালভাত। ২য় ঘটনা (এটাও ফেসবুকের মাধ্যমে জানা) গতকালই আমার ফেসবুক হোমপেজ একটা শেয়ারে ভরে গিয়েছিলো। সম্মানরক্ষার অজুহাতে পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ দম্পতি তাদের টিনএজ মেয়েকে হত্যা করে লাশ কেটেকুটে বাক্সে ভরে ফেলে দিয়েছে। আমার অনেক বন্ধুই এই ঘটনায় মন্তব্য করেছিল অমানুষ পাকিস্তানীদের পক্ষেই এটা সম্ভব। আমারও মতামত অনেকটা এরকমই ছিল।

পাকিদের নৃশংসতার নজির আমাদের বাঙ্গালীদের মত ভাল করে আর কারো জানা নেই। তাই এই ঘটনা আমাকে খুব একটা নাড়া দেয়নি বললে ভুল হবেনা। ৩য় ঘটনা ডাস্টবিনে পড়ে থাকা ৪টি নবজাতক(কুকুর-বিড়ালের বাচ্চা না, মানুষের বাচ্চা!) উদ্ধার করা হয়েছে কয়েকটি নেড়ি কুকুরের সৌজন্যে। আস্তাকুঁড়ে খাবার খুঁজতে গিয়ে কয়েকটি বাচ্চা পড়ে থাকতে দেখে কুকুরগুলো এবং ঘেউ-ঘেউ করে মানুষ ডেকে আনে। এরই মধ্যে বাচ্চাগুলোর নাড়ি কামড়ে খেয়ে ফেলেছিল ইঁদুর কিংবা চিকা।

তারপরও কুকুরগুলোর কারণে প্রাণে বেচে যায় মানুষের বাচ্চাগুলো। ৪র্থ ঘটনা একটু আগে মাত্র মাছরাঙ্গা চ্যানেলে খবরটা দেখলাম, এখনো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছেনা এরকম ঘটনা যে ঘটতে পারে। ১৩মাস বয়সী(ঠিকই পড়েছেন, ১৩বছর নয়, ১৩ মাস বয়সী) এক শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে আমাদের রাজধানীর মিরপুরে! ঘটনাটা ৭দিন আগের। এখনো বাচ্চাটা স্বাভাবিক হতে পারেনাই। সারাদিন কান্নাকাটি করে।

কেউ কোলে নিলেই ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে। মেয়েটির মাও নিশ্চিত না বাচ্চাটা ব্যাথায় কাঁদে না ভয়ে। কারণ বাচ্চাটা তার মা’র কোলেও যেতে ভয় পায়। ওনার দাবী কোন মানুষ দেখলেই নাকি বাচ্চাটা অস্বাভাবিক আচরণ করে, কেউ আশেপাশে থাকলেই ঘুমাতে পারেনা। এরমধ্যে কোন সংবাদপত্রে এ ব্যাপারে রিপোর্ট হয়েছে নাকি জানিনা, হয়তো আমার চোখে পড়েনাই।

সংবাদপাঠিকা অনেকদিনের অভিজ্ঞ, কিন্তু তারপরও খবরটি পড়ার সময় তার গলা ধরে এসেছিলো(অভিনয় না, রিপোর্ট দেখে আমারই মাথা কাজ করছিল না)। বারবার উপরের ৩টা ঘটনা মনে পড়ছিল। ১ম ঘটনাটা পড়ে ভারতীয়দের মূর্খ অমানুষ বলে গালি দিয়েছি। কালকে মাত্র পাকিস্তানিদের মা-বাবা তুলে গালিগালাজ করলাম যেই কারনে তাদেরও আজকে অনেক মহৎ মনে হচ্ছে। অন্তত ভারতীয়/পাকিস্তানীরা তাদের মেয়েটাকে মেরে ফেলেছে।

তিলে তিলে সারাজীবন নষ্ট করে দেয়নাই, যেটা হত মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর। আর আমরা মহান(!!!) বাঙালি এমনই জাতি যারা নিজেদের মেয়েদের আবুঝ বয়সেই একটা জীবন্মৃত জম্বিতে পরিণত করার ব্যাবস্থা করে ফেলেছি। যেখানে একটা ইতর কুকুরও ডাস্টবিনে পড়ে থাকা বাচ্চা দেখে মায়ায় পড়ে তাকে বাঁচানোর ব্যবস্থা করেছে সেখানে আমরা এমনই সিস্টেম দিয়েছি যে কোলের দুগ্ধপোষ্য শিশুও এখন তার মায়ের কোলে যেতে ভয় পায়! এই মুহূর্তে মনে ছোট্ট একটা প্রশ্ন ঘুরছে। আমাদের এলাকায় চোর-ডাকাত ধরলে, কিংবা গুলিস্তানে পকেটমার ধরা পড়লে আমরা বাঙ্গালীরা ব্যপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে ঐ চোর বা পকেটমারকে গণধোলাই দিয়ে নগদে মাইরা ফেলি। কিন্তু কখনো শুনলাম না একটা ধর্ষককে জনগণ গণপিটুনিতে মেরে ফেলেছে, কেন? তার মানে কি একটা মেয়ের জীবনের দাম কয়েক হাজার টাকা কিংবা একটা মোবাইল ফোনের চেয়ে কম বলে ধরে নিয়েছি আমরা??? নিজেকে মানুষ দাবী করতেও লজ্জা হচ্ছে।

কাকে গালি দিব, কার উপর রাগ করব কিছুই বুঝতে পারছি না। খুবই মেজাজ খারাপ। ২-১টা অমানুষ পিশাচ নিজের হাতে খুন করতে পারলে হয়তো রাগ নামত (সামু থেকে নির্বাসনে গিয়েছিলাম, কিন্তু আজকে মনে হল ঘটনাটা সবার জানা প্রয়োজন। তাই লিখতে বাধ্য হলাম) ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.