আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনার গীবত

সামহোয়ার কে ধন্যবাদ শেখ সাদীর কবিতা- পর দোষ তোমার নিকটে যেই কহে বলে সে তোমার দোষ অপরে নিশ্চয়। নেতিবাচক কিছু অভ্যাস, আচরণ এবং দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মানুষ তার সম্ভাবনা বিকাশের পথটাকে রুদ্ধ করে দেয়। এই রকমই একটি নেতিবাচক আচরণ অভ্যাস- গীবত বা পরনিন্দা। গীবত হলো কারো অনুপস্থিতিতে এমন কিছু কথা বলা যা শুনলে সে মনে কষ্ট পাবে। অন্যের যেকোনো দোষ বা ত্রুটি তার সম্মুখে না বলে পেছনে বলা।

অর্থাৎ একজন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা বা কথা বলা যা শুনলে তিনি কষ্ট পান। গীবত হচ্ছে তার মধ্যে যে দোষটা রয়েছে তা-ই তার অসাক্ষাতে অন্যের সাথে আলাপ করা। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আমরা গীবত করি, গীবতের বিষয়বস্ত্ত বিভিন্ন রকম হতে পারে যেমন : কারো কোনো শারীরিক বৈশিষ্ট্য (কেউ খাটো, চেহারা ভালো না)। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি একবার রসুল্লুাহ (স) এর কাছে একজন সম্পর্কে বললেন, সে তো বেটে। নবীজী (স) বললেন, তুমি এমন দূষিত কথা বলেছো যে তা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলে গোটা সমুদ্রই দূষিত হয়ে যাবে।

চাল-চলন (যথা : কেমন করে যেন হাঁটে), কথা বলার ঢং (যথা : বাচ্চাদের মতো করে ঢং করে কথা বলে), পোশাক-পরিচ্ছদ (যথা : উদ্ভট পোশাক পরে) ইত্যাদি। গীবতকারীর প্রতিফল : যে দোষের কারণে গীবত করছেন সেই দোষগুলো আপনার ভেতরে চলে আসবে : আসলে প্রকৃতির শাস্তি বড় করুণ। যার গীবত করছেন সে আপনাকে শাস্তি দিক বা না দিক প্রকৃতি আপনাকে ঠিকই শাস্তি দেবে। কারো অধিকারকে লঙ্ঘন করে আসলে কখনও শান্তিতে থাকা যায় না। প্রকৃতি তার হিসেবের খাতায় ভুল করে না।

অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে অপরের যে দোষ নিয়ে আপনি গীবত করছেন সে দোষটি কিছুদিন পরে আপনার মধ্যে চলে আসবে। শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র বলেছেন, পরনিন্দা করাই পরের দোষ কুড়িয়ে কুড়িয়ে নিয়ে নিজে কলঙ্কিত হওয়া। আর পরের সুখ্যাতি করার অভ্যাসে নিজের স্বভাব অজ্ঞাতসারে ভালো হয়ে পড়ে। আপনার প্রার্থনা কবুল হবে না : গীবতকারীকে আল্লাহও ভালবাসেন না। যে তিনটি কারণে একজন মানুষের দোয়া কবুল হয় না তার অন্যতম একটি কারণ হলো গীবত করা।

গীবতকারীর কোনো দোয়া স্রষ্টা কবুল করেন না। যে কারণে স্রষ্টার রহমত থেকে তিনি সবসময় বঞ্চিত। পবিত্র কোরআনের সুরা (হুজরাতে: ১২) রয়েছে - তোমরা গীবত বা পরনিন্দা করো না। গীবত করা মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করার সমান অপরাধ। জীবন থেকে শান্তি বিদায় নেবে : অপরকে কালিমালিপ্ত করে কেউ আসলে শান্তিতে থাকতে পারে না।

