আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে

তোমার আমার ঠিকানা,পদ্মা-মেঘনা-যমুনা হাতবোমা বিস্ফোরণে সমাবেশ পণ্ডের পর বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত সাত নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নয়া পল্টনে প্রধান বিরোধী দলের কার্যালয়ে এই অভিযান চলে। তল্লাশির সময় বিএনপি কার্যালয়ে ১০টি বোমাও পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানায়। আটক নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ছাড়াও রয়েছেন- সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, মোহাম্মদ শাহজাহান ও প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক। এছাড়াও আটক করা হয় কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিকে।

কার্যালয় থেকে শতাধিক কর্মীকেও আটক করা হয় বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। আটক সবাইকে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ের দিকে নিতে দেখা গেছে। তবে সহসভাপতি সেলিমা রহমান, সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি, মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ কয়েকজন নারী নেতা-কর্মী কার্যালয়ে থাকলেও তাদের আটক করা হয়নি। নয়া পল্টনে সোমবার বিকালে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশ ছিল। সমাবেশের শেষের দিকে পৌনে ৫টার দিকে হঠাৎ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।

এরপর বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছুড়তে থাকে। আশপাশের ভবনে লক্ষ্য করেও ইট ছোড়ে তারা। এক পর্যায়ে তারা একটি মোটর সাইকেল এবং একটি রিকশা ভ্যান জ্বালিয়ে দেয়। সড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুনও দেয় তারা। সমাবেশের সময় পুলিশ নয়া পল্টন থেকে খানিকটা দূরে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে অবস্থান নেয়।

সড়কে বিএনপি ও ১৮ দলীয়কর্মীদের উত্তেজিত অবস্থানের মধ্যে সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ ধাওয়া শুরু করে। তখন কর্মীরা বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়ে ওই সময় কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটে। এরপর ৬টার সময় পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে একে একে নেতা-কর্মীদের আটক করা শুরু হয়। তল্লাশির সময় উপস্থিত ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপির সভাকে কেন্দ্র করে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে।

তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালানো হবে। “এক ঘণ্টা ধরে যে নৈরাজ্য চলেছে, দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য তল্লাসি চালানো হচ্ছে। আর নাশকতা পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ” প্রথমে আটক করা হয় মির্জা ফখরুলকে, তিনি এই নিয়ে বর্তমান সরকার আমলে তৃতীয়বার আটক হলেন। সমাবেশ পণ্ডের পর মির্জা ফখরুল উঠে যান দলীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় তার দপ্তরে।

বিকাল সোয়া ৬টার দিকে তাকে পুলিশ নামিয়ে আনে। বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশের প্রিজন ভ্যানে ফখরুলকে তোলার সময় কিছুক্ষণ টানা হেঁচড়াও চলে। প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় ফখরুল নেতা-কর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এর ১৫ মিনিটের মধ্যে আটক হন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তাকেও নামিয়ে আনা হয় ওপর থেকে।

এরপর সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিসহ বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তারপর শুরু হয় প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি। ভেতর থেকে বন্ধ বিভিন্ন কক্ষের দরজা ভেঙে ফেলে পুলিশ। তল্লাশির সময় বিএনপির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মহাসচিবের কক্ষে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই কক্ষ ভেঙে ফেলে পুলিশ।

সাড়ে ৭টার দিকে ওই কক্ষ থেকে একে একে আটক করা হয় সাদেক হোসেন, আমান, আলতাফ চৌধুরী, জয়নুল ফারুককে। শাহজাহান, হাবিব, বাবুলও ওই কক্ষে ছিলেন। একটি কক্ষে ছিলেন সহসভাপতি সেলিমা রহমান, সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি, মহিলা দলের সভানেত্রী নূরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ কয়েকজন নারী নেতা-কর্মী। পুলিশ তাদের আটক করেনি। রাত ৮টার দিকে তারা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান।

