আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কলম্বোতে বর্ষণমুখর এক বৈশাখী সঙ্গীত সন্ধ্যা।

বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ। প্রবাস জীবনের তিক্ত সময়ে কলম্বোতে কোন ভাল অনুষ্ঠানে যোগ দেবার মতো ভাগ্য আমার সচরাচর কখনোই হয়না। কেননা, আমি কোন উচু দরের মানুষ নই। হোমরা চোমরা মানুষ ছাড়া কেউ আজকাল গোনে না।

প্রবাস জীবনে সাধারণত ঈদ, নববর্ষ এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের মানুষরা খুব একটা দেখে না। বড় বড় দেশ গুলোতে যেখানে বাংলাদেশীদের সংখ্যা অনেক বেশী সেখানে অনেক অনুষ্ঠানই হয়। কিন্তু লংকার মতো দেশে এই ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দেবার সুযোগ বিরল। কিন্তু গত ২রা বৈশাখ কলম্বোতে এক বৈশাখী সন্ধ্যার অসাধরণ গানের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরেছিলাম। সচরাচর কলম্বোতে আমার মতো আমজনতার এক আমকে দাওয়াত দিবে এমন মানুষ নেই।

তবে যিনি নববর্ষের সন্ধ্যায় দাওয়াত দিয়েছিলেন তিনি আমার মতো কোন সাধারণ লোক নন। তিনি সুবিনয় নন্দী। আধুনিক বাংলা গানের শিল্পী সুবীর নন্দীর ছোট ভাই। মিঃ সুবিনয় নন্দী জাতিসংঘের কলম্বো মিশনে উঁচু পদে (Subinay Nandy, Resident Coordinator, UN, Sri Lanka) আছেন। এই ধরনের বড় পদে থাকলে মানুষের আচরণ পাল্টে “মুই কি হনু রে” জাতীয় হবার কথা।

অথচ আশ্চর্য। তার ব্যবহার আর নামের প্রতি যথার্থই সুবিচার আছে। তার মতো বিনয়ী লোক খুব একটা দেখিনি। অসাধারণ তার ব্যবহার। এক জন অমায়িক ভদ্রলোক বলতে যা বোঝায় তিনি তাই।

এক জন বাংলাদেশী হিসেবে তিনি গর্বিত। আর আমি তার মতো এক জন লোক এই পদে আছেন জেনে খুবই গৌরব বোধ করছি। ৬:৩০ মিনিটে দাওয়াত। আমি সাধারণত দেরি করা পছন্দ করি না। তাই আগে ভাগেই যাত্রা করলাম।

ক’দিন ধরে বেশ বৃষ্টি হচ্ছিল। আর আমার যেহেতু দাওয়াত তাই বৃষ্টি তার গতিবেগ দিল বাড়িয়ে। কোন রকমে বৃষ্টিতে ভিজে পৌছালাম। দেখি আমাদের আগে আর কেউ আসতে পারেন নি। সুবিনয় নন্দী আমাদেরকে স্বাগত জানালেন।

দেখলাম- ঘরোয়া জলসার মতো আয়োজন। ছোট একটা মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। কিছু বাদ্যযন্ত্রও আছে। মেঝেতে সুন্দর করে বসার বিছানা পাতা। খুবই মুগ্ধ হবার মতো একটি ব্যাপার।

যেন গানের জলসা। এ যেন গানের দিন /এ লগন গান শোনাবার। শুভেচ্ছা বক্তব্য ও পরিচয় পর্বে জনাব সুবিনয় নন্দী কোমল পানীয় পরিবেশন করা হচ্ছিল। এরই মাঝে শিল্পী সুবীর নন্দী এসে হাজির। সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন তিনি।

কোন অহমিকা নেই। এই সুযোগে তার সাথে সামান্য আলাপ করার লোভ সামলাতে পারলাম না। অনেক কথা বললেন। এই প্রথম জানলাম যে, দেশে তিনি এক জন ব্যাংকার। আরো কিছু প্রাসঙ্গিক আলাপ শেষে কিছু ছবি তোলার পালা ।

অনেকেই ছবি নিলেন শিল্পীর সাথে। এর পর শুরু হল গান। পুরো দেড় ঘন্টারও বেশী সময় ধরে তিনি তার সব জনপ্রিয় গান গেয়ে শোনালেন। বাইরে তখনো বৃষ্টি পড়ছিল। এই সময় তিনি গাইলেন- আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাদতে শিখেছি------।

সব শেষে গাইলেন হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ছবির গান - ও আমার উড়াল পঙ্খী রে----। টানা দেড় ঘন্টা এক নাগারে গান গাওয়া এতো সহজ কাজ নয়। উপস্থিত শ্রোতারা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছে তার গান। গান ছাড়া আরো কোন শব্দ করেনি কেউ। এ লগন গান শোনাবারঃ সঙ্গীত পরিবেশন করছেন শিল্পী সুবীর নন্দী গান শেষে খাবার আয়োজন।

চমৎকার সব বাংলাদেশী মুখরোচক খাবার। সবাই খেল পেটপুরে। অসাধারণ একটি সন্ধ্যা। এমন একটি সন্ধ্যার উপহার দেবার জন্য নন্দী পরিবারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাই। প্রবাসে এমন আপ্যায়ন সবার হয় না।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।