আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষন্ন বিকেলের মেয়ে !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! খাদটা বেশ গভীর । তবে একদম খাড়া না । পৃথিশা এক দৃষ্টিতে খাদতার দিকে তাকিয়ে আছে । মাঝে মাঝে ও এমনটা করে । গভীর এই খাদগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে ।

নিচে কি যেন খোজে ! কি খোজে তা ও নিজেই জানে না ! -আপনি কি লাফ দেওয়ার কথা ভাবছেন ? পৃথিশা বেশ চমকালো । খাদের এই দিকটা সাধারনত কেউ আসে । পৃথিশা একা একাই ঘুড়ে বেড়ায় । আজও একা একা ঘুড়ছিল । তারপর এই খাদটার কাছে এসে তাকিয়ে ছিল নিচে ।

এমন সময় লোকটা এসে কথাটা বলল । পৃথিশা একটু ভয়ও পেল । কে এই লোকটা ? আগে তো কখনও দেখি নি । লোকটা না বলে ছেলেটা বলতে ভাল হয় । পঁচিশ তিরিশের বেশি বয়স হবে বলে মনে হয় না ।

ছেলেটা আবার বলল -আপনি কি নিচে লাফিয়ে পড়ার কথা চিন্তা করছেন ? পৃথিশা সত্যিই নিচে লাফিয়ে পড়ার কথা চিন্তা করছিল । অবশ্য প্রতিদিনই করে । কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে । তবে ওর বিশ্বাস একদিন ও আর সিদ্ধান্তটা বদলাবে না । ঠিকই লাফিয়ে পড়বে নিচে ।

-আপনার কেন মনে হল যে আমি নিচে লাফিয়ে পড়বো ? ছেলেটা হাসল । ছেলেটার হাসি সুন্দর । কিন্তু চোখ দুটো বড় তীক্ষ । এই চোখের সামনে মিথ্যা বলাটা বেশ কষ্টের । -না এমনি বললাম আর কি ! আপনি যেভাবে নিচে তাকিয়ে ছিলেন তাতে যে কারো এই কথাই মনে হবে ।

পৃথিশা এবার একটু বিরক্ত হল । কিন্তু কিছু বলল না । ছেলেটা আবার বলল -তবে একটা কথা । এখান থেকে লাফ দিলে মরার সম্ভাবনা কিন্তু অনেক কম । পৃথিশা এবারও কোন কথা না বলে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকলো ।

খানিকটা বোঝার চেষ্টা করল যে ছেলেটা কি ওর সাথে ফান করছে কিনা ! -দেখুন যদি আপনি এখান থেকে লাফিয়ে পড়েন তাহলে কিন্তু গড়িয়ে পড়বেন । কারন খাদ টা কিন্তু খুব বেশি খাড়া না । ঢালু । বড় জোড় আপনার হাত পা ভাঙ্গতে পারে । পৃথিশা নিজেও জানে এটা ।

ছেলেটা সত্যি কথাই বলছে । খাদ টা অতটা খাড়া না । -তবে আপনি চাইলে আমি একটা খাড়া আর গভীর খাদের সন্ধান দিতে পারি । যেখান থেকে লাফ দিলে একেবারে সোজাসুজি উপরে যাবেন । দিবো সন্ধান ? পৃথিশার এবার মনে হল যে ছেলেটা ফান করছে ।

-আপনি কি আমার সাথে ফান করছেন ? -আশ্চর্য আমি ফান করবো কেন ? আমি তো আপনার উপকার করছি । -আমি কি বলেছি উপকার করতে ? আমার চাই না আপনার উপকার । ছেলেটা হাসল । বলল -পৃথিশা, জীবনের সব কিছু কি আপনার চাওয়ার মত হবে ? আপনি যা চান তাই যদি হত তাহলে আপনার জীবনটা এমন হত ? তাহলে কি আপনি এভাবে জীবন থেকে পালিয়ে বেড়াতেন ? পৃথিশা ছোটখাটো ধাক্কার মত খেল । এই দুই লাইনই বলে দিচ্ছে ছেলেটা ওকে চেনে ।