রাত ৮টায় অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করে পুলিশ। এরপর পুলিশ কর্মকর্তা মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি কার‌্যালয়ে অভিযানে শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। আটকদের ডিবির কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে। ” অভিযানে ১০টি হাতবোমা উদ্ধার হলেও অন্য কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। অভিযানের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ফৌজদারি অপরাধের জন্য এই অভিযান চালানো হয়েছে।

“পুলিশের ওপর ককটেল, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, আগুন জ্বালিয়ে আশপাশের দোকানপাট ভাংচুর, জনমনে ভীতি সৃষ্টি এবং জন সম্পদের ক্ষতি করায় বাধ্য হয়ে এই অভিযান চালানো হয়। ” বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অবস্থান থাকবে কি না- জানতে চাইলে মেহেদী বলেন, “ভবনের ভেতরে পুলিশ থাকবে কেন? বিএনপি নেতাকর্মীরাই সেখানে থাকতে পারেন। যেমন ছিল সেভাবেই থাকবে। পুলিশ দায়িত্ব নেবে কেন?” অভিযানে বিএনপি কার্যালয় থেকে একটি ট্রাংক, দুটি ব্যাগ এবং দপ্তরের কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কটি পুলিশকে নিতে দেখা গেছে। এসব হতাহতের ঘটনাকে সরকারের ‘গণহত্যা’ আখ্যায়িত করে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়।

ওই বিক্ষোভ সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর গ্রেপ্তার হন বিএনপি নেতারা। তবে গ্রেপ্তারের আগে মির্জা ফখরুল মঙ্গলবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দিয়ে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও গনতন্ত্র ফেরি করা আওয়ামীলীগ সরকার দিন দিন অসহায় হয়ে পড়ছে। দূঃশাসনে, দূর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। আজ যেভাবে বিএনপি অফিসে হামলা ও শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হলো তা সরকার ঘৃণা ব্যতীত আর কিছুই পেতে পারে না ।

এটাকে আবার ম,খা গনতন্ত্র বলছে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করছে,শুনলে হাসি পায়। সরকার সাড়া দেশটাকে কারাগারে পরিনত করেছে। দলীয় কার্যালয়ে অভিযানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ব্যারিস্টার রফিকুল বলেন, “একটি বৃহত্তম দলের কার্যালয়ে পুলিশ বিনা ওয়ারেন্টে প্রবেশ করে যে ন্যক্কারজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছে, তা নজিরবিহীন। “কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে পুলিশ এভাবে প্রবেশ করতে পারে না। এটা বেআইনি অনুপ্রবেশ।

” তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে, অফিসের ভেতরে জর্দার কৌটা ছিলো, তবে ভেতরে থাকা শতশত কর্মীরা কি সেই ৮টি জর্দার ডিব্বা দক্ষিন পাশের জানালা দিয়ে নিচের গার্বেজ ফেলা চিপায় ফেলে দিতে পারতো না? ধরে নিলাম ককটেল বিএনপি নিজেই ফুটিয়েছে। কিংবা জামাত-শিবিরও ফুটাতে পারে। অথবা সরকার নিজেই পারে স্যাবোট্যাজ করতে। অন্যদিকে, কার্যালয়ের ককটেলগুলো বিএনপিরই ধরে নিলাম। অথবা জামাত-শিবিরের কোন কর্মী ককটেল নিয়ে ঢুকতে পারে।

কিংবা পুলিশ নিজেই ককটেল রেখে উদ্ধারকর্তা হতে পারে। দেখুন, কোন কিছুই অসম্ভব না। তাই আসল ঘটনা কি সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করে কোন লাভ নেই। পরিস্থিতি কে কিভাবে চালাতে চায় সেটাই বিবেচ্য। আমার বা আপনার না যুদ্ধাপরাধের বিচার এদেশের সবারই প্রানের দাবি।

