আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাগাতিহাস (কৃতজ্ঞতা: বেঙ্গলেনসিস)

আমি জেনারেল তাকা ১৬ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:৩৭ বেঙ্গলেনসিস বলেছেন: ভূমিকা বাংলার দেশী ছাগল একসাথে ২ - ৩টি বাচ্চা দিতে পারে৷ মাত্র ৬ - ৭ মাস বাচ্চাকে পালন করলে ৭ - ৮ কেজি ওজন হয়৷ ছাগলের দুধ খুব সহজেই হজম হয় এবং পুষ্টিকর৷ বাংলার কালো ছাগলের চামড়া পৃথিবী বিখ্যাত এবং অত্যন্ত দামী৷ ছাগলের সংখ্যাতত্ত্ব ভারতে প্রায় ১২ কোটি ছাগল (১৯৯৩) আছে যেখানে পৃথিবীর মোট ছাগলের সংখ্যা ৭৫ কোটি অর্থাত সারা বিশ্বের মোট ছাগলের সংখ্যার ১৬ ভাগ৷ পশ্চিমবঙ্গে প্রায় দেড় কোটি ছাগল আছে ১৯৯৩ সালের হিসাব অনুযায়ী৷ জেলার ক্ষেত্রে ১৯৮৯ সাল অনুযায়ী মেদিনীপুরে সাড়ে তের লক্ষ, দঃ ২৪-পরগণায় ১১ লক্ষ ও মুর্শিদাবাদে সাড়ে ১১ লক্ষ ছাগল আছে৷ ছাগল পালনের উদ্দেশ্য বাংলার কৃষ্ণকায় ছাগলের মাংস খুব সুস্বাদু ও জনপ্রিয়৷ ছাগলের দুধ সহজ পাচ্য৷ শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীর পক্ষে উপকারী৷ ছাগলের চুল বা লোম দড়ি, ব্যাগ, পোশাক, টুপি, বিছানার ও ঘরের নানান উপকরণ ও অন্যশিল্পে ব্যবহৃত হয়৷ মাটির উর্বরতা বাড়াতে ছাগলের মল ব্যবহার করা হয়৷ ছাগলের জাত পৃথিবীতে প্রায় ১০২টি জাতের ছাগল আছে৷ ভারতেও প্রায় ২০টি প্রজাতির ছাগল আছে৷ দৈহিক ওজন অনুসারে ছাগলের জাতকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়৷ যেমন- ১) বড় আকৃতির ২) মাঝারি আকৃতির ৩) ছোট আকৃতির ১) বড় আকৃতির ছাগল হল- যমুনাপুরী, বিটল৷ ২) মাঝারি আকৃতির ছাগল হল- মারওয়ারী, সুর্তী, গাড্ডী, সমানাবাদী, চেগু৷ ৩) ছোট আকৃতির ছাগল হল- ব্লাক বেঙ্গল, আসাম টাইপ৷ ভারতের কয়েকটি সেরা জাতের ছাগলের বিবরণ ১) ব্লাক বেঙ্গল গোট- কালো রংয়ের এই ছাগল পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সর্বত্র দেখা যায়৷ কালো রং সাদা ও বাদামী, খয়েরী ও সাদা রংয়ের বেঙ্গল গোট দেখা যায়৷ এই ছাগলগুলি আকারে ছোট প্রকৃতির৷ গড়ে ২ - ৩টি বাচ্চা একসাথে দিতে পারে এবং ১ বার বাচ্চা দেওয়ার খুব কম সময়ের মধ্যে (আট মাস অন্তর) আর একবার বাচ্চা দেয় অর্থাত ২ বছরে ৩ বার বাচ্চা দেয়৷ ১২ - ১৪ মাসের মধ্যে এরা বাচ্চা দেয়৷ এরা প্রতিদিন গড়ে ৪০০ গ্রাম দুধ দেয়৷ নাম মাত্র দানা-ভূষি খেয়ে এরা ৬ মাসে প্রায় ৮ কেজি ওজন হয়৷ তবে পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ছাগলের ওজন ৩০ কেজি ও স্ত্রী ছাগলের ওজন ২০ কেজি হয়৷ ২) যমুনাপুরী- এই জাতের ছাগল উত্তরপ্রদেশের যমুনা, গঙ্গা ও চম্বল নদীর মধ্যবর্তী এটোয়া জেলায় এবং আগ্রা ও মথুরা জেলায় দেখা যায়৷ এই ছাগলের আকার-আকৃতি বেশ বড় ধরনের৷ এরা মাংস ও দুধ উভয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ সংকরায়নের কাজে অন্যান্য দেশী জাতের সহিত এদের মিলন করানো হয়৷ পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ছাগল ওজনে ৫০ - ৬০ কেজি ও স্ত্রী ছাগল ৪০ - ৫০ কেজি হয়৷ প্রতিদিন প্রায় ১.৫ কেজি থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত দুধ দেয়৷ ঐ দুধে প্রায় ৪ - ৫ ভাগ ফ্যাট থাকে৷ এরা বছরে একবার বাচ্চা দেয় এবং ১টিই বাচ্চা দেয়৷ ৩) বারবারি- ভারতে উত্তর প্রদেশের এটোয়া, আগ্রা, মথুরা প্রভৃতি স্থানে দেখা যায়৷ মাঝারি আকৃতির এই ছাগলগুলির রং সাদা ও হরিণের মতো দেহে ছোপ ছোপ দাগ থাকে৷ পাগুলি ছোট প্রকৃতির৷ পরিপূর্ণ পুং ছাগলের ওজন ২৫ - ৩০ কেজি ও স্ত্রী ছাগলের ওজন ৩৫ - ৪০ কেজি৷ ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে এরা দুবার বাচ্চা দিতে পারে এবং একসাথে দুটি বাচ্চা দেয়৷ দিনে সাধারণতঃ .৮ কেজি থেকে ১.