ওর সম্মন্ধে জানে । এমন কি ওর নাম টাও জানে । কিন্তু পৃথিশা তো ছেলেটাকে চিনতে পারছে না । -আপনি আমার নাম কিভাবে জানেন ? ছেলেটা হাসল । বলল -ঐ সামনে একটা গাছের গুড়ির আছে ।

আসুন ওখানে বসে কথা বলি । আর ভয় নেই আমি আপনার উপকার করতে এসেছি ক্ষতি করতে না । সত্যি সামনে একটা গাছের গুড়ির মত আছে । পৃথিশা ওখানটাতে গিয়ে বসল । ছেলেটা ওর পিছন পিছন গিয়ে বসল ।

-এবার বলুন আমার নাম কিভাবে জানেন ? ছেলেটা বলল -অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নের জবাবের চেয়ে কিছু প্রয়োজনীয় কথা শুনুন । -যেমন ? -আচ্ছা আপনি যে প্রায়ই এখানে আসেন, সুইসাইড করার জন্য, কেন আসেন ? -আপনি যখন প্রশ্নটা জানেন আমার মনে হয় উত্তরটাও আপনার জানা । -হুম জানি । তবুও আপনার মুখে শুনতে চাই । একজন মানুষের জন্য কি আপনার আশেপাশের মানুষ গুলোকে কষ্ট দেওয়া কি ঠিক ? আপনি যদি এখান লাফ মারেন তাহলে তাদের কি হবে একবার ভেবেছেন ? আপনার বাবার কি হবে ? বাবার কথা উঠতেই পৃথিশার মুখটা কেমন যেন বদলে উঠলো ।

বিষন্নতার ভাব থেকে সেখানে কেমন একটা রাগ ফুটে উঠল । -আপনি কি জানেন বা জানেন আমি জানি না কিন্তু আমার এই অবস্থার জন্য আমার বাবাই দায়ী । কেবল উনি দায়ী । পৃথিশার খুব রাগ উঠে যায় । ও আবার বলল -আপনার সাথে যথেষ্ট কথা হয়ে ।

আমি এখন উঠবো । আপনার সাথে কথা বলতে আর ভাল লাগছে না । -আরে আরে রাগছেন কেন ? আপনার রাগ হয় এমন কোন কিছুতো আমি করছি না । আমি কেবল আপনার সাথে কথা বলছি । আপনি আপনার কথা গুলো শেয়ার করুন দেখবেন ভাল লাগবে ।

সত্যি ভাল লাগবে । এমনও হতে পারে আপনার সব কষ্ট গুলো আজ শেষ হয়ে যেতে পারে । যদি আপনি চান ! পৃথিশা ঠিক বুঝতে পারল না ছেলেটা কি বলতে চাইছে । তবে উঠল না । ছেলেটা বলল -মৃত্যু খুব সহজ একটা সমাধান ।

সব কিছু থেকে পালিয়ে যাওয়া । কিন্তু একবারও কি ভেবেছেন যারা আপনাকে ভালবাসে তাদের কি হবে ? আপনার এই চলে যাওয়া তারা কিভাবে নিবে । আপনার বাবা কিভাবে নিবে ? পৃথিশা বলল -আপনি আমার বাবাকে কিভাবে চিনেন ? ছেলেটা আবার হাসল । বলল -আমি অনেক কিছু জানি । -ওয়েল, তাহলে নিশ্চই এটাও জানেন যে আজ আমার এই অবস্থার জন্য আমার বাবা দায়ী ।

-কথাটা ঠিক বললেন না আপনি । -ঠিক বলি নি ? পৃথিশা কেন যেন রেগে ওঠে । -আপনি আমার থেকে বেশি জানেন ? বাবা যদি জোর করে ঐ জানোয়ারটার সাথে আমার বিয়ে না দিত তাহলে আজ এমনটা কোন দিন হত না । ছেলেটা বলল -আপনার কি মনে হয় যে প্রিতমের সাথে আপনার বিয়ে হলে আপনি খুব সুখি হতেন ? মিস পৃথিশা সুখ বড় দুর্লভ জিনিস । সবাই তার পিছনে দৌড়ায় কিন্তু নাগাল পায় না ।