আমিও বহুবার শাহবাগ গিয়েছি,কিন্তু আফসোসের সাথে বলতে হয় সরকার দেশের মানুষের সেন্টিমেন্টকে নিয়ে খেলছে । পুলিশের বর্তমান ভুমিকায় মনে হচ্ছে তারা দেশ বা দেশের জনগণ রক্ষা করার জন্য নয় তারা একটি দলের হয়ে কাজ করছে। এই যদি তাদের অবস্থা তাহলে সাধারন জনগণ কোথায় যাবে ....? ককটেল উদ্ধার নাটক পুলিশের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য গতরাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম পুলিশি তাণ্ডবের সময় ককটেল উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়েছে। তবে পুরো তাণ্ডব টেলিভিশনে লাইভ সম্প্রচার হওয়ায় ককটেল উদ্ধারের পুরো বিষয়টি যে নাটক ছিল তা অনেকের চোখেই পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে। আবার ককটেল উদ্ধারের স্থান ও সংখ্যা নিয়ে পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে বিষয়টি আরও খোলাসা হয়ে গেছে।

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় দফতরে অভাবনীয় তাণ্ডবকে জায়েজ করার জন্য ককটেল নাটকের অবতারণা করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপি অফিসে পুলিশি অভিযান শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টা থেকে। মহাসচিবের কক্ষ ছাড়া সব কক্ষ তল্লাশি করে তছনছ এবং মির্জা ফখরুল, রিজভীসহ নেতাকর্মীদের আটক করা হয় ৭টা পর্যন্ত। এ এক ঘণ্টায় পুলিশ সেখানে কোনো ককটেলের অস্তিত্ব পায়নি। ৭টার পর হঠাত্ একটি টয়লেট ঘিরে পুলিশ জটলা তৈরি করে।

সেখানে ক্যামেরা যেতে বারণ করা হয়। কয়েক পুলিশ টয়লেটের মুখে ব্যারিকেড তৈরি করে। ব্যারিকেড ঠেলে এক ডিবি কর্মকর্তা টয়লেটে ঢোকেন। কয়েক মিনিট পর পুলিশ ব্যারিকেড ছেড়ে দিয়ে টয়লেটের দরজার সামনে কাত করে রাখা দুটি জর্দার কৌটা দেখিয়ে ককটেল উদ্ধারের ঘোষণা দেয়। একটি কৌটার মুখ লাল স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো।

অপরটি কাল টেপে মোড়ানো। টয়লেটের দরজার সামনে এমনভাবে ককটেলসদৃশ দুটি কৌটা দেখানো হয় যাতে যে কারও মনে হবে এই মাত্র সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর অভিযান চলতে থাকে। মহাসচিবের কক্ষের দরজা ভেঙে সেখান থেকে সাদেক হোসেন খোকা, জয়নুল আবদিন ফারুকসহ শতাধিক নেতাকর্মী আটক করা হয়। দরজা ভাঙার পর সাংবাদিকরা সেখানে ঢুকতে চাইলে পুলিশ ধমক দিয়ে বাধা দেয়।

একে একে নেতাদের আটক করে নিচে প্রিজন ভ্যানে তোলার একপর্যায়ে অফিসের গেটে ডিবির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের ৪ জন সদস্য পানি এবং মাটিভর্তি একটি বালতি ও তিনটি জগে কয়েকটি জর্দার কৌটা দেখিয়ে ঘোষণা দেন বিএনপি অফিস থেকে মোট ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। তল্লাশি করে আর কোনো ককটেল পাওয়া যায়নি। দুটি ককটেল কিভাবে ১০টি হলো তা উপস্থিত শতাধিক মিডিয়াকর্মী বুঝতে ও দেখতে পাননি। লাইভ প্রচারে থাকা টিভি সাংবাদিকরা বলছিলেন, পুলিশ দাবি করেছে ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। এর মিনিট পনেরো পর পুরো তাণ্ডবে নেতৃত্বদানকারী পুলিশের এডিসি মেহেদী হাসান গ্রেফতার পর্ব শেষ করে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে গেটের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, মোট ৬টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কোথা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুটি তিনতলা থেকে এবং ৪টি ৪তলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আবার কয়েক মিনিটের মাথায় পুলিশের আরেক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, মহাসচিবের কক্ষ থেকে কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। শতাধিক সাংবাদিক ও ক্যামেরার সামনে পরিচালিত অভিযানে ককটেল উদ্ধারের পুরো নাটকটি বেশ অগোছালোভাবেই মঞ্চস্থ করা হয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।