আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিষ্ঠুর পলিটিক্স

লিখে খাই, সবার ভাল চাই পলিটিক্স বড় নির্মম, বড় নিষ্ঠুর। ইলিয়াসের স্ত্রী লুনা’র বক্তব্য এ কথারই প্রমাণ দিলো। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার স্বামীর গুমের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাজনীতিকে। বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হয়েছেন। কিন্তু পলিটিক্স যে এত নিষ্ঠুর তা হয়তো জানা ছিল না ইলিয়াসের স্ত্রী লুনা’র।

আসলে এখন সর্বত্র চলছে পলিটিক্স। নোংরা পলিটিক্স। ঘরে-বাইরে, হাটে-ঘাটে, মাঠে-ময়দানে, অফিস-আদালতে কোথায় নেই পলিটিক্স, এমনটাই যদি হবে তাহলে এমন নিষ্ঠুর রাজনীতি আমরা চাই না। এমন রাজনীতি আমাদের প্রয়োজন নেই। আজ পলিটিক্স এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র, ভাই-বন্ধু কেউ কাউকে চেনে না।

সবার কাছে আগে পলিটিক্স। পরে সব কিছু। গ্রাম্য মোড়লের রাজনীতি আর রাজার রাজনীতি মূলত এক। তবে তাদের প্লাটফরম ভিন্ন। গ্রাম্য মোড়লের চৌহদ্দি তার গ্রাম।

আর রাজার চৌহদ্দি রাজ্য। আবার ভিনদেশ। সবই তাকে সামলাতে হয়। কাজেই তার পলিটিক্স গ্রাম্য মোড়লের চেয়ে অনেক কঠিন। অনেক হিসাবি।

পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু পলিটিক্সের। ধীরে ধীরে এ পলিটিক্সে এখন যোগ হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ইন্টারনেট, ফেসবুক, ই-মেইল পলিটিক্সকে করেছে সমৃদ্ধ। কিন্তু সাত সমুদ্দুর তের নদী পেরিয়ে রানী এলিজাবেথ যখন বাংলা-ভারত-উড়িষ্যাকে আড়াই শ’ বছর শাসন করেছেন তখন তো ছিল না এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি। তখনকার পলিটিক্স আর আধুনিক যুগের এ পলিটিক্সের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি? ইতিহাস কি বলে? নবাব পরিবার ধ্বংস হলো পলিটিক্সের কারণে।

এখানে ইংরেজদের সহযোগিতা করেছে নবাবদেরই দোসর। লোভের বশবর্তী হয়ে তারা ইংরেজদের সহযোগিতা করেছেন নানাভাবে। শ’ শ’ বছর পর এসেও স্বাধীন বাংলাদেশ এ থেকে পার পাচ্ছে কি? ইলিয়াস আলী পুরাদস্তুর রাজনীতিবিদ। তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রাজনীতিতে ঘেরা। রাজনীতিতে তিনি গলি থেকে রাজপথে এসেছেন অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর।

এমন একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ কার রোষানলে গুম হলেন? তাকে নিয়ে এ পলিটিক্স খেলায় কার লাভ হয়েছে? যে ইংরেজদের পলিটিক্স ছিল ভারতবর্ষকে শোষণ করার, ইংরেজদের মতামত, ভাবাদর্শ চাপিয়ে দেয়ার, আজ এত বছর পর এসে স্বাধীন বাংলাদেশ এ থেকে বের হতে পারলো কোথায়? আজও রাজনীতিতে রয়ে গেছে মীরজাফররা। আজও রয়ে গেছে তাদের দোসররা। যারা নিজেদের লাভে, স্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতেও দ্বিধা করেন না। পলিটিক্স কি এ থেকে পরিত্রাণ পাবে না? নাকি সেই মুচির মতো জন্মদোষে আক্রান্ত হয়ে থাকবে রাজনীতি। এক মুচি তার সন্তানকে লেখাপড়া করিয়ে উচ্চ শিক্ষিত করেছে।

চাকরিও পেয়েছে সরকারের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার পদমর্যাদার। এখন তাকে বিয়ে করাতে হবে। এত উচ্চ শিক্ষিত ছেলে তো আর গ্রামের আরেক মুচির মেয়ে বিয়ে করবে না। শহরের নামীদামি এক ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে। থাকেও রাজধানীর অভিজাত এলাকায়।

সুখেই চলছে তাদের সংসার। কিন্তু তার স্ত্রী লক্ষ্য করে, প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে তার স্বামী দৌড়ে বাড়ির উঠানে যায়। কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে ফের ঘরে ফিরে আসে। এভাবে একদিন, দু’দিন, তিন দিন যায়। একই অবস্থা।

সপ্তাহ, মাস যায়। তার সন্দেহ বাড়ে। একদিন স্বামীকে বলে, তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে। স্বামী বলে, কি কথা? স্ত্রী বলে, এই যে তুমি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে দৌড়ে উঠানে যাও। আকাশের দিকে তাকাও।

কি দেখ আমাকে খুলে বলবে কি? স্বামী বলে, এটা আমার জন্মগত অভ্যাস। কেমন? তাহলে শোনÑ আমি এক মুচির সন্তান। আমাদের বংশের নিয়ম হলো- সকালে ঘুম থেকে ওঠে ছেলে-বুড়ো সবার আকাশের দিকে তাকানো। আকাশের যেদিকে কাক বা শকুন ওড়ে তাহলে বুঝতে হবে সেদিকে কোথাও না কোথাও মরা গরু আছে নিশ্চিত। তারপর সবাই ছুটে সেদিকে মরা গরুর সন্ধানেÑ সে গরুর চামড়া সংগ্রহে।

ছোটকাল থেকে তা করে এসেছি বলে এটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। না মরা পর্যন্ত এ অভ্যাস যাবে না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।