আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আপনাকে নয় আতিউর রহমান, ওদের দুজনকে---ইমতিয়ার শামীম

বাক স্বাধীনতা মানে সত্য বলার অধিকার। ২০০৯ সালের একটি দিন। তখনো এই এপ্রিল মাস; বৈশাখের তাপ প্রবাহ চারদিকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নিযুক্ত হলেন ড. আতিউর রহমান। বিভিন্ন মিডিয়ায় এ সংবাদের সঙ্গে সঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত জীবনীও প্রকাশিত হলো, প্রচারিত হলো।

যারা তাকে জানতেন না, তারা তার সেই সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ে আপ্লুত হলেন, আবেগান্তিত হলেন; আর যারা জানতেন, তারাও আবেগে উদ্বেলিত হলেন নতুন করে। ড. আতিউর রহমানের সাফল্য আপ্লুত করেনি, এমন মানুষ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। গরিব এক স্কুলছাত্র, পড়াশোনা আর পরীক্ষার ফির সঙ্কটে তার পাশে দাঁড়িয়েছিল তারই মতো অসংখ্য হতদরিদ্র মানুষÑ গ্রামের শত শত মানুষ বালক আতিউর রহমানের চোখ দিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল- বড় হওয়ার স্বপ্ন, লেখাপড়া শেখার স্বপ্ন, দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার স্বপ্ন। আতিউর রহমান কেবল একার স্বপ্নে বড় হননি, তিনি বড় হয়েছেন হতদরিদ্র মানুষের স্বপ্নের মধ্য দিয়েও। হাটুরেদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তার লেখাপড়া করার সেই সংগ্রামগাথা দেশের সব শিক্ষিত মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রকাশের মাধ্যমেÑ তিনি পরিণত হয়েছিলেন এদেশের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের, তাদের হতদরিদ্র পিতামাতার স্বপ্নের আইকনে।

অর্থনীতিতে লেখাপড়া করেছেন, দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রামের কষ্ট বোঝেন, এ দেশের গ্রামের দরিদ্র মানুষের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা জানেন এমন একজন মানুষকে দেশের নীতিনির্ধারক সর্বোচ্চ ব্যাংকটির কর্ণধার হিসেবে দেখতে পেয়ে আমাদের সবার বুক গর্বে ভরে গিয়েছিল। তারপর দুবছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। যাকে বলা হয় মধুচন্দ্রিমার কাল, তা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন, আতিউর রহমান, আপনার কাছে কি আমরা প্রশ্ন করতে পারি, আপনি আমাদের সেই স্বপ্ন, আবেগ আর গর্বের কতটুকু মূল্য দিয়েছেন? এ প্রশ্ন অনেক আগে থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক গৃহীত একটি সিদ্ধান্তের পর তা দানা বেঁধে উঠেছে।

শেয়ারবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পর্কে সাধারণ জনগণের যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছিল, রাজনৈতিক বিবেচনায় ছয়টি নতুন ব্যাংক স্থাপনের সিদ্ধান্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই দৃষ্টিভঙ্গিকেই পাকাপোক্ত ভিত্তি দিল। এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কেবল প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেনি, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে জনমনে যে আস্থা ও বিশ্বাস ছিল, তাতেও চিড় ধরিয়েছে- বিশেষত চিড় ধরিয়েছে এ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে এ প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কর্ণধারের নিষ্ঠাসংক্রান্ত ধারণায়। এ কথা ঠিক যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একটি প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে একজন ব্যক্তির পক্ষে বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। কিন্তু এটিও সত্য, সব ব্যক্তির ক্ষেত্রে না হলেও কোনো কোনো ব্যক্তির জীবনে এমন সময় আসে, যখন তার ভূমিকা তাকে কেবল উজ্জ্বলই করে তোলে না, ওই সময়কেও ইতিহাসে উজ্জ্বল করে রাখে। ফলে সময়ের সেই উজ্জ্বলতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিও উজ্জ্বল হয়ে, অমলিন হয়ে থাকেন।