পৃথিশা কোন কথা বলল না । আরো একবার অবাক হল । ষেলেটা প্রিতমের কথাও জানে ! কিন্তু কিভাবে ? বাবার পরিচিত কেউ ? এতো কিছু কিভাবে জানে ? ছেলেটার কথা ভুল বলা যাচ্ছে না । আসলেই ওর কপালে বোধহয় সুখ নামক জিনিসটা নেই । ছেলেটা হঠাত্‍ বলল -প্রিতম কিন্তু করতো না যখন আপনার বিয়ে হয় ।

কেবল কবিতা লিখতো । এমন একটা ভ্যাগাবন্ডের সাথে কোন বাবাই তার মেয়ে বিয়ে দেবে না । আপনি আপনার বাবার জায়গায় হলে ঠিক একই কাজটা করতেন । -তাইতো একটা জানোয়ারের হাতে আমাকে তুলে দিয়েছিল । কোর্ট টাই পরা জানোয়ার ।

-মানুষের বাইরে থেকে কি ভেতরের দিকটা বোঝা যায় ? মোমেন সব দিক দিয়ে আপনার যোগ্য ছিল । শিক্ষিত । ভাল জব । ভাল স্যালারী । ভাল বাড়ি ।

এমন ছেলে কে হাত ছাড়া করবে বলুন ? ছেলেটা কিছুক্ষন চুপ করে থাকল । এবার পৃথিশা আর অবাক হল না । প্রিতমের কথা যখন জানে মোমেনের কথাও জানবে, এমন ধারনা ও করেছিল । ছেলেটা বলল -কিন্তু মোমেন যে এমন করবে সেটা আপনার বাবা বুঝতে পারেন নি । পারলে কখনই সে এমন কাজ কখনই করতো না ।

আপনি কি জানা আপনার বাবা কি আপনার এই অবস্থার জন্য সব সময় নিজেকে দোষারোপ করেন ! কি পরিমান কষ্ট তিনি পান নিজে নিজে ! পৃথিশা এবারও কোন কথা বলল না । ভাবতে লাগল এই ছেলেটা এতো কিছু জানে কিভাবে ? -পৃথিশা বাবা মা ছেলেমেয়েদের সব ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেন নির্দ্বিধায় । আপনার কি উচিত্‍ না আপনার বাবার এই সামান্য ভুল টুকা ক্ষমা করে দেওয়া । আপনি তাকে এমন একটা ভুলের জন্য তার উপর রেগে আছেন যেটা সে ইচ্ছা করে নি । যার জন্য তাকে কিছুতেই দোষারোপ করা যাবে না ।

পৃথিশা ছেলেটার দিকে তাকিয়েই থাকল । ছেলেটার প্রতিটা কথাই ঠিক । কি চমৎ‍কার যুক্তি দিয়ে ওকে বুঝিয়ে দিল যে ও যা করছে ঠিক করছে না । -চলুন যাওয়া যাক । সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ।

বাড়ির কাছাকাছি আসতে ছেলেটা বলল -আমার কথা গুলো আজ একটু ভেবে দেখবেন । যদি মনে হয় আমি ভুল বলেছি তাহলে কালকে আমি ঐ খাড়া খাঁদ টার কাছে আমি আপনাকে নিয়ে যাবো । যদি চান পেছন থেকে ধাক্কাও দিতে পারি । ছেলেটা হাসল । -আজ যাই ? এমন ভাবে যাই বলল যেন অনুমুতি না দিলে যাবে না ।

-আপনার নামটা বললেন না ! ছেলেটা আবার হাসল । ছেলেটার হাসি আসলেই সুন্দর । কাল তো দেখা হচ্ছে ! কাল না হয় বলি । এই বলে ছেলেটা পেছন ঘুরে হাটা দিল । পৃথিশা চুপচাপ ছেলেটার চলে যাওয়া টা দেখলো ।

(হয়তো চলবে) এখানে আছে গল্পটা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।