৩ কেজি দুধ দেয়৷ দুধে ফ্যাটের পরিমাণ প্রায় ৫ ভাগ৷ ৪) বিটল- এই জাতের ছাগল পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় দেখা যায়৷ এরা কালো, সাদা, লালচে বাদামী ও এদের মিশ্রণে হতে পারে৷ পূর্ণ বয়স্ক পুং ছাগলের ওজন ৫০ - ৬০ কেজি ও স্ত্রী ছাগলের ওজন ৪০ -৫০ কেজি হয়৷ এরা সাধারণতঃ একসাথে একটি বাচ্চা দেয় তবে অনেক সময় দুটি বাচ্চাও দেয়৷ দিনে প্রায় ১.৫ - ২ কেজি দুধ দেয়৷ দেশী কোন জাতের ছাগলে কি উত্পাদন দুধ ও মাংস উভয় শুধুমাত্র মাংস পশম ১ যমুনাপুরী ব্লাক বেঙ্গল চাঙ্গথাঙ্গি ২ বারবারি ওসমানাবাদ মারওয়ারী ৩ বিটল সিরহী ছাগল প্রজনন ও জাত নির্বাচন কোন জাতের ছাগল পালন করবেন- ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মাংসের জন্য ছাগল পালন করতে হলে বাংলার কৃষ্ণকায় জাতের ‘ব্লাক বেঙ্গল গোট’ বেশ ভাল৷ বাজারে এই মাংসের চাহিদা, দাম ও কদর সবচেয়ে বেশী এবং এর চামড়ার দাম ও চাহিদাও খুব বেশী যা অন্য কোন দেশী বা বিদেশী জাতের ছাগলে নেই৷ তাছাড়া সারা পৃথিবীতে এই জাতের ছাগলের যথেষ্ট সুনাম আছে৷ তবে এরা দুধ কম দেয়৷ দুধ ও মাংসের জন্য ছাগল পালন করতে হলে যমুনাপুরী জাতটি ভাল৷ বিজ্ঞান সম্মতভাবে উন্নতমানের বাংলার কালো জাতের ছাগল চয়ন ও প্রতিপালন করতে পারলে বাংলার মাটিতে ঐ ছাগল পালন অধিক লাভজনক হতে পারে৷ ছাগলের প্রজনন- ছাগল পালনের প্রথমে উন্নতজাত ঠিক করার পর ঐ জাতের উন্নতমানের ছাগল চয়ন বিশেষ প্রয়োজন৷ ১) প্রজননের প্রথম দিক- বাংলার কালো ছাগল একসাথে ২ - ৩টি বাচ্চা দেয়৷ ১০টি স্ত্রী ছাগল ২০-৩০টি বাচ্চা দিতে পারে এক একটি বিয়ানে৷ পুরুষ ছাগলকে মাংসের জন্য বড় করতে হবে৷ আর স্ত্রী ছাগল গুলিকে ছোটবেলায় বেচে নিয়ে তার থেকে সুস্থ, সবল, ভাল চেহারার কয়েকটি ছাগল প্রজননের জন্য রেখে দিতে হয়৷ তবে স্ত্রী ও পুরুষ ছাগলের বয়স তিন বছর হওয়ার আগেই প্রজননের ছাগল বাছাই করলে ভাল হয়৷ ২) পুরুষ ছাগল বাছাই- এই ছাগলের চেহারা হবে সবল৷ সুগঠিত ও স্বাস্থ্যবান৷ বেশ শক্তিশালী ও পুরুষালী ভাব থাকবে চরিত্রে৷ ঘাড়ে কেশর থাকবে এবং প্রজননের সময় খাড়া হবে৷ বীর্যে শুক্রাণুর ভাগ খুব বেশী থাকবে৷ ৩) স্ত্রী ছাগলের বাছাই- বেশ ধীর, স্থির ও শান্ত প্রকৃতির হবে এই ছাগল৷ সঠিক সময় গরম হবে৷ প্রতি দুই বছরে তিন বার বাচ্চা দেবে৷ ১৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে প্রথম বাচ্চা দেবে৷ পা দুটি শক্ত ও সোজা হবে৷ পালান অবশ্যই ছাগলের আকারের সহিত মানানসই হবে৷ দুটি বাঁট আলাদা হবে এবং দুটোতেই দুধ আসবে৷ পালানের সঙ্গে মানানসই বাঁট থাকবে৷ পালানের পাশে দুধ শিরা বেশ স্পষ্ট থাকবে৷ ৪) প্রজনন করানোর সঠিক সময়- ১৫ থেকে ১৮ মাস বয়স হলে তবেই স্ত্রী ছাগলকে প্রজননের কাজে ব্যবহার করা যায়৷ পুরুষ ছাগলকে ১৮ - ২৪ মাসের মধ্যে ঐ কাজে ব্যবহার করা হয়৷ ৫) কতদিন প্রজনন করানো যায়- ৬ বার বাচ্চা দেওয়ার পর আর প্রজননের কাজে স্ত্রী ছাগলকে ব্যবহার করা উচিত নয়৷ পুরুষ ছাগলের ক্ষেত্রে ৫ - ৬ বত্সর পর্যন্ত প্রজননে ব্যবহার করা যায়৷ ৬) বছরের কোন সময় প্রজনন করানো ভাল- ছাগলকে সারা বছরেই প্রজনন করানো যায়৷ যমুনাপুরী ও বিটল জাতের ছাগলের ক্ষেত্রে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রজননের উপযুক্ত সময়৷ পুরুষ ছাগলের ক্ষেত্রে শীত ও বসন্ত প্রজননের আদর্শ সময়৷ ৭) পুরুষ ছাগলের প্রজনন পদ্ধতি- দেড় থেকে ২ বছরের পর ছাগলকে নিয়ম মেনে প্রজনন করানো উচিত৷ একবারে একটির বেশী ছাগলকে প্রজননে ব্যবহার করা ভাল নয়৷ সপ্তাহে একবার প্রজনন করালে ভাল৷ বেশী প্রজনন করালে বীর্যের মান ও ঘনত্ব কমে যায় এবং ছাগলের স্বাস্থ্যও খারাপ হয়ে যেতে পারে৷ ৮) স্ত্রী ছাগলের প্রজনন পদ্ধতি- প্রথমবার ১৫ থেকে ১৮ মাসে প্রজনন করানো হয় এবং দ্বিতীয় বার বাচ্চা দুধ ছাড়ার একমাস পরে পুনরায় প্রজনন করানো হয়৷ অর্থাত একবার বাচ্চা দেওয়ার তিন