আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Midnight in Paris: সেলুলয়েডে ধরে রাখা একটুকরো স্বর্ণালী সময় (মুভি রিভিউ)

চাই মাতৃভূমির সমৃদ্ধি। ভাবুন দেখি একবার - আপনি একজন শিল্প-সাহিত্য সমঝদার লোক, একটু আধটু সাহিত্য চর্চা করার চেস্টা করতে করতে এখন গোটা একটা উপন্যাস লেখার সাহস সঞ্চয় করেছেন। যদিও সাহিত্য রচনাকে আপনি ব্রত হিসেবে নিতে চান, আপনার হবু স্ত্রী এই নিয়ে আপনাকে টিটকারী করতে ছাড়ে না। তার মতে আপনাকে দিয়ে আর যাই হোক, সাহিত্য সাধনা হবে না! আপনি আবার জানেন নাকি কিছু??!! তো হবু স্ত্রী কে নিয়ে প্যারিস গিয়েছেন বেড়াতে। সারাদিন শহর দেখে ক্লান্ত আপনি, একটু - আধটু পানিও পড়েছে পেটে! উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে বেড়াতে গিয়ে রাত হয়ে গেছে।

হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলেন অচেনা এক গলিতে। রাস্তা চিনেন না, ভাবলেন অপেক্ষা করি। দেখি কোন জন-মানব যায় কিনা এই রাস্তা দিয়ে! অপেক্ষা করতে করতে যখন ঠিক মধ্যরাত, আলিশান এক অ্যান্টিক গাড়ি সেখানে হাজির। আপনি কিছু বলার আগেই সেই গাড়ির মালিক আপনাকে ব্যাপক আদর যত্ন করে তাঁদের সাথে যেতে বলল। কি আর করা, গেলেন আপনি তাঁদের সাথে! তারপর?? গাড়ী থেকে আপনার উদ্ধারকর্তার সাথে নেমে দেখলেন একটা পার্টিতে এসে পড়েছেন আপনি।

চলে এসেছেন ১৯২০ এর দশকে আর আপনার চোখের সামনে দেখতে পেলেন বিখ্যাত লেখক দম্পতি জেলডা এবং স্কট ফিটজেরাল্ড কে! এদের দেখে যখন আপনি চোখ কপালে তুলে ফেলেছেন তখন স্কট আপনাকে নিয়ে গেল আপনার সপ্নের নায়ক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে র কাছে, যার লেখা আপনি পড়েছেন বিপুল মুগ্ধতায়। একজন নয়া লেখক হিসেবে আপনি যাকে গুরু মানেন! তাঁকে দেখে আপনি যখন মোটামুটি বাকরুদ্ধ, তখন কিনা স্বয়ং গ্রারট্রুড স্টেইন এর আগমন!! ইনি আবার কে?? না, ইনি হচ্ছেন হেমিংওয়ের মেন্টর!!! এনার একটা প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসো । পাবলো পিকাসো এই লেখিকা ভদ্রমহিলার ছবি এঁকেছেন। তাঁকে আর না দেখলে চলে কেন?? পিকাসো ও এসে হাজির হলেন আপনার সামনে!! এখানেই কি শেষ?? যেন আপনার অবাক বিস্ময়ের ষোলকলা পূর্ণ করার জন্যে এসে গেলেন বিখ্যাত সুররিয়্যালিস্ট চিত্রকর সালভাদর দালি আর মান রে , তারা আবার আপনার বিস্ময় নিয়ে মোটেও ভাবিত না। এই যে আপনি চোখের সামনে তাদের দেখতে পাচ্ছেন, চলে এসেছেন অতীতে, এগুলো তাঁদের কাছে মোটেও ধর্তব্যের বিষয় না!! হাজার হোক, তাঁরা স্যুররিয়্যালিস্ট কিনা!!! বাস্তবতাকে তাঁরাই তো পরাবাস্তবতার ফ্রেমে তুলে ধরেন! ব্যাপার স্যাপার দেখে আপনি যখন মোটামুটি তাজ্জব তখন আপনি পিছিয়ে গেলেন আরো এক যুগ! আপনার সামনে এখন হাজির হয়েছেন এডগার ডেগা , পল গগ্যাঁ , আর অঁরি মাতিস !! স্বপ্নের সাদাকালো জগতে না, পুরো পুরি বাস্তবতার রঙে রঙিন হয়ে! কেমন হবে আপনার প্রতিক্রিয়া?? প্রিয় পাঠক, ভয় পাবেন না।