প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থা বা কাঠামো প্রতিকূলে থাকার পরও ব্যক্তি তার সমসময়ের ইতিহাসকে উজ্জ্বল করে তোলার এই ক্ষমতা পায় তাকে ঘিরে জনমনে যে আস্থা রয়েছে, সেই আস্থার প্রতি বিশ্বাস রাখার মধ্য দিয়ে, সেই আস্থাকে সম্মান করার প্রতিজ্ঞায় অবিচল থাকার মধ্য দিয়ে। এতসব কথা বলার কারণ, আতিউর রহমানের প্রতি জনগণের আস্থা ছিল, জনগণের আশাহত চোখ খানিকটা হলেও আশাšি^ত হয়ে উঠেছিল রাখাল বালকের উত্থানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু আতিউর রহমান পারেননি বাংলাদেশ ব্যাংককে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে, পারেননি ইতিহাসের তেমন ব্যক্তি হয়ে উঠতে, যিনি ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা দেখাতে পারেন গড্ডলিকা প্রবাহের বাইরে দাঁড়িয়েÑ বরং নিজেই হারিয়ে গেছেন রাজনৈতিক প্রভাবের চোরাগলিতে। দুঃখজনক হলেও সত্য, জনগণের আস্থাকে তিনি পারেননি সম্মান দেখাতে, পারেননি জনগণের আস্থার ওপর বিশ্বাস রাখতে এবং নতিস্বীকার করেছেন রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ডের সর্বশেষ বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরো ছয়টি ব্যাংক।

আপাতদৃষ্টিতে বিধিসম্মত প্রক্রিয়ায় অনুমোদন করা হলেও এগুলো আসলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফসল। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্পষ্টকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘নতুন ব্যাংক স্থাপন করা সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। ’ সেদিনই জনগণ বুঝে গেছে, প্রয়োজন হোক বা না হোক, নতুন ব্যাংক অবশ্যই হবে। সেই সিদ্ধান্তেরই বাস্তবায়ন ঘটল গত ২১ চৈত্র (৫ এপ্রিল) বুধবারে ও ২৫ চৈত্র (৯ এপ্রিল) রবিবারে। একদিন অনুমোদন মিলল তিনটি এনআরবি ব্যাংকের- আরেক দিন অনুমোদন দেয়া হলো ছয়টি নতুন বেসরকারি ব্যাংকের।

বাংলাদেশে এর আগে তফসিলি ব্যাংক ছিল মোট ৪৭টি, এই ব্যাংকগুলো তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোট তফসিলি ব্যাংকের বর্তমান সংখ্যা দাঁড়াল ৫৬টি। আমাদের অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন, নতুন কোনো ব্যাংকের প্রয়োজন নেই, নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অর্থ তারল্য সঙ্কট তৈরি হওয়া এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নতুন করে স্থবিরতা তৈরি করা। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে পরিচালনা পর্ষদ নতুন এই ব্যাংকগুলোর অনুমোদন দিল, সেই পর্ষদই কয়েক মাস আগে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বেশ শক্ত কণ্ঠেই জানিয়ে দিয়ে এসেছিল, নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া মোটেও যৌক্তিক হবে না। কিন্তু খুব বেশি দিন পার হয়নি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই একই পরিচালনা পরিষদই কি না এখন আবার নতুন ব্যাংক স্থাপনের পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরছে, কী করে লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া বর্ণনা করছে! কতটুকু রাজনৈতিক চাপের মধ্যে পড়লে অথবা লোভে ডুবলে এ রকম হতে পারে! বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের এই বৈঠকে বিধিসম্মতভাবেই সভাপতিত্ব করেছেন আতিউর রহমান! দু-দশজন ব্যক্তির স্বার্থে এভাবে জনগণের স্বার্থকে খাটো করে দেখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা বোধহয় কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব! আর এই দু-দশজন ব্যক্তির মধ্যে যাদের নাম দেখা যাচ্ছে তারাও নেহাত ফেলনা নন-পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি সেলফ এমপ্লয়মেন্ট ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছিলেন প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী ওহেদুল হক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের জন্য আবেদন করেছিলেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান, রয়েছে ফার্মার্স ব্যাংকের মহীউদ্দীন খান আলমগীর। তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের একটু-আধটু লেখাপড়া জানা মানুষদের কাছে সুপরিচিতÑ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের এই সরবতা থেকে চটজলদি আমাদের মনে পড়ে যায় দাসব্যবসার কথা।

পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যবসাগুলোর একটি এই দাসব্যবসা। কিন্তু সেই দাসব্যবসাও একদা এত লাভজনক ছিল যে, দাসব্যবসায়ীর তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন, দার্শনিক জন লক, কবি আলেকজান্ডার পোপ প্রমুখ। হ্যাঁ, তাদেরও যুক্তি ছিল- কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধীদের থলিতেই অনেক বেশি যুক্তি থাকে এবং এসব পথিকৃৎ ব্যক্তিও সে রকম যুক্তি দেখিয়ে, নশ্বর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার প্রয়োজনের যুক্তি দেখিয়ে ওই ব্যবসায় নেমেছিলেন। আর সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্স তো কুখ্যাত জ্যামাইকান গভর্নর এডওয়ার্ড আয়ারের সাফাইকারী ছিলেনÑ যে আয়ার নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল ৪০০ দাস-কৃষককে। ইতিহাসে তারা এখনো একেকটি জ্বলজ্বলে নাম, পথিকৃৎ নামÑ কিন্তু তার মানে এই নয় যে, ইতিহাস ভুলে গেছে তাদের ওই ঘৃণিত ভূমিকার কথা; তার মানে এই নয় যে, তাদের মহীয়ান করে তোলার লক্ষ্যে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হয়েছে তাদের ওই ভূমিকার অধ্যায়।

দাসব্যবসার মতো ব্যাংকব্যবসা অবশ্য অত লাভজনক নয়Ñ অত ব্যাপ্তও নয়। কিন্তু তারপরও ব্যাংকব্যবসায় নাম লেখানোর মতো নমস্য বুদ্ধিজীবীর ঘাটতি পড়েনি বাংলাদেশে। সব ব্যবসা তো তারা করতে পারেন না, তাদের চাই ভদ্রস্থ এমন কোনো ব্যবসা, যাতে উদ্যোক্তাদের মতো অত মাথা খাটাতে হবে না, কষ্ট করে পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে না, আবার সাধারণ কর্মীদের মতো অত দৌড়াদৌড়ি করারও প্রয়োজন হবে না। আবার সমাজের দশজন মানুষ সমীহও করবে। সব মিলিয়ে ব্যাংকব্যবসাকেই এ দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে তাদের কাছে।

এ ব্যবসায় যেমন রাজনৈতিক সম্মান ও সুবিধা মিলবে, ঠিক তেমনি মিলবে অর্থনৈতিক নানা সুবিধা। এক ঢিলে কয়েক পাখি মারার এমন সুবর্ণ সুযোগ আর কোথায় আছে? কোন ব্যবসায় আছে? ব্যাংকব্যবসা সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতাদের জন্য তা একদিকে তৈরি করে দিয়েছে কইয়ের তেলে কই ভেজে খাওয়ার সুযোগ, অন্যদিকে তা সুযোগ করে দিয়েছে দলীয় তহবিলের আয়তন আরো সম্প্রসারণ করার। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যানের মধ্য দিয়ে চেষ্টা করেছে, নতুন ব্যাংক অনুমোদন করার যৌক্তিকতা প্রমাণের। কিন্তু এসব গম্ভীর যৌক্তিকতার চেয়েও সাদামাটা সত্য হলো, সরকারি দল দলীয় তহবিলের আয়তন বাড়ানোর একটি ক্ষেত্র তৈরি করে নিচ্ছে। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী-ইবা হতে পারে, রাজনৈতিক ব্যাংক স্থাপনের সর্বশেষ সরকারি সিদ্ধান্তের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