মাসের মাথায় পুনরায় প্রজনন করানো যায়৷ বাচ্চা দিতে এরা সময় নেয় প্রায় ১৪৫ - ১৫২ দিন, গড়ে ৫ মাস৷ তাই একবার বাচ্চা দেওয়ার (৩ মাস + ৫ মাস) ৮ মাসের মাথায় আর একবার বাচ্চা পাওয়া যায়৷ স্ত্রী ছাগল ১৮ থেকে ২১ দিন অন্তর গড়ে ১৯ দিন অন্তর গরম হয় এবং ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা গরম থাকে৷ গরম শুরু হওয়ার ১০ থেকে ১২ ঘন্টা পরে প্রজনন করানো ভাল এবং প্রয়োজন হলে দ্বিতীয়বার প্রজনন করা যায় প্রথমবারের ১০ ঘন্টা পরে৷ ছাগল ১৯ দিন পরপর গরম হয় এবং সেই গরম হওয়ার লক্ষণগুলি হল- অস্থিরতা প্রকাশ, অন্য ছাগলকে বিরক্ত করা, অন্য ছাগলের ঘাড়ে উঠবার চেষ্টা করা৷ দুপাশে লেজ নাড়া ঘনঘন, হঠাত খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেওয়া৷ দুধেল ছাগলের দুধ হঠাত কমে যাওয়া, যোনিদ্বার লাল ও ফোলাফোলা ভাব থাকে, যোনিদ্বার দিয়ে তেলের মত স্বচ্ছ পদার্থ বের হয়৷ ঘন ঘন প্রস্রাব হয়৷ সাধারণতঃ পুরুষ ছাগলকে দিয়ে স্বাভাবিকভাবে স্ত্রী ছাগলের প্রজনন করানো হয়৷ এইভাবে ১৮ - ২১ দিনের মধ্যে স্ত্রী ছাগলটি যদি আর গরম না হয় তবে বুঝতে হবে ছাগলটি গর্ভবতী হয়েছে এবং ৫ মাস বাদে বাচ্চা প্রসব করবে৷ কিন্তু যদি পুনরায় গরম হয়, সেক্ষেত্রে অনেক সময় ‘রিপিট ব্রিডিং’ এর জন্য ছাগলটি গর্ভবতী হয় না৷ তখন ১টি বা ২টি গরম কাল ছেড়ে দিয়ে বা অন্য পুরুষ ছাগল দিয়ে প্রজনন করালে বা প্রজনন অঙ্গের চিকিত্সা করালে বা পুষ্টিকর ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত সুষম খাবার খেতে দিলে সুফল পাওয়া যায়৷ একনজরে ছাগলের প্রজনন ঘটিত বৈশিষ্ট্য- ১ পূর্ণতা প্রাপ্তির বয়স ৪ - ৮ মাস ২ স্ত্রী ছাগলের প্রজননের সময় ১৫ - ১৮ মাস ৩ ঐ সময় স্ত্রী ছাগলের ওজন ১০ - ৩০ কেজি ৪ পুরুষ ছাগলের প্রজননের সময় ১৮ - ২৪ মাস ৫ প্রজননে পুরুষ ছাগল পিছু স্ত্রী ছাগলের সংখ্যা ১০ - ৪০ টি ৬ গরম হয় কতদিন অন্তর ১৮ - ২১ দিন ৭ গরম থাকার সময় ২৪ - ৪৮ ঘন্টা ৮ গরম হওয়ার পর প্রজননের সময় ১০ - ১২ ঘন্টা ৯ কতবার প্রজনন করানো দরকার ১ বার, কিছুক্ষেত্রে ২ বার ১০ বাচ্চা হতে সময় লাগে ১৪৫ - ১৫২ দিন ১১ বাচ্চা হবার পর পুনরায় গরম হতে সময় ৩ মাস ১২ মায়ের কাছ থেকে বাচ্চা সরিয়ে নেওয়া হয় ২ মাস ১৩ একসাথে বাচ্চা দেয় ২ - ৩ টি ১৪ খাসীকরণ করার বয়স ২ মাস ১৫ মাংস বাজার করার সময় ৬ - ১২ মাস ১৬ বাজারজাত করার সময় ছাগলের ওজন ৮ - ১২ কেজি ১৭ জন্মের সময় ওজন ১ - ৩.৫ কেজি ১৮ দৈনিক দুধ উত্পাদন .৮ - ২ কেজি ১৯ প্রজননের কাল বা সময় আগস্ট-নভেম্বর (শ্রাবণ-কার্ত্তিক) ছাগলের বাসস্থান গরুর গোয়ালে, বারন্দায়, রান্নাঘরে বা বাড়ীর দাওয়াতে থাকে৷ সারাদিন মাঠে ঘাসের জমিতে চরে বেড়ায়, খাবার সংগ্রহ করে ও রাতে ওখানে থাকে৷ উন্নত পদ্ধতিতে ছাগল পালন করতে হলে বা একসঙ্গে অনেক ছাগল পালন করতে হলে বাসস্থানটি একটু উঁচু জায়গায় হওয়া প্রয়োজন যেখানে জল জমে না৷ আর্দ্র বা ভিজে ভাব নেই৷ ঘর আবদ্ধ হলে চলবে না, তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে নেটে ঘেরা ফাঁকা জায়গা বা জানালা রাখতে হবে৷ শীতের সময় ঐ জানালায় বস্তার আবরণ দেওয়ার ও মেঝেতে খড়ের বিছানা রাখা দরকার৷ মল-মুত্র ত্যাগের জন্য নালার ব্যবস্থা রাখা দরকার৷ বাসস্থানের পাশাপাশি ছাগলকে চরবার জন্য জল জমে না এমন স্থানের ব্যবস্থা করতে হবে৷ ছাগলের ঘরের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য- ১) ঘরের মেঝে- ভুমি থেকে মেঝের উচ্চতা ৩ ফুটের বেশী হবে৷ মেঝে শুকনো থাকবে৷ সিমেন্টের মেঝে হলে ভাল হয়৷ তবে মাটির হলে বালি-মাটির ভাল৷ সাধারণভাবে ৭ দিন থেকে ৩ মাস বয়সের প্রতিটি ছাগলের বাচ্চার জন্য ৩ - ৫ বর্গফুট জায়গা দরকার এবং এক একটি শেডে বা ঘরে প্রায় ২০ থেকে ২৫টি বাচ্চা রাখা যায়৷ আবার ৩ মাস