উপরের মত ব্যাপার স্যাপার বাস্তবে সম্ভব কিনা আর ঘটে গেলে খুশিতে আপনি কতটাই বা আত্নহারা হবেন এটা জানার জন্যে আপনাকে আর কস্ট করে অতীতে যেতে হবে না! শুধু কস্ট করে এই মুভিটা দেখে ফেলবেনঃ Midnight in Paris মুভিতে আপনি ঠিক উপরের ঘটনা গুলো দেখতে পাবেন গিল পেন্ডার (ওয়েন উইলসন ) এর চোখ দিয়ে। দেখতে পাবেন একজন একনিষ্ঠ সাহিত্যিকের ডেডিকেশন আর একজন শিল্পপ্রেমীর অনুরাগ। মুভিটা আপনাকে সেলুলয়েডের রথে চড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন এক সময়ে যার কথা আপনি কেবল কল্পনাতেই ভাবতে পারেন। আপনি পাবেন ভাবনার খোরাক আর শিহরিত হবেন মুভির প্রতিটি সিকোয়েন্সে! বাস্তবতা আর পরাবাস্তবতার এত চমৎকার মিশ্রণ খুব কম মুভিতেই দেখা যায়। আমি বলব, এই মুভির আসল অসাধারণত্ব হচ্ছে শিল্প আর শিল্পীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনে।

মুভিতে গিল পেন্ডার যে শিল্প যুগ আর শিল্পীদের আদর্শ বলে মানে, পরাবাস্তবতার রথ তাকে ঠিক সেই যুগেই নিয়ে যায়। সে এমন কি তার আদর্শ হেমিংওয়েকে দিয়ে তার নতুন উপন্যাসের পান্ডুলিপি দেখিয়ে নেয়। সত্যিকারের মহান সাহিত্যিক আর শিল্পীরা যে মহাকালের মাঝে অমর তা এই ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। শুধু তাই না, মহান শৈল্পক সৃষ্টি যে কালের ব্যাবধানে কেবলি আরো বেশী আবেদনময় আর প্রভাবশালী হয়ে ওঠে এই মুভি তারও একটা জ্বলন্ত প্রমাণ। মুভিটা দেখার পর আমার কেন জানি রবীন্দ্রনাথের 'সোনার তরী' কবিতাটার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল।

সত্যিই তো, মানুষ তার সৃষ্টির মাঝেই বাঁচে। সৃষ্টি আর কাজের মাধ্যমেই তার আদর্শ, ভাবনা, বিশ্বাস আর স্বকীয়তা প্রভাবিত করে তার পরের অসংখ্য প্রজন্মকে, অমর করে রাখে আর অবিনশ্বর আত্মিক সত্তাকে। অসাধারণ অভিনয় করেছেন ওয়েন উইলসন। বিখ্যাত ব্যাক্তিদের ভূমিকায় প্রত্যেকের অভিনয় স্বতঃস্ফূর্ত। আর পুরো মুভিতে ১৯২০ এর আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চমৎকার ভাবে।

সব মিলিয়ে, এই মুভি পরিচালক উডি অ্যালেন এর আরেকটা মাস্টার পিস। প্রিয় পাঠক, উপরের কয়েকজন শিল্পীর কিছু অসাধারণ চিত্রকর্ম দিয়ে পোস্ট শেষ করছিঃ The Persistence of Memory - সালভাদর দালি Gertrude Stein - পিকাসো Vase of Sunflowers - অঁরি মাতিস ডাউনলোড লিঙ্কঃ টরেন্ট মিডিয়াফায়ার মিডিয়াফায়ারের যে লিঙ্ক থেকে আমি নামিয়েছিলাম সেটা কাজ করছে না। এই লিঙ্ক থেকে নামানোর আগে চেক করে নিয়েন। আর ব্যাক - আপ হিসাবে টরেন্ট লিঙ্ক দিলাম।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।