আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাগরিক সেবা পেতে পদে পদে নাজেহাল নগরবাসী

যেমন কর্ম তেমন ফল। আদনান সুমন। ঢাকা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কলেজ পরিবর্তনের আবেদন করবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রয়োজন নাগরিকত্বের সনদ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড অফিসে এসেছেন সনদ নিতে। ওয়ার্ড সচিব জানালেন, আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। সংযুক্তি করতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ছবি ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট। এসব যাচাই-বাছাই করা হবে। ভাগ্য ভালো হলে এক সপ্তাহে সনদ পাবেন, নইলে দুই সপ্তাহও লেগে যেতে পারে।

এ কথা শুনে হতবাক হলেন সুমন! ‘এখন কী হবে আমার? কালইতো এ আবেদন আমাকে জমা দিতে হবে। এখন কী করবো আমি?’ সচিব মিজানুর রহমান তাকে আশ্বস্থ করে বললেন, আপনি যদি আঞ্চলিক অফিসে সরাসরি যেতে পারেন, তাহলে আমি আপনার আবেদন ফরম যাচাই-বাছাই করে স্বাক্ষর করে দিতে পারি। আপনি চেষ্টা করে দেখুন সেখানে গিয়ে কিছু করতে পারেন কি। কলেজ ছাত্র সুমন সচিবের এ কথায় রাজি হলো। ফরম পূরণ করে ছেলেটি ছুটলো ফুলবাড়ীয়াস্ত নগর ভবনে।

কী হয়েছে ওই ছেলেটির ভাগ্যে। জন্ম সনদ পেয়েছিল কী? না পাইনি? তার কলেজ পরিবর্তনের আবেদন কী সে সঠিক সময়ে করতে পেলেছিল কী? তা অবশ্য পরে আর জানা হয়নি। চলতি সপ্তাহের রবিবারের একটি খন্ড চিত্র এটি। রাজধানী শহরে বসবাসকারী প্রায় দুই কোটি লোকের নানা প্রয়োজনে নাগরিকত্বের সনদ, জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশান সনদ প্রয়োজন হয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সময়ে চাওয়া মাত্রই তারা পেয়েছে এসব সেবা।

এখন তা পেতে নানা আইনি জটিলতা, সময় ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যার একটি খন্ড চিত্র উপরে তুলে ধরা হলো। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের চিত্রই এমন। সম্প্রতি নগরবাসীর সেবার চিত্র জানতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন করা হয়। সরেজমিনে পাওয়া গেছে ভোগান্তি, হয়রানি ও দুর্ভোগের নানা চিত্র।

সাবেক ৬০, ৬২ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড ঘুরে জানা গেছে, প্রতিদিন এলাকাবাসী নানা প্রয়োজনে কাউন্সিলর কার্যালয়ে আসছেন। ওয়ার্ড সচিবরা ২০০-৫০০ টাকার বিনিময়ে সনদ করে দিচ্ছেন। ২-৪ দিনের মধ্যে। টাকা ছাড়া কোন সনদই ইস্যু করা হচ্ছেনা। টাকা না দিলে ফরমই নিচ্ছেন না তারা।

কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আঞ্চলিক অফিসে যেতে তাদের অনেক খরচ হয়, এটা না দিলে তারা কোথায় পাবে খরচ। জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব মিজানুর রহমান বলেন, এ ওয়ার্ডে সরকারি ফিস ছাড়া অতিরিক্ত কোন টাকা নেওয়া হয়না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন আমরা সেভাবে কাজ করছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওয়ার্ড সচিব এ প্রসঙ্গে বলেন, নগর প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে ভোগান্তি কিছুটা কমাতে পারে। তারমতে, এ ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের সনদের কাজটি ওয়ার্ড সচিবের ওপর ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে।

এসব সনদে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত সিল ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তার মত। তিনি বলেন, এটা করা হলে ভোগান্তি অনেক কমবে। এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক মাহমুদ বলেন, আমরাতো সারাক্ষণ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। জরুরী প্রয়োজন ব্যতিত অফিস সময়ে বাইরে যায়না। সে ক্ষেত্রে খুব অসুবিধা হচ্ছে বলে মনে করিনা।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-২ এর নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, আমার অঞ্চলে কোন ধরনের সেবা পেতে কেউ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেনা। আমার দরজা সব সময় সকলের জন্য উন্মুক্ত। নাগরিকত্বের সনদের কাজ ওয়ার্ড সচিবদের দেওয়া যায় কিনা? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি অসুবিধার কিছু দেখিনা। তবে এটা উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। যোগাযোগ করা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান উল ইসলাম চৌধুরী বলেন, নাগরিকত্বের সদন যে কোন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা দিতে পারেন।

নগরবাসী যে কোন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তার কাছ থেকে সনদ নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে নগরবাসীকে ভোগান্তিতে পড়ার কিছু দেখিনাতো। আর ডিসিসি নিয়মের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.