থেকে ৬ মাস বয়সের প্রতিটি ছাগলের জন্য ৫ থেকে ৬ বর্গফুট মেঝে প্রয়োজন সঙ্গে একটি ব্যায়ামের বা শরীর চর্চার জায়গা রাখা দরকার৷ ৫ মাস থেকে ১২ মাস বয়সের ছাগলের জন্য প্রয়োজন ৮ বর্গফুট করে জায়গা৷ পূর্ণবয়স্ক প্রতিটি ছাগলের জন্য জাত ও দেহের ওজন অনুসারে ৬ - ১২ বর্গফুট মেঝের জায়গা প্রয়োজন৷ ব্লাক বেঙ্গল গোটের ক্ষেত্রে ৬ - ৭ বর্গফুট জায়গা হলে চলে কিন্তু যমুনাপুরী জাতের ছাগলের ক্ষেত্রে ঐ জায়গার পরিমাণ ১০ - ১২ বর্গফুট দরকার৷ গাভীন হলে স্ত্রী ছাগলকে আলাদা রাখার দরকার এবং ঐ সময় থেকে বাচ্চারা দুধ ছাড়ার আগে পর্যন্ত মা ও বাচ্চার একসাথে থাকার জন্য প্রায় ১৬ বর্গফুট জায়গা দরকার৷ প্রজননের কাজে ব্যবহৃত পুরুষ ছাগলের জন্য ও প্রায় ১৬ - ২০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন এবং একটি ঘরে একটি পুরুষ ছাগল রাখা প্রয়োজন৷ ২) ঘরের দেওয়াল ও ছাদ- ছাগলের ঘরের উচ্চতা ৬ ফুট হওয়া প্রয়োজন৷ ৩) বাসস্থানে জলের ও খাবারের জায়গা- ঘরের মধ্যে সিমেন্টের তৈরী জলের ও খাবারের পাত্রের ব্যবস্থা করলে জল ও খাদ্যের অপচয় কম হয়৷ তবে মজবুত ও টেকসই জলের বা খাবারের পাত্রের ব্যবহারও করা হয়৷ প্রতি ছাগলের জন্য জায়গা দরকার ৩০ - ৪০ সেমি৷ ৪) ছাগলের ব্যায়ামের জায়গা- ১০০ থেকে ১২৫টি ছাগলের জন্য ৬০ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট চওড়া ব্যায়ামের বা চরার জায়গার প্রয়োজন৷ ছাগল প্রতিপালন ও বিভিন্ন পর্যায়ে পরিচর্যা প্রতিপালন- ১) গর্ভবতী ছাগলের পরিচর্যা- প্রসবের ৫ - ৭ দিন আগে গর্ভবতী ছাগলকে আলাদা ঘরে রাখা প্রয়োজন৷ প্রসবের এক সপ্তাহ আগে মেঝেতে শুকনো খড়ের আচ্ছাদন দিতে হয়৷ প্রসবের এক সপ্তাহ আগে থেকে হাল্কা, তরল, গুল্ম জাতীয় ও পুষ্টিকর খাবার দিতে হয় এবং প্রতিদিন প্রায় ১০০ গ্রাম খাবার কমিয়ে দিতে হয়৷ প্রসবের সময় বিশেষ নজর রাখতে হয় যাতে বাচ্চা ঠিকমত ভূমিষ্ঠ হয় এবং ঠিক সময় ফুল পড়ে৷ ছাগল ১ থেকে ৩টি বাচ্চা দিতে পারে, প্রথম বাচ্চা প্রসবের ১৫ - ২০ মিনিট পরে দ্বিতীয়টি অথবা আরও ১৫ - ২০ মিনিট বাদে তৃতীয়টি ভূমিষ্ঠ হতে পারে৷ সেই জন্য প্রসবের জন্য বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয়৷ জন্মাবার পর প্রতিটি বাচ্চাকে শুকনো পরিষ্কার কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে পরিষ্কার করে মুছে দিতে হয়৷ নাড়ির বা নাভির দু-জায়গায় বাঁধন দিয়ে মাঝখানে কোন ধারালো কাঁচি বা ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলতে হয় এবং ঐ জায়গায় কোন জীবাণু নাশক ঔষধ বা আয়োডিন লাগাতে হয়৷ বাচ্চা দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ফুল বা প্লাসেন্টা পড়ে যায়, কিন্তু ৮ - ১২ ঘন্টার মধ্যে না &! #2474;ড়ে, তবে চিকিত্সার ব্যবস্থা করতে হয়৷ বাচ্চা দেওয়ার ২ - ৩ দিন পর্যন্ত মা ছাগলকে হাল্কা ধরনের খাবার যেমন ভুষি জাতীয়, কচি ঘাস পাতা যুক্ত খাবার দিতে হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন৷ ২) দুগ্ধবতী ছাগলের পরিচর্যা- যেসব ছাগল বেশী দুধ দেয় তাদের ক্ষেত্রে দিনে দুবার দুধ দোয়ান প্রয়োজন, সকালে ও সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট সময়ে৷ ছাগলের পিছনের পায়ের চুল কেটে ফেলা প্রয়োজন৷ ছাগলকে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও ভাল ঘরে রাখতে হবে৷ প্রতি লিটার দুধের জন্য ৪০০ গ্রাম সুষম খাবার খেতে দেওয়া দরকার৷ ৩) ছাগলের বাচ্চার পরিচর্যা- সুস্থ, সবল বাচ্চা জন্মাবার পরই উঠে দাড়াতে চেষ্টা করে এবং মায়ের পালানের বাঁটে মুখ দিয়ে দুধ খাওয়ার চেষ্টা করে৷ অনেক সময় হাত দিয়ে বাচ্চার মুখে বাঁট ধরানো শেখাতে হয় যদি কোন দুর্বল বাচ্চা অসমর্থ হয়৷ ছোট, মাঝারী ও বড় আকারের দেশী ছাগলের বাচ্চার জন্মের সময় ওজন থাকে যথাক্রমে ১ - ১.