আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘুরে এলাম রাজা টংকনাথ এর বাড়ি (ভ্রমন কাহিনী)

আমার ছবি নাই , দেশের সম্ভাবনাময় একটি ছবি প্রোফাইলে দিলাম । void(1);ঠাকুরগাঁও থেকে রানীশংকৈল উপজেলার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটারের মতো। ঠাকুরগাঁও থেকে ঐতিহাসিক মালদুয়ার জমিদার বাড়ি দেখতে রওনা হই রানীশংকৈল উপজেলার দিকে। সঙ্গে এক বন্ধু আর একটা মোটর বাইক । মালদুয়ার জমিদার বাড়িটি স্থানীয়দের এবং আমাদের কাছে রাজা টংকনাথের বাড়ি হিসেবেই বেশি পরিচিত।

অনেকটা ইতিহাস পরে আর রাজবাড়ীর তত্ত্বাবধানে থাকা মানুষদের কাছে জানলাম, ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে এ জনপদটি ছিল মালদুয়ার পরগনার অন্তর্গত। পরে জমিদার বুদ্ধিনাথের ছেলে টংকনাথ ব্রিটিশ সরকারের আস্থা লাভ করতে ‘মালদুয়ার স্টেট’ গঠন করেন। রাজা টংকনাথ চৌধুরীর স্ত্রীর নাম ছিল জয়রামা শঙ্করী দেবী। ‘রানীশংকরী দেবী’র নামানুসারে মালদুয়ার স্টেট হয়ে যায় ‘রানীশংকৈল’। টংকনাথের গল্প শুনতে শুনতে আমরা স্থানিয় একজনকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম জমিদার বাড়িটির দিকে।

উপজেলা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে রাজা টংকনাথের বাড়ি। প্রধান সড়কের ওপর ছোট্ট একটি ব্রিজ। সঙ্গে কুলিক নদী। কালের পরিক্রমায় নদীটি এখন শেষ প্রায় । ব্রিজ পেরিয়ে বামের ছোট রাস্তা দিয়ে নদী ঘেঁষা পথে একটু যেতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রাজা টংকনাথ চৌধুরীর চমৎকার বাড়িটি।

এ বাড়ির প্রধান ভবনটি একসময় কারুকাজ খচিত ছিল। বাড়িটিতে ঢুকতেই বড় এক সিংহ-দরজা। অনেক পুরাতন হলেও এখনো অনেকটা স্পষ্ট প্রাচীন কারুকার্য গুলো । দরজার কারুকাজ দেখে আমরা ঢুকে যাই ভেতরে। লাল রঙের দালানটি এখন শুধু কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এর স্থাপত্যশৈলীতে আধুনিকতার ছোঁয়া এখনো স্পষ্ট । স্থানিয়দের কাছে শুনলাম একসময় মার্বেল পাথর আচ্ছাদিত ছিল রাজবাড়ীর মেঝে । এখন সেগুলোর কিছুই এখন আর অবশিষ্ট নেই। রাজা টংকনাথের জমিদার বাড়ির চারপাশে আছে , বাড়ি সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব কোণে কাছারি বাড়ি। পূর্বদিকে দুটি পুকুর।

পুকুরের চারদিকে নানা ধরনের গাছগাছালি। জমিদার বাড়ি থেকে প্রায় ২শ’ মিটার দক্ষিণে রামচন্দ্র (জয়কালী) মন্দির। ধারণা করা হয়, এ মন্দিরটি আরও প্রাচীন। জমিদার বাড়ির সামনে টানানো তথ্য থেকে জানা যায় রাজা টংকনাথের নানা কাহিনী। টংকনাথ মূলত ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ কর্তৃক উপাধিপ্রাপ্ত একজন জমিদার।

পুরনো আমলের মানুষদের কাছ থেকে শুনেছিলাম , টাকার নোট পুরিয়ে জনৈক ব্রিটিশ রাজকর্মচারীকে চা বানিয়ে খাইয়ে টংকনাথ ‘চৌধুরী’ উপাধি লাভ করেছিলেন । এরপর দিনাজপুরের মহারাজ গিরিজনাথ রায়ের বশ্যতা স্বীকার করে ‘রাজা’ উপাধি পান। তখন থেকে তিনি রাজা টংকনাথ চৌধুরী। মজার বিষয় হলো, টংকনাথের পূর্বপুরুষ কেউই কিন্তু জমিদার ছিল না। টংকনাথের পিতা বুদ্ধিনাথ ছিলেন মৈথিলী ব্রাহ্মণ এবং কাতিহারে ঘোষ বা গোয়ালা বংশীয় জমিদারের শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েত।

নিঃসন্তান বৃদ্ধ গোয়ালা জমিদার কাশীবাসে যাওয়ার সময় সব জমিদারি সেবায়েতের তত্ত্বাবধানে রেখে যান এবং তাম্রপাতে দলিল করে যান, তিনি কাশী থেকে ফিরে না এলে শ্যামরাই মন্দিরের সেবায়েতই জমিদারির মালিক হবেন। পরে বৃদ্ধ জমিদার ফিরে না আসার কারণে বুদ্ধিনাথ চৌধুরী জমিদারি পেয়ে যান। টংকনাথের গল্প শুনতে শুনতে আমরা পুরো বারিতাই ঘুরে ফিরে দেখলাম । টংকনাথের আমলে এখানে ছিল একটি হাতিশালা। মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছিল, প্রাচীন কোনো আমলে আমরা যেন চলে এসেছি।

ইতিহাসের প্রাচীন এ রাজবাড়ীটি এখনও রয়েছে অরক্ষিত। প্রতিদিনই এখানে আসে অনেক দর্শনার্থী । রানীশংকৈল এর বন্ধুদের কাছ থেকে জানলাম রাজা টঙ্ক নাথ একজন প্রজাবৎসল ও দয়ালু রাজা ছিলেন । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.