আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খিলগাঁওয়ে বাসে আগুন: বদর আলী কি জানতেন ঘুমের মধ্যেই তার দেহ পুড়বে আগুনে?

Click This Link (এহন হরতাল আলারা কি আমার সংসার চালায়ে দেবেনে? ও আল্লাহ, যারগে জন্নি আমি শেষবারের মতো আমার স্বামীর মুখখান দেখতি পাল্লাম না, যাগে জন্নি আমার ছেলে-মেয়েরা তাগে বাপের মুখটা দেখতি পাল্লো না, সেই হরতাল আলাগে তুমি বিচার করো’—এ কথা বলেই জ্ঞান হারালেন গতকাল শনিবার রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ঈগল পরিবহনের চালক বদর আলী বেগের (৪৮) স্ত্রী হাওয়া বেগম (৪২)। (আজকের কাগজের লেখা)) খিলগাঁওয়ে বাসে আগুন: বদর আলী কি জানতেন ঘুমের মধ্যেই তার দেহ পুড়বে আগুনে? আসলাম রহমান : খুলনা থেকে সারারাত গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় ফিরে খুবই ক্লান্ত ছিলেন গাড়িচালক বদর আলী বেগ (৪০)। স্ত্রী হাওয়া বেগমকে ফোন করে বলেছিলেন, আমি এখন খুবই ক্লান্ত। বাসের মধ্যে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ঘুমাবো। ঘুম ভাঙলে তোমাকে ফোন করবো।

কিন' কেউ কি জানতেন, এই ঘুমই তার শেষ ঘুম হবে? গতকাল হরতালকে কেন্দ্র করে বাসে দেয়া আগুনে পুড়ে তার মৃত্যু হয়। বদর আলীর এই নিষ্ঠুর ও নির্মম মৃত্যুতে খুলনার ফুলতলা থানার ডামুডা পূর্বপাড়া গ্রামের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। স্বামীর শেষ কথাগুলো বারবার বলে আহাজারি করছেন আর মূর্ছা যাচ্ছেন তার স্ত্রী হাওয়া বেগম। তার কান্না থামাতে পারছে না কেউই। এ কথা টেলিফোনে জানিয়েছেন বদর আলীর বোন ফুলতলা উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামসুন্নাহার কুমকুম।

তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, গত শুক্রবার সারাদিন বদর আলী বাড়িতেই ছিলেন। রাতে ঈগল পরিবহনের ওই বাসে যাত্রী নিয়ে তিনি ঢাকায় যান। এরপর গতকাল শনিবার দুপুর ১২টার দিকে স্ত্রী হাওয়াকে ফোন করে পরিবারের খবর নেন। তিনি স্ত্রীকে বলেছিলেন, আমি খুবই ক্লান্ত, ঘুমাবো। ঘুৃমের মাঝে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করো না।

স্বামীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে, তাই পরিবারের পৰ থেকে কেউ তাকে আর ফোন করেনি। কিন' ঘুমের মধ্যেই বদর আলীর এভাবে মৃত্যু হবে কে জানতো? বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে সব শেষ হয়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে হরতালকারীদের দেয়া আগুনে বদর আলী মারা যান। শামসুন্নাহার কুমকুম অভিযোগের সুরে বলেন, হরতালের কারণে এভাবে আর কতোজনকে আগুনে পুড়ে লাশ হতে হবে? আর কতো মার বুক খালি হবে? বোন তার ভাইকে হারাবে? এসব নোংরা রাজনীতির খেলা কবে শেষ হবে? বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে বদর আলীর লাশ শনাক্ত করেন শামসুন্নাহার কুমকুমের স্বামী ও বদর আলীর দুলাভাই আবুল কালাম আজাদ স্বপন।

তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, দুপুরে স্ত্রী হাওয়ার সঙ্গে শেষ কথা হয় বদর আলীর। এরপর আর তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে পাচ্ছিল না তার পরিবার। পরে খবর পেয়ে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে গিয়ে বদর আলীর বীভৎস লাশ শনাক্ত করি। লাশ এমনভাবে পুড়ে গেছে যে, চেহারা চেনার উপায় নেই। বদর আলী খুবই ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির লোক ছিলেন।

গ্রামে বা পরিবহন লাইনে কারো সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে দেখিনি -বলেন তিনি। বদর আলীর বোন বলেন, নিহত বদর আলী দরিদ্র পরিবারে মানুষ। পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপার্জনৰম। স্ত্রী হাওয়া কিডনি রোগী। ৩ বার তার অপারেশন হয়েছে।

বড় ছেলে শামীমও (২০) দীর্ঘদিন ধরে অসুস'। বড় মেয়ে আশাকে (১৭) বিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ছোট মেয়ে লিজা (১৩) বাড়িতেই থাকে। গাড়ি চালিয়েই কোনো মতে সংসার চালাতেন বদর আলী। এখন এই ৪ সদস্যের পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে, সরকার না বিরোধী দল -প্রশ্ন তোলেন তিনি।

শামসুন্নাহার বলেন, আমাদের দাবি, সরকার যেন বদর আলীর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ায়। বদর আলীর অসুস' স্ত্রী-ছেলের যেন বিনা চিকিৎসায় মরতে না হয়, সেই ব্যবস'া যেন সরকার করে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.