ব্যাংকগুলো আরো বেশি বেশি প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে গ্রাহকসেবার মান বাড়াবে- এটা নেহাতই খেলো যুক্তি। এ যুক্তিও ধোপে টেকে না যে, পুরনো ও দুর্বল একের অধিক ব্যাংককে একত্রিত কিংবা পুনর্গঠন করা। আর মুক্তবাজার প্রতিযোগিতায় নতুন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পুরনো ও দুর্বল এসব ব্যাংক যে ব্যাংকিং খাত থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবে, এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই। নির্মম সত্য হলো, সত্যিকারের পুঁজি উদ্যোক্তা হওয়ার উপযোগী মনমানসিকতা নেই বলেই এসব উদ্যোক্তা রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। আর নমস্য এসব ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আমাদের এককালের রাখাল বালক, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান।

যিনি একদা ফতুয়া পরে অফিসে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসাধন্য হয়েছিলেন এবং দেশের সরকারি কর্মকর্তারাসহ সবার ওপর নেমে এসেছিল এ রকম পোশাক পরে একদিকে দেশজ ঐতিহ্য প্রকাশের এবং অন্যদিকে বিদ্যুৎ খরচ বাঁচানোর, যিনি একদা প্রশংসিত হয়েছিলেন কৃষকদের মাত্র ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক-অ্যাকাউন্ট খোলার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে কিংবা এখনো প্রশংসিত কৃষিঋণ বিতরণসহ কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় দৃষ্টি রাখার কারণে, তার সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এভাবে রাজনৈতিক ব্যাংক স্থাপনের অনুমতি আসবে এটি ছিল মানুষের কাছে অভাবিত, অনাকাক্সিক্ষত। আতিউর রহমান নিশ্চয়ই বোঝেন, এসব ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক খাতের পরিধি আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা দুর্বলতা অনেক আগে থেকেই রয়েছে এবং এর মধ্যে পরিস্থিতির এমন কোনো উন্নতি হয়নি যে বলা যাবে, এই দুর্বলতা বাংলাদেশ ব্যাংক কাটিয়ে উঠছে। বরং নতুন ব্যাংকগুলোর পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক খুঁটির জোর এত বেশি যে, দেখা যাবে এসব ব্যাংক বিধিবহির্ভূত বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে জড়িয়ে পড়েছে। সেসব সামাল দেয়ার ক্ষমতা কি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আছে? দুঃখজনক হলেও সত্য, বেশিরভাগ বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকই মনে করেন, এ রকম ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই।

নতুন ব্যাংক অনুমোদনসংক্রান্ত বৈঠকগুলোতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় বিভিন্ন বিতর্ক হয়েছে এবং এও সবার জানা আছে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন পরিচালনা পর্ষদের দুজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এদের একজন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা, আরেকজন মোহাম্মদ তারেক। আমাদের সান্তনা, যে ভূমিকা আমরা খোদ গভর্নরের কাছ থেকেই দেখতে চেয়েছিলাম, তা তিনি দেখাতে না পারলেও অন্তত দুজন প্রাজ্ঞ সদস্য দেখিয়েছেন। আতিউর রহমানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মানুষকে আশাহত করেছে, হাতেগোনা মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে এমন একটি গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মাসুল আমাদের আরো অনেকদিন দিতে হবে। তারপরও মানুষ আশায় বাঁচে- আমাদের জন্য সেই আশাময়তার দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন সনৎকুমার সাহা।

কয়েক বছর আগে সাধারণ জনগণ আপনাকে অভিবাদন জানিয়েছিল, আতিউর রহমান। এবার আপনাকে নয়, অভিবাদন জানাচ্ছে তাদের দুজনকে। সুত্রঃ- সাপ্তাহিক ২০০০ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.