যিনি সবসময় গীবত করেন তার এটি অভ্যাসে পরিণত হয়। সে কাউকে তা না বলা পর্যন্ত শান্তি পায় না। আর মাথার মধ্যে সবসময় এ ধরনের চিন্তা ঘুরপাক খায় ফলে সে নিজের প্রয়োজনীয় কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। লোকমান হেকিম বলেছেন- যে কথা তোমার শত্রু হতে গোপন রাখতে চাও, তা মিত্র হতে গোপন রাখো। কারণ, মিত্রও একদিন শত্রু হতে পারে।

রোগ-ব্যাধি সঙ্গী হবে : আমাদের এই প্রজন্মের পেটের প্রবলেম এত বেশি। গ্যাস্টিক আলসার এত বেশি। আমরা খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে পারি না কেন এর কারণ হচ্ছে খাবার টেবিলে আমরা নিন্দে করি। যে কারণে খাবারটা বিষ হয়ে যায়। খাওয়ার টেবিলে যদি শুধু গীবত বাদ দিতে পারি।

তাহলে গীবতের ৯০% শেষ। কারণ সাধারণ আজকাল খাবার টেবিল ছাড়া একত্র হওয়ার জায়গা কম। করণীয় : প্রথমত : গীবত থেকে বাঁচার জন্যে অন্যের দোষ ধরার প্রবণতা বাদ দিতে হবে। আসলে নিজের এতো দোষ যে অন্যের দোষ দেখবো কখন। যদি অন্যের দিকে না তাকিয়ে নিজের দিকে তাকাতে পারি তাহলে ৯৫% গীবত কমানো সম্ভব।

দ্বিতীয়ত : যখন কোথাও কারো সম্পর্কে গীবত হবে তখন সেখান থেকে সরে যেতে হবে। আর যদি সরে যাওয়ার সুযোগ না থাকে যার সম্পর্কে গীবত করা হচ্ছে তার সম্পর্কে ইতিবাচক কথা বলুন। চতুর্থত : কারো প্রতি ঈর্ষার কারণে যদি গীবত করা হয় তাহলে ঈর্ষা থেকে মুক্ত হতে তার জন্যে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। তার কল্যাণ কামনা করতে হবে। গীবতকারীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন : হযরত সোলায়মান (আ.) বলেছেন- পরছিদ্র অন্বেষণকারীর সঙ্গ ত্যাগ করো, সে তোমার দোষ সকলের আগে প্রকাশ করবে।

মেডিটেশন করুন : মেডিটেশনে মনের কালিমা, ময়লা আবর্জনা দূর করা যায়। যার গীবত করছেন তার প্রতি গভীর মমতা অনুভব করা সম্ভব। অপরের দোষ খোঁজার পরিবর্তে অন্যের গুণগুলো তার চোখে পড়ে। নিয়মিত মেডিটেশনে অন্তর পরিচ্ছন্ন হবে। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “গীবত কী তা কি তোমরা জান?” লোকেরা উত্তরে বলল, “আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন।

” রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “গীবত হলো তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কথা বলা যা সে অপছন্দ করে। ” জিজ্ঞাসা করা হলো, “আমি যা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে এটাও কি গীবত হবে?” রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “তুমি যা বল তা যদি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে তাহলেই সেটা হবে গীবত, আর তুমি যা বল তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে সেটা হবে বুহতান বা মিথ্যা অপবাদ। ” (মিশকাত ঃ পৃ-৪১২) প্রিয় ভাইয়েরা আমার! গীবত মানুষের জন্য অত্যন- ক্ষতিকর একটি অভ্যাস। যে হাদীসটির উল্লেখ করা হলো তাতে নবীয়ে পাক (সাঃ) অত্যন- সংক্ষিপ্তভাবে অথচ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন গীবত কাকে বলে আর গীবত করা কতখানি নোংরা একটা ব্যাপার। গীবত হচ্ছে একজন ব্যক্তির অনুপসি'তিতে তার দোষ অন্যের নিকট বলা- যদিও সকলেই জানে যে সেই ব্যক্তি সত্যিই দোষী।

