আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাচ্চালোক তালিয়া বাজাও

ইদানিং একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, কর্পোরেট কালচারের দাপটে আমরা আমাদের স্বকীয়তা/ঐতিহ্য/ইতিহাস ইত্যাদি নানাবিধ বিষয় আমরা হারাতে বসেছি। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সব কিছু নিজেদের মত করে ব্যবহার করেছে, নিজেদের স্বার্থে। কথা সত্যি, একদম মিছে নয় মোটেও। ২১শে ফেব্রুয়ারী কর্পোরেট কালচারের হাতে পরে হয়ে গেল ‘দুনিয়া কাঁপানো ৩০ সেকেন্ড’! একেবারে নিপাট ’30 seconds to fame’! কাজেই কথা সত্যি। তবে পুরোপুরি সত্যি নয় একথা জোর দিয়েই বলা চলে।

এত জোর পাচ্ছি কোথা থেকে? বাপু হে, এ জন্য চোখ-কান খোলা রাখবার দরকার নেই। এ এত স্থূল যে চোখ বন্ধ থাকলেও ঠিকই সামনে এসে পড়ে। এবারে একটু স্মৃতি রোমন্থন করা যাক। ছোট বেলায় যখন স্কুলে যেতাম তখন মাঝে মধ্যেই কিছু লোকের দেখা মিলত। এক-দুই জন লোককে ঘিরে কিছু লোকের জটলা।

মোটামুটি ‘ভ্যারাইটিজ শো’ টাইপের কারবার যার মধ্যে জোরাতালি যাদু ছিল অন্যতম। সঞ্চালক কাম উপস্থাপক কাম যাদুকর নানানভাবে দর্শক আকৃষ্ট করতে এবং ধরে রাখতে চেষ্টা করতেন। যে কোন কিছুর উপস্থাপন শেষে তাদের কমন ডায়ালগ ছিল ‘বাচ্চালোক তালিয়া বাজাও’। আমার মত উপস্থিত বাচ্চালোকেরা তারপর হাততালি দিয়ে খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠতাম। বাচ্চালোক ব্যাতীত অন্য কোন লোককে তেমন একটা তালি দিতে দেখিনি।

তবে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে শুধুমাত্র ‘বাচ্চালোক’-দেরকেই তালিয়া বাজাতে বলা হত! আবার মূল প্রসঙ্গে আসি। বলছিলাম কর্পোরেট কালচারের মাঝে সবকিছু হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি সত্য নয়। এই যেমন উপরে বর্নিত বিষয়টা। কর্পোরেট সংস্ক্রৃতি এটাকে গ্রহণ, বর্জন, পরিমার্জন কিছুই করেনি। হতে পারে এটা তাদের ‘ক্লাসের’ সাথে যায় না! কিন্তু দেশে আরও অনেক ক্লাস আছে; কর্পোরেট ক্লাস একমাত্র ক্লাস নয়।

সে রকম একটি ক্লাস হল ‘রাজনৈতিক ক্লাস’। মনে হয় এই ক্লাসটি কেন জানি না অতীতের সেই ‘ভ্যারাইটিজ শো’ হোষ্টের সংস্কৃতিটি গ্রহণ করেছে এবং নানান রাষ্ট্র যন্ত্রকে ব্যবহার করছে দেশবাসীকে আনন্দ দেবার কাজে। তবে সেই দরিদ্র, খেটে খাওয়া শো হোষ্টের সাথে এদের কিছু তাৎপর্যপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। অতীতের সেই ছেলেবেলার রাস্তার পাশের শো হোষ্টরা শুধু ‘বাচ্চালোক’-দেরকেই তালিয়া বাজাতে বলত। তারা বুঝত তাদের কাজ-কারবার বাচ্চা লোকদের তালিয়ারই উপযোগী।

কিন্তু বর্তমানের রাজনৈতিক ক্লাসের এই আত্মীকৃত সংস্কৃতির শো হোষ্টরা পুরো দেশবাসীকেই বাচ্চালোক সাব্যস্ত করে প্রতিক্ষণেই তাদের জবরজং এবং বেঢপ কাজের মধ্য দিয়ে হাস্যরস সৃষ্টির মাধ্যমে তালিয়া চেয়েই চলেছে। কিন্তু আর কাঁহাতক পারা যায়? সিঙ্গাপুর ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।