৫ কেজি, ২ - ২.৫ কেজি, ১.৫ - ৩ কেজি এবং সংকর ছাগলের বাচ্চার ওজন থাকে ৩ - ৩.৫ কেজি৷ জন্মাবার এক ঘন্টা পর&! #2439; বাচ্চাকে গাজলা দুধ খেতে দিতে হয়৷ হলুদ রংয়ের ঐ দুধ বাচ্চাকে খাওয়ালে শরীরে এক প্রকার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায়, তাছাড়া ঐ গাজলা দুধে খুব বেশী পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন-এ ভিটামিন-ডি ও খনিজ পদার্থ থাকে৷ প্রথম দু-সপ্তাহ বাচ্চারা কেবল মায়ের দুধ খাবে৷ তারপর ধীরে ধীরে ঘাস, কচিপাতা ইত্যাদি খেতে শুরু করে৷ ৪) প্রজনন পুরুষ ছাগলের পরিচর্যা- ২ মাসের মধ্যে প্রজননের জন্য ব্যবহৃত পুরুষ বাচ্চাকে বেছে নিতে হয়৷ সুস্থ, সবল বাচ্চাকে পরিমাণ মত দুধ ও পরে সুষম খাদ্য দিতে হয়৷ ৫) খাসীকরণ- যেসব পুরুষ ছাগল প্রজননের কাজে ব্যবহৃত হবে না তাদের ২ মাস বয়সে বা ২ - ৪ সপ্তাহে খাসী করিয়ে নিতে হয়৷ এর সুবিধা হল দৈহিক বৃদ্ধি বেশী হয়, মাংস সুস্বাদু হয়, চামড়া ভাল মানের হয় এবং লাভের পরিমাণ ও বেড়ে যায়৷ ৫) সনাক্তকরণ- ছাগলের খামারে প্রতিটি ছাগলকে চেনার জন্য একটা চিহ্ন দেওয়া হয়৷ কখনও বাচ্চার কানে চিমটে বা ট্যাগ লাগিয়ে৷ কখনও বা কানে নম্বর ছাপ (টাট্রুইং) মেরে বা কানে কাটা দাগ দিয়ে এই সনাক্তকরণ করা হয়৷ বাচ্চা জন্মাবার ১ সপ্তাহের মধ্যে এই চিহ্নিত করণ করতে হয়৷ ছাগলের পুষ্টি ও খাবার ছাগল কি খায়- কচিঘাস, আগাছা, লতাপাতা খেতে এরা খুব ভালবাসে৷ কাঁঠাল পাতা, কুলপাতা, সজনে, নিমপাতা, বকফুল, নটে, কপি, মূলা, পালং, গাজর প্রভৃতি পাতা এরা খেয়ে থাকে৷ সিম, বরবটি, অড়হর পাতা ছাগল ভাল খায়৷ এছাড়া তরি-তরকারির খোসা, চারিদিকে পড়ে থাকা কমদামী খাবার খাইয়েও এদের পালন করা যায়৷ অধিক উত্পাদনের জন্য সুষম খাদ্য এবং চাষ করা সবুজ খাদ্য যেমন বারসীম, লুসার্ন, কাউপি, ওটস, ভুট্টা, জোয়ার ইত্যাদি খাওয়ানো দরকার৷ সুবাবুলের পাতা বেশী পরিমাণে খাওয়ানো ভাল নয়৷ ছাগল কি পরিবেশ ধ্বংস করে- ছাগল সহজে খেত খামারে বা চাষের জমিতে ঢোকে না বরং চারপাশের উঁচু আইলে ঘাস বা আগাছা খুঁটে খুঁটে খায়৷ বেড়া ভেঙে না ঢুকে দুপায়ে ভর দিয়ে লতা-পাতা সংগ্রহ করে৷ খাদ্যে উপাদান- ১) শর্করা বা শ্বেতসার (কার্বোহাইড্রেট) ২) প্রোটিন বা আমিষ ৩) ফ্যাট বা তৈল পদার্থ ৪) ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ ৫) খনিজ পদার্থ বা ধাতব লবণ (মিনারেল মিক্সচার) ৬) জল সুষম খাদ্য- ছাগলের দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়ক্ষতি পূরণ অধিক উত্পাদন ইত্যাদির জন্য যে সব উপাদান দরকার সেগুলি উপযুক্ত পরিমাণে যদি কোন খাদ্যে থাকে তবে তাকে সুষম খাদ্য বলে৷ এই সুষম খাবার বিভিন্ন প্রকারের হয়৷ ১) বাচ্চার জন্য কিড স্টাটার বা মিল্ক রিপ্লেসার বা দুধের বিকল্প খাবার৷ ২) বাড়ন্ত বাচ্চার জন্য গ্রোয়ার খাবার৷ ৩) বড় ছাগলের জন্য ফিনিশার খাবার৷ বাচ্চার ম্যাস কি দিয়ে করতে হবে- উপাদান ভাগ ১ ভুট্টার গুড়া ২০ ভাগ ২ ছোলার গুড়া ২০ ভাগ ৩ বাদাম খইল গুড়া ৩৫ ভাগ ৪ গমের ভূষি ২৩ ভাগ ৫ খনিজ পদার্থ ২.৫ ভাগ ৬ সাধারণ লবন ০.৫ ভাগ কিভাবে গ্রোয়ার ম্যাস তৈরী করবেন- খাদ্যের উপাদান প্রতি ১০০ কেজিতে ১ ভুট্টা ভাঙা ২০ কেজি ২ ছোলা ভাঙা ৩২ কেজি ৩ গমের ভূষি ৩০ কেজি ৪ বাদাম খইল ১৫ কেজি ৫ মিনারেল মিক্সসার ২.৫ কেজি ৬ খাবার লবন ০.