আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৫ বছরেরও প্লট বুঝে পাননি গ্রাহকরা গণপূর্তের ডুইপ প্রকল্প মাস্তানদের দখলে

যেমন কর্ম তেমন ফল। ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঢাকা শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (ডুইপ) আড়াই কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ পান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান। বরাদ্দের শর্ত ছিল ডাউনপেমেন্ট ও প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেওয়ার পর দখল বুঝিয়ে দিবে। কিন্তু ওই ব্যক্তি সমুদয় কিস্তি পরিশোধের পরও বুঝে পাননি তার প্লটটি। এর মাঝে পেরিয়ে গেছে ১৫টি বছর।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দারে ঘুরে ঘুরে সে এখন ক্লান্ত শ্রান্ত। বরাদ্দকৃত প্লটটি দখল করে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে ভাড়াবাণিজ্য করছেন স্থানীয় মাস্তান জৈনক আলম ভূঁইয়া। ডুইপ প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নিয়ে হয়রানির শিকারের এটি একটি ঘটনা মাত্র। রাজধানীর মিরপুর সেকশন-১২’র ডি-ব্লকে ডুইপ প্রকল্পের এমন ২৯টি প্লট দখল করে আছে স্থানীয় দখলবাজ মাস্তানেরা। এর সঙ্গে যোজসাজশ রয়েছে ডুইপ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের।

ফলে বছরের পর বছর ঘুরেও প্লট বুঝে পাচ্ছেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা। শুধু পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা। আর কারণ অকারণ গুনতে হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। জানা যায়, নিম্নবিত্ত, সরকারি চাকরিজীবি, ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ডুইপ প্রকল্প তৈরি করে। বৃহত্তর মিরপুরে এ প্রকল্পের প্রায় ৬ হাজার প্লট রয়েছে।

স্থানীয় মাস্তানরা ওই জায়গা নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে দখল করে আছে। তারা ওইসব প্লটগুলোতে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে মাসে লাখ লাখ টাকার ভাড়াবাণিজ্য করছেন। সরেজমিনে দেখাগেছে, ওই প্লটগুলো পাকা, আধাপাকা স্থাপনা গড়ে তুলে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। করা হয়েছে কারখানা-ফ্যাক্টরি। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে প্রকাশ্যে এসব হলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না তারা।

ডি-ব্লকের প্লট-১/২, ২/এ লেন-৫ প্লটের দখলদার আলম ভূঁইয়ার কাছে প্লট দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সম্পত্তি আমার বাপদাদাদের। সরকার অধিগ্রহন করলেও টাকা বুঝিয়ে দেয়নি। আমরা আমাদের নায্য পাওনা না পাওয়া পর্যন্ত এসব প্লটের দখল ছাড়ব না। আদ্যোপান্ত জানতে চাইলে তিনি পরিস্কার করে কিছু বলতে পারেননি। বরাদ্দপ্রাপ্তরা ১৯৯৬ সালে চারলাখ টাকায় এ প্লট বরাদ্দ পায়।

প্লট বরাদ্দ পেয়ে তারা সোনালি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। মাটি যেখানে সোনার চেয়েও দামি। সেখানে তারা ছেলেমেয়েদের জন্য একটা ঠািকানা করে যেতে পারছেন। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে গেছে। প্লটের পেছনে ছুটতে ছুটতে অনেকে ইহজগত ত্যাগ করেছেন।

এখন তাদের ছেলেমেয়েরা ছুটছেন। অনুসন্ধানে জানাগেছে, স্থানীয় দখলবাজ হিসেবে পরিচিত হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া ও সিরাজ উদ্দিন ভূঁইয়া এ দখলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মামলার বাদীও তারা। অন্যদখলদারদের বুঝিয়ে তারা প্লটে বসিয়েছেন। সংঘবদ্ধ ওইচক্র নিজেদের পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে।

কিন্তু মামলাটি জোরালোভাবে মোকাবিল করতে বিরত থাকে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। এ কারণে মামলাটিরও নিষ্পত্তি হচ্ছে না। অন্যদিকে বরাদ্দপ্রাপ্তরাও বুঝে পাচ্ছেন না তাদের প্লট বা জমা দেওয়া টাকা। প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম কবিরের মতো বেঁচে নেই অনেকেই। কেউবা আছে মৃত্যু শয্যায়, কেউবা গেছেন অবসরে।

কেউবা বয়সরে ভারে নুয়ে পড়েছে। কিন্তু এরপরও প্লট বুঝে পাননি। বরাদ্দের তিনগুন টাকা খরচ করেও তারা এখন জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের চোখে মুখে এখন শুধুই হতাশা। ওই প্রকল্পের প্লট বরাদ্দপ্রাপ্তদের আরেকজন হলেন টিএন্ডটির কর্মকর্তা ওসমান গনি।

তিনি বলেন, ভাই জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ঘুরতে হতাশ আমরা। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ আমাদের নিয়ে খেলা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, জীবনের কষ্টের সঞ্চিত টাকা প্লটের জন্য জমা দিয়েছে। এরমধ্যে পার হয়েছে ১৫টি বছর। তিনি বলেন, জীবন সায়াহ্নে এসে পড়েছি।

এখনও যদি সরকার আমাদের প্রতি একটু দৃষ্টি দিতেন তাহলেও আমরা সন্তানদের স্থায়ী ঠিকানা করে যেতে পারতাম। এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্প ম্যানেজার আব্দুর রউফ জানান, এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যাপারে আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, ১৯৬১ সালে এলএ মামলার আওতায় সরকার অবাঙালি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের পুনবার্সনের জন্য মিরপুরে বার নম্বর সেকশনে ডুইপ প্রকল্পে এলাকাসহ মিরপুরের বিশাল এলাকা সরকার জমি অধিগ্রহন করে জাতীয় গৃহায়নের অধীনে ন্যাস্ত করেছে। এসময় জমির প্রকৃত মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়।

কিন্তু ১৯৯৬ সালে ডুইপ প্রকল্পের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২৯টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হলে স্থানীয় জবরদখলকারীদের পক্ষে জনৈক মতিয়ার রহমান গং জমির ক্ষতিপূরণ পায়নি বলে দাবি করেন। পরে ২০০০ সালে আদালতে তারা মামলাও করেন। মামলা নং-৭৯/২০০। মামলায় বিবাদী করা হয় সরকার ও জাতীয় গৃহায়ণকে। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম এ জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি।

ওই প্রকল্পের বিষয়গুলো আমার কাছে আমার জানানেই। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।