আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিপীলিকার পাখা হয় উড়িবার তরে !!

জীবনের উল্টো পিঠেও আমি বৃত্তের মত বাস্তবতার কাছে বন্ধী পিপিলিকার পাখা হয় মরিবার তরে" এই কথাটা আমাদের মুখে এ যাবৎকাল যতবার উচ্চারিত হয়েছে তার থেকেও বেশি বার এই কথাটার মর্ম বুঝতে আমাদের রাজনীতিবিদরা উদাসিন থেকেছে বলেই আমরা কেনযানি মনে হয়। স্বয়ং পিপীলিকা সম্প্রদায়কে যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই কথাটার বাস্তবিক উদাহরণ বের করতে বলা হতো তবে আমার ধারণা পিপীলিকারাও হতাশ হয়ে প্রবাদটা বদলে বলতে বাধ্য হতো "পিপীলিকার পাখা হয় উড়িবার তরে"। সে কারণেই হয়তো এইকথার মর্ম না বুঝেও যে কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অন্তত বাংলাদেশের রাজনৈতিক আঙ্গনে নেই তা বোঝার মত যথেষ্ট সুচারু জ্ঞান এদেশের রাজনীতিবিদদের মাথায় সবসময় কিলবিল করে। এবং তাইই হয়ে আসছে কালের ধারাবাহিকতায়। স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতারা দিনের পর দিন তাদের স্বার্থ লুটতে লটতে সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাদের দুঃশাসনের কাল পাখাতো দিব্বিই বাংলার আকাশ কাপীয়ে বেড়াচ্ছে।

মাঝখাণে পড়ে নিষ্পেষিত হচ্ছি আমরা যারা সাধারণ জনগণ,,,নাহ 'জনগণ' কথাটা বোধহয় ভূল বলে ফেল্লাম! আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টিতে আমরা আসলে কি? কলুর বলদ নাকি নাচের পুতুল?হয়ত আরও কোণ সংজ্ঞা থাকতে পাড়ে আমার জানা নেই,তবে জনগণ যে নই সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। রাজনৈতিক দল, হোক তা সে সরকারি কিংবা সরকার বিরোধী সবার দৃষ্টিতেই আমরা সাধারণ মানুষ কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার বাহন ছাড়া আর কিছুই নই। এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় হরতাল শেষে টিভি চ্যানেলগুলোর খবর দেখলেই। হরতালে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ জনগণের পক্ষনিয়ে হরতালকারি দল বলে "হরতাল সফল হয়েছে,জনগণ আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে"। ।

আবার হরতালে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের মতো সাধারণ জনগণের পক্ষনিয়ে হরতাল বিরোধী দল বলে "জনগণ এই হরতালকে কোনভাবেই সমর্থন করেনি"। । আমার ক্ষুদ্র চিন্তার রাডারে ধরা পড়েনা তথাকথিত এই 'জনগণ'সম্প্রদায়টা আসলে কারা,আর আমরাই বা তাহলে কি যারা সমর্থন করুক আর নাই করুক সমর্থন আর অসমর্থনের যাঁতাকলেই তাদের পিষ্ট হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত? একদিকে, কারে কোথায় ঘর থেকে নামিয়ে দেওয়া হল বা কে কোথায় গুম হল (গুম হয়ে যাওয়া ব্যাক্তিটি যদি দেশের কোন বুদ্ধিজীবী কিংবা নিরিহ কোন সাধারন মানুষ হতো তাও মেনে নেওয়া যেত) তার জন্য পুরো দেশটাকেই অচল করে দেয়া গেলেও, যেখানে দেশ আজ ভয়ানক বিদ্যুৎ সংকটে জর্জরিত এবং যাকিনা হরতাল ডাকার মতো খূব বড় একটা ইস্যু তা নিয়ে কখনো হরতালতো দুরের কথা বিরোধী দলকে একটা মিছিলও করতে দেখা যায়না। আর মাঝে পড়ে আমাদের মতো কলুর বলদ শ্রেণীর জনগণের দিন কাটাতে হয় বিদ্যুৎ ছাড়া নিদারুণ কষ্টে। তাহলে একটা ব্যপার কি পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছেনা যে, আমাদের মতো এই কলুর বলদ শ্রেণীর জনগণ কক্ষনোই ঐ সব জনগণের অংশ নয় যাদেরকে রাজনৈতিক নেতারা জনগণ বলে মনে করে কিংবা রাজনৈতিক নেতারা তাদের দলীয় সমর্থক ছাড়া আর কাউকেই জনগণ বলে মনে করেনা এবং সাধারণ জনগণের স্বার্থে কাজ করাকে কখনোই তারা দায়িত্ব মনে করেনা?? ঠিক এর বিপরীতে, সরকারি দলের তাণ্ডব যেন ভিন্ন মোড়কে একই পণ্য।

যেখানে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, ছুটির দিনেও এক ঘণ্টা অন্তর লোডশেডিং,যা এর আগে কখনো দেখা যায়নি,সেখানে তারা কাগজে কলমে যথেষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করেই ক্ষান্ত এবং ঐ কাগজে কলমের বিদ্যুৎ কোথায় যে বাস্তবায়িত হোচ্ছে তা হয়ত কেবল তারা এবং তাদের সমর্থক জনগণরাই ভালো বলতে পারবে। আমাদের মতো সাধারণ জনগণের কেবল লোডশেডিং এর চরম যন্ত্রণা ভোগ কোরেই যেতে হবে এবং এর প্রতিবাদ করতে গেলে শুনতে হবে অদৃশ্য ঐ উৎপাদিত বাড়তি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার পরোক্ষ একপ্রকার হুমকি। যাকবাবা দরকার নেই বাড়তি বিদ্যুতের, বাড়তি বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়ে বিদ্যুৎ ছাড়াই বেশ ভালো আছি। জানিনা সরকারের প্রতি দেশের ৭৭ শতাংশ মানুষের আস্থার ফলাফল আরও কতটা ভোগাবে। যদিও এই "৭৭ শতাংশ মানুষের আস্থার" ব্যাপারে আমার ক্ষুদ্র চিন্তার একটা সূক্ষ্ম দ্বিধা থেকেই যাচ্ছে।

যে দেশে নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার মতো এত বড় একটা বিষয়ে পেছনে যদি সন্দেহের বাণী উচ্চারীত হতে পারে তাহলে এই "৭৭ শতাংশ মানুষের আস্থা" পাওয়ার ব্যাপারেও সন্দেহ থাকাটা কি অযৌক্তিক হবে??? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।