আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উস্কানি প্রতিরোধ এবং এ বিষয়ে আমার কিছু প্রস্তাবণা

৬ এপ্রিলের হেফাজতের সমাবেশের ঘটনা। হাতে প্লাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১৯ বছরের এক কিশোর। তাতে লেখা, ‘লড়াই হবে ময়দানে, দেখা হবে জান্নাতে’। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তুমি এখানে ক্যানো এসেছ? সে বলে, নাস্তিকরা ইসলামের অবমাননা করেছে। ওদের শাস্তির দাবীতে এসেছি।

তাকে আবার জিজ্ঞাসা করা হয়, তুমি কি জানো কীভাবে ওরা ইসলামের অবমাননা করেছে? সে উত্তর দেয়, আমি জানি না। এ বিষয়ে বড় হুজুর জানেন। আমি তার কথাতেই এসেছি। একটি বিষয়ে একটু ভাবলেই বোঝা যায়, দেশে জামাতের সমর্থক ক’জন আছে? মোট জনসংখ্যার মাত্র কয়েক শতাংশ হয়ত জামাতের সমর্থক। দেশের অধিকাংশ শিক্ষিতরাই জামাত বিরোধী।

প্রগতিবাদী। আর বাকি যারা আছেন, তাদের চিন্তা-ভাবনায় রাজনীতি নেই। তাদের আছে জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম। উস্কানি কী : তাহলে এত এত মানুষ কিভাবে জামাতের সাথে রাস্তায় নেমে আসছে? এই বিষয়টিকে সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে। প্যান্ট-শার্ট পড়া ভদ্রলোক থেকে শুরু করে লুঙ্গি-গেঞ্জিপড়া কৃষকও ক্যানো তাদের আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে।

এমনকি সাঈদীর রায়ের পর কিছু মহিলাকেও রাস্তায় নেমে আসতে দেখা গ্যাছে। শুধু কী তাই? মাদ্রাসা পড়ুয়া ছোট ছোট ছেলেগুলো, যাদের এখনও ‘রাজনীতি’ শব্দটা বানান করে পড়তে হয়, তারা কতটা স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে চিৎকার করতে করতে রাস্তায় নেমে আসে, সমাবেশে যোগ দেয়! এই মানুষগুলোর অধিকাংশই তো জামাত-শিবিরের রাজনীতি বোঝে না। রাজনৈতিক ঘোরপ্যাঁচের কিছুই তাদের মাথায় নেই। তাছাড়া খুব কম মানুষই মুক্তিযুদ্ধের সত্য ইতিহাস ভালভাবে জানে। খুব কম মানুষই খবর রাখে যুদ্ধের সময় সাঈদী কী পরিমাণ নারকীয় তৎপরতা চালিয়েছিল।

কিন্তু, তাদেরকে বিশ্বাস করানো খুব সহজ যে, সাঈদীকে চাঁদে দেখা গিয়েছে, কিংবা সরকার ইসলামের অবমাননা করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। খুব সহজ ভাষায় এটিকে বলা হয় উস্কানি। এদেশে এখন ঘোরতর আতঙ্কের নাম, ত্রাসের নাম উস্কানি। সাম্প্রতিক সময়ের তান্ডবলীলা সৃষ্টিকারী কিছু উস্কানি: কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার, ১. এদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ ও বিশ্বাসী। কোন ভাবেই তারা ধর্মের অবমাননাকে মেনে নেবে না।

প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে অকল্পনীয় আন্দোলনও গড়ে তুলবে। ২. এদেশে প্রকৃত শিক্ষিত ও সচেতন ব্যক্তির সংখ্যা নিতান্তই কম। দিন-দুনিয়ার খবর এদেশে খুব কম লোকই রাখেন। প্রথম পয়েন্টে আসি, নিজ ধর্মের অবমাননা কেউই মেনে নিতে পারে না। তাই মানুষ খেপিয়ে তোলার সবথেকে ভালো উপায় ধর্মকে কটাক্ষ করে কথা-বার্তা ছড়ানো।

সাঈদীর জন্য এত মানুষের দরদ ক্যানো উছলে উঠল? কারণ, তাদের বোঝানো হয়েছে, সাঈদীর ফাঁসির রায়ের মাধ্যামে নাস্তিকরা ইসলামের অবমাননা করেছে, একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ সাঈদীকে আটক করা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন কথা হল, বললেই কী বিশ্বাস করতে হবে? তার সত্যতা যাচাই করতে হবে না? এর উত্তর আছে আমার দ্বিতীয় পয়েন্টে। একটি কথা কেউ বললেই যে বিশ্বাস করতে নেই, তার সত্যতাটা যে যাচাই করে দেখা দরকার, এই অনুভূতিগুলো এদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষগুলোর মধ্যে খুব বেশি পরিমানে নেই। কারণ, যথার্থ শিক্ষার অভাব। তাদের কথা বলছি ক্যানো, রাজীব হত্যাকারীরা তো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

ওরা জবানবন্দীতে বলেছিল, ওরা কখনও রাজীবের ব্লগ পড়েনি। ওদের বড়ভাই নির্দেশ দিয়েছিল। তাই ওরা একাজ করেছে! এবছর ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে শুরু হল নজিরবিহীন সন্ত্রাসী তৎপরতা। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে অনেককে রাস্তায় নামিয়ে আনা হল। রাস্তায় নেমে আসল নারীরা।

