আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হতচ্ছাড়া ! বদমাইশ ! ইতর ! ঝগড়া করার আর টাইম পেলি না !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! -হতচ্ছাড়া ! বদমাইশ ! ইতর ! ঝগড়া করার আর টাইম পেলি না !! নিশি আপন মনেই বিড় বিড় করতে থাকে । ওর এখন খুব কান্না আসছে । ইস ! এমন একটা দিনের জন্য কতটা সময় ধরে ও অপেক্ষা করছে আর আজ যখন সময় এসেছে ফাজিল ছোড়াটা ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে রেখেছে । কি এমন করেছিল ও ! একটু না হয় রাগই দেখিয়েছিল তাই বলে মোবাইল বন্ধ করে রাখতে হবে ? ও তো একটু এরকমই । সব সময়ই ওর একটু রাগ বেশি ।

নিশি আরো একবার ফোন দিল অপুর মোবাইলে দুঃখিত এই মুহুর্তে .... নিশির ইচ্ছা হল মোবাইলটা একটা আছাড় মেরে ফেলে দেয় । সামান্য একটা ফোনে লাইন ঢুকাতে পারে না । নিশি ঘর ছেড়ে আবারও বারান্দায় চলে এল । আকাশটার দিকে তাকিয়ে ওর মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল । ইস ! কি সুন্দর মেঘ করেছে ।

ঠান্ডা বাতাস শুরু হয়ে গেছে । এখনই বৃষ্টি নামবে । এমন একটা বৃষ্টি দিনের জন্য নিশি কত দিন ধরে অপেক্ষা করেছে । নিশির কত দিনের শখ এমন ঝুম বৃষ্টির দিনে ও অপুর হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজবে ! ওর ইচ্ছেটা বুঝি ইচ্ছেই রয়ে যাবে ! অপুটা এমনিতে খুব শান্ত শিষ্ট ছেলে । সব সময় ওর জ্বালাতন সহ্য করে মুখ বুজে ।

কিন্তু হঠাৎ এমন রাগ করে বসল কেন ? অবশ্য নিশির নিজেরও একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেছিল গতদিন । প্রতিদিন বিকালবেলা অপুর সাথে ওর দেখা হয় । একটা নির্দিষ্ট সময়ে দুজন ছাদে ওঠে । এমনিতে তো মোবাইলে কথা হয়ই তবুও বিকেল বেলার এই দেখাটা না হলে দুজনের কারোরই ভাল লাগে না । গত কাল বিকাল বেলা ছাদে উঠে দেখে অপু পাশের বাড়ির নাদিয়ার সাথে গল্প করছে ।

পাশাপাশি ছাদ হওয়াতে পাশের বাসার ছাদটা একেবারে এই বাড়ির লাগোয়া আর রেলিং দুইটাও খুব কাছাকাছি । নাদিয়ার সাথে কি হেসেই না কথা বলছে । আর ঐ শাক চুন্নী নাদিয়াটাও হাসতে হাসতে ঢলে পরছে । নিশি রাগে শরীরটা জ্বলে উঠল । ওর রাগটা আরো বেড়ে গেল যখন অপু ওকে দেখেও না দেখার ভান করল ।

নাদিয়ার সাথেই কথা বলতে থাকল । আরো দশ মিনিট পর অপু এল ওর কাছে । নিশি ততক্ষনে রেগে আগুন হয়ে গেছে । -কি খবর পাখি ? -আমার খবর নেবার টাইম আছে তোমার ? -কি বলছ এসব ? টাইম থাকবে না কেন ? -ঐ পেত্নীটার সাথে তুমি কেন কথা বলছিলে ? -পেত্নী ? অপু বেশ অবাক হল । -কার কথা বলছ ! -বোঝ না , না ? নাদিয়ার ।

অপু হাসল । বলল - ছিঃ এসব বলতে নেই । ও শুনলে কষ্ট পাবে । -আহা ! দরদ একেবারে উতলে পড়ছে । ও ক্ষ্ট পাবে সে দিকে লক্ষ্য আছে আর আমি কষ্ট পাচ্ছি সে দিকে খ্যাল নাই ।

অপু বলল - কি বলছ এসব ? খ্যাল থকবে না কেন ? আর আমি তোমাকে কষ্ট দিলাম কিভাবে ? -তুমি ঐ পেত্নীটার সাথে কথা বলছিলে কেন ? -আশ্চর্য ! এটা কেমন কথা হল ?ওর সাথে কথা বলায় দোষ হল কোথায় ? আর তুমি ওকে বারবার পেত্নী বলছ কেন ? -আমার ইচ্ছা আমি বলবো । অপু দেখলো যে কথা বাড়িয়ে লাভ নাই । বলল -আচ্ছা বল । তোমার যা ইচ্ছা বল । হটাৎ নিশির কি হল ।

ও বলল -তুমিও ওকে পেত্নী বলবে । এখনই বলবে । -এসবের মানে কি নিশি ? -আমি জানি না । এখন ওকে ডাক দিবা । তারপর ওর মুখের উপর বলবা যে তুই একটা পেত্নী ।