৫ কেজি ছাগলের বাচ্চার খাদ্য- ছাগলের বাচ্চার জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যেই তাকে গাজলা দুধ খেতে দিতে হয়৷ এই দুধে প্রচুর এনার্জি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে এবং বাচ্চা রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়৷ প্রথম ৩ - ৪ দিন ঐ অবশ্যই খেতে দিতে হয়৷ জন্মের পর প্রথম সপ্তাহে দিনে ৩ বার ও পরে দুবার দুধ খেতে দিতে হয়৷ প্রথম দুই সপ্তাহ বাচ্চারা মায়ের দুধ খাবে৷ তারপর কচি ঘাস, পাতা, সুষম খাদ্য খাওয়ানো ধরাতে হবে৷ এইভাবে দুমাস পর্যন্ত মায়ের দুধও খাবে আবার কিড স্টাটারও খাবে৷ ২ মাস পর বাচ্চাগুলিকে মায়ের নিকট থেকে সরিয়ে দিতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাবার দিতে হবে৷ বাড়ন্ত বাচ্চার খাদ্য- ৩ মাস বা ৪ মাসের পর গুল্ম জাতীয় রাফেজ খাওয়ানো ধরাতে হবে৷ প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ - ৪০০ গ্রাম ঐ গ্রোয়ার ম্যাস দিতে হবে৷ বড় ছাগলের খাদ্য- এই সময় ফিনিসার ম্যাস ছাগলকে দিতে হয়৷ বিভিন্ন ওজনে ছাগলকে কি কি খাবার দিতে হবে- দেহের ওজন (কেজি) ছাগলের দুধ(গ্রাম প্রতিদিন) সবুজ ঘাস(কেজি প্রতিদিন) সুষম খাদ্ (গ্রাম প্রতিদিন) সকাল সন্ধ্যা ২ ২০০ ২০০ ------ ------- ৩ ২৫০ ২৫০ ------ ------- ৪ ৩০০ ৩০০ পর্যাপ্ত পরিমাণ ৫০ গ্রাম ৫ ৩০০ ৩০০ ঐ ১০০ গ্রাম ৬ ৩৫০ ৩৫০ ঐ ১৫০ গ্রাম ৭ ৩৫০ ৩৫০ ঐ ২০০ গ্রাম ৮ ৩০০ ৩০০ ঐ ২৫০ গ্রাম ৯ ২৫০ ২৫০ ঐ ৩৫০ গ্রাম ১০ ১৫০ ১৫০ ঐ ৩৫০ গ্রাম ১৫ ১০০ ১০০ ঐ ৩৫০ গ্রাম ২০ ------ ------ ১.৫ ৩৫০ গ্রাম ২৫ ------ ------ ২.০ ৩৫০ গ্রাম ৩০ ------- ------ ২.৫ ৪০০ গ্রাম গর্ভবতী ছাগলের খাদ্য- প্রসবের দেড় থেকে ২ মাস আগে থেকে ভাল মানের রাফেজ বা সবুজ ঘাস খেতে দিতে হয় এবং বেশী প্রোটিন যুক্ত (২৫ ভাগ প্রোটিন) খাবার দিতে হয় এবং ৪০০ - ৪৫০ গ্রাম সুষম খাদ্য খেতে দিতে হয় কেননা পেটের বাচ্চাদের বৃদ্ধি এই সময় থেকে প্রায় ৭০ - ৮০ ভাগ হয়৷ ছাগলের বিভিন্ন বয়সে খাদ্যের তালিকা- ১ জন্ম থেকে ৩ দিন গাজলা দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ ২ ৩ দিন থেকে ৩ সপ্তাহ মায়ের দুধ, মিল্ক রিপ্লেসার ৪০০ গ্রাম ৩ ৩ সপ্তাহ থেকে ৪ মাস মায়ের দুধ ক্রিপ খাবার সবুজ ঘাস ৪৫০ গ্রাম ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ৪৫০ গ্রাম প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ৪ ৪ মাসের উপর সুষম খাবার ১৫ - ১৬% প্রোটিন ৪৫০ গ্রাম প্রতিদিন ৫ গর্ভবতী সুষম খাবার সবুজ ঘাস ১৫% প্রোটিন ৪০০ - ৪৫০ গ্রাম প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ৬ দুধ দেওয়া ছাগল সুষম খাবার অনুখাদ্য (ট্রেস মিনারেল) মোলাসেস/গুড় ৩৫০ গ্রাম প্রতি কেজি দুধের জন্য ১% ৫ - ৭% সুষম খাদ্যের ৭ প্রজনন ছাগল সুষম খাবার ৪০০ গ্রাম প্রতিদিন প্রজননের সময় ছাগলের রোগ ও প্রতিকার ১) কৃমি রোগ- এই রোগে ছাগল খুব বেশী আক্রান্ত হয়৷ সাধারণতঃ আসকারিস জাতীয় গোলকৃমি,আফিস্টোম, লিভার ফ্লুক, চ্যাপ্টা কৃমি দ্বারা বেশী আক্রান্ত হয়৷ চারণ ভূমি ও বাসস্থান থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে৷ লক্ষণ- এই রোগে পাতলা পায়খানা হয়৷ ঠিকমত ওজন বৃদ্ধি হয় না, শরীর শুকিয়ে যায়, পুষ্টিকর খাবারেও বৃদ্ধি হয় না৷ খাওয়া কমে যায়, দুর্বল হয়ে যায়৷ মৃত্যুও হতে পারে৷ চারণভূমিতে মলের সাথে এই কৃমি ছড়িয়ে পড়ে৷ চিকিত্সা ব্যবস্থা- বর্ষার আগে ও পরে নিয়ম করে কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হয়৷ তবে কৃমির আক্রমণ যেহেতু যে কোন সময় হতে পারে তাই প্রতিমাসে একবার কৃমির ঔষধ খাওয়ানো দরকার৷ আসকারিস জাতীয় গোলকৃমি হলে পাইপ্যারাজিন আডিপেট পাউডার প্রতি ৪৫ কেজিতে ১০ গ্রাম হারে বা ছাগল পিছু ৩ গ্রাম করে খালিপেটে সকালে খাওয়াতে হয়, এরপর ২০ দিন পর আবার খাওয়াতে হয়৷ লিভার বা আস্ফিষ্টোম ফ্লুক হলে ডিসটোডিন ট্যাবলেট প্রতি কেজির জন্য ১০০ - ১৫০ মিগ্রা হারে বা অক্সিক্লোজানাইড লিকুইড ২ - ২.