আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৪৪ জন এক দিনের রিমান্ডে

চট্টগ্রামে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতাসহ অন্তত ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবারের এ ঘটনায় গতকাল তাঁদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ৪৪ জনকে এক দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। আসামিদের কাছ থেকে এত অল্প সময়ে হত্যার কারণ বের করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সাবেক সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলায় ৪৪ আসামির কেবল এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

এ ধরনের হত্যা মামলার জন্য এক দিন রিমান্ড মোটেই যথেষ্ট নয়। এত অল্প সময়ের মধ্যে আসামিদের কাছ থেকে জোড়া খুনের কারণ বের করা যাবে না। অথচ চুরির মামলার আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের একদিনের রিমান্ডে দেওয়া প্রসঙ্গে বর্তমান পিপি কামাল উদ্দিন বলেন, ‘রিমান্ড দেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। তবে তদন্ত কর্মকর্তা যদি আদালতে বলেন, এক দিনের রিমান্ডে তিনি কোনো তথ্য বের করতে পারেননি, আরও রিমান্ডের প্রয়োজন, তাহলে আদালত আবার রিমান্ড দিতে পারেন।


রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৯৬ লাখ টাকার দরপত্র জমা নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের সিআরবির সাত রাস্তার মোড়ে গত সোমবার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এ সময় আরমান হোসেন (৮) ও সাজু পালিত (২৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহিবুর রহমান ওই দিন বাদী হয়ে দণ্ডবিধির ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০২/৩৪ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক সাইফুল আলমসহ (লিমন) ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়।


জানা গেছে, দুই পক্ষের সংঘর্ষকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাজু চট্টগ্রাম নগরের এনায়েত বাজার ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য। তিনি একটি পরিবহন কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বন্ধুদের সঙ্গে তিনি সিআরবি এলাকায় গিয়েছিলেন। তাঁর বন্ধুরা যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হেলাল আকবর চৌধুরীর (বাবর) অনুসারী।
অন্যদিকে শিশু আরমান রিকশাচালক মোহাম্মদ সিদ্দিকের ছেলে।

নগরের কদমতলী এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়ত সে। পরিবারের সঙ্গে সে সিআরবি এলাকার একটি বস্তিতে থাকত। দুই পক্ষে সংঘর্ষ চলাকালে সে বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের ৯৬ লাখ টাকার দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল সোমবার। দরপত্র জমা দিতে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হেলাল আকবর এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উভয় পক্ষের অনুসারীরা রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবি ভবনের সামনে থেকে সাত রাস্তার মাথায় যান।

সেখানে দরপত্র জমা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগিবতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে হেলাল আকবরের পক্ষের শিবু প্রসাদ চৌধুরী অত্যাধুনিক নাইন এমএম বিদেশি পিস্তল থেকে পাঁচ-ছয়টি গুলি ছোড়েন। সাইফুলের পক্ষের জহির পিস্তল বের করে পাল্টা ছয়-সাতটি গুলি ছুড়লে দুই পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশু আরমান ঘটনাস্থলে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সাজুর মৃত্যু হয়।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের পর দুপুরে নগরের রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠসংলগ্ন মেলা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে ছাত্রলীগের নেতা সাইফুলসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে নগরের ডিসি হিল এলাকা থেকে হেলাল আকবরের অনুসারী আরও ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রাতে নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের গতকাল দুপুরে আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। শুনানির পর মহানগর হাকিম লুৎফুল মজিদ ৪৪ জনকে এক দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার এবং বাকি আটজনকে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।


সাইফুল ছাড়াও তাঁর পক্ষের গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের মধ্যে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের সহসভাপতি হাসমত আলী প্রমুখ রয়েছেন।
হুমকি: গতকাল কোতোয়ালি থানা থেকে আদালতে নেওয়ার সময় ছাত্রলীগের নেতা সাইফুল ও তাঁর অনুসারীরা সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আসামিদের থানাহাজত থেকে সারি বেঁধে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় সাংবাদিকেরা ছবি তুলছিলেন। এ সময় সাইফুলসহ অন্যরা বলতে থাকেন, সব মিডিয়া ভুয়া। তাঁরা বের হয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেবেন।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।