-অসম্ভব ! এ কাজ আমি করতে পারবো না । -তুমি আমাকে ভালবাস না? তাহলে তোমাকে বলতে হবে ! হবে ! হবে ! অপু খানিকক্ষন অবাক হয়ে ওর দিকে । বলল -তুমি বাচ্চা নও । কলেজে পড় । ঠিক আছে ।

বাচ্চাদের মত কথা কথা বলবা না । এ কথা শুনে নিশির যেন আরো বেশি জেদ চেপে গেল । ওর বারে বার মনে হচ্ছে অপু যেন ওকে ইগনোর করছে । ঐ নাদিয়ার জন্য ওকে ইগনোর করছে । নিশি বলল -আমি জানি না ।

তোমাকে বলতে হবে । বলতে হবে । -নিশি , একটা কথা শোন ! তোমাকে ভালবাসি তার মানে এই না যে তোমার সব অন্যায় আবদার আমি শুনবো ! ঠিক আছে । -তুমি বলবে না ? নিশির মাথায় তখন কেবল একই কথা । আসলে ছোট বেলা থেকে নিশিটা একটু এমনই ।

একবার কিছু মাথায় চেপে গেলে আর নামে না । নিশি আবার বলল -তুমি বলবে না ? -তোমার কথা শুনতে গিয়ে আমি অন্য কারো মনে কষ্ট দিবো না । অন্য কিছু থাকলে বল । নিশির তখন মাথায় আগুন জ্বলছে । ওর বার বার মনে হচ্ছে অপু ওকে ভালবাসে না ।

ওর কথা না শুনে অপু ওকে অপমান করলো । নিশি হঠাৎ অপুকে ধক্কা মারল । আর একটু হলে অপু পড়েই যেত । কোন মতে তাল সামলালো । -কি করছো নিশি ? -চুপ ।

একদম চুপ । তুই আর কখনও আমার সাথে কথা বলবি না । তোর মত বয়ফ্রেন্ডের আমার দরকার নাই । তুই যা তোর পাত্নীর কাছে । এই বলে ওখান থেকে চলে আসে ।

রাতের বেলা যখন মাথা ঠান্ডা হয় তখন ভেবে দেখে আসলে ভূলটা ওরই ছিল । তবুও ও আশা করছিল হয়তো অপু ওকে ফোন দিবে । কিন্তু সারাটাত ফোন দিল না । একটু অভিমান হয়েছিল । কিন্তু সকাল বেলা আর থাকতে না পেরে নিশি নিজেই ফোন দিল ।

কিন্তু দেখে অপুর ফোন বন্ধ । বৃষ্টির ফোটা পড়তে আরাম্ভ করেছে । এর মনটা আরো অস্থির হয়ে উঠল । একবার মনে হল ওদের বাসায় চলে যাই । অপুরা দুতলায় থাকে ।

একবার টুক করে গেলেই কিন্তু হয় । সরাসরি দেখা করলে ও নিশ্চই রাগ করে থাকতে পারবে না । কিন্তু ওর মা আবার কি ভাববে ? যদি কিছু বলে বসে !! নিশি কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারে না । কিন্তু বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আর থাকতে পারল না । না ওদের বাসায়ই যাবে ! যা থাকে কপালে !! এমন সুযোগ আর আসবে না ! ও মা যা বলে বলুক !! নিশি জামা পালটে কালো রংয়ের সেলোয়ার কামিজটা পরে নিল ।

কালো শাড়ি পরতে পারলে ভাল হত ! কিন্তু ও ঠিক মত শাড়ি পরতে পারে না । আর এখন শাড়ি পড়ার সময়ও নাই । আয়নার সামনে গিয়ে কালো একটা টিপ পড়ল । বেশ বড় টিপ । শেষ বারের মত নিজেকে দেহে নিল ।

অপুর পছন্দ হবেই । অপুই বলেছিল যেদিন একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো তুমি কালো শাড়ি আর আর কালো টিপ পরো । কিন্তু আল্লাহই জানে অপুর মা যখন দেখবে কি বলবে !! ভদ্রমহিলা এমনিতেই যা কড়া । অপুকে আবার বাইরে বের হতে দিবে তো ? নিশি আরো একবার ভাবলো । অপুর বাসায় যাওয়া ঠিক হবে তো ! পরে না আবার কোন সমস্যা হয় ! ধুর!! যা হয় হবে ! ঠিক যখন ও ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনই ওর সেলফোনের মেসেজ টোনটা বেজে উঠল ।

এই সময় আবার কে মেসেজ পাঠাল । একবার ভাবলো পরে দেখবে । কিন্তু আবার মনে হল না দেখেই যাই । ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো অপু মেসেজ পাঠিয়েছে । নিশিকয়েক মুহুর্ত তাকিয়েই থাকলো মেসেজের লাইন গুলো দিকে ।

আমি কালো পাঞ্জাবী পরেছি । তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো বলে । নিশি আর একটুও দাড়াল না । সিড়ি ঘরের দিকে দৌড় মাড়ল । আজ যে ওর বৃষ্টিতে ভেজার দিন !!! গল্পটা এখানে আছে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।