৫ মিলি প্রতি ছাগল পিছু দেওয়া যায় বা প্রতি ৫ কেজি ওজনের জন্য ১ মিলি দেওয়া হয়৷ ২) ছাগলের ছোঁয়াচে প্লুরো নিউমোনিয়া রোগ- লক্ষণ- এই জ্বর (১০৪ ডিগ্রি - ১০৭ ডিগ্রি ) শ্বাসকষ্ট, প্রথম অবস্থায় নাক দিয়ে জল বেরোয়, পরে হলুদ হয়ে যায়৷ কাশি হয়, দিনদিন রোগা হয়ে যায়, স্টেথো লাগালে বোঝা যায় বুকে জল জমেছে, খিদে কমে যায়৷ এক সপ্তাহের মধ্যে ছাগলটি মারা যায়৷ চিকিত্সা- টেট্রাসাইক্লিন ইনজেকশান বেশী মাত্রায় শিরায় করতে হবে তত্ক্ষণাত বা সালফামেজাথিম (৩৩১/৩%) হলে ৩০ মিলি একবারে ইনজেকশান দিতে হবে৷ ৩) গোট পক্স বা বসন্ত রোগ- এটি একটি ভাইরাস ঘটিত ছোঁয়াচে রোগ৷ লক্ষণ- এই রোগ দেখা দিলে প্রথমে জ্বর, সর্দি, চোখ ও নাক দিয়ে জল পড়ে, পালান, মুখে, কানে, ক্ষত বা জলফোস্কা দেখা যায়৷ এই জলফোস্কা অনেকসময় পেকে পুঁজ হয়৷ বাচ্চারা আক্রান্ত হলে মারা যায়৷ বড়দের দ্রুত চিকিত্সা করতে হয়৷ এই রোগের স্থায়িত্বকাল ২ - ৭ দিন৷ চিকিত্সা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা- আক্রান্ত ছাগলগুলিকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে হবে৷ কোন আন্টিসেপটিক ক্রিম বা লোশন ক্ষতে লাগাতে হবে৷ তার আগে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে ক্ষত ধুয়ে দিতে হয়৷ প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা হিসাবে টিকা দিতে হবে৷ বসন্ত রোগে কোন ছাগল মারা গেলে তাকে মাঠে ও অন্য কোন খোলা জায়গায় ফেলা উচিত নয়৷ চুন মাখিয়ে গর্তে পুঁতে দিতে হয় মৃত ছাগলটিকে৷ ৪) এঁসো রোগ- ভাইরাস জনিত এই রোগ ছাগলেরও দেখা যায়৷ বিশেষত বর্ষার সময় এই রোগের প্রার্দুভাব বেশী দেখা যায় এবং খুব দ্রুত অন্যান্য ছাগলের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে৷ লক্ষণ- এই রোগে মুখের ভিতরের দিকে, জিহ্বায়, ঠোঁটে, পায়ের ক্ষুরে ঘা হয়৷ এফ.এম.ডি. ভ্যাকসিন বছরে দুবার নিলে এই রোগের আক্রমণ হয় না৷ ৫) পেট ফোলা বা ব্লোট- অনেক সময় নতুন সবুজ ঘাস প্রচুর পরিমাণে খেয়ে ফেললে পেট ফুলে যায়৷ বাঁ দিকের পেট ফুলে যায়৷ শ্বাসকষ্ট হয়৷ ছাগল ছটফট করতে থাকে৷ বেশী পেট ফুলে গেলে ছাগল মারা যায়৷ চিকিত্সা ও প্রতিকার- এক কাপ তিসির তেল খাইয়ে দিলে স্বস্তি পায়৷ তাছাড়া ব্লোটোসিল ২০ মিলি ১২ ঘন্টা অন্তর খাওয়ালে রোগ সেরে যেতে পারে৷ তবে অত্যধিক পেট ফুলে গেলে সুঁচ ফুটিয়ে গ্যাস বের করে দিতে হয়৷ কচি সবুজ ঘাস বেশী করে খাওয়ানো ঠিক নয়, সুবাবুলের পাতাও বেশী খাওয়াতে নেই৷ ছাগলের টিকা দেওয়ার সময়সীমা মাস টিকা পূর্ণ বয়স্ক ছাগল ৬ মাসের উপর বাচ্চা জানুয়ারী ছাগলের ছোয়াচে প্লুরো নিউমোনিয়া(সি.সি.পি.পি) ০.২ মিলি কানের ডগায় .২ মিলি কানের ডগায় মার্চ এইচ.এস ৫ মিলি/চামড়ার নীচে ২.৫ মিলি/চামড়ার নীচে এপ্রিল গোট পক্স স্কার মেথোড স্কার পদ্ধতি মে এনটারো টক্সিমিয়া ৫মিলি/এস.সি.১মিলি/এস.সি. ৫মিলি/এস.সি১/২মিলি/এস.সি. জুন রিন্ডার পেষ্ট ১ মিলি/এস.সি. ১ মিলি/এস.সি. জুলাই বি.কিউ ৫ মিলি/এস.সি. ২.৫ মিলি/এস.সি. আগস্ট এঁসো ১ মিলি/এস.সি. ১/২ মিলি/এস.সি. সেপ্টেম্বর এনটোরো টক্সিমিয়া ৫ মিলি/এস.সি. ২.৫ মিলি/এস.সি. ছাগল পালনের নমুনা প্রকল্প (১০টি স্ত্রী ছাগল ও ১টি পুরুষ ছাগল) ক) মূলধনী ব্যয়- ১)ঘরবাড়ী প্রতি ছাগলপিছু ৯ বর্গফুট জায়গা হিসাবে মোট ৯×১১ = ৯৯ বর্গফুট, প্রতি বর্গফুট ৪০ টাকা৷ হিসাবে ছাগলের ঘরবাড়ী তৈরীর খরচ --------------- ৪০০০.০০ টাকা৷ ২) ছাগল পালনের যন্ত্রপাতি ও উপকরণ --------- ৩০০.০০ টাকা৷ ৩) ছাগল কেনার খরচ প্রতিটি ১০০০ টাকা হিসাবে ------ ১১০০০.০০ টাকা৷ মোট ১১ টি ছাগল ১১ × ১০০০ টি মোট খরচ -------- ১৫৩০০.০০ টাকা ৪) মূলধনের উপর সুদ (১২ শতাংশ) ----------------- ১৮৩৬.০০ টাকা; ৫) অপচয় বাবদ (১০ শতাংশ হারে) ------------------- ৪৩০.০০ টাক;া মোট খরচের পরিমাণ (১৮৩৬.০০ + ৪৩০.০০ ) ------ ২২৬৬.০০ ট埞কা খ) কার্যকরী মূলধন- ১) সুষম খাবারের জন্য ২৫০ গ্রাম প্রতিদিন হিসাবে (বাচ্চা প্রসবের ১ মাস আগে ও ২ মাস পরে মোট ৯০ দিনের) মোট ১০ টি স্ত্রী ছাগলের জন্য ১০ × .২৫ × ৯০ = ২২৫ কেজি খাবার দরকার৷ ঐ খাবার ৭ টাকা কেজি দরে মোট খরচ (২২৫ × ৭.০০ ) ----------------- ৭১৫৭৫.০০ টাকা ২) পুরুষ ছাগলটির জন্য প্রজননের সময় ৩ মাসের মোট খাবার ২২.৫ কেজির ৭ টাকা হিসাবে প্রতি কেজি খাবার (২২.৫ × ৭.০০ ) ------------------------ ১৫৭.০০ টাকা ৩) ছাগল ও বাচ্চাদের সবুজ ঘাসের ৭৫ কুইন্টালের খরচ প্রতি কুইন্টালের মূল্য ৩০ টাকা হিসাবে (৭৫ × ৩০.০০) -- ২২৫০.০০ টাকা ৪) চিকিত্সা বাবদ খরচ ----------------------------- ৫০০.০০ টাকা ৫) অন্যান্য খরচ ------------------------------------- ১০০০.০০ টাকা কার্যকরী মূলধনের খরচ (১৫৭৫.০০ + ১৫৭.০০ + ২২৫০.০০ + ৫০০.০০ + ১০০০.০০) = ৫৪৮২.০০ টাকা মোট বার্ষিক খরচ (৫৪৮২.০০ + ২২৬৬.০০) ------------ ৭৭৪৮.০০ টাক慰 গ) আয়- ১) ৬ - ৮ মাস পর্যন্ত ১০ টি ছাগলের মূল্য প্রতিটি ৭০০ টাকা হিসাবে ----------------------------- ৬৩০০.০০ টাকা ২) দুধের মূল্য প্রতিটি ছাগল ২৫০ মিলি দুধ দেয় হিসাবে মোট ২৫০ × ১০ = ২৫০০ মিলি এবং ১১ টাকা মূল্য প্রতি লিটার হিসাবে ------------------------------- ২৭৫০০.০০ টাকা ৩) ছাগলের মল মূত্রের মূল্য প্রতি ছাগল পিছু .৫ কেজি প্রতিদিন হিসাবে ৩৬৫ দিন = ৫.৫ কেজি প্রতিদিন ৩৬৫ দিন = ২ কুইঃ এবং ২০ টাকা কুইঃ হিসাবে --------------------------- ৪০০.০০ টাকা ৪) ব্যাগ ও বস্তার মূল্য ------------------------------- ৫০.০০ টাকা মোট -------------- ৩৪২৫০.০০ টাকা ঘ) লাভ = (৩৪,৯৫০.০০ - ৭৭৪৮.০০) --------------- ২৭,২০২.০০ 徏াকা প্রতিমাসে লাভ = (২৯,২০২.০০ ÷ ১২) ----------------- ২,২৬৭.০০ টাকা এক পলকে ছাগল পালন • বাংলার কালো ছাগলের বৃদ্ধিহার ভারতে সবচেয়ে বেশী৷ • প্রতিটি ছাগী দুই বত্সরে অন্ততঃ তিনবার বাচ্চা দেয় এবং প্রতি বিয়ানে দুই বা অধিক বাচ্চা প্রসব করে৷ • ক্রয় করার সময় মাদি ছাগলের বয়স ১১/২ - ২ বছরের বেশী হওয়া উচিত নয়৷ কম বয়সের স্ত্রী ছাগল ৮ - ১২ মাসের মধ্যে হলে ভাল হয়৷ • ১২ মাস ভাল ফল পেতে মাদি ছাগলের বয়স ১৪ - ১৮ মাস হলে ২ বছরের মাথায় বাচ্চা পাওয়া যাবে৷ • খামারে লাভজনকভাবে মাদি ছাগল ৬ - ৭ বছর বয়স পর্যন্ত রাখা যেতে পারে৷ • ছাগল ১২ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে৷ • প্রজননক্ষম পাঁঠার বয়স ১১/২ বছর৷ • ৮ - ১০ বছর বয়সের পর পাঁঠাকে প্রজননের কাজে ব্যবহার না করাই ভাল৷ • ১১/২ - ২ বছর বয়সের পাঁঠাকে বছরে ২০ - ৩০ বারের বেশী পাল দেওয়ানো উচিত হবে না৷ • এরপর ৭ - ৮ বছর পর্যন্ত বছরে ৫০ - ৬০ টির বেশী পাল দিতে দেওয়া উচিত হবে না৷ • প্রজননের পাঁঠাকে কখনই দিনে একবারের বেশী ব্যবহার করা চলবে না৷ সাধারণতঃ সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করা চলতে পারে৷ • ছাগলের ঋতুচক্র ১৮ - ২১ দিন অন্তর, গড়ে গরম থাকে ১৮ ঘন্টা৷ • গাভীনকাল - ১৪৫ - ১৫৩ দিন (গড়ে ৫ মাস) • খাসীকরণ সময় - ২ - ৩ মাস বয়সে৷ • মাতৃদুগ্ধ ছাড়ার বয়স - ২ - ৩ মাস বয়সে৷ • বাচ্চা হওয়ার ১ বা ২ মাস পর মাদীকে প্রজনন করা যেতে পারে৷ • যখনই গরম হওয়া জানা যাবে তখনই এবং বার ঘন্টা পর আর একবার পাঁঠার কাছে মাদী ছাগলকে নিয়ে যাওয়া উচিত৷ • স্ত্রী ও পুরুষের অনুপাত - ৫:১ • প্রসবের পর ১১/২ ঘন্টার মধ্যে ফুল পড়ে যায়৷ • ছাগল খড়, ভুট্টা ঘাস, সরগম ঘাস খেতে পছন্দ করে না৷ • ৮ টি পূর্ণবয়স্ক প্রাণীকে খাওয়াবার জন্য ৩৩০ ফুট × ৩৩০ ফুট জমি দরকার৷ • ২০ কেজি ওজনের ছাগলের জন্য দৈনিক ৫ - ৬ লিটার জলের প্রয়োজন, সবুজ ঘাস দরকার ১.৫ কেজি এবং সুষম খাবার লাগে ৩৫০ গ্রাম৷ • প্রতিটি পূর্ণবয়স্ক ছাগলের জন্য ১০ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন৷

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.