রাস্তায় নেমে আসল অবুঝ কিশোর। রাস্তায় নামল সাধারণ গ্রাম-বাসী। সুযোগ কাজে লাগালো জামাত-শিবির। এগুলোর সবই আমরা দেখে এসেছি। মিথ্যে ব্লগ খুলে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা, বা মৃত্যুর পর ভুয়া ব্লগ খুলে মৃত ব্যক্তির প্রতি রোষ সৃষ্টির চেষ্টা- এগুলোও উস্কানির অন্তর্ভূক্ত।

কোন ব্যক্তির নামে যদি এমন অপপ্রচার চালানো হয়, তাহলে এদেশে অনেক মানুষেই আছে, যারা কোন প্রকার প্রমাণের অপেক্ষা না করেই ওই ব্যক্তির লাশে ফেলে দেবার জন্য প্রস্তুত থাকবে। কথাটা কী মিথ্যে? এমনকি আজ। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হল, এর পেছনেও কিন্তু উস্কানি কাজ করেছে। আরেক উস্কানিবাজ মাহমুদুর রহমান। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি যে কতরকম উস্কানিবাজী করেছেন তার পত্রিকার মাধ্যমে, কতজন সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে যে রাস্তায় নামিয়েছেন, তার কোন হিসেব নেই।

একটি নমুনা এইখানে (Click This Link ) আরেকটি কথা। ব্লগ। সাধারণ মানুষের কাছে বর্তমান সময়ের অন্যতম রহস্যের নাম, আতঙ্কের নাম, ভীতির নাম। এদেশে ব্লগারের সংখ্যা মাত্র কয়েক লাখ। কিন্তু ব্লগ ও ব্লগার – এই শব্দদুটো এখন ছড়িয়ে গ্যাছে গোটা দেশে।

একজন ব্লগার হিসেবে এমন খবরে আমার সুখি হবার কথা। কিন্তু আসলে তার উপায় নেই। কারণ সাধারণের সাথে এই শব্দদুটোর পরিচয় ঘটেছে ঘোরতর নেতিবাচকরূপে। গতকালই এক বন্ধু আমার কাছে এসে ব্লগ সম্পর্কে জানতে চাইল। ওকে যখন বললাম আমি একজন ব্লগার, সাথে সাথেই ওর মনটা ক্যামন যেন শংকায় ভরে উঠল।

ও আমাকে বলল, তুমি তো তাহলে নাস্তিক। ব্লগার মানেই তো নাস্তিক। তাই না? আমি ওকে যতটা পারি বোঝলাম। কিন্তু নিজের কাছে সন্তুষ্টি পেলাম না। উস্কানি ঠেকাতে কিছু প্রস্তাবনা: ১. মূল ভূমিকায় নামতে হবে ব্লগারদেরকেই।

প্রয়োজনে এলাকা ভিত্তিক টিম গঠন করতে হবে। কাজটা সহজ নয়। বরং বেশ কঠিন। কারণ, এই কাজটা করতে হবে প্রত্যন্ত এলাকার লোকজনের সাথে যারা এখনও টেলিভিশনের পর নতুন কোন আবিষ্কারের খবর জানে না। বিশেষ করে দেশের জামাত অধ্যুষিত কিছু এলাকা আছে।

সেখানে এমন কার্যক্রম চালানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এটি অনেক জটিল পদ্ধতি। কিন্তু প্রয়োজনীয়। এ নিয়ে আরও কথা-বার্তা চলতে পারে। ২. মসজিদগুলোকে সন্ত্রাসীদের কবল থেকে নিরাপদ রাখা।

এটির কেউ ভুল ব্যাখ্যা করতে বসবেন না। বিগত সময়ে সহিংসতার আগে দেখা গ্যাছে যে মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে মানুষকে রাস্তায় আনা হয়েছে। এমন কাজ যেন কেউ করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখাটা জরুরী। ৩. দেখা যায়, ৫ম বা ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্ররাই হল শিবিরের প্রথম টার্গেট। এদেরকেই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে এরা নিজের দলে নেয়।

তাই, শিক্ষাব্যবস্থায় এরকমের সতর্কীকরণ কোন লেখা যদি ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো হয়, সেটি উপকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। ৪. প্রতিরোধ জরুরী। প্রতিরোধ করতে হবে জামাতের অপপ্রচার। মিথ্যাচার মানে উস্কানি। প্রত্যন্ত এলাকায় এ প্রতিরোধ গড়ে তোলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

৫.অধিক জরুরী, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অপপ্রচার ঠেকানো। এ অপপ্রচারগুলো ওরা এমন সুচারুরূপে করে যে, আগে থেকে না জানলে বোঝার কোন উপায়ই থাকে না যে এটা মিথ্যাচার। স্বাধীনতাবিরোধী বা উস্কানিমূলক কোন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সচেতনতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া। তা না হলে: আগে কী হয়েছে, কোনটা সফল,কোনটা ব্যর্থ- এসব নিয়ে পর্যালোচনা করার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ এখন যে চেতনা জেগে উঠেছে তাকে যেকোন মূল্যে সফল করা। যদি তা না হয়, যদি সবকিছু ব্যর্থ হয়, তার পরিণতি আমি চিন্তা করতে পারি না।

হয়ত বাংলাদেশ আর আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মধ্যে আর কোন পার্থক্যই থাকবে না! তাই সফল হওয়াটা প্রয়োজন। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গ্যাছে। আর পেছাবার উপায় নেই। । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.