আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খিলগাঁওয়ে বখাটের উত্পাতে কিশোরীর আত্মহত্যা

ইতিহাসের পেছনে ছুটি তার ভেতরটা দেখবার আশায়

বখাটে যুবকের উত্পাতে অতিষ্ঠ হয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে স্কুলছাত্রী উম্মে কুলসুম ইলোরা (১৪)। এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল বিকালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মধ্য নন্দীপাড়া এলাকায়। নিহত ইলোরা দক্ষিণ বনশ্রী মডেল স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। ঘটনার পর বখাটে যুবক রেজাউল পলাতক। পুলিশ জানায়, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

নিহত ইলোরার মা হালিমা বেগম জানান, দুপুর ১টার দিকে স্কুল থেকে বাসায় আসে তার মেয়ে। তিনি নিজেই মেয়েকে স্কুল থেকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সবার অজান্তে ঘরের একটি কক্ষে কীটনাশক পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে ইলোরা। অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকরা মৃত ঘোষণা করেন।

চিকিত্সকরা কিশোরী মেয়েটিকে মৃত ঘোষণার পর আত্মীয়স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়ের বুকে মাথা রেখে চিত্কার করে কেঁদে মা বলেছিলেন, ওরা আমার বুকের ধনকে বাঁচতে দিল না। এখন আমার কি উপায় হবে। কে আমাকে মা বলে ডাকবে? তোরা আমার হৃদয়ের টুকরা ইলোরাকে ফিরিয়ে দে। স্বজনের কান্নায় তখন হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

মা-বাবা ও ভাইবোনের বুক ফাটা কান্না দেখে উপস্থিত অনেকের চোখ সিক্ত হয়। আত্মীয়স্বজন জানান, এলাকার বখাটে রেজাউল দীর্ঘদিন ধরে ইলোরাকে উত্পাত করত। ইলোরা এবং রেজাউলের বাসা একই মহল্লায়। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ইলোরাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় রেজাউল। স্কুলে যাওয়ার সময় হলেই রাস্তায় বন্ধুদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত সে।

হেটে স্কুলে যেত ইলোরা। বিষয়টি ইলোরা প্রথমে বাবা-মাকে জানায়নি। পরে বাবা-মা জানার পর স্কুলে যাওয়া-আসার জন্য ভ্যানের ব্যবস্থা করে দেয়। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিল, ভ্যানে করে গেলে পথে ভ্যানগাড়ি থামিয়ে বখাটেরা আর ডিস্টার্ব করার সুযোগ পাবে না। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

ভ্যানে স্কুলে যাওয়ার পথে চালককে হুমকি দিয়ে ভ্যান থামাতে বাধ্য করে রেজাউল। ভ্যান থামিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ত্যক্তবিরক্ত মেয়েটির স্কুলে যেতেই সমস্যা সৃষ্টি হয়। একা স্কুলে পাঠাতেও অস্বস্তিবোধ করে তার পরিবার। তিনি বলেন, ইলোরার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে সারাক্ষণ মিসকল দিত রেজাউল।

বিভিন্ন নম্বর থেকে সে মিসকল দিয়ে অতিষ্ঠ করে তুলছিল তাকে। পরে মেয়েকেও আমরা শাসিয়ে দেই। হালিমা বলেন, বখাটেদের কিছু করতে না পেরে মেয়েকেই আমরা বিভিন্ন সময় শাসাতাম। কিন্তু ইলোরা বাবা-মাকে বলেছিল বখাটে রেজাউলের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। রেজাউল জোর করে তার সঙ্গে প্রেম করতে চায়।

তার প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় রাস্তাঘাটে সে বন্ধুদের নিয়ে উত্পাত করত। বাবা-মা বিরক্ত হয়ে মেয়ের কাছ থেকে মোবাইল ফোনটিও কেড়ে নেয়। মেয়েকে মোবাইল ব্যবহারে বিরত রেখেও শান্তিপূর্ণভাবে লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল পরিবার। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। হালিমা আরও বলেন, ১৫ দিন ধরে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমি স্কুলে যেতাম।

সকালে ওকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে চলে আসতাম। স্কুল ছুটির আগে আমি সঙ্গে করে নিয়ে আসতাম। তিনি অভিযোগ করেন, মেয়েকে আমি সঙ্গে করে স্কুলে নেয়ায় রেজাউল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে বিভিন্ন সময় আমার সামনেই মেয়ে সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে শিস দেয়।

হালিমা বলেন, নিজের চোখে এ দৃশ্য দেখার পর সিদ্ধান্ত নেই রেজাউলের পরিবারকে বিষয়টি জানানো উচিত। কিছু দিন আগে নন্দীপাড়া এলাকায় রেজাউলের বাসায় গিয়ে তার বাবা-মার কাছে ছেলের ব্যাপারে অভিযোগ দিয়ে আসি। এতেও কাজ হয়নি। গত শুক্রবার স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে নিয়ে রেজাউলের বাসায় গিয়ে নালিশ দিয়ে আসি। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়।

রেজাউলকে শাসানোর কারণে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেয় সে। বখাটেদের উত্পাত ও পরিবারের চাপে ইলোরাকে কয়েকদিন ধরে বিষণ্ন দেখাচ্ছিল। ভয়ে সে স্কুলে যেতে চাইত না। কিন্তু সে যে নিজের জীবন বিসর্জন দেবে তা কেউ ভাবেননি। হালিমা বলেন, গতকাল দুপুরে ইলোরাকে নিয়ে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার সময় রেজাউল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল।

একপর্যায়ে সে মেয়ের সামনে আমাকে হুমকি দেয় ও অশালীন কথা বলে। তার বিরুদ্ধে বাসায় নালিশ দেয়ায় সে ইলোরার ক্ষতি করার হুমকি দেয়। মায়ের সামনে বখাটেদের এ ধরনের হুমকি ইলোরা সহ্য করতে পারেনি। মায়ের দাবি, ওই বখাটে যুবকের কারণেই তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে (এদের রোখবার কি কেও নেই, নকি ইহাই প্রগতি)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.