মোটকথা, কোনো দোষী ব্যক্তির প্রমাণিত দোষ সম্পর্কে বলাবলি করাই গীবত। একটা লোক দোষ করেছে যেটা সকলেই জানে তারপরও বিনা কারণে শুধুই কিছুটা মজা বা আনন্দ করার জন্য ঐ ব্যক্তির অসাক্ষাতে তার তার দোষ সম্পর্কে বলাবলি করাই গীবত। ভাইয়েরা! চিন-া করে দেখুন, নবী (সাঃ) বলেছেন যে, ঐ ব্যক্তি যদি প্রমাণিতভাবে দোষী হয়ে থাকে তবেই কেবল তার দোষ সম্পর্কে বলা হবে গীবত আর যদি তার দোষ ইতিমধ্যে প্রমাণিত না হয়ে থাকে অথবা সত্যিকার অর্থে সে যদি দোষী না হয়ে থাকে তবে তার দোষ সম্পর্কে বলাবলি করলে তা হবে “বুহতান” বা মিথ্যা অপবাদ যা গীবতের চাইতেও ঘৃণ্য অপরাধ এবং গীবতের চাইতেও কঠিন গুনাহের কাজ। বিবেক বিবেচনা সম্পন্ন একজন ভদ্রলোক সাধারণতঃ এরূপ মিথ্যা অপবাদ দেয়ার কাজটি করেন না। কিন' গীবত আমাদের দ্বারা প্রায়ই হয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে আমাদের আরও সতর্ক হওয়া দরকার। গীবত থেকে বেঁচে থাকতে হলে প্রথমে আমাদেরকে গীবতের সংজ্ঞাটি ভালভাবে বুঝে নিতে হবে। দেখুন! নবীয়ে পাক (সাঃ) কত সুন্দরভাবে, সংক্ষিপ্ত ভাষায়, স্পষ্ট বর্ণনায় গীবতের সংজ্ঞা দিয়েছেন অথচ আমাদের তা বুঝতে যেন কষ্ট হচ্ছে বলে মনে হয়। কারণ আমরা আসলে এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে চাই না। অথচ সৃষ্টজগতের সেরা প্রাণী হিসেবে আমাদের এ বোধটি থাকা উচিত যে, একজন মানুষ তার মানবিক দূর্বলতা থেকে এক মুহুর্তের প্ররোচনায় কোনো দোষ বা অপরাধ করে থাকতেই পারে এবং সেই অপরাধের জন্য সে ইতিমধ্যে শাস্তি পেয়ে থাকতে পারে অথবা অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে থাকতে পারে।

তাছাড়া আমার নিজের মধ্যে যে এরকম মানবিক দূর্বলতা নেই তা নয়। হতে পারে আমি নিজেও ঐরকম দোষ করে থাকতে পারি। তাই আমি যখন অন্যের নিকট কোনো দোষী ব্যক্তির দোষ অকারণে বর্ণনা করতে থাকি বা শুনতে থাকি তখন আমার লজ্জা পাওয়া উচিত। গীবত বলা বা শোনার ব্যাপারে এই প্রকারের লজ্জাবোধ যার মধ্যে আছে কেবল তিনিই হচ্ছেন প্রকৃত মুসলামন এবং সত্যিকারের ভদ্রলোক। আর গীবত করা যাদের কাছে “ঘী-ভাত” এর মনে হয় তাদের পোষাক আশাক আর চেহারাসুরত যেমনই হোক না কেন তারা অসভ্য ও নির্লজ্জ।

বিসমিল্লহির রাহমনির রাহীম। “আর তোমরা একজন অন্যজনের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের অসাক্ষাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? প্রকৃতপক্ষে তোমরা তো এটাকে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী পরম দয়ালু।

” (সুরা হুজুরাত- ৪৯ : ১২) গীবত কতখানি ন্যাক্কারজনক ব্যাপার তা বুঝতে আমরা এই আয়াতে কারীমার দিকে মনোযোগ দেই। দেখুন ! আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলছেন, গীবত করা হচ্ছে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সমতুল্য। এখানে তুলনাটা কত পরিস্কার! প্রথমতঃ আদম সন-ান ভাই-ভাই। রক্তের সম্পর্কে না হোক, স্বভাবের সম্পর্কে ভাই-ভাই। ঐ দোষী ব্যক্তি যে রক্ত-মাংসের তাড়ানায় দোষ করেছে ঐ রক্ত-মাংসের তৈরী আমি নিজেও।

তাই সেই ব্যক্তি যে দূর্বল মুহুর্তে, যে পরিসি'তিতে পড়ে দোষ বা অপরাধ ঘটিয়েছে ঐরকম দূর্বল মুহুর্ত আমার জীবনে আসলে আমিও যে ঐ প্রকার অপরাধ করতাম না তার গ্যারান্টি কে দেবে? তাই আচরণগত দিক থেকে আদম সন্তানেরা একই মৌলিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী তাই তারা পরস্পর ভাই-ভাই। একজন ব্যক্তি যখন অন্য একজন অনুপস্থিথিতে দোষী ভাইয়ের নামে গীবত করে তখন সে তার মৃত ভাইয়ের গোশত খায় বটে। এখানে “মৃত” বলতে “অনুপসি'ত” বুঝাচ্ছে। একজন মৃত ব্যাক্তির শরীর থেকে গোশত খুলে নিলেও মৃত ব্যক্তি যেমন কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না তেমনি কোনো অনুপসি'ত ব্যক্তির নামে হাজারটা সত্যমিথ্যা দোষের কথা বর্ণনা করে গেলেও অনুপসি'ত থাকার কারণে সে ঐসব কথার কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। অথচ ঐ একই কথা তার সাক্ষাতে বলা হলে সে নিশ্চয়ই আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু না কিছু বলতে চাইত।

এমনকি আমরা জানি, আদলতে দোষী ব্যক্তির বিচার চলকালেও কেবলমাত্র আসামীর উপসি'তিতেই মামলার শুনানী বা আসামীর দোষ পর্যালোচনা করা হয়ে থাকে। যদি আসামী উপসি'ত না থাকে তবে পত্রিকার মাধ্যমে তাকে উপসি'ত হওয়ার নোটিশ দেয়া হয় এবং তারপরই কেবল দোষী ব্যক্তির বিচার শুরু হয়। এভাবে দেখা যায় আল্লাহ তায়ালার দেয়া বিধান মানুষের আইন-আদালতে প্রয়োগ করা হয়। কারণ এটাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিধান। তারপরও মানুষের তৈরী বিধানের সাথে আল্লাহর দেয়া বিধানের কোনো তুলনাই চলে না।

আল্লাহর বিধান মানুষের বিধানের চাইতেও সর্বদিক দিয়ে উত্তম, কল্যাণকর আর মানবতাবাদী। আর তাই তো আল্লাহ তায়ালা গীবত করার অভ্যাসকে নিরুৎসাহিত করেছেন। শুধু আইন-আদালতে নয়, এমনকি দৈনন্দিন সামাজিক আচার আচরণেও অনুপসি'ত ব্যক্তির দোষচর্চা বা গীবত করাকে কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন তিনি। কারণ এরই মধ্যে রয়েছে উত্তম ফলাফল, চিরকালীন কল্যাণ আর মানবতার বিজয়। অনুপসি'ত আসামীর নামে শুনানী না করাটা সার্বজনীন নিয়ম, সকল দেশের আইন-আদালতের নিয়ম।

আর সর্বোত্তম আইন হচ্ছে আল্লাহর আইন। তাই আল্লাহ তায়ালা অনুপসি'ত ব্যক্তির দোষচর্চাকে নিষেধ করেছেন কেবল আইন-আদালতের পরিসরেই নয়, এমনকি সামাজিক মেলামেশার পরিসরেও যাতে করে মানুষ অকল্যাণ থেকে বাঁচতে পারে ও মানুষের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ লাভ হয়। আল-কুরআনে ও হাদীসে গীবত বলা ও শোনাকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে কারণ সে ক্ষেত্রে দোষী ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ থাকে না। হতে পারে সে দোষী কিন' তারও নিজের পক্ষে কিছু বলার থেকে থাকতে পারে। তাই তার অনুপসি'তিতে তার দোষ চর্চা করা আর মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে গোশত খুলে নেয়া একইরুপ ব্যাপার।

দেখুন! আল্লাহ তায়ালার দেয়া উপমাটি কত স্পষ্ট আর অর্থময়। এখানেই শেষ নয়। আল্লাহ তায়ালা আর বলেছেন, গীবত করার অর্থ কেবল মৃত ভাইয়ের শরীরের গোশত খুলে নেয়ার ব্যাপার নয়, বরং মৃত ভাইয়ের গোশত খুলে নিয়ে তা খাওয়ার মত ঘৃণ্য ব্যাপার। এ তুলনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, একজন মুমিন মুসলমান ও একজন ভদ্রলোক হিসেবে তোমাদের পক্ষে গীবত বলা বা শোনার মত অভিরুচি থাকাটাই উচিত নয়। মানুষ হয়ে নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মত রুচি কেবল অসভ্যদেরই থাকে।

শোনা যায়, জংলী মানুষেরা মানুষের গোশত খেয়ে থাকে। তাই গীবত করাটা হচ্ছে অসভ্য, বর্বর, জংলী একটা অভ্যাস। কাজেই সাবধান। তোমরা যারা সভ্যতার দাবীদার তাদের পক্ষে গীবত করা বা শোনার অভ্যাস বড়ই অশোভন। মোটের উপর গীবত হলো সামাজিক বিপর্যয় সৃষ্টিকারী এক ফেতনা।

অতএব, প্রিয় ভাইয়েরা আমার! আমরা সকলেই গীবত বলা থেকে তো বটেই এমনকি গীবত শোনা থেকেও বিরত থাকব ইনশাআল্লাহ। কোনো গীবতকারীকে আমরা প্রশ্রয় দেবনা। একথা নিশ্চিত জেনে রাখবেন, যেই ব্যক্তি আপনার সামনে অন্যের দোষ সম্পর্কে বলে থাকে কোনো সন্দেহ নেই যে সেই ব্যক্তি আপনার অনুপসি'তিতে অন্যের সামনে আপনার দোষও বলে থাকে। অতএব সাবধান। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে গীবত বলা ও শোনা থেকে হেফাজত করুন।

আমীন। আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ! গীবত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন-হাদীসের উদ্ধৃতি গীবত সম্পর্কে পবিত্র কোরআন-হাদীসের উদ্ধৃতিঃ- ** গীবত শব্দের অর্থ হল কুৎসা রটনা করা। ## পবিত্র কোরআনে বর্ণিত- >> হে মু’মিনগন! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক, কারণ অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করোনা এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করোনা। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর। তোমরা আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় কর, আল্লাহ তা’য়ালা তওবা কবূলকারী, পরম দয়ালু।

[সূরা হুজরাত, আয়াত-১২] ## এছাড়াও আরও দেখতে পারেন- {সূরা নিসা, আয়াত-১৪৮] ## পবিত্র হাদীস শরীফে বর্নিত- >> নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কি? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ গীবত হল তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হলঃ আমি যা বলেছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে আপনি কি বলেন? তিনি বললেনঃ তুমি তার সম্পর্কে যা বলেছ তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে। [মুসলিম/৬৩৫৭-আবূ হুরাইরা (রাঃ), বুখারী/৫৬১৩, আবূ দাঊদ/১৭৯৯] মানুষ সামাজিক জীব।

সমাজবদ্ধ জীবনযাপন ছাড়া একাকী জীবন যাপন করা মানুষের পক্ষে সহজ নয়, তেমনটি কেউ কামনাও করে না। আবার পরিচিত সমাজের বাইরেও মানুষের পক্ষে চলা খুবই কঠিন। পৃথিবীর সমাজবদ্ধ কোনো মানুষই সামাজিক বিপর্যয় কামনা করতে পারেন না। মানুষ সব সময় সুখ ও শান্তি চায়। শান্তি মানুষের একটি আরাধ্য বিষয়।

কিন্তু এই প্রত্যাশিত সুখ-শান্তি নির্ভর করে সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর। উঁচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র­ এসব পার্থক্যই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। মানুষের পারস্পরিক পরিচয়ের জন্যই এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতে এরশাদ করেছেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنْثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ ﴿13﴾ হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন।

নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (সূরা হুজুরাত: ১৩) সুতরাং মানব সমাজের এই পার্থক্য সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার নিমিত্তেই। যেসব কারণে সমাজের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ বিনষ্ট হয়, সমাজ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হয়, সামাজিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হয়, পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়, তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো গীবত, যা মানুষকে নিকৃষ্টতম প্রাণীতে পরিণত করে। তাই তো মহান আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে এই নিকৃষ্ট স্বভাব থেকে বিরত থাকার তাগিদ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে বলেন, وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ‘আর তোমরা কেউ কারো গীবত করো না, তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।

, (সূরা হুজুরাত:১২) সুস্থ, স্বাধীন কোনো বিবেকবান মানুষই জ্ঞান অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত মৃত মানুষ তো দূরের কথা, যে পশু জীবিত থাকলে হালাল সেই পশু মৃত হলে তার গোশতও ভক্ষণ করবে না। অথচ মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে গীবতের মতো জঘন্য ফেতনায় নিমজ্জিত হয়। গীবত কী? গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দোষারোপ করা, অনুপস্থিত থাকা, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি। পরিভাষায় গীবত বলা হয় ‘তোমার কোনো ভাইয়ের পেছনে তার এমন দোষের কথা উল্লেখ করা যা সে গোপন রেখেছে অথবা যার উল্লেখ সে অপছন্দ করে। ’ (মু’জামুল ওয়াসিত) গীবতের সবচেয়ে উত্তম ও বাস্তবসম্মত সংজ্ঞা দিয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিম্মোক্ত হাদিস থেকে পেতে পারি।

সাহাবি আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গীবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনো ভাই (দীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। (মুসলিম) সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কোনো ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলা গীবত যা সে অপছন্দ করে। গীবতের পরিণাম গীবত ইসলামি শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ ﴿1﴾ ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা অগ্র-পশ্চাতে দোষ বলে বেড়ায়। ’ (সূরা হুমাজাহ-১) কেউ গীবত শুনলে তার অনুপস্থিত ভাইয়ের পক্ষ থেকে তা প্রতিরোধ করবে সাধ্যমতো। আর যদি প্রতিরোধের শক্তি না থাকে তবে তা শ্রবণ থেকে বিরত থাকবে। কেননা, ইচ্ছাকৃতভাবে গীবত শোনা নিজে গীবত করার মতোই অপরাধ। হাদিসে আছে, সাহাবি মায়মুন রাঃ বলেন, ‘একদিন স্বপ্নে দেখলাম এক সঙ্গী ব্যক্তির মৃতদেহ পড়ে আছে এবং এক ব্যক্তি আমাকে তা ভক্ষণ করতে বলছে।

আমি বললাম, আমি একে কেন ভক্ষণ করব? সে বলল, কারণ তুমি অমুক ব্যক্তির সঙ্গী গোলামের গীবত করেছ। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি তো তার সম্পর্কে কখনো কোনো ভালোমন্দ কথা বলিনি। সে বলল, হ্যাঁ, এ কথা ঠিক। কিন্তু তুমি তার গীবত শুনেছ এবং সম্মত রয়েছ। ’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিরাজের সময় আমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো যাদের নখ ছিল তামার।

তারা তাদের মুখমণ্ডল ও দেহ আঁচড়াচ্ছিল। আমি জিবরীল আঃ-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? তিনি বললেন, এরা নিজ ভাইদের গীবত করত ও ইজ্জতহানি করত। (মাজহারি) আবু সায়িদ ও জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘গীবত ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক গুনাহ। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, এটা কিভাবে? তিনি বললেন, ব্যক্তি ব্যভিচার করার পর তওবা করলে তার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। কিন্তু গীবত যে করে তার গোনাহ আক্রান্ত প্রতিপক্ষের ক্ষমা না করা পর্যন্ত মাফ হয় না।

’ সুতরাং এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হল যে, গীবত একটি জঘন্য পাপাচার। এ থেকে সবাইকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকতে হবে। যাদের দোষ বর্ণনা করা যায় গীবত নিঃসন্দেহে হারাম। তারপরও যাদের দোষ বর্ণনা করা যায় তা হচ্ছে­ কোনো অত্যাচারীর অত্যাচারের কাহিনী প্রতিকারের আশায় বর্ণনা করা। সন্তান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার পিতা ও স্বামীর কাছে অভিযোগ করা।

ফতোয়া গ্রহণ করার জন্য ঘটনার বিবরণ দেয়া ও - প্রয়োজন ও উপযোগিতার কারণে কারো দোষ বর্ণনা করা জরুরি। আবার যাদের স্বভাব গীবত করা তাদের সম্পর্কে অন্যদের সাবধান করার জন্য তার দোষ বর্ণনা করা জায়েজ। যেমন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা এক ব্যক্তি (মাখরামা ইবনে নওফেল) নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তিনি বললেন, তাকে আসার অনুমতি দাও, সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক। অতঃপর তিনি তার সাথে প্রশস্ত চেহারায় তাকালেন এবং হাসিমুখে কথা বললেন।

অতঃপর লোকটি চলে গেলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তার সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন, অতঃপর আপনিই প্রশস্ত চেহারায় তার প্রতি তাকালেন এবং হাসিমুখে কথা বললেন। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা, তুমি কি কখনো আমাকে অশ্লীলভাষী পেয়েছ ? নিশ্চয়ই কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালার কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাধিক নিকৃষ্ট সেই লোক হবে, যাকে মানুষ তার অনিষ্টের ভয়ে ত্যাগ করেছে। (বুখারি, মুসলিম) গীবত করার কারণ মানুষ সব সময় নিজেকে বড় করে দেখে, এই আমিত্বের আরেক নাম আত্মপূজা। এটা শুরু হয়ে গেলে আত্মপ্রীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তখন তার আত্মত্যাগের মতো মহৎ বৈশিষ্ট্য দূরিভূত হতে থাকে।

ফলে এ স্থানে দানা বাঁধে হিংসা-বিদ্বেষ। আবার হিংসা-বিদ্বেষ থেকেই অপরের প্রতি কুধারণার সৃষ্টি হবে, যা মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে। সুতরাং আত্মপূজা, আত্মপ্রীতি, হিংসা-বিদ্বেষ, কুধারণাই মানুষকে গীবত করতে বাধ্য করে। বেঁচে থাকার উপায় গীবত থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ থেকে বাঁচার প্রথম উপায় হচ্ছে অপরের কল্যাণ কামনা করা।

কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দীন হচ্ছে নিছক কল্যাণ কামনা করা। ’ দ্বিতীয়ত, আত্মত্যাগ অর্থাৎ যেকোনো প্রয়োজনে অপর ভাইকে অগ্রাধিকার দেয়া। যেমন আল্লাহ সূরা হাশরের ৯ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেছেন, وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ﴿9﴾ ‘তারা নিজের ওপর অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তারা অনটনের মধ্যে থাকে। ’ তৃতীয়ত, অপরের অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া। চতুর্থত, মহৎ ব্যক্তিদের জীবনী বেশি বেশি করে অধ্যয়ন করা।

শেষ কথা আমাদের সব সময় আল্লাহতায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে তিনি যেন অনুগ্রহ করে গীবতের মতো জঘন্য সামাজিক ব্যাধিতে আমাদের নিমজ্জিত হতে না দেন। এ ক্ষেত্রে জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সর্বাগ্রে। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা যখন ভোরে নিদ্রা থেকে জাগ্রত হয় তখন শরীরের সব অঙ্গ জিহ্বার কাছে আরজ করে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহর নাফরমানি কাজে পরিচালিত করো না। কেননা, তুমি যদি ঠিক থাক, তবে আমরা সঠিক পথে থাকব। কিন্তু যদি তুমি বাঁকা পথে চলো, তবে আমরাও বাঁকা হয়ে যাবো।

(তিরমিজি) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো। ’ (বুখারি) গীবত বা পরচর্চা অত্যন্ত নিন্দনীয় অপরাধ। এর জন্য একদিকে সমাজে একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা বা হিংসা- বিদ্বেষ বাড়ে তেমনি সৃষ্টি হয় অশান্তি। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) নবী করীম (স.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, তোমরা কি জান গীবত কি? সাহাবীরা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূল (স.) সমধিক জ্ঞাত।

রাসূলূল্লাহ (স.) বললেন, তুমি তোমার ভাইয়ের অপছন্দীয় কিছু আলোচনা কর। তখন জনৈক সাহাবী জিজ্ঞাস করলেন আমি যা বললাম, তা যদি বাস্তবেও আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তবুও কি তা গীবত হবে? রাসূল (স.) বললেন, তুমি যা বললে তা যদি তার মাঝে থাকে, তবেইতো তুমি গীবত করলে। আর তুমি যা বললে, তা যদি তার মাঝে না থাকে তাহলে তুমি মিথ্যা অপবাদ দিলে। (মুসলিম তিরমিজি, আবু দাউদ) হযরত ইবনে আবী নুজাইহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, এক বেঁটে মহিলা নবী করিম (স.) এর নিকট এলো, তারপর সে চলে গেলে আয়েশা (রা.) বললেন, মহিলাটি কত খাটো। তখন নবী করিম (স.) বললেন, তুমি তার গীবত করলে।

আয়েশা (রা.) বললেন, যা বাস্তব আমিতো শুধু তাই বললাম। রাসূল (স.) বললেন, তুমিতো তার ত্রুটির দিকটা উলেস্নখ করেছ। (মুসনাহদ আহমদ) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত নবী (স.) বলেছেন, মেরাজের রাতে যখন আমাকে ঊধর্্ব আকাশে উঠানো হল, আমি তখন কিছু লোককে অতিক্রম করে গেলাম। দেখলাম, তাদের পার্শ দেশের গোশত কেটে লোকমা বানিয়ে তাদের বলা হচ্ছে খাও। যেমন তোমরা তোমাদের ভাইদের গোশত খেতে।

আমি তখন জিব্রাইলকে (আ.) বললাম, এরা কারা? জিব্রাইল (আ.) বললেন, এরা আপনার গীবতকারী উম্মত। (মুসনাদে আহমদ) হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন। রাসূল (স.) এর যুগে দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু প্রবাহ শুরু হল। তখন রাসূল(স.) বললেন, মুনাফিকরা মুসলমানদের গীবত করেছে। তাই দুর্গন্ধযুক্ত বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে।

হযরত হাসান বসরী থেকে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি এসে তাকে বললো, অমুক ব্যক্তি আপনার গীবত করছে। তখন তিনি গীবতকারীর নিকটে এই বলে এক ঝুড়ি সদ্য পাড়া খেজুর পাঠিয়ে দিলেন যে, আমি শুনতে পেলাম আপনার কিছু পুণ্য আমাকে উপহার দিয়েছেন। তাই আমি আপনাকে এর বিনিময়ে কিছু উপহার দিতে চাইলাম। কিন্তু এর চেয়ে ভাল কিছু দিতে পারলাম না। তাই ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

হযরত আবু উমামা বাহেলী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কেয়ামত দিবসে যখন বান্দাকে আমলনামা দেয়া হবে, তখন সে তাতে এমনসব পুণ্য দেখতে পাবে, যা সে করেনি। তখন বিস্মিত হয়ে বলবে, হে আমার রব! এত সোয়াব কোথা থেকে এল! আল্লাহতায়ালা বলবেন, তোমার অজান্তে মানুষ তোমার যে গীবত করেছে, এগুলো